Skip to content

মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

মাক্কী ও মাদানী রাসূলুল্লাহ (স.) -এর নবুওয়াতি জীবনের দু’টি অধ্যায়। মক্কায় ইসলাম ছিল দাওয়াতি পর্যায়ে। আর মাদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়। তাই উভয় পর্যায়ের সূরার বিষয়বস্তু ও বৈশিষ্ট্যে কিছু পার্থক্য লক্ষণীয়।

এই আলোচনাটি শেষ অবধি অধ্যয়নে আপনি- মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে? মাক্কী ও মাদানী সূরা কয়টি? তা জানতে পারবেন। মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্যসমূহ জানতে পারবেন।

(১) মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে?

হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর তেইশ বছরের নবী-জীবন, মাক্কী ও মাদানী-এ দু’ভাগে বিভক্ত। কুরআনও দু’পর্বে বিভক্ত। এজন্য কুরআন নাযিলের সময় ও স্থান অনুযায়ী কুরআনের সূরা ও আয়াতকে মাক্কী ও মাদানী দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

মাক্কী সূরা কাকে বলে: হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর নবী জীবনে মক্কায় অবস্থানকালে তাঁর মদীনায় হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত ১৩ বছরে যে সকল সূরা বা আয়াত নাযিল হয়, সেগুলোকে মাক্কী সূরা বা মাক্কী আয়াত বলা হয়।

মাদানী সূরা কাকে বলে: হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর মদীনায় হিজরত করার পর জীবনের শেষ ১০ বছরে মদীনায় কিংবা অন্য যে কোন স্থানে যে সকল সূরা ও আয়াত নাযিল হয় সেগুলোকে মাদানী সূরা ও মাদানী আয়াত বলা হয়।

(২) মাক্কী ও মাদানী সূরা কয়টি?

হিজরতের পূর্বে অবতীর্ণ সূরা ও আয়াতকে মাক্কী সূরা ও আয়াত বলে এবং হিজরতের পরে অবতীর্ণ সূরা ও আয়াতকে মাদানী সূরা ও আয়াত বলে।

মাক্কী সূরা কয়টি: মাক্কী সূরাগুলো আকারে ছোট। মাক্কী সূরাগুলোতে তাওহীদ, রিসালাত, নবুওয়াত, আখিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি আলোচিত হয়েছে। মাক্কী সূরা সংখ্যা ৯২টি।

মাদানী সূরা কয়টি: মাদানী সূরাগুলো আকারে বড়। এতে ইবাদাত ও আহকামে শরী‘আতসংক্রান্ত বিষয়গুলোর বিশদ বর্ণনা রয়েছে। তাছাড়া হালাল, হারাম, ইসলামি রীতি-নীতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক আইন, বিবাহ শাদী সংক্রান্ত আইন, এবং বিভিন্ন আইন কানুন ও ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে। মাদানী সূরাগুলো আকারে বড়। মাদানী সূরা ২২টি।

(৩) মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবী জীবনের দু’টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় হচ্ছে নবুওয়াত পাওয়ার পর মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তের বছরের জীবন। তাঁর হিজরত করার পর মদীনার দশ বছরের জীবন হচ্ছে দ্বিতীয় অধ্যায়। এ দু’অধ্যায় মহানবী (স)-কে দুধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এ পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই কুরআনের আয়াত ও সূরাসমূহ নাযিল হয়। তাই এ দু অধ্যায়ের সূরাসমূহের দু’ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

নিচে মাক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হলো- 

ক) মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য

  • মাক্কী সূরাগুলো আকারে ছোট।
  • এতে আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহীদের বর্ণনা রয়েছে।
  • এতে রিসালাত ও নবুওয়াতের বর্ণনা রয়েছে।
  • এতে আখিরাত বা পরকালীন জীবন সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
  • মাক্কী সূরায় কুরআনের সত্যতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • এতে শিরক ও কুফরের যুক্তি ও উপমা ভিত্তিক বিরোধিতা করা হয়েছে।
  • এতে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা বেশি এসেছে।
  • এতে পারলৌকিক বিচার ও হিসাব নিকাশের বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
  • এ সকল সূরায় আকাইদ ও ইমান সম্পর্কিত ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের আলোচনা করা হয়েছে।
  • মাক্কী সূরায় চরিত্র গঠন ও পরিশুদ্ধির নির্দেশনা স্থান পেয়েছে।
  • এতে নৈতিকতাবোধ, চিন্তাশক্তি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
  • নুবুওয়াতী দায়িত্ব পালনের উপযোগী উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।
  • এ পর্বের সূরাগুলোর ভাষা স্বচ্ছ ও ঝরণাধারার মতো ঝরঝরে, হৃদয়গ্রাহী, সহজে মুখস্থ হওয়ার যোগ্য।
  • মাক্কী পর্যায়ের সূরার প্রারম্ভ শপথ বাক্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে।
  • মাক্কী সূরা ৯২টি ।

খ) মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

  • মাদানী পর্বের সূরাগুলো আকারে দীর্ঘ।
  • এতে ইবাদাতের বর্ণনা এসেছে।
  • এতে আহকামে শরীআতের বর্ণনা ব্যাপকভাবে করা হয়েছে।
  • এতে হালাল ও হারামের বিস্তৃত বর্ণনা এসেছে।
  • মাদানী পর্বের সূরায় ইসলামী রীতি-নীতির বিশদ বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
  • এতে অর্থনৈতিক আইন যথা- যাকাত, উশর, ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন ও উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি বিষয়ের বিবরণ রয়েছে।
  • ইসলামের ব্যবহারিক জীবন তথা আচার-ব্যবহার, বিয়ে-শাদী, তালাক ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।
  • সামরিক আইন ও জিহাদ ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে।
  • পররাষ্ট্রনীতি, সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
  • সামাজিক-রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিষয়াদির বিবরণ উপস্থাপিত হয়েছে।
  • মুনাফিক, কাফির, জিম্মি, আহলে কিতাব, শত্রু, মিত্র, তথা অমুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে আচরণ বিধির বিবরণ রয়েছে।
  • এ পর্বের সূরায় ঐতিহাসিক বিবরণ এনে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
  • এ পর্বের সূরাগুলোর সুদীর্ঘ-বর্ণনা ধারা ও ছন্দময় আয়াত অত্যন্ত আকষর্ণীয় ও প্রলম্বিত।
  • এ পর্বের সূরায় শপথের বাক্য কম।
  • মাদানী সূরা ২২টি।

রাসূল (সা.) তাঁর জীবনের একাংশ কাটিয়েছেন মক্কায়, এবং অন্য অংশ কাটিয়েছেন মদীনায়। নবুওতপ্রাপ্তির পর তাঁর মক্কী ও মাদানী উভয় জীবনপর্বেই বিভিন্ন জায়গায় ও সময়ে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, পাহাড়েরর পাদদেশে, উপত্যকায়, রাতে ও দিনে, শীত ও গ্রীষ্মে, ঘরে ও সফরে, যুদ্ধকালীন ও শান্তিকালীন অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কোরআন নাজিল হয়েছে।

নবুয়ত ঊষাকাল মক্কায় যখন কুরআন নাজিল হয়েছে, তখন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল অতি অল্প, আর মুশরিকরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আল কোরআন এ পর্যায়ে মুমিনদের অন্তরাত্মা সংশোধন , তাদের ঈমানে দৃঢ়তা সৃষ্টি, তাদের চিন্তাচেতনা পরিশুদ্ধকরণের জন্য যে পদ্ধতি খেতাব অধিক উপযোগী, তা ব্যবহার করে তাদের খেতাব করেছে। এর বিপরীতে সত্য গ্রহণের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মুশরিকদের আহ্বান জানানো, তাদের বাতিল বিশ্বাসসমূহের অসারতা তুলে ধরা, যুক্তির মাধ্যমে তাদের নানা সন্দেহ ও অলীক ধারণাগুলো রদ করা, পরকালীন আযাব ও ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে তদের হুঁশিয়ার করে দেয়ার জন্য মুশরিকদের খেতাবের জন্য যে ধরনের পদ্ধতির প্রয়োজন আল কুরআন তার ভাষায় ও বিষয়বস্তু চয়নে তা সর্বশীষ পর্যায়ে ব্যবহার করেছে।

এরপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরত করে গেলেন মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন কায়েম করলেন, তখন শুরু হলো নতুন এক পর্ব, যা মাদানী পর্ব থেকে ভিন্ন। এবার আল-কোরআনের সম্ভোধনের প্রাথমিক পাত্র হলো মুসলিম সম্প্রদায় যারা স্বাধীন পরিবেশে ইতোমধ্যেই বসবাস করতে শুরু করেছেন, যাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈত জীবনকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনার জন্য প্রয়োজন রয়েছে সুসংহত বিধানাবলির। অতএব মাদানী কোরআনের খেতাব পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুতে আনা হয়েছে পরিবর্তন তাওহীদ, আখেরাত ও রিসালতের প্রতি পূর্বের ন্যায় গুরুত্বারোপ অব্যাহত রেখে।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট ইসলাম

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts