(১) ইলম শব্দের অর্থ কী?
ইলম আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- জ্ঞান, জানা, অবগত হওয়া, বিদ্যা ইত্যাদি।
(২) ইলম কী, কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায়, ইলম হলো কোনো বস্তুর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করা।
অপরদিকে ইসলাম অর্থ আনুগত্য করা ও আত্মসমর্পণ করা। তাই প্রতিটি মুসলিম কার আনুগত্য করবে এবং কীভাবে করবে? কার নিকট আত্মসমর্পণ করবে? এবং কীভাবে আত্মসমর্পণ করবে? তা অবশ্যই জানতে হবে। ইলম ব্যতীত তা জানা যাবে না। তাই ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম।
(৪) ইলম কত প্রকার?
ইলম দুই ভাগে বিভক্ত। যথা:
- দীনি ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান)
- দুনিয়াবি ইলম (পার্থিব জ্ঞান)
দীনি ইলম বলতে সাধারণত ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞানকেই বুঝায়। যেমন- কুরআন, হাদিস, ফিকাহ, তাফসির ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান।
আর দুনিয়াবি ইলম বলতে শুধু পার্থিব উন্নতির সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞানকেই বুঝায়। যেমন- গণিত, বিজ্ঞান, ভূগোল, সাহিত্য, পদার্থ, রসায়ন ইত্যাদির জ্ঞান।
অন্যভাবে, ইলমকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- গ্রহণীয় জ্ঞান
- বর্জনীয় জ্ঞান
গ্রহণীয় জ্ঞান হলো, যে জ্ঞান ইহকাল ও পরকালে মানুষের কল্যাণে আসে। যেমন- নৈতিক জ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল, পদার্থ-রসায়নসহ সকল কল্যাণকর জ্ঞান।
আর বর্জনীয় জ্ঞান হলো, যে জ্ঞান মানুষের কোনো কল্যাণে আসে না বরং যার দ্বারা ইহকাল ও পরকালে অকল্যাণ সাধিত হয়। যেমন- অনৈতিক জ্ঞান, চুরি, ডাকাতি, অন্যায়, জুলুম, অবৈধ সম্পদ অর্জন ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
ইসলামের দৃষ্টিতে, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবে প্রত্যেক সম্প্রদায় বা দেশ থেকে একদলকে অবশ্যই ইসলাম ধর্মের জ্ঞানে পণ্ডিত হতে হবে, অন্যথায় সকলকেই আল্লাহর নিকট পরকালে কৈফিয়ত দিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
“তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ বের হয় না কেন, যাতে তারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে।”
(সূরা আত- তাওবা, আয়াত ১২২)
সুতরাং আমাদের মধ্যে একদল লোককে অবশ্যই দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে দীনি শিক্ষার ব্যাপারে যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনিভাবে পার্থিব শিক্ষা অর্জনেরও গুরুত্ব রয়েছে। তবে তা অবশ্যই আল্লাহর কোনো বিধানের পরিপন্থী হতে পারবে না। বরং তার সাথে নৈতিকতার সমন্বয় থাকতে হবে। কারণ শিক্ষার সাথে নৈতিকতা থাকলেই কেবল মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। আর শিক্ষার সাথে নৈতিকতা না থাকলে মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যায়।
মূলত ইসলামের উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ করা।
যেমন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“দীন হলো কল্যাণ করা।”
(মুসলিম)
তাই যেসব ইলম মানবজীবনে কল্যাণ সাধন করে তা অর্জন করা অবশ্যই কর্তব্য। সুতরাং যে ইলম মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ সাধন করবে তা আমরা শিখব ও শিখাব।
(৩) ইসলামে ইলমের গুরুত্ব
ইসলামে ইলম (জ্ঞান) এর গুরুত্ব এত বেশি যে, মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন নাজিলের সূচনা করেছেন “পড়ুন” শব্দ দ্বারা।
আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,
“পড়ুন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।”
(সূরা আলাক, আয়াত ১)
সুতরাং পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন হয় বিধায় মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে এবং পরিপূর্ণ মানুষরূপে গড়ে উঠতে জ্ঞানচর্চা অপরিহার্য। জ্ঞানবান ব্যক্তি ও অজ্ঞ ব্যক্তি কখনো সমান হতে পারে না। জ্ঞান জ্ঞানীর মর্যাদা সমৃদ্ধ ও সমুন্নত করে।
যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদায় সমুন্নত করবেন।”
(সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত ১১)
ইসলাম জ্ঞানার্জনকে সকল মুসলিমের উপর ফরজ (আবশ্যক) করেছে।
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
“ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।”
(ইবনে মাজাহ)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অন্যত্র জ্ঞানার্জনকে উত্তম ইবাদত বলে অভিহিত করেছেন। ইলমের অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে যে ধরনের ইলম অর্জন করলে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করা যায়, বৈধ-অবৈধ বোঝা যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায় তাই হলো উত্তম ইলম।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।