(১) মানবসেবা কী?
মানবসেবা বলতে মানুষের সেবা করা, পরিচর্যা করা, যত্ন নেওয়া, সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদি বোঝায়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবা করা মানবসেবার আওতাভুক্ত।
মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ তায়ালা সবকিছুই মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কর্তব্য হলো এসব সৃষ্টির প্রতি সদয় হওয়া ও তাদের সাথে যথাযথ ব্যবহার করা। পাশাপাশি অন্য মানুষের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করাও মানুষের অন্যতম দায়িত্ব। কেননা পরস্পরের সেবা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
ইসলামে সবরকমের হক বা অধিকার দু’ভাগে বিভক্ত। তাহলো হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ। হাক্কুল্লাহ হলো আল্লাহ তায়ালার হক। সব রকমের ইবাদত, প্রশংসা, তাসবিহ-তাহলিল এর অন্তর্ভুক্ত।
আর হাক্কুল ইবাদ হলো বান্দার হক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে ভালোবাসা, সকলের সেবা করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা হাক্কুল ইবাদের অন্তর্ভুক্ত। মানবসেবা হলো হাক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক।
(২) মানবসেবার গুরুত্ব
মানবসেবা আখলাকে হামিদাহর অন্যতম বিষয়। মানবসেবা মানুষের উন্নত চরিত্রের পরিচায়ক। যে ব্যক্তি মানুষের সেবা করেন তিনি মহৎপ্রাণ। সমাজে তিনি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ তায়ালাও এরূপ ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। যিনি মানুষের সেবা, সাহায্য-সহযোগিতা করেন আল্লাহ তায়ালাও তাঁকে সাহায্য ও দয়া করেন।
মহানবি (সাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।”
(বুখারি)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
(তিরমিযি)
অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।”
(মুসলিম)
বস্তুত, সকল মানুষ ভাই ভাই। সকলেই আদম (আঃ)-এর সন্তান। সুতরাং যে ব্যক্তি অন্য ভাইয়ের সাহায্য করে আল্লাহ তায়ালাও সে ব্যক্তির সাহায্য করেন, তার বিপদাপদ দূর করেন। মানবসেবা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। মুমিন ব্যক্তি সর্বদাই অন্য মানুষের খেদমতে নিয়োজিত থাকেন।
মহানবি (সাঃ) এ সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
“তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ণ ব্যক্তির সেবা কর, বন্দীকে মুক্ত কর এবং ঋণ-গ্রস্তকে ঋণমুক্ত কর।”
(বুখারি)
নানাভাবে মানুষের সেবা করা যায়। ক্ষুধার্তকে অন্নদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, অসহায়কে আশ্রয় দান, রোগীর সেবা করা, নিঃস্ব-দুঃস্থদের আর্থিক সাহায্য করার মাধ্যমে মানবসেবা করা যায়। ছোট ও বৃদ্ধদের সাহায্য করা, দয়া-মায়া-মমতা প্রদর্শন করা, তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত।
মানবসেবার প্রতিদান সীমাহীন। আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিন মানুষের সেবাকারীকে প্রভূত পুরস্কার ও নিয়ামত দান করবেন।
মহানবি (সাঃ) বলেন,
“কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন।”
(আবু দাউদ)
আমাদের প্রিয় নবি (সাঃ) মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, মুসলিম- অমুসলিম সকলকেই তিনি সাহায্য-সহযোগিতা করতেন, সকলের খোঁজ খবর নিতেন। বিপদগ্রস্ত, অভাবীদের সহায়তা করতেন। তাঁর দয়া, মায়া ও সহানুভূতি থেকে তাঁর চরম শত্রুও বঞ্চিত হতো না। রাসুল (সাঃ)-এর জীবনী পাঠ করলে আমরা এরূপ বহু দৃষ্টান্ত দেখতে পাই।
রাসুল (সাঃ)-কে কষ্টদানকারী বুড়ির ঘটনা আমরা সবাই জানি। এক কাফির বৃদ্ধা প্রতিদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। এতে মহানবি (সাঃ)-এর পথ চলতে কষ্ট হতো। তারপরও তিনি বুড়িকে কিছু বলতেন না। একদিন তিনি পথে কাঁটা দেখলেন না। দয়ালু নবি (সাঃ) ভাবলেন, নিশ্চয়ই বুড়ি অসুস্থ। এজন্য পথে কাঁটা দিতে পারেনি। তিনি খুঁজে বুড়ির বাড়ি গেলেন। গিয়ে দেখলেন বুড়ি সত্যিই অসুস্থ। তার সেবা করারও কেউ নেই। নবিজি (সাঃ) বুড়ির শিয়রে বসলেন। তার সেবা-যত্ন করলেন। ফলে বুড়ি ভালো হয়ে উঠল। সে তার অপকর্মের জন্য লজ্জিত হলো। সে আর কোনোদিন পথে কাঁটা দেয়নি।
সকল মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদর্শ। আমাদের তিনি এজন্য অনুপ্রাণিত করে গেছেন। সুতরাং আমাদের উচিত যথাসম্ভব সকল মানুষের সেবা করা।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।