Skip to content

জানাজার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

জানাজার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলত

প্রিয় পাঠক, আজকের এই জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের নিয়ত, জানাজার নামাজের দোয়া ও জানাজার নামাজের ফজিলত বিষয়ক আলোচনাটিতে আপনাকে স্বাগতম।

আপনি যদি জানাজার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজিলতসমূহ জানতে আগ্রহী হন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্যই।

(১) জানাজার নামাজ কি ও কেন?

জানাজা শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ হলো খাট বা খাটিয়া, খাটিয়ার উপর দাফন কাফনের জন্য রক্ষিত লাশ।

আর সালাতুল জানাজা বা জানাজার নামাজ হলো এক বিশেষ নামাজ যা মৃত মুসলমানকে কবর দেওয়ার আগে অনুষ্ঠিত হয়।

কোনো মুসলিম মারা গেলে মাগফিরাতের জন্য মরদেহ সামনে নিয়ে বিশেষ নিয়মে যে দোয়া করা হয়, তার নাম জানাজার নামাজ।

এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাজার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার। 

জানাজার নামাজের নিয়ম জানার পূর্বে কিছু তথ্য জেনে রাখি-

  • শরিয়তের দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ হলো ‘ফরযে কেফায়া’। সমাজের কিছুসংখ্যক লোক আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। কিন্তু কেউ আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
  • কোন মৃত মুসলমানকে মাটিতে দাফন করার পূর্বে যে কাপড় পরানো হয় তা কাফন নামে অভিহিত। কাফন ব্যতিরেকে জানাজা পড়া যায় না। মৃতকে গোসল দেওয়া শুরুর আগেই কাফনের কাপড় সংগ্রহ করে রাখতে হয়।
  • জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়। জানাজায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই উত্তম।
  • কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। নামাজিদের কাতার তিন, পাঁচ, সাত এভাবে বিজোড় হওয়া।
  • জানাজার জন্য লাশ কিবলার দিকে রাখতে হবে। লাশ যদি পুরুষ হয় তবে, মাথার পাশ বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন। আর মহিলা হলে মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াবেন, এটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
  • তাকবির তথা ‘আল্লাহু আকবার’ চার বার সরবে উচ্চারণ করা ও জানাজার নামাজ দাড়িয়ে আদায় করা হলো- ফরজ।
  • তাকবিরের পর ডানে ও বামে দুবার সালাম বলে নামাজ শেষ করা হলো- ওয়াজিব।
  • হামদ ও সানা পড়া, দরুদ শরিফ পড়া, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হলো- সুন্নাত।
  • এই নামাজের মধ্যে রুকু ও সেজদা করার বিধান নেই। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জানাজার নামাজ বসে আদায় করার সুযোগ নেই।
  • এককথায়, জানাজার নামাজের নিয়ম হলো মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে সবাই একত্র হয়ে কাতার করে দাঁড়াবেন। চারবার ‘আল্লাহু আকবার’ তাকবির বলবেন। প্রথম তাকবিরের পর সানা, দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়া। তারপর তৃতীয় তাকবিরের পর দোয়া পড়বেন। এরপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
  • জানাজার নামাজের অংগ্রণকারী ব্যাক্তি এক কিরাত সওয়াব পায়। জানাজা ও দাফন উভয়টিতে অংশগ্রহকারী ব্যক্তি দুই উহুদ পাহাড় পরিমাণ সমপরিমাণ সওয়াব পায়। এক কিরাত হলো উহুদ পাহাড় পরিমাণ।

নিম্নে বিস্তারিত সহজ ও সুন্দরভাবে জানাজার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়াগুলো তুলে ধরা হলো।

(১) জানাজার নামাজের নিয়ম

সম্পূর্ণ জানাজার নামাজের নিয়ম ধারাবাহিভাবে বর্ণনা করা হলো-

  1. মৃত ব্যক্তিকে কিবলার দিকে মুখ রেখে, মাইয়েত পুরুষ হলে ইমাম বুক বরাবর দাঁড়াবে, মহিলা হলে মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াবে।
  2. কাতার ঠিক হলে, তারপর মনে মনে নিয়ত করতে হবে। মনে মনে এ নিয়ত করবেন, ‘আমি জানাজার ফরজে কেফায়া নামাজ চার তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আদায়ের নিয়ত করছি।’
  3. প্রথম তাকবির বলে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত বাঁধবে। প্রথম তাকবির ছাড়া বাকি তাকিবরগুলোতেহাত ওঠানো যাবে না। (ইমাম তাকবির উচ্চ স্বরে বলবে এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চ স্বরে পড়বে। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চ স্বরে তাকবির ও দোয়া-দরুদ পড়বে।)
  4. অতঃপর সানা পড়বে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ‘ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা’ এর পর ‘ওয়া জাল্লা সানা উকা’ বাক্যটি পড়া হয়।
  5. সানা শেষ হলে হাত বাঁধা অবস্থায় দ্বিতীয় তাকবির বলে দরুদ শরিফ পড়বে।
  6. এরপর আবার তৃতীয় তাকবির বলে নিম্নে উল্লিখিত জানাজার নামাজের দোয়াটি পড়বে। ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলী হাইয়েনা ওয়া মাইয়্যাতিনা…’ শেষ পর্যন্ত এবং ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে’ শেষ পর্যন্ত।
  7. এরপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
  8. সাধারণত জানাজার নামাযের শেষে মুনাজাত বা দোয়া করতে হয় না কারণ ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুযায়ী এ নামাযের মাধ্যমেই মৃতের জন্য দোয়া করা হয়। জানাজা শেষে মৃতব্যক্তিকে অবিলম্বে গোরস্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং ইসলামী রীতিতে কবর তৈরী করে মাটিতে দাফন করতে হয়।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: যদি কারো নামাজে আসতে দেরি হয়ে যায়, তবে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করতে হবে। সম্ভব হলে চার তাকবীর আদায় করে নিতে হবে, তা যদি সম্ভব না হয়, তবে ইমাম সাহবকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজা নামাজ সম্পন্ন করবেন। জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়, তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই।)

(২) জানাজার নামাজের নিয়ত

জানাজার নামাজের নিয়ত (আরবি): নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে/লেহাযিহিল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।
 
(পুরুষ/ছেলে লাশ হলে এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পড়তে হবে। আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।)
 
জানাজার নামাজের নিয়ত (বাংলা):আমি চার তাকবিরের সহিত ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
 
(নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে, কোন সমস্যা নেই।)
ছানা উচ্চারণ: ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
 
ছানার অর্থ: হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।
দরুদ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা–আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা–আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
 
দরুদের অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করো, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।’ (নাসাঈ ১২৯১)

(৩) জানাজার নামাজের দোয়া

ক) প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ বা নারীর জন্য জানাজার নামাজের দোয়া

দোয়ার উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া ছাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহয়িয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামি ওয়ামান তাওয়াফ্ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ ফাহু আলাল ইমান।
 
দোয়ার অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত, আমাদের মৃত, আমাদের মধ্যে উপস্থিত ও অনুপস্থিত, আমাদের মধ্যে ছোট ও বড়, আমাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ সকলকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্যে যাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবেন তাদেরকে ইসলামের উপর বাঁচিয়ে রাখুন এবং আপনি যাদেরকে মৃত্যু দেবেন, তাদেরকে ইমানের ওপর মৃত্যু দান করুন।

অথবা,

দোয়ার উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফির লি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া সগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়া আলা তুদিল্লানা বা-দাহু।’
 
দোয়ার অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন, তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন, তাকে ইমানের সঙ্গেই মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এরপর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না। 

খ) মৃত ছেলেশিশুর জন্য জানাজার নামাজের দোয়া

দোয়ার উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
দোয়ার অর্থ: হে আল্লাহ! এই বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ, তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।

গ) মৃত মেয়েশিশুর জন্য জানাজার নামাজের দোয়া

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়াহ।
অর্থ: হে আল্লাহ! এই বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।

(৩) গায়েবী জানাজার নামাজের নিয়ম

কবরে দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির কাফন মোড়ানো দেহ সম্মুখে রেখে জানাজার নামাজ পড়াই ইসলামের বিধান।

জানাজা নামাজ আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। লাশ সামনে রেখে ইমাম দাঁড়াবেন এবং তার বরাবর পেছনে লাইনে দাঁড়াবেন মুসল্লিরা। এটাই মূলত জানাজা নামাজের নিয়ম।

বিদ্বানগণের অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত হচ্ছে-

যার জানাজা পড়া হয় নি, কেবল তার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কারো গায়েবানা জানাজা শরী’আত সম্মত নয়।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. ও ইমাম শাফেয়ী রহ. থেকে গায়েবানা জানাজা জায়েয হওয়ার একটি মত পাওয়া যায়। এই দুই ইমাম বলেছেন,

“মৃত ব্যক্তি ভিন্ন শহরে থাকলে গায়েবানা জানাজা জায়েজ। কিন্তু শহরের ভিতরে থাকা মাইয়্যেতের গায়েবানা জানাজা জায়েজ নয়।”

(আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু- ১/৫০৪; মাকতাবাতুল হক্কানিয়্যাহ, পাকিস্তান, আল মাজমু- ৫/২৫৩)

যেমন: কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করে এবং তার জানাজা পড়া না হয়, তাহলে তার গায়েবানা জানাজা পড়া আবশ্যক। কিন্তু যদি তার জানাজার নামাজ যথাযথভাবে একবারও সম্পন্ন হয়ে থাকে তাহলে সঠিক বিধান হলো তার গায়েবানা জানাজা শরী’আতসম্মত হবে না।

কেননা বাদশাহ নাজাশি ছাড়া অন্য কারো গায়েবানা জানাজার কথা হাদীসে উল্লিখিত নেই। আর নাজাশির জানাজার নামাজ তার দেশে সম্পন্ন হয় নি।

নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার গায়েবী জানাজা পড়িয়েছেন।

অনেক বড় বড় সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় ভিন্ন স্থানে মৃত্যুবরণ করেন; কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাজা পড়েছেন মর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি।

তাই বলা যায়-

যে লাশের কোথাও জানাজার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাজা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাজা পড়া যাবে না। আর যার একবারও জানাজা পড়া হয় নি, কেবল তার ক্ষেত্রে গায়েবানা জানাজা পড়া যাবে।

গায়েবী জানাজার নামাজের এবং উপরে উল্লিখিত সাধারন জানাজার নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া সব একই। শুধু পার্থক্য হলো, গায়েবী জানাজাতে মাইয়েতের মৃত দেহ সামনে থাকে না, সাধারন জানাজা মাইয়েতের মৃত দেহ সরাসরি সামনে উস্থিত থাকে।

(৪) জানাজার নামাজের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

জানাজার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির প্রতি জীবিতদের পক্ষ থেকে বিশেষ দোয়া, ইসলামি শরিয়তে জানাজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।

জানাজার নামাজে মৃত-জীবিত, উপস্থিত, অনুপস্থিত নারী-পুরুষ সবাইকে দোয়ার মধ্যে শামিল করা হয়।

এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেছেন,

“যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাজার সালাত আদায় করবে, তখন তার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করবে।”

(আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

কেউ মারা গেলে অপর মুসলিমের জন্য তার জানাজা কাফন-দাফন করা আবশ্যক।

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন,

“হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।”

(তিরমিজি)

জানাজা নামাজে শুধু মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় না বরং জানাজায় অংশগ্রহণকারী সকলে উপকৃত হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি জানাজার সালাত আদায় করবে তার জন্য এক কিরাত সওয়াব আর যে ব্যক্তি দাফন কার্য সম্পাদন হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবে তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব রয়েছে।”

(তিরমিযি)

উল্লেখ্য, একেকটি কিরাত হলো উহুদ পাহাড় পরিমাণ। সুতরাং আমরা জানাজার নামাজ আদায় করে অসীম সওয়াব লাভের চেষ্টা করব ও এই জানাজার নামাজের ফজিলতটি গ্রহণ করব।

কোন মৃত মুসলমানকে কবর দেয়ার পূর্বে, জানাজার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া, এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া ও সুপারিশ করা হয়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন,

“যে মুসলিম মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে নাই এমন ৪০ জন লোক নামাজ আদায় করবে, তবে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন।” 

(মুসলিম)

সবশেষ,

প্রত্যেক প্রাণকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।

মানুষ চিরজীবী নয়। প্রত্যেক মানুষকে একদিন পরপারে যেতে হবে। যে শিশুর আজ জন্ম হলো তাকেও একদিন না একদিন এই সুন্দর পৃথিবী ছাড়তে হবে, যেতে হবে পরপারে। এই নির্দিষ্ট সময়ের পৃথিবীটি মানুষের জন্য পরীক্ষা।

জানাজার নামাজ আদায় করা মুসলমান সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব। অর্থাৎ কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাজার নামাজ পাঠ করতে হবে। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।

তাই আমাদের জানাজার নামাজের নিয়ম, জানাজার নামাজের নিয়ত, জানাজার নামাজের দোয়া ও জানাজার নামাজের ফজিলতসমূহ জানা থাকা দরকার। তাই আশা করি আজরে এই পোষ্টটি থেকে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই-বোন উপকৃত হবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় এবং নিজেদের সাওয়াব বৃদ্ধিতে সুন্দরভাবে জানাজার নামাজের নিয়ম মেনে তা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts