আল-কুরআন সর্বমোট ৩০টি অংশে বিভক্ত। এ অংশগুলোকে পারা বলা হয়। কুরআন মজিদে রয়েছে ১১৪টি সূরা এবং ৬২৩৬টি মতান্তরে ৬৬৬৬টি আয়াত।
অবতরণের সময় বিবেচনায় কুরআন মজিদের সূরাসমূহ ২ ভাগে বিভক্ত। যথা-
- মক্কি সূরা।
- মাদানি সূরা।
নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
(১) মক্কি সূরার সংখ্যা কয়টি?
আল-কুরআনে মক্কি সূরার সংখ্যা মোট ৮৬টি।
(২) মাদানি সূরার সংখ্যা কয়টি?
মাদানি সূরার সংখ্যা মোট ২৮টি।
(৩) মক্কি সূরা কাকে বলে?
সাধারণভাবে বলা যায়, পবিত্র মক্কা নগরীতে আল-কুরআনের যেসব সূরা নাজিল হয়েছে সেগুলো মক্কি সূরা।
প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, মহানবি (সাঃ)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পূর্বে নাজিল হওয়া সূরাসমূহকে মক্কি সূরা বলা হয়।
“মহানবি (সাঃ)-এর হিজরত কালে মদিনায় গমনের পথে মদিনায় পৌঁছার পূর্বপর্যন্ত যা নাজিল হয় তাও মক্কি সূরা।”
(ইয়াহইয়া ইবনে সালাম)
(৪) মাদানি সূরা কাকে বলে?
সাধারণ ভাষায় বলা যায়, মদিনাতে নাজিল হওয়া সূরাগুলো মাদানি সূরা।
তবে প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, মহানবি (সাঃ)-এর মদিনায় হিজরতের পর নাজিল হওয়া সকল সূরাকে মাদানি সূরা নামে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ হিজরতের পর নাজিল হওয়া সকল সূরাই মাদানি সূরা।
“মহানবি (সাঃ)-এর মদিনায় হিজরতের পর মদিনার বাইরে সফরে থাকাবস্থায় নাজিল হওয়া সূরাসমূহও মাদানি সূরা।”
(ইয়াহইয়া ইবনে সালাম)
(৫) মক্কি সূরার বৈশিষ্ট্য সমূহ কী কী?
- মক্কি সূরাসমূহে তাওহিদ ও রিসালাতের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
- মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কিয়ামত, জান্নাত-জাহান্নাম তথা আখিরাতের বর্ণনা এসব সূরায় প্রাধান্য লাভ করেছে।
- শিরক-কুফরের পরিচয় বর্ণনা করে এগুলোর অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে।
- মুশরিক ও কাফিরদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
- এতে পূর্ববর্তী মুশরিক ও কাফিরদের হত্যাযজ্ঞের কাহিনী, ইয়াতীমদের সম্পদ হরণ করা, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া ইত্যাদি কুপ্রথা ও কু-আচরণের বিবরণ রয়েছে।
- পূর্ববর্তী নবি-রাসুলগণের সফলতা ও তাঁদের অবাধ্যদের শোচনীয় পরিণতির বর্ণনা রয়েছে।
- এ সূরাগুলোতে শরিয়তের সাধারণ নীতিমালার উল্লেখ রয়েছে।
- এতে উত্তম চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা করা হয়েছে।
- এ সূরাসমূহ সাধারণত আকারে ছোট এবং আয়াতগুলোও তুলনামূলকভাবে ছোট।
- এর শব্দমালা শক্তিশালী, ভাবগম্ভীর ও অন্তরে প্রকম্পন সৃষ্টিকারী।
- এতে প্রসিদ্ধ বিষয়সমূহ শপথের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
(৬) মাদানি সূরার বৈশিষ্ট্য সমূহ কী কী?
- মাদানি সূরাসমূহে আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের প্রতি ইসলামের আহ্বান জানানো হয়েছে।
- এতে আহলে কিতাবের পথভ্রষ্টতা ও তাদের কিতাব বিকৃতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
- এ সূরাসমূহে নিফাকের পরিচয় ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
- ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
- পারস্পরিক লেনদেন, উত্তরাধিকার আইন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিধান বর্ণিত হয়েছে।
- বিচার ব্যবস্থা, দণ্ডবিধি, জিহাদ, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
- ইবাদতের রীতিনীতি, সালাত, যাকাত, হজ, সাওম ইত্যাদি বিষয় বিবৃত হয়েছে।
- শরিয়তের বিধি-বিধান, ফরজ, ওয়াজিব, হালাল-হারাম ইত্যাদির সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
- এ সূরাগুলো ও এর আয়াতসমূহ তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ।
[সূত্র: এনসিটিবি]