Skip to content

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা বেতের নামাজের নিয়ম

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা বেতের নামাজের নিয়ম

আলোচ্য বিষয়:

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। ইসলামিক আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম। প্রথমেই বলে রাখি আজকের এই বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা বেতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কিত আলোচনায়টি দীর্ঘ ও বিস্তারিত হবে।

কারণ এখানে-

বিতর নামাজের নিয়ত, বিতর নামাজের বাংলা নিয়ত, তিন রাকাত বিতর নামাজের আরবি নিয়ত, নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা কি?, বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম, এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম, তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম, পাঁচ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম, বিতরের নামাজে কি কি সূরা পড়তে হয়?, বিতরের নামাজ পড়ার জন্য হাদিসে বর্ণিত ২টি দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ, বিতরের নামাজ পড়া কি?, বিতরের নামাজ পড়ার সময় কতক্ষণ থাকে?, বিতরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়?, পাঁচ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার দলিল, তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার দলিল, এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার দলিল, ইত্যাদি।

সমূহ বিষয়গুলিকে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আশা করি এই পোষ্টটি থেকে আমাদের অনেক দ্বীনী ভাই-বোন বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত প্রমাণসহ জানতে পারবেন ও উপকৃত হবেন ইংশাআল্লাহ। তাই আশা করি মনোযোগের সাথে শেষ অবধি পড়বেন।

(১) বিতর নামাজের নিয়ত

নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বা গদবাঁধা মুখস্ত নাওয়াইতু… পড়া এটা সুন্নতের খেলাফ।

নিয়তের জন্যে মুখে “নাওয়াইতুআন উসালিল্লাহি তাআ’লা…” এই দোয়া পড়ে বা মুখে উচ্চারণ করে যে নিয়ত পড়া হয়, সেটা আল্লাহর রাসূল (সা.) পড়েন নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এইভাবে নিয়ত করতেন না।

মনে রাখবেন, আমলের পূর্বে অন্তরে নিয়ত “করা” ফরজ, কিন্তু মুখে উচ্চারণ করে নাওয়াইতু দুয়া “পড়া” নিয়ত করা সুন্নতের বিপরীত। নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। তা মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন নেই।

আমরা আপনাদের সাথে বিতর নামাজের আরবি এবং বাংলা উভয় নিয়তই শেয়ার করব।

ক) বিতর নামাজের বাংলা নিয়ত

বিতর নামাজের নিয়ত ফরজ নামাজের ন্যায় ৩ ভাবে হতে পারে (একাকী, জামাত বন্দী হয়ে এবং নিজে ইমাম হলে)। তাই এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাকে ভিন্নভাবে নিয়ত বাঁধতে হবে।

  • ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে: মনে মনে সংকল্প করবেন “আমি কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে ১/৩/৫ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করছি করছি।”
  • একাকী হলে: মন মনে সংকল্প করবেন “আমি কেবলামুখী হয়ে ১/৩/৫ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করছি।”

খ) তিন রাকাত বিতর নামাজের আরবি নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান য়া ওসল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা সালাসা রাকায়াতি সালাতিল ওয়িতরি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহানইইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

প্রায় সকলেই নিয়ত সম্পর্কে যে ভুলটি করে থাকি সেটি হল। নিয়তের ক্ষেত্রে আমরা আরবি নিয়ত কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। মূলত বিষয়টি এরকম নয় নিয়ত নিজ মাতৃভাষায় করাটা অনেক ক্ষেত্রে আরবি থেকে উত্তম।

কেননা আরবি গ্রামারের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আমাদের না থাকায় নিয়তের মধ্যে অনেক ভুল করে থাকি। কিন্তু দেখুন নিজ ভাষায় যখন নিয়ত করবেন তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এছাড়াও প্রত্যকটা নামাজের আলাদা আলাদা নিয়ত মুখস্ত করে রাখা ছোট, বৃদ্ধ ও অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়, তারা না মুখস্ত নিয়ত পাড়লে বিব্রত বোধ করে।

গ) নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা কি?

নিয়ত আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো- ইচ্ছা বা সংকল্প। আর ইচ্ছার স্থান হচ্ছে অন্তর। তা মুখে উচ্চারণ করার বাধ্যবাধকতা নেই। অন্তরের দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছা করার নামই হলো নিয়ত।

নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। বিদআত হচ্ছে কুরআন এবং সুন্নাহর বাইরে করা আমল। অর্থাৎ যে আমল রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের যুগে এর কোন প্রচলন ছিল না এবং এর কোন নমুনাও ছিল না। 

নামাজের নিয়ত নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন, নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করতে হয়। অনেকে বলেন, সমাজে যে আরবি নিয়ত প্রচলিত আছে তা বলতে হয়, নইলে কমপক্ষে মুখে এতটুকু বলতে হয় যে, আমি নামাজের নিয়ত করছি।

এমন ধারণা সঠিক নয়। কারণ নামাজ বা রোজার জন্য মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়; বরং অন্তরে সংকল্প করাই যথেষ্ট। সুতরাং এ কথা ভাবার কোনো সুযোগ নেই যে, মুখে নিয়ত না করলে নামাজ হবে না।

(২) বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

নবী করীম (সা.) কখনও এক রাকাত, কখনও তিন রাকাত, কখনও পাঁচ রাকাত ইত্যাদি এভাবে বিতর নামাজ আদায় করতেন।

ক) এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম/পদ্ধতি হলো-

  1. মনে মনে নিয়ত করবেন কোন নামাজ কত রাকাত পড়ছেন।
  2. স্বাভাবিকভাবেই তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা সালাত শুরু করার যথারীতি সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ অতঃপর সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর সূরা ইখলাস অথবা অন্য যে কোনো একটি সূরা পাঠ করবেন।
  3. তারপর রুকুতে যাওয়ার আগে অথবা, রুকু থেকে উঠার পর দাঁড়ানো অবস্থায় দুই হাত উত্তোলন করে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দোয়া কুনুত তথা আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইতা.. অথবা আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা… পাঠ করবেন অথবা উভয়টা এবং ইচ্ছে করলে এরপরে অন্যান্য যে কোন দোয়া পাঠ করা যাবে।
  4. তারপর যথারীতি সেজদায় যাবে এবং বাকি নামাজ স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণ করে সালাম ফিরাবেন।

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের পর থেকে ফজরের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এগারো রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি প্রতি দু রাকআত পর সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকআত বিতর পড়তেন। তিনি এ সালাতে এতো দীর্ঘ সিজদা করতেন যে, তাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের যে কেউ পঞ্চাশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতে পারতো। মুআয্যিন যখন ফজরের সালাতের প্রথম আযান শেষ করে নীরব হতো, তখন তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হালকাভাবে দু’ রাকআত (ফজরের সুন্নত) সালাত আদায় করতেন।”

(সুনান ইবনু মাজাহ ১৩৫৮ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

খ) তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

নবী করীম (সা.) তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন দুই নিয়মে। প্রথম পদ্ধতি ও দ্বিতীয় পদ্ধতি উভয়টিই রাসূলের সুন্নাহ ছিল, দুইটাই অনুমোদিত।

তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা প্রথম পদ্ধতি হলো-

  1. অন্যান্য নামাজের মতো প্রথমে দুই রাকআত নামাজ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবেন।
  2. অতঃপর পৃথকভাবে আরও এক রাকআত পড়বেন।
  3. উক্ত এক রাকাতের সূরা পাঠ শেষে করে, রুকুতে যাওয়ার আগে অথবা, রুকু থেকে উঠার পর দাঁড়ানো অবস্থায় দুই হাত উত্তোলন করে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দোয়া কুনুত তথা আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইতা.. অথবা আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা… অথবা উভয়টা এবং ইচ্ছে করলে এরপরে অন্যান্য যে কোন দোয়া পাঠ করা যাবে। অতপর সিজদা শেষে আবার বৈঠকে বসে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দুআ মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন।

নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত,

“আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বিতর সালাতের এক ও দু’ রাকা’আতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। এরপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন।”

(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৩৭ নং)

তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো-

তিন রাক‘আত বিতর একটানা পড়তে হবে। মাঝখানে কোন বৈঠক করা যাবে না।

  1. অন্যান্য নামাযের মতোই প্রথম ও দ্বিতীয় রাকআত পড়বেন। তবে দ্বিতীয় রাকাআতের পর তাশাহহুদের জন্য না বসে সরাসরি দাঁড়িয়ে যাবেন।
  2. তৃতীয় রাকআতে সূরা কিরাআত পাঠ শেষে দু’আ কুনূত পড়ে রুকুতে চলে যাবেন অথবা, সূরা কিরাআত পাঠের পর রুকু দিয়ে আবার উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ কুনুত পড়ে একেবারে সিজদায় চলে যাবেন।
  3. শুধুমাত্র এই তৃতীয় রাকাতের সেজদার পর বসবেন এবং আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দুআ মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবেন।

উছমান ইবন আবু শায়বা (রহঃ) এবং ইবরাহীম ইবন মূসা (রহঃ) …. উবাই ইবন কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতিরের নামাযে সূরা সাব্বিহ্ ইসমা রব্বিকাল আলা, কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করতেন।”

(সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪২৩ নং, হাদিসের মান সহিহ)

আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন,

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিন রাকাআত বিতরের সালাত আদায় করতেন। এর মাঝে তাশাহহুদের জন্য বসতেন না। একাধারে তিন রাকআত পড়ে শেষ রাকআতে বসতেন ও তাশাহহুদ পড়তেন। এভাবে উমর (রা)-ও বিতর পড়তেন।”

(মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪০; বায়হাক্বী হা/৪৮০৩, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪১; তা’সীসুল আহকাম ২/২৬২ পৃঃ; সনদ ছহীহ)

ইবনু ত্বাঊস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে,

“রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। মাঝে বসতেন না।”

(মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪৬৬৯, ৩য় খন্ড, পৃঃ ২৭)

ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন,

“রাসূল (ছাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন। শেষের রাক‘আতে ছাড়া তিনি বসতেন না।”

(মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৪৭১, ৪/২৪০; বিস্তারিত দ্র: ইরওয়াউল গালীল হা/৪১৮-এর আলোচনা)

হাদিসে এসেছে,

“আত্বা (রাঃ) তিন রাক‘আত বিতর পড়তেন কিন্তু মাঝে বসতেন না এবং শেষ রাক‘আত ব্যতীত তাশাহহুদ পড়তেন না।”

(মুস্তাদরাক হাকেম হা/১১৪২)

বাংলাদেশে তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা প্রচলিত পদ্ধতি হলো-

এ পদ্ধতিটি আমাদের বাংলাদেশে প্রচলিত। এ পদ্ধতিতে ২য় রাকআত শেষে বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়া হয়।

  1. অন্যান্য ফরয সালাতের ন্যায় দুই রাকআত সালাত পড়ে তাশাহহুদ পড়তে হয়।
  2. এরপর তৃতীয় রাকআতেরে জন্য দাড়িয়ে সূরা ফাতিহার পর কোনো সূরা বা আয়াত পড়তে হয়।
  3. কিরাআত শেষ করার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হয়।
  4. তারপর হাত বেঁধে চুপে চুপে দোয়া কুনুত পড়তে হয়।
  5. দোয়া কুনুত শেষে রুকুতে যেতে হয়।
  6. তারপর যথারীতি দুই সিজদার পর শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে বিতর সালাত সমাপ্ত করতে হয়।

উল্লেখ্য,

  • তিন রাক‘আত বিতর পড়ার সময় ২য় রাক‘আতে বৈঠক করার কোন ছহীহ দলীল নেই।
  • বিতর ছালাতে ক্বিরাআত শেষ অতঃপর কুনূত পড়ার পূর্বে করে তাকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বাঁধার যে নিয়ম সমাজে চালু আছে তা ভিত্তিহীন। এ মর্মে কোন দলীলও নেই। অথচ এটাই সমাজে চলছে। বরং এটাকে ওয়াজিব বলা হয়েছে।
  • বিতর ছালাতে কুনূত পড়ার পর মুখে হাত মাসাহ করার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। উক্ত মর্মে যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো সবই যঈফ।

গ) পাঁচ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

পাঁচ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা পদ্ধতি হলো-

  1. টানা চার রাকাত নামাজ আদায় করবেন মাঝখানে কোন বসবেন না।
  2. পঞ্চম রাকআতে সূরা কিরাআত পাঠ শেষে দু’আ কুনূত পড়ে রুকুতে চলে যাবেন অথবা, সূরা কিরাআত পাঠের পর রুকু দিয়ে আবার উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ কুনুত পড়ে একেবারে সিজদায় চলে যাবেন।
  3. শুধুমাত্র এই পঞ্চম রাকাতের সেজদার পর বসবেন ও আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দুআ মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেবেন।

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত,

“রাসূল (ছাঃ) পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়তেন। কিন্তু তিনি শেষ রাক‘আতে ছাড়া বসতেন না”

(নাসাঈ হা/১৭১৭, ১/১৯৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ; শারহুস সুন্নাহ ১/২৩১ পৃঃ)

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পাঁচ রাকআত দ্বারাও (সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে দিতেন এবং কেবলমাত্র শেষ রাকআতেই বসতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭২০ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

(৩) বিতরের নামাজে কি কি সূরা পড়তে হয়?

অন্যন্য নামাজের মত, বিতরের নামাজ সূরা ফাতিহার সাথে কোরআনের যেকানো সূরা মিয়েয়ে পড়ার অনুমতি আছে।

পাশাপাশি নিম্নক্ত সূরা দিয়েও রাসূল (সা.) বিতরের তিন রাকাত নামাজ আদায় করেছেন বলে দলিল পাওয়া যায়-

  1. ১ম রাকাতে সূরা আ’লা;
  2. ২য় রাকাতে সূরা কাফিরুন;
  3. ৩য় রাকাতে সূরা ইখলাস;
  4. নামাজ শেষে সালম ফিরিয়ে ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ বাক্যটি তিনবার;

আলী ইবনু মায়মূন (রহঃ) … উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাত তিন রাকআত আদায় করতেন। প্রথম রাকআত “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে “ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” তৃতীয় রাকআতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন এবং রুকুতে যাওয়ার পুর্বে দোয়ায়ে কুনূত পড়তেন। যখন সালাত শেষ করতে যেতেন তখন তিনি শেষ পর্যন্ত তিনবার سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ পড়তেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০২ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

ইয়াহইয়া ইবনু মুসা (রহঃ) … উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং শেষ রাকআতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। আর শুধুমাত্র শেষ রাকআতেই সালাম ফিরাতেন অর্থাৎ সালামের পর তিনবার سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ বলতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৪ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

(৪) বিতরের নামাজ পড়ার জন্য হাদিসে বর্ণিত ২টি দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

অধিক বিশুদ্ধ মতে বিতর সালাতে দোয়া কুনুত পাঠ করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। অর্থাৎ না পড়লেও সালাতের কোন ক্ষতি হবে না। (যদিও হানাফিদের নিকটে তা ওয়াজিব এবং তাদের বিতর সালাত পড়ার পদ্ধতিও ভিন্ন)।

দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া আবশ্যিক নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোনো দোয়াও করতে পারেন। হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কোরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে, এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েজ আছে।

ইমাম নববি বলেন,

“জেনে রাখুন— অগ্রগণ্য মাজহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তাই যেকোনো দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কোরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে। তবে হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।”

(আল-আজাকার, পৃষ্ঠা-৫০)

দু’আ কুনূত এক বা একাধিক পড়া যায়। হাদীসে বর্ণিত যত দু’আ আছে সেগুলোও পড়া যেতে পারে। প্রসিদ্ধ দুটি দোয়া কুনুত নিচে দেওয়া হলো:

ক) দোয়া কুনুত-১

(দেখুন→ ইবনে খুযাইমা: ১১০০)

দোয়া কুনুত-১ আরবি:
اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
 
দোয়া কুনুত-১ বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু'মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু 'আলাইকা, ওয়া নুছনি 'আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ক।
 
দোয়া কুনুত-১ বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা আপনার সাহায্য চাই, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, আপনার উপর আমরা ইমান এনেছি এবং, আপনার উপরই ভরসা করি, আর আপনার উত্তম প্রশংসা করি এবং আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, আপনার প্রতি অকৃতজ্ঞ হই না, যারা আপনার নাফরমানি করে, আমরা তাদের ত্যাগ করি এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ! আমরা আপনারই ইবাদাত করি, আপনার উদ্দেশ্যেই সালাত পড়ি এবং আপনাকেই সিজদাহ করি। আপনার দিকেই ধাবিত হই এবং আপনার হুকুম পালনের জন্যই সদা সচেষ্ট থাকি। আমরা আপনার রহমতের আশা করি, আর আপনার শাস্তিকে ভয় পাই। নিঃসন্দেহে আপনার আযাব তো কাফেরদের সাথে সম্পৃক্ত।

ক) দোয়া কুনুত-২

(দেখুন→ তিরমিযী: ৪৬৪, নাসাঈ: ১৭৪৫, আবু দাউদ: ১৪২৫)

দোয়া কুনুত-২ আরবি: 
‏ اللھم اهدني فيمن هديت وعافني فيمن عافيت وتولني فيمن توليت وبارك لي فيما أعطيت وقني شر ما قضيت إنك تقضي ولا يقضى عليك وإنه لا يذل من واليت ولا يعز من عاديت تباركت ربنا وتعاليت
 
দোয়া কুনুত-২ বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহ দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া’আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক লী ফীমা আ’তাইত, ওয়াক্বিনী শাররামা ক্বাদাইত, ইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্‌দা ‘আলাইকা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্‌যু মান ‘আ-দাইত, তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা'আলাইত।
 
দোয়া কুনুত-২ বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো, যাদের তুমি হেদায়াত করেছ এবং আমাকে তাদের দলভুক্ত করো, যাদের তুমি রক্ষা করেছ। আমাকে অন্তর্ভুক্ত করো তাদের সাথে, যাদের তুমি পছন্দ করেছ, যা কিছু আমাকে দিয়েছ তার মধ্যে বরকত দাও এবং তুমি যে সিদ্ধান্ত নির্ধারিত করেছ, তার অনিষ্টতা থেকে আমাকে রক্ষা কর। কেবল তুমিই সকল ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নাও, কেউ তোমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তুমি যাকে বন্ধু হিসেবে নিয়েছ, সে কখনো অপমানিত হতে পারে না। তুমি যাকে শত্রু মনে কর সে সম্মান পেতে পারে না। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময় অতি মহান!  

(৫) বিতরের নামাজ পড়া কি?

বিতরের সালাত ফরজ সালাতের ন্যায় অত্যাবশ্যকায় নয়। তবে এটি একটি সুন্নত যা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সুন্নত অর্থ্যাৎ, রাসূল (সা.) প্রচলন করেছেন।

সুফইয়ান সাওরী প্রমুখ (রহঃ)……আসিম ইবনু যামরা (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন,

“ফরয সালাতের অনুরূপ বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) অবশ্য করনীয় নয়। এ হ’ল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচলিত এক সুন্নাত।”

(সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৩ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

তাই আমাদের উচিত রাতের সকল নামাজের পর শেষ নামাজ হিসেবে বিতরের নামাজ পড়া।

ক) শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী আলেমগণের মতে বিতরের নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ

সুন্নতে মুয়াক্কাদা ওই সুন্নত, যার ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত এমনভাবে আমল করতেন যে তা বিশেষ অপারগতা ছাড়া কখনো ছাড়তেন না।

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা সালাত আদায় করতেন। আর তার শেষ সালাত হত বিতর।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬০২ নং)

খ) হানাফি আলেমগণের মতে, বিতরের নামাজ পড়া ওয়াজিব

বাংলায় ওয়াজিব এর অর্থ কর্তব্য। যার উপর আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি পেতে হবে।

হযরত আলী (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আল্লাহ তা‘আলা বিতর (বিজোড়)। তিনি বিজোড়কে ভালোবাসেন। অতএব, হে কুরআনের বাহকগণ! তোমরা বিতর সলাত আদায় কর।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৭৮ নং, হাদিসের মান সহিহ)

(৬) বিতরের নামাজ পড়ার সময় কতক্ষণ থাকে?

ক) বিতর নামাজের ওয়াক্ত হলো ইশার পর থেকে ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত

অর্থ্যাৎ, ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় বিতর নামাজ পড়া যায়।

উবায়দুল্লাহ ইবনু ফাদালা (রহঃ) … আবূ নাদরাহ আওয়াকী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবূ সাইদ খুদরি (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিতরের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, তোমরা ভোর হওয়ার পূর্বেই বিতরের সালাত আদায় করে নেবে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৮৬ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

খ) শেষ রাতে ফজরের পূর্বে, তাহাজ্জুদের পর বিতরের নামাজ পড়া উত্তম

কেননা, শেষ রাতে আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর সে সময় দু’আ কবুল হয়ে থাকে। আল্লাহর রাসূল বেশিরভাগ সময় শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ শেষে সর্বশেষ বেতর নামাজপড়তেন।

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাত আদায় করতেন (কখনো) রাত্রের প্রথম ভাগে, (কখনো) রাত্রের শেষ ভাগে (আবার কখনো) রাতের মধ্য ভাগে। তিনি শেষ বয়সে রাত্রের শেষ ভাগেই বিতরের সালাত আদায় করা অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছিলেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৮৪ নং, হাদিসের মান সহিহ)

গ) ঘুম থেকে উঠতে না পারার আশঙ্কা থাকলে ইশার নামাযের পরই বিতর পড়ে নেওয়া ভালো

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“তোমাদের মধ্যে কেউ শেষরাতে জাগতে পারবে না বলে আশংকা করলে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিতর পড়ে নেয়, অতঃপর ঘুমায়। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রাতের শেষভাগে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার আশা করে সে যেন শেষরাতে বিতর পড়ে। কেননা শেষ রাতের কিরাআত (শুনার জন্য ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। তাই তা অধিক উত্তম।”

(সুনান ইবনু মাজাহ ৩/১১৮৭; মুসলিম ৭৫১-২; তিরমিযী ৪৫৫; আহমাদ ১৪৩৩৫ ও ২৭৫২১; তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ২৬১০; তাহক্বীক্ব আলবানী: সহিহ্;)

ঘ) বিতর নামাজ অবশ্যই এশা ও কেয়ামুল লাইল/তারাবিহ/তাহাজ্জুদসহ সমস্ত রাতের নামাজের শেষে আদায় করতে হবে

কুতায়বা (রহঃ) … নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি রাত্রে সালাত আদায় করে সে যেন (সকল নামাজের) শেষে বিতরের সালাত আদায় করে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নির্দেশ দিয়েছেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৮৫ নং, হাদিসের মান সহিহ)

(৭) বিতরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হয়?

‘বিতর’ আরবি শব্দ। এর অর্থ বেজোড়। বিতরের নামাজ ১ রাকাত, ৩ রাকাত, ৫ রাকাত এভাবে বেজোড় সংখ্যায় পড়া যায়।

রাসূল (সা.) কখনও এক রাকাত, কখনও তিন রাকাত, কখনও পাঁচ রাকাত, কখনও আবার সাত বিতর নামাজ আদায় করেছেন।

এছাড়াও রাসূল (সা.) কর্তৃক বিভিন্ন সময় নয়, এগারো ও তের রাকাত বেতর আদায় করারও দলিল পাওয়া যায়।

ক) পাঁচ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার দলিল

.

আব্দুর রহমান ইবনুল মোবারক (রহঃ) …. আবু আয়্যূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

“বিতিরের নামায প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হক। যে ব্যক্তি তাকে পাঁচ রাকাত আদায় করতে চায়, সে পাঁচ রাকাত আদায় করবে; যে ব্যক্তি তিন রাকাত আদায়ের ইচ্ছা করে, সে ঐরূপ করবে এবং যে ব্যক্তি এক রাকাত আদায় করতে চায়, সে এক রাকাত আদায় করবে।”

(সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৪২২ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

.

আমর ইবনু উসমান (রহঃ) … আবূ আইয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“বিতরের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যার ইচ্ছা হয় সে সাত রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে, আর যে ইচ্ছা করে সে পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে। আর যে ইচ্ছা করে সে তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে আর যে ইচ্ছা করে সে এক রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১৩ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

.

আব্বাস ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) … আবূ আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“বিতরের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যে ইচ্ছা করে সে পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে আর যে ইচ্ছা করে সে তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে আর যে ইচ্ছা করে সে এক রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দেবে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১৪ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

রাবী ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আতা ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবূ আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে,

“বিতরের সালাত ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি পাঁচ রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দেয়া ভাল মনে করে সে যেন তাই করে। আর যে ব্যক্তি তিন রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দেয়া ভাল মনে করে, সে যেন তাই করে। আর যে ব্যক্তি এক রাকআত দ্বারা বেজোড় বানিয়ে দেয়া ভাল মনে করে, সে যেন তাই করে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১৫ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পাঁচ রাকআত দ্বারাও (সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে দিতেন এবং কেবলমাত্র শেষ রাকআতেই বসতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭২০ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

কুতায়বা (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ রাকআত দ্বারাও বেজোড় করে দিতেন, সাত রাকআত দ্বারাও বেজোড় করে দিতেন। ঐ রাকআতগুলোর মধ্যে সালাম ফিরিয়ে কিংবা কথা বলে সালাতকে বিভক্ত করতেন না।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১৭ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত রাকআত বা পাঁচ রাকআত দ্বারা সালাতকে বেজোড় করে দিতেন। ঐ রাকাতগুলোর মধ্যে সালাম ফিরিয়ে সালাতকে বিভক্ত করতেন না।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১৮ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

.

ইসমাঈল ইবনু মাসউদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বয়স বেড়ে গেল এবং শরীর ভারী হয়ে গেল তিনি সাত রাকআত সালাত আদায় করতেন, শুধুমাত্র শেষ রাকআতেই বসতেন আর সালাম ফিরানোর পর বসা অবস্থায় আরো দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। হে বৎস! তাহলে মোট নয় রাকআত সালাত আদায় করা হল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সালাত আদায় করতেন তা সর্বদা আদায় করতে ভালবাসেন।” (সংক্ষিপ্ত)

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭২১ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

.

আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাক’আত দিয়ে তিনি বিতর আদায় করতেন এর শেষে ব্যতীত কখনও বসতেন না।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫৯৩ নং)

১০.

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ….. আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত (নামায/নামাজ) ছিল তের রাকআত। এর মধ্যে পাঁচ রাকআত বিতর আদায় করতেন। এই পাঁচ রাকআতের শেষ রাকআত ছাড়া আর কোথাও বসতেন না। পরে মুয়াজ্জ্বীন (ফজরের) আযান দিলে তিনি উঠে দাঁড়াতেন এবং দু’রাকআত সংক্ষেপ্ত সালাত (সুন্নাত) আদায় করতেন।”

(সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৯ নং)

খ) তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়ার দলিল

.

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু আলীর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে গেলেন, তারপর মিসওয়াক করে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পরে শুয়ে গেলেন তারপর জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক করলেন। অতঃপর উযু করে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। ছয় রাকআত পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিন রাকআত বিতরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকআত (ফজরের সুন্নত) সালাত আদায় করলেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৭ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

হারুন ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে আট রাকআত (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকআত বিতরের সালাত আদায় করতেন এবং ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১০ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত,

“তিনি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত (কেয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদ/রাতের নামাজ) কিরূপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই, তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর তিনি তিন রাক’আত (বেতর) সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘূমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫৯৬ নং)

.

হারুন ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে আট রাকআত (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায় করতেন এবং তিন রাকআত বিতরের সালাত আদায় করতেন এবং ফজরের ফরয সালাতের পূর্বে দু’রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭১০ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

আব্দুল্লাহ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু আলীর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“আমি একরাত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তিনি নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে উযু এবং মিসওয়াক করে إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لأُولِي الأَلْبَابِ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন, আমি তার নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর জাগ্রত হয়ে উযু ও মিসওয়াক করলেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পুনরায় শুয়ে পড়লেন। আবার জাগ্রত হয়ে উযু ও মিসওয়াক করলেন। তারপর দু’রাকআত সালাত আদায় করে তিন রাকাআত বিতর আদায় করলেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৮ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু আলীর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে গেলেন, তারপর মিসওয়াক করে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। পরে শুয়ে গেলেন তারপর জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক করলেন। অতঃপর উযু করে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। ছয় রাকআত পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিন রাকআত বিতরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর দু’রাকআত সালাত (ফজরের সুন্নাত) আদায় করলেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৭ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

আহমদ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“তিনি তিন রাকআত বিতরের সালাত আদায় করতেন “সাব্বিহিস্‌মা রাব্বিকাল আলা”, “ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” দ্বারা।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৬ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

হুসায়ন ইবনু ঈসা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকআত বিতেরের সালাত আদায় করতেন। প্রথম রাকআত –“সাব্বিহিস্‌মা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে “কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে “কুলহুয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৫ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

.

ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম রাকআতে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” দ্বিতীয় রাকআতে “ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭০৩ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১০.

ছাবিত আল বুনানী রাহ. বলেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. আমাকে বললেন,

“হে ছাবিত! আমার নিকট থেকে (দ্বীনের আহকাম) গ্রহণ কর। কারণ (এ বিষয়ে এখন) আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি তুমি আর পাবে না। আমি (দ্বীন) গ্রহণ করেছি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে। তিনি জিব্রীল আঃ-এর নিকট থেকে। আর জিব্রীল (আঃ) গ্রহণ করেছেন আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে।’ এরপর আনাস রা. আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করলেন। অতঃপর ছয় রাকাত নামায এভাবে পড়লেন যে, প্রতি দু রাকাতে সালাম ফেরাতেন। শেষে তিন রাকাত বিতর পড়লেন ও সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরালেন। ”

(কানযুল উম্মাল ৪/১৯৬)

গ) এক রাকাত বিতর নামাজ পড়ার দলিল

.

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহ.) ….. ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,

“নবী (সা.) রাতে এগারো রাক’আত সালাত আদায় করতেন তন্মধ্যে এক রাকআত বিতর আদায় করতেন। তারপর তিনি ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন।”

(সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭২৬ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

.

ইয়াহইয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“রাতের সালাত (কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদ) দু’ দু’ রাক’আত করে। অতঃপর যখন তুমি সালাত শেষ করতে চাইবে, তখন এক রাক’আত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দিবে। ক্বাসিম (রহ.) বলেন, আমরা সাবালক হয়ে লোকদের তিন রাক’আত বিতর আদায় করতে দেখেছি। উভয় নিয়মেরই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটিই দূষণীয় নয়।”

(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৩৯ নং)

.

আবূ নুমান (রহঃ) ‍… আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) খেকে বর্নিত, তিনি বলেন,

“আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে বললাম, ফজরের পূর্বের দু’রাকাআতে আমি কিরাআত দীর্ঘ করব কি না, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ দু’ রাকাআত করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং এক রাকাআত মিলিয়ে বিতর পড়তেন। এরপর ফজরের সালাতের পূর্বে তিনি দু’রাকাআত এমন সময় আদায় করতেন যেন একামতের শব্দ তার কানে আসছে। রাবী হাম্মদ (রহঃ) বলেন, অর্থ্যাৎ দ্রুততার সাথে। (সংক্ষিপ্ত কিরাআতে)”

(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৯৪১ নং)

.

হাসান ইবনু বিশর (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

“একবার মু’আবিয়া (রাঃ) ইশার সালাতের পর এক রাকআত মিলিয়ে বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তখন তাঁর নিকট ইবনু আব্বাসের আযাদকৃত গোলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করেন, তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তাঁকে কিছু বলোনা, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন।”

(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৯২ নং)

.

ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) … ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলা হলে,

“আপনি আমীরুল মু’মিনীন মু’আবিয়া (রাঃ) এর সাথে এ বিষয় আলাপ করবেন কি? যেহেতু তিনি বিতর সালাত (নামায/নামাজ) এক রাকআত মিলিয়ে আদায় করেছেন। ইবনু আব্বাস বললেন, তিনি (তাঁর দৃষ্টিতে) ঠিকই করেছেন, কেননা তিনি নিজেই একজন ফকীহ্।”

(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৯৩ নং)

.

আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু সা’আলাবা ইবনু সুয়ায়র (রাঃ), যার মাথায় (শৈশবে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত বুলিয়েছিলেন, তিনি বর্ননা করেন যে,

“তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওক্কাসকে বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) এক রাকা’আত আদায় করতে দেখেছেন।”

(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৯১৬ নং)

.

ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন, এর মধ্যে এক রাকআত বিতর হিসেবে আদায় করতেন। এ সালাত শেষ করে তিনি ডান পার্শ্বে শুইতেন। অবশেষে মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু রাকআত ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করতেন।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫৯০ নং)

হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“ইশার সালাত যাকে লোকেরা ‘আতামা’ নামে অভিহিত করে থাকে – থেকে অবসর হওয়ার পর হতে ফজর পর্যন্ত সময়ের মাঝে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং প্রতি দু-রাক’আতের মাঝে (শেষে) সালাম ফিরাতেন। আর বিতর করতেন এক রাকআত। পরে ফজর সালাতের (আযান) থেকে মুয়াযযিন নীরব হলে এবং ফজর এর ওয়াক্ত তার কাছে পুর্ণ উদ্ভাসিত হয়ে উঠলে এবং মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর ইকামতের জন্য মুয়াযযিন তার কাছে আসা পর্যন্ত তিনি ডানপাপার্শ্বের উপর শুয়ে থাকতেন।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৫৯১ নং)

.

ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাতের বেলা (কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছিল দশ রাক’আত এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফজরের দু’ রাকআত (সূন্নাত)ও আদায় করতেন। এই হল তের রাক’আত।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬০০ নং)

১০.

ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেন, রাতের সালাত দু’ রাকআত দু’ রাকআত। পরে যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তখন এক রাকা’আত পড়বে। যা তার আদায়কৃত সালাতকে বিতর করে দেবে।

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬২১ নং).

১১.

আবুর রাবী যাহরানী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“এক ব্যাক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করল, তখন আমি ছিলাম তার ও প্রশ্নকারীর মাঝে। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাতের সালাত কি কিরূপ? তিনি বললেন, দুই দুই রাকআত করে। পরে যখন তুমি ভোর হওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাক’আত সালাত আদায় করবে এবং বিতরকে তোমার শেষ সালাত বানাবে। পরে সেই বছরের শেষে এক ব্যাক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল, আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সে অবস্থানে ছিলাম। তবে আমি জানি না যে, এই প্রশ্নকারী সে ব্যাক্তই ছিল না অন্য কোন লোক। এবারও তিনি তাকে অনুরূপ উত্তর দিলেন।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬২৪ নং)

১২.

শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিতর হল এক রাকআত রাতের শেষভাগে।”

(সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৩০ নং)

১৩.

কুতায়বা (রহঃ) ….. ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

“রাতের সালাত (নামায/নামাজ) হ’ল দু’রাকআত করে। তবে ভোর হয়ে যাওয়ার যদি আশংকা হয় তবে এক রাকআত যোগ করে বিতর পড়ে নিবে। বিতরকে তুমি তোমার শেষ সালাত বানাবে।”

(সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩৭ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১৪.

কুতায়রা (রহঃ) …. আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,

“আমি ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ফজরের দুই রাকআত (সুন্নাত) কি দীর্ঘ করব? তিনি বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত (নামায/নামাজ) হতো দুই রাকআত করে। তিনি বিতর করতেন এক রাকআত। আর (ফজরের) দুই রাকআত (সুন্নাত) এমনভাবে আদায় করতেন যে, আযানের আওয়াজ তখনো তাঁর কানে বাজত।”

(সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৬১ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১৫.

মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“বিতরের সালাত শেয রাত্রে (পূর্বের আদায়কৃত সালাত এর সাথে মিলিত) একটি রাকআত।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯২ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১৬.

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“বিতরের সালাত শেষ রাত্রে (আদায়কৃত সালাত সমুহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯৩ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১৭.

রবী ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তুমি ফিরে যেতে চাও তখন একটি রাকআত আদায় করে নাও, যা তোমার পুর্বের আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে বেজোড় বানিয়ে নেবে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯৫ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১৮.

মুহাম্মাদ ইবনু সালামা এবং হারিছ ইবনু মিসকীন (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

“রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত আদায় করে নেবে, যা (তার পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) রেজোড় বানিয়ে দেবে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯৭ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

১৯.

উবায়দুল্লাহ ইবনু ফাদালাহ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন,

“রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তোমরা ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত দ্বারা (পুর্বের আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) বেজোড় বানিয়ে নেবে।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯৮ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

২০.

হাসান ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাত্রের সালাত দু’রাকআত দু’রাকআত করে আদায় করবে এবং বিতরের সালাত, শেষ রাত্রে (পূর্বের আদায়কৃত সালাত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯৪ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

২১.

কুতায়বা (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। আর বিতরের সালাত হল (রাতে আদায়কৃত সালাত সমূহের সাথে মিলিত) একটি রাকআত।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৬৯৬ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

২২.

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত (নামায/নামাজ) দু দু রাকআত করে পড়তেন এবং এক রাকআত বিতর পড়তেন।”

(সুনান ইবনু মাজাহ ১১৭৪ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

২৩.

ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“রাতের সালাত (নামায/নামাজ) দু দু রাকআত করে এবং বিতর সালাত (নামায/নামাজ) এক রাকআত। (রাবী বলেন) আমিম বললাম, আপনার কি মত, যদি আমার চোখকে (ঘুম) পরাভূত করে এবং আমি ঘুমিয়ে যাই? তিনি বলেনঃ তুমি এই তারকার দিকে লক্ষ্য করো। তখন আমি মাথা তুলে সিমাক (মৎস) তারকা দেখতে পেলাম। এরপর তিনি হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাতের সালাত দু দু রাকআত করে এবং সুবহে সা’দিকের পূর্বে বিতর সালাত এক রাকআত পড়বে।”

(সুনান ইবনু মাজাহ ১১৭৫ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

২৪.

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি দু রাকআতে সালাম ফিরাতেন এবং বিতর এক রাকআত পড়তেন।”

(সুনান ইবনু মাজাহ ১১৭৭ নং, হাদিসের মান: সহিহ্)

২৫.

ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং একটি রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন। তারপর তিনি ডান কাতে শুয়ে পড়তেন।”

(সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৭২৯ নং, হাদিসের মান সহিহ্)

শেষ কথা-

আল্লাহর নিকট থেকে রাসূল (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত অর্থাৎ সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, সেই অনুযায়ী কর্তব্য পালন করা ঈমানী দায়িত্ব, কারণ সেটা ওহী। এমন কথা বলা যাবে না যে, এটা তো আমার যুক্তিতে টিকল না বা আমার বাপ-দাদাদের কখনও এমন কিছু বলতে বা করতে দেখিনি কিংবা আমার মাযহাবে এমনটি সমর্থন করে না’ কারন হয়তোবা এইটা আপনার কাছে নতুন তাই বলেই বাদ দিবার কোনও যুক্তি হয় না। আপনি কারও কথা বিশ্বাস না করে শুধুমাত্র নবীজী (সাঃ) কে বিশ্বাস এর উদ্দেশ্য নিয়ে বিষয়টা নিয়ে ভাবুন, গবেষণা করুন এবং আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন তারপর মানুন কিন্তু এইটা হয় না অথবা এমন কিছু নেই বলে বিষয়টিকে একদম উড়িয়ে দিবেন না দয়া করে।

আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটাই, রাসূল (সাঃ) এর কথা সহীহভাবে আমাদের নিকট পৌছালে বিনা বাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিতে হবে, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কর্ম পালন করতে হবে। সেটা আমার নিকট যুক্তিতে টিকুক আর না টিকুক, আমার চারপাশে লোকজন সেটা মানুক আর না মানুক আমাকে রাসূল (সাঃ) এর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতেই হবে এবং তার যথাসাধ্য অনুসরণ করতে হবে।

আজের আলোচনাটি এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। এই পোষ্টটি থেকে আমরা আমরা বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম বা বেতের নামাজের নিয়মসমূহ বিস্তারিতভাবে জানলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীদের মতো করে দ্বীন ইসলামকে বুঝার তৌফিক দান করুন এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts