(১) কর্তব্যপরায়ণতা কী?
আখলাকে হামিদাহ-র অন্যতম হলো কর্তব্যপরায়ণতা। মানুষের সার্বিক উন্নতি ও সফলতার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। কর্তব্যপরায়ণতা হলো যথাযথভাবে কর্তব্য আদায় করা, দায়িত্বসমূহ পালন করা ইত্যাদি।
(২) কর্তব্যপরায়ণতা কাকে বলে?
মানুষ হিসেবে আমাদের উপর নানাবিধ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন থাকা, সময়মতো সুন্দর ও সুচারুভাবে এগুলো পালন করা এবং এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ অবহেলা বা উদাসীনতা প্রদর্শন না করাকেই কর্তব্যপরায়ণতা বলা হয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
“প্রত্যেকে যা করে তদনুসারে তার স্থান রয়েছে এবং তারা যা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।”
(সূরা আল- আনআম, আয়াত ১৩২)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে- আমি তো তার শ্রমফল নষ্ট করি না- যে উত্তমরূপে কার্য সম্পাদন করে।”
(সূরা আল-কার্ফ, আয়াত ৩০)
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
“প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্য কারও ভার গ্রহণ করবে না।”
(সূরা আল-আনআম, আয়াত ১৬৪)
অন্য আয়াতে রয়েছে,
“যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না; কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়- এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৬)
পবিত্র কুরআনের অন্যত্র এসেছে,
“আল্লাহ কারও উপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই।”
(সূরা আল- বাকারা, আয়াত ২৮৬)
(৩) কর্তব্যপরায়ণতার নানা দিক
কর্তব্যপরায়ণতা মানবজীবনে সফলতা লাভের প্রধানতম হাতিয়ার। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তাঁর ইবাদত করা আমাদের কর্তব্য।
আমরা সবাই পরিবারের মধ্যে বসবাস করি। সুতরাং পরিবারের সদস্য যথা মাতা-পিতা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি সকলের প্রতি আমাদের নানা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতিও আমাদের নানা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়।
শিক্ষার্থী হিসেবে বিদ্যালয়, শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীর প্রতি আমাদের নানা কর্তব্য রয়েছে।
এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য আসলেও আমাদের পালন করতে হয়।
এসব কর্তব্য সঠিক সময়ে যথাযথভাবে পালন করা উচিত। এগুলোর প্রতি সচেতন থাকা ও এগুলো সম্পাদনে সচেষ্ট হওয়াই কর্তব্যপরায়ণতা।
(৪) কর্তব্যপরায়ণতার গুরুত্ব
মানবজীবনে কর্তব্যপরায়ণতার গুরুত্ব অপরিসীম। যে ব্যক্তি কর্তব্যপরায়ণ সকলেই তাঁকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। তিনি সকলের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন। কর্তব্যপরায়ণতা মানুষকে সফলতা দান করে।
যেমন- ছাত্রজীবনে শিক্ষার্থীর কর্তব্য হলো শিক্ষকদের সম্মান করা, তাঁদের কথা মেনে চলা, ঠিকমতো লেখাপড়া করা, বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। যে শিক্ষার্থী এসব কর্তব্য ভালোভাবে পালন করে সে সবার ভালোবাসা লাভ করে। শিক্ষকগণ তাকে পছন্দ করেন। সে পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। ভবিষ্যৎ জীবনেও সে সফলতা লাভ করে। অন্যদিকে যে শিক্ষার্থী কর্তব্যপরায়ণ নয়, তাকে কেউ পছন্দ করে না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সে ব্যর্থ হয় ৷
কর্তব্যপরায়ণতা মুমিনের অন্যতম গুণ। মুমিন ব্যক্তি তাঁর সকল কর্তব্য সম্পাদন করেন। আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার পাশাপাশি তিনি বাস্তবজীবনের সব দায়িত্ব কর্তব্যও পালন করেন।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর একনিষ্ঠ বান্দাদের পরিচয় দিয়ে বলেছেন,
“তারা কর্তব্য পালন করে এবং সে দিনের ভয় করে যে দিনের অনিষ্ট হবে ব্যাপক।”
(সূরা আদ-দাহর, আয়াত ৭)
কর্তব্য কাজে অবহেলা করলে পরকালে সে জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
একটি হাদিসে মহানবি (সাঃ) বলেছেন,
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।”
(বুখারি)
আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য নানা দায়িত্ব কর্তব্য দিয়েছেন। পরকালে তিনি আমাদের সকলকে কর্তব্য পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন। সেদিন কর্তব্যপরায়ণগণ সহজেই মুক্তি লাভ করবে। তাদের জন্য রয়েছে সফলতা ও জান্নাত।
অন্যদিকে যারা দুনিয়াতে কর্তব্যকাজে অবহেলা করেছে, ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি তারা বিপদগ্রস্ত হবে। তারা শাস্তি ভোগ করবে। তাদের জন্য রয়েছে চিরশাস্তির জাহান্নাম।
আমরা কর্তব্যপরায়ণ হতে সচেষ্ট হব। নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করব। তবেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভ করব।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।
Leave a Reply