Skip to content

 

ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত অর্থ কি? ইবাদত বলতে কি বুঝায়? ইবাদাতের পরিচয় ও গুরুত্ব

ইবাদত কাকে বলে, ইবাদত অর্থ কি, ইবাদত বলতে কি বুঝায়

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করা। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ হচ্ছে ইবাদাতের মূল উদ্দেশ্য। তিনি একমাত্র মাবুদ। আর আমরা তাঁর বান্দা। বান্দার কাজ হচ্ছে মাবুদের ইবাদাত করা। ইসলামে কতকগুলো মৌলিক ইবাদাত আছে। যেমন- সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি। এ ইউনিটে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এ পাঠ অধ্যয়নে আপনি- ইবাদত অর্থ কি তা বলতে পারবেন; ইবাদত কাকে বলে এর সংজ্ঞা জানতে পারবেন; ইবাদত বলতে কি বুঝায় তা বুঝতে পারবেন; ইবাদাতের পরিচয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

(১) ইবাদত কাকে বলে?

ইবাদত কাকে বলে: ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর প্রেরিত নবীর প্রদর্শিত পথে যে কাজ করি তাই ইবাদাত।

আল্লাহর প্রতি মানুষের যে সব দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তা পালন করাই ইবাদাত।

মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হল ইবাদাতের মূল লক্ষ্য। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেক আল্লাহ নির্দেশিত যে কোন কাজই ইবাদাত।

মোটকথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কর্তৃক নির্দেশিত পথের সমস্ত কাজই ইবাদাত। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (স) প্রদর্শিত পথে চলাই ইবাদাত।

এভাবে আমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে চলি তাহলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। আমাদের তিনি পুরস্কৃত করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা পাব অনাবিল সুখ আর শান্তি।

(২) ইবাদত অর্থ কি?

ইবাদত অর্থ কি: ইবাদাত আরবি শব্দ। এর অর্থ দাসত্ব করা, বন্দেগি করা, আনুগত্য করা, উপাসনা করা, স্তব-স্তুতি করা, আরাধনা-অর্চনা করা।

(৩) ইবাদত বলতে কি বুঝায়?

ইবাদত বলতে কি বুঝায়: ইবাদত বলতে আল্লাহ তা’আলা বান্দার যেসমস্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ভালবাসেন ও পছন্দ করেন এবং যে সমস্ত বিষয় আল্লাহর ভালবাসা ও পছন্দের বিপরীত ও পরিপন্থী, তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে বুঝায়। যেমন- সালাত আদায় করা,কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করা, রোগীর সেবা করা, কথা বলার সময় সত্য কথা বলা সব কিছুই ইবাদত।

See also  ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত কত প্রকার?

(৪) ইবাদতের পরিচয়

ইবাদাতের পরিচয় ও গুরুত্ব

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন সেগুলো ইবাদত।

ইসলাম ধর্মে ইবাদত এর পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। এই পাঁচটি বিষয়ের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।

  1. কালেমা শাহাদাত: কালেমা শাহাদাত বলতে বুঝানো হয়েছে কালেমায়ে শাহাদাত মুখে বলা (সাক্ষ্য দেওয়া) ও অন্তরে বিশ্বাস করা (বিশ্বাস)৷ এই বিশ্বাসকে বলা হয় ঈমান৷
  2. সালাত: নামাজ বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদাত। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
  3. যাকাত: মুসলমানদের নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি অর্জিত হলে তা হিজরি সনের ১ বছর ধরে সংরক্ষিত থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ গরীব-দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করাই হলো যাকাত। 
  4. রোজা: সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য রমজান মাসের প্রতি দিন রোজা রাখা ফরজ।
  5. হজ্জ: শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ্জ্ব সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। আরবি জিলহজ্জ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজ্জ্বের জন্য নির্ধরিত সময়।

(৫) ইবাদাতের গুরুত্ব

ক) ইবাদাতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি

আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন ও পালন করছেন। তাঁরই হাতে রয়েছে আমাদের জীবন-মরণ। তিনিই আমাদের মালিকমনিব, প্রভু। আমরা তাঁর বান্দা। আমাদের কাজ হল তাঁর হুকুমমত চলা ও তাঁরই ইবাদাত-বন্দেগি করা। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁরই ইবাদাত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।”

(সূরা যারিআত ৫১:৫৬) 

খ) আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তবায়নই ইবাদাত 

আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব (আশরাফুল মাখলুকাত) হিসাবে অতীব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আমরা আল্লাহর অগণিত নিয়ামতরাজির মধ্যে ডুবে আছি। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁরই প্রতিনিধি করে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাই আমরা আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে একমাত্র তাঁরই আদেশ-নিষেধ মেনে চলব, তাঁরই নিয়মমত পৃথিবীকে চালাব, এটাই আমাদের কাছে ইসলামের দাবি।

See also  ইবাদত অর্থ, কী, কাকে বলে, কত প্রকার? ইবাদতের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

গ) ইবাদাত কেবল আল্লাহর জন্যই

মহাবিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র আল্লাহ। তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতায় আর কারও অংশীদারিত্ব নেই, তার সমকক্ষও কেউ নেই। তাই ইবাদাত করতে হবে একমাত্র তাঁরই জন্য।

আল্লাহ বলেন,

“তারা তো কেবল এ জন্যেই আদিষ্ট হয়েছে যে, আল্লাহর জন্যে একান্তভাবে দাসত্ব ও গোলামী করবে।”

(সূরা বায়্যিনাহ ৯৮:৫)

বান্দার সকল কাজই ইবাদাত

ইবাদাত মানে শুধু উপাসনা বা আধ্যাত্মিক ইবাদতকে বুঝায় না। আল্লাহর নির্দেশিত পথে মুমিনের সকল কর্মকা- ইবাদাতের শামিল। আল্লাহর ঘোষণা থেকে তাই বুঝা যায়।

তিনি বলেন,

“সালাত আদায় করার পর ভূ-ম-লে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে ব্যাপৃত হও।”

(সূরা জুমুআ ৬২:১০)

ঘ) ইবাদাত সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহর জন্য

মানুষ যাতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মানার যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়; সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে আমাদের জন্য সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ্জের মত চারটি বুনিয়াদি ইবাদাত বাধ্যতামূলক করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ে এই ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে আমরা সর্বক্ষণের জন্যে আল্লাহর ইবাদাত করার এবং ইবাদাতে নিয়োজিত থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি।

ঙ) সকল নবী ইবাদাতের প্রতি আহ্বান করেছেন

পৃথিবীতে যত নবী-রাসূূলের আগমন ঘটেছে, সবাই আল্লাহর ইবাদাতগুযার বান্দা ছিলেন। যেমন-

আল্লাহ বলেন,

“তারা সবাই আমার ইবাদাতগুযার বান্দা ছিলেন।”

(সূরা আম্বিয়া ৭৮: ৭৩)

আর সকল নবী-রাসূলের একই আহ্বান ছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে পরিত্যাগ কর।

চ) দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য ইবাদত

মানুষের পার্থিব জীবনে সুখন্ডশান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য যেমন আল্লাহর ইবাদত করা এবং তারই হুকুম আহকাম মেনে চলা অপরিহার্য, তেমনি পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের অনন্ত সুখন্ডশান্তির জন্য ইবাদাত করা প্রতিটি মানব সন্তানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ইবাদত কাকে বলে, ইবাদত অর্থ কি, ইবাদত বলতে কি বুঝায়? ইবাদাতের পরিচয় ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারলাম।

See also  ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত কত প্রকার?

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেবা জীব। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য অতি মহৎ। মহান আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করা। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে তাঁর ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ হচ্ছে ইবাদাতের মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যাবতীয় উত্তম কাজই হল ইবাদাত। তিনি একমাত্র মাবুদ। আমরা তাঁর আব্দ বা বান্দা। আবদের কাজ হচ্ছে মাবুদের ইবাদাত করা। ইসলামে কতকগুলো মৌলিক ইবাদাত আছে। যেমন- সালাত, যাকাত, সাওম, হজ্জ।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page