Skip to content

 

নারীর প্রতি সম্মানবোধ কী? এর গুরুত্ব ও উপায় এবং ইসলামে নারীর মর্যাদা ও সম্মান

নারীর প্রতি সম্মানবোধ কী এর গুরুত্ব ও উপায় এবং ইসলামে নারীর মর্যাদা ও সম্মান

(১) নারীর প্রতি সম্মানবোধ কী?

নারীর প্রতি সম্মানবোধ আখলাকে হামিদাহ-র অন্যতম। এটি একটি মহৎগুণ। নারীর প্রতি সম্মানবোধ ব্যাপক অর্থবোধক। সাধারণ অর্থে এটি নারীকে সম্মান প্রদর্শনের অনুভূতি বা মনোভাবকে বুঝিয়ে থাকে।

আর ব্যাপকার্থে নারীর প্রতি সম্মানবোধ হলো নারী জাতির প্রতি সম্মানজনক মনোভাব।

যেমন, সৃষ্টির বিচারে নর ও নারীর সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রদান, নারী বলে কাউকে ছোট মনে না করা, নারী হিসেবে কাউকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করা। বরং যথাযথভাবে তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা, তাদের কাজ করার সুযোগ প্রদান করা, তাদের মাল-সম্পদ, ইজ্জত, সম্মানের সংরক্ষণ করা ইত্যাদি নারীর প্রতি সম্মানবোধের প্রকৃত উদাহরণ।

(২) নারীর প্রতি সম্মানবোধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামে নারীদের প্রভূত সম্মান দেওয়া হয়েছে।

আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ)-এর আবির্ভাবের পূর্বে সারা বিশ্বজগৎ বিশেষ করে আরব সমাজ অজ্ঞতা ও বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সে সময় নারীদের কোনো মান-মর্যাদা ছিল না। তাদের কোনোরূপ অধিকার ছিল না। সেসময় নারীদের দ্রব্যসামগ্রী মনে করা হতো। তাদের ক্রীতদাসী হিসেবে বাজারে কেনাবেচা করা হতো। তারা ছিল ভোগ্যপণ্য, আনন্দদায়ক, প্রেমদায়িনী, সকল ভাঙনের উৎস, নরকের দরজা, অনিবার্য পাপ ইত্যাদি নামে খ্যাত। এমনকি কোনো সভ্যতায় তাদের বিষধর সাপের সাথে তুলনা করা হতো। অনেক সময় নারীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না। তৎকালীন আরবের লোকেরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপমানজনক মনে করত ও কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিত।

আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাদের এ হীন কাজের কথা উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ বলেন,

“যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।”

(সূরা আন-নাহল, আয়াত ৫৮)

ইসলাম নারীদের এহেন অপমানকর অবস্থা থেকে মুক্তি দান করেছে। ইসলামই সর্বপ্রথম নারীদের অধিকার ও মর্যাদা দান করেছে।

জীবনের নানা ক্ষেত্রে নারীদের অবদান ও ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করেছে। মানুষকে নারীর প্রতি সম্মানবোধের আদেশ করেছে। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা লাভের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

See also  আমানত অর্থ, কী, কাকে বলে? আমানত রক্ষার গুরুত্ব

(৩) ইসলামে নারীর মর্যাদা ও সম্মান

সৃষ্টিগতভাবে ইসলামে নর-নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং মানুষ হিসেবে তারা উভয়ই সমান মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা নর-নারী উভয়ের মাধ্যমেই মানবজাতির বিস্তার ঘটিয়েছেন। এতে কারও একার কৃতিত্ব নেই। বরং উভয়েই সমান মর্যাদা ও কৃতিত্বের অধিকারী।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও নারী থেকে।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩)

ধর্মীয় স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীকে পুরুষের সমান সম্মান ও অধিকার প্রদান করেছে। ধর্মীয় কর্তব্য পালন ও ফল লাভের ক্ষেত্রে নর-নারীতে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয়নি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“ইমান গ্রহণ করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে-ই সৎকর্ম করবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ব্যাপারে কারও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না।”

(সূরা আন নিসা, আয়াত ১২৪)

পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও ইসলাম নারীদের মর্যাদা ও সম্মানের ঘোষণা প্রদান করেছে। মা হিসেবে নারীকে সন্তানের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেছে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন,

“মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।”

(মুসনাদে শিহাব আল-কাযায়ি)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, একদা জনৈক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মাতা, ঐ সাহাবি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, অতঃপর কোন ব্যক্তি? রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমার মাতা। এভাবে পরপর তিনবার এরূপ প্রশ্ন করলে রাসুল (সাঃ) একই উত্তর দিলেন। চতুর্থবারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমার পিতা।

এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সন্তানের উপর পিতার চাইতেও মাতার অধিকার তিন গুণ বেশি। এটি মা হিসেবে নারীর অনন্য মর্যাদার পরিচায়ক।

কন্যা হিসেবেও নারীর মর্যাদা অপরিসীম। ইসলাম কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হারাম করেছে। তাদের ভালোভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছে। স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা ও সম্মান স্বামীর অনুরূপ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নারীদের তেমনই ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তারা (নারীগণ) তোমাদের ভূষণ আর তোমরা তাদের ভূষণ।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সংরক্ষণ করেছে। নারীগণ স্বাধীনভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারবে। পিতা-মাতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হিসেবেও তারা সম্পদ লাভ করবে। তাদের সম্পত্তিতে শুধু তাদেরই কর্তৃত্ব থাকবে। তারা তাদের ধন-সম্পদ স্বাধীনভাবে ব্যয় করতে পারবে।

See also  আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি? আখলাকে হামিদাহ উদাহরণ

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ, এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ।”

(সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩২)

এভাবে মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম নারী জাতির অধিকার ও মর্যাদা ঘোষণা করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রেই ইসলাম নারীদের এ অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে।

(৪) নারীর প্রতি সম্মানবোধের উপায়

নারীর প্রতি সম্মানবোধ মানুষের উত্তম মন-মানসিকতার পরিচায়ক। শুধু অন্তর দ্বারা সম্মান ও মর্যাদা দেখালেই চলবে না বরং নিজ কাজ-কর্ম ও আচার ব্যবহার দ্বারা এর প্রমাণ দিতে হবে।

আমাদের পরিবারে ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যেমন মা, মেয়ে, বোন, স্ত্রী, দাদি, ফুফু, খালা রয়েছেন, তেমনি শিক্ষিকা, সহপাঠী ও নারী সহকর্মী রয়েছেন। এদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা, যথাযথ শ্রদ্ধা-সম্মান ও মায়া-মমতা প্রদর্শন, জীবন ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রদান করা ইত্যাদি নারীর প্রতি সম্মানবোধের নিদর্শন। আল-কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে আমাদের নানা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করে চলবে।”

(মুসলিম)

অর্থাৎ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবে না, যথাযথভাবে তাদের হক আদায় করবে। বিদায় হজের ভাষণেও মহানবি (সাঃ) নারী জাতির অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন।

স্ত্রীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

“তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে জীবনযাপন করবে।”

(সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৯)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্ত্রীদের প্রতি ভালো ব্যবহারকারীদের উত্তম উম্মত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

“তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।”

(তিরমিযি)

অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“নিশ্চয়ই পূর্ণাঙ্গ ইমানের অধিকারী ঐ মুমিন ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও নিজ পরিবারের প্রতি অধিক সদয়।”

(তিরমিযি)

বস্তুত নারীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা মুমিনের নিদর্শন। নারীর প্রতি সম্মানবোধ না থাকলে ইমান পূৰ্ণ হয় না।

আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) নারীদের শ্রদ্ধা করতেন, সম্মান করতেন এবং স্ত্রী ও মেয়েদের ভালোবাসতেন। একদা তিনি সাহাবিগণকে নিয়ে বসা ছিলেন। এ সময় হযরত হালিমা (রা.) তাঁর নিকট আসলেন। হযরত হালিমা ছিলেন মহানবি (সাঃ)-এর দুধমাতা। নবি করিম (সাঃ) তাঁকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। নিজ চাদর বিছিয়ে দিয়ে তাঁকে বসতে দিলেন। তাঁর কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলেন। এভাবে প্রিয়নবি (সাঃ) তাঁকে শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখালেন।

See also  কর্তব্যপরায়ণতা কী, কাকে বলে? এর নানা দিক ও গুরুত্ব

কন্যা সন্তান প্রসঙ্গে নবি করিম (সাঃ) বলেছেন,

“যে ব্যক্তির কোনো কন্যা সন্তান থাকে আর সে তাকে জীবন্ত কবর দেয় না, তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না, অন্য সন্তান অর্থাৎ ছেলে সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর প্রাধান্য দেয় না, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

(আবু দাউদ)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে,

“একদা জনৈক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের উপর স্ত্রীদের কী অধিকার রয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, তুমি যা খাবে তাদেরও তা-ই খাওয়াবে, যা পরিধান করবে তাদেরও তা-ই পরিধান করাবে, তাদের মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না, তাদের গালিগালাজ করবে না, আর গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও তাদের বিচ্ছিন্ন রেখো না।”

(আবু দাউদ)

নারীর প্রতি সম্মানবোধ আখলাকে হামিদাহ-র অন্যতম। পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জনের জন্য এ গুণ থাকা আবশ্যক।

অন্তর থেকে নারীদের সম্মান করতে হবে, মায়া-মমতা-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং স্ত্রী ও মেয়েদের ভালোবাসতে হবে। পাশাপাশি নিজ আচরণ ও কাজকর্ম দ্বারাও এর প্রমাণ দিতে হবে। নারীদের কোনোরূপ অত্যাচার করা যাবে না, ঠাট্টা-বিদ্রূপ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না, ইভটিজিং করা যাবে না, তারা মনে কষ্ট পায় বা তাদের সম্মানহানি হয় এরূপ কোনো কাজ করা যাবে না। বরং সদাসর্বদা তাদের প্রাপ্য ও অধিকার আদায় করতে হবে।

প্রয়োজনমতো নারীদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য তাদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে হবে। এভাবে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যায়। এতে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page