Skip to content

 

ইবাদত অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার? ইবাদতের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইবাদত অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার ইবাদতের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্যসমূহ

(১) ইবাদত অর্থ কী?

ইবাদত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো চূড়ান্তভাবে দীনতা-হীনতা ও বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া।

(২) ইবাদত কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায়, দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ-কর্মে আল্লাহ তায়ালার  মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়।

(৩) ইবাদত কী?

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ মহান আল্লাহর আদেশ যেমন- সালাত, সাওম, হজ, যাকাত পালন করা এবং নিষেধ যেমন- সুদ, ঘুষ, বেপর্দা, বেহায়াপনা ইত্যাদি পরিহার করে চলাকে ইবাদত বলে। তেমনিভাবে নবি ও রাসুলের দেখানো পথ অনুযায়ী একে অপরের সাথে উত্তম আচার ব্যবহার করাও ইবাদত।

মূলত ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্ব প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

(৪) ইবাদত কত প্রকার?

ইবাদত প্রধানত দুই প্রকার:

  1. হাক্কুল্লাহ এবং
  2. হাক্কুল ইবাদ।

ক) হাক্কুল্লাহ (আল্লাহর হক)

আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অধিকার বা কর্তব্যকে হাক্কুল্লাহ বলে।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য অনেক ধরনের ইবাদত (কাজ) করি। সেগুলোর মধ্যে কিছু ইবাদত শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্দিষ্ট, এগুলো হলো হাক্কুল্লাহ, যেমন- সালাত (নামায) কায়েম করা, সাওম (রোযা) পালন ও হজ করা ইত্যাদি।

এসব কাজ করার পূর্বে প্রত্যেক মানুষকে অন্তর থেকে যা বিশ্বাস করতে হবে তা হলো- আল্লাহ আছেন, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক (অংশীদার) নেই, তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। তাঁর আদেশেই পৃথিবীর সবকিছু আবার ধ্বংস হবে। আমাদের জীবন-মৃত্যু সবই তাঁর হাতে। পৃথিবীর সবকিছুই তাঁর জ্ঞানের আওতাভুক্ত। তাঁর হাতেই সকল সৃষ্টির রিজিক। আমরা তাঁরই ইবাদতকারী। তিনি ব্যতীত উপাসনার উপযুক্ত আর কেউ নেই। এ সবকিছু মনে প্রাণে বিশ্বাস করা ও স্বীকার করাই হলো বান্দার উপর আল্লাহর হক।

See also  ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত কত প্রকার?

আল্লাহর হক আদায় করতে হলে আমাদের অবশ্যই নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে হবে:

  • সামগ্রিক জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকার করা।
  • আল্লাহর দেওয়া সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
  • সর্বাবস্থায় নিজেকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ এবং তাঁর অনুগ্রহ কামনা করা। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলব; তাতে তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। ফলে আমরা পরকালে তাঁর থেকে পুরস্কার পাব।

খ) হাক্কুল ইবাদ (বান্দার হক)

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়েই মানুষকে বসবাস করতে হয়। আমরা পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে সামাজিকভাবে একসাথে বসবাস করি। একজনের দুঃখে অন্যজন সাড়া দেই। আপদে-বিপদে একে-অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করি। পরস্পরের প্রতি এই সহানুভূতি ও দায়িত্বই হাক্কুল ইবাদ (বান্দার হক বা অধিকার)।

কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে, ইসলামে বান্দার হক তথা মানবাধিকারের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“নিশ্চয় তোমার উপর তোমার প্রতিপালকের, তোমার শরীরের, তোমার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির হক রয়েছে।”

(বুখারি ও মুসলিম)

অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেছেন,

“এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি অধিকার রয়েছে। যেমন- সালামের জবাব দেওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা, মজলুমকে সাহায্য করা ও হাঁচির জবাব দেওয়া।”

(বুখারি ও মুসলিম)

মানুষের প্রতি মানুষের হক বা অধিকারকে আটটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:

  1. নিকটাত্মীয়ের হক;
  2. দূরাত্মীয়ের হক;
  3. প্রতিবেশীর হক;
  4. দেশবাসীর হক;
  5. শাসক-শাসিতের হক;
  6. সাধারণ মুসলমানের হক;
  7. অভাবী লোকের হক;
  8. অমুসলিমের হক;

আমরা আল্লাহর হক পালন করার সাথে সাথে মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হব।

(৫) ইবাদতের উদ্দেশ্য কী?

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করে এ পৃথিবীতে সহজভাবে জীবনযাপন করার জন্য অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন।

আমরা আল্লাহর বান্দা। তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেছেন।

See also  ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত কত প্রকার?

মহান আল্লাহ বলেন,

“জিন ও মানবজাতিকে আমি (আল্লাহ) আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।”

(সূরা আয্-যারিয়াত, আয়াত ৫৬)

আমরা পৃথিবীতে যত ইবাদতই করি না কেন, সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যই হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর এ ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য না হলে আল্লাহ তা কবুল করবেন না।

(৬) ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞানের। যদি মানুষ সে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে সে চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়েও অধম হয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চক্ষু আছে তা দ্বারা দেখে না, তাদের কর্ণ আছে তা দ্বারা শুনে না; এরা পশুর ন্যায়। বরং অধিক নিকৃষ্ট (পশু হতে); তারা হলো অচেতন।”

(সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৭৯)

অতএব ইবাদত বলতে শুধু উপাসনাকেই বুঝায় না। বরং আল্লাহর খলিফা (প্রতিনিধি) হিসেবে সকল কার্য আল্লাহর বিধানমতো করাই হলো ইবাদত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“সালাত আদায় করার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়বে। আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে ব্যাপৃত হবে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে। যাতে তোমরা সফলকাম হও।”

(সূরা আল-জুমুআ, আয়াত ১০)

এ আয়াতের মর্ম থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও কৃষিকাজ করা এবং বৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও দুনিয়ার অন্যান্য সকল ভালো কাজ করা ইবাদত। এমনিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা, তাঁর রহমতের আশা, শাস্তির ভয়, ইখলাস, সবর, শোকর, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সব কাজই ইবাদতের মধ্যে শামিল।

আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর প্রদর্শিত পন্থা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে পরকালে আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করবেন। ফলে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা শান্তি পাব।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তারাতো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে।”

(সূরা আল-বাইয়্যিনা, আয়াত ০৫)

কীভাবে ইবাদত করলে ও জীবনযাপন করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন, তা শেখানোর জন্য নবি-রাসুলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের অনুসরণ করতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন।

See also  ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত কত প্রকার?

মহান আল্লাহ বলেন,

“(হে নবি!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য কর, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তো কাফিরদের পছন্দ করেন না।”

(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৩২)

উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝলাম আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কর্তৃক নির্দেশিত পথ ও মত অনুসরণ করার নাম ইবাদত। সুতরাং তাঁদের নির্দেশিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page