Skip to content

 

রিসালাত কি, কাকে বলে, বলতে কি বুঝায়? নবি ও রাসুলের মাঝে পার্থক্য কি? রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব

রিসালাত কি, কাকে বলে, বলতে কি বুঝায়, নবি ও রাসুলের মাঝে পার্থক্য কি, রিসালাতে বিশ্বাসের

আসলে রিসালাত কি? রিসালাত কাকে বলে? রিসালাত বলতে কি বুঝায়? আবার মূলত নবি ও রাসুলের মাঝে পার্থক্য কি? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আমরা অনেকেই সঠিক ধারণা রাখি না। তো চলুন বিষয়গুলো সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নিই।

(১) রিসালাত কি, কাকে বলে?

রিসালাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বার্তা, চিঠি, সংবাদ বহন বা কোনো শুভ কাজের দায়িত্ব বহন করা।

ইসলামের পরিভাষায় রিসালাত বলতে মহান আল্লাহর বাণী ও বিধিবিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বকে বোঝায়। আর আল্লাহ তাআলা থাঁকে রিসালাতের দায়িত্ব প্রদান করেন, তাঁকে বলা হয় রাসুল।

(২) রিসালাত বলতে কি বুঝায়?

রিসালাত-এর প্রায় সমার্থক আরেকটি পরিভাষা হচ্ছে নবুওয়াত। নবুওয়াত অর্থ অদৃশ্যের সংবাদ প্রদান।

মহান আল্লাহ কর্তৃক রাসুলগণকে যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রদান করা হয়েছে তার নাম রিসালাত। আর নবিগণ যে বার্তা লাভ করেন তাকে বলে নবুওয়াত।

নবি-রাসুলদের সবাই মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মনোনীত ও প্রেরিত। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরিচয়গত বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে- নবিদেরকে আল্লাহ তা’আলা কিতাব প্রদান করেননি বরং মৌখিক নির্দেশ প্রদান করেছেন। পক্ষান্তরে রাসুলদের প্রতি তিনি মৌখিক নির্দেশের সাথে সাথে আসমানি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, নবুওয়াত ও রিসালাত একমাত্র মহান আল্লাহর দান। কোন চেষ্টা সাধনার দ্বারা তা লাভ করা যায় না।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষদের মধ্য থেকেও; আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সমাক প্ৰস্তা।”

(সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ৭৫)

মানব জাতির হেদায়েত ও সামগ্রিক কল্যানের জন্য রিসালাত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রিসালাতের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর অস্তিত্ব, তাঁর এককত্ব এবং পরিচয় জানতে পেরেছে। এর মাধ্যমেই সে স্রষ্টার প্রতি অন্য মানুষের প্রতি এবং জীব-জগতের প্রতি তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত হয়েছে।

মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা এসেছে রিসালাতের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের পক্ষে যা বোঝা সম্ভব নয়, নবি ও রাসুলগণ তা মানুষকে সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

রিসালাতের কল্যাণেই মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়েছে।

তাই নবি-রাসুলদের প্রচারিত জীবনব্যবস্থাকে ধারণ করা, তাঁদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস আনা, তাঁদের দেখানো পথে চলা এবং সমাজে তা বাস্তবায়ন করার জন্য চেষ্টা করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

(৩) নবি-রাসুলগণের পরিচয়

নবি-রাসুলগণ ছিলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং প্রেরিত দূত। মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য মহান আল্লাহ যুগে যুগে তাঁদেরকে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী। তাঁরা তাঁদের ওপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব পালনে আজীবন নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন।

নবি-রাসুলগণ মানুষকে অসুন্দর, অন্যায়, অপরাধ ও মন্দ কাজের অনুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং সুন্দর, ন্যায়, পরোপকার, কল্যাণকামিতা ও সৎ কাজের শুভ পরিনতি সম্পর্কে জানিয়েছেন।

নবি-রাসুলগণ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁদের উন্নত চরিত্রে সকল মানবীয় গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছে। তাঁরা ছিলেন মাসুম বা নিষ্পাপ। তাঁরা সবসময় নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণ সাধনা করেছেন।

আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের মধ্য থেকে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁদের সংখ্যা অসংখ্য। কুরআন/হাদীসের সর্মোবট নবি-রাসুলগণের কোন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। লোকমুখে প্রচলিত এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার সংখ্মযাটি প্রমাণিত নয়।

সর্বপ্রথম নবি হলেন হযরত আদম (আঃ)- যিনি ছিলেন পৃথিবীর প্রথম মানব। আর সর্বশেষ হলেন আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)।

(৪) নবি ও রাসুলের মাঝে পার্থক্য কি?

আল্লাহ তা’আলা যাঁদের প্রতি আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন কিংবা নতুন শরিয়ত প্রদান করেছেন, তাঁরা হলেন রাসুল। আর যাঁর প্রতি কোনো কিতাব অবতীর্ণ হয়নি কিংবা যাঁকে কোনো নতুন শরিয়ত দেওয়া হয়নি। তিনি হলেন নবি। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রাসুলের শরিয়ত প্রচার করতেন।

উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক রাসুলই নবি কিন্তু প্রত্যেক নবিই রাসুল নন।

(৫) নবি-রাসুল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা

নবি-রাসুলগণকে মহান আল্লাহ নিরর্থক প্রেরণ করেননি; বরং দুনিয়াতে তাঁদেরকে প্রেরণ মানুষের প্রতি তাঁর এক বিশেষ অনুগ্রহ।

মূলত নানা কারণে নবি-রাসুল প্রেরণ অপরিহার্য ছিলো। এদের মধ্যে অন্যতম হলো-

  • মানুষ আল্লাহ তা’আলার পরিচয় জানতো না। নবি-রাসুল ছাড়া কেবল মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে। তাঁর পরিচয় জানাও সম্ভব ছিলো না। এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বার্তাবাহক হিসেবে যুগে যুগে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে সৃষ্টির সর্বোত্তম মানুষদের নবি-রাসুল হিসেবে মনোনীত করে দুনিয়ার মানুষের কাছে পাঠিয়ে তাঁর পরিচয় প্রদান করেছেন।
  • তাছাড়া মানুষ জানতো না, কোন পথে তাদের কল্যাণ, মুক্তি ও শান্তি নিহিত আছে। নবি-রাসুলগণই এ পথভ্রষ্ট মানুষদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তাঁরাই মানুষদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদেরকে চিন্তায় কর্মে ও আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করেছেন।
  • নবি-রাসুলগণ ভালো ও সৎকর্মের শুভ পরিণতির জন্য সুসংবাদদাতা ও খারাপ কাজের পরিণাম সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁরা মানুষের পরকালীন জীবন সম্পর্কে যেমন অবহিত করেছেন তেমনি আবার কীভাবে মানুষের দুনিয়ার জীবন সুন্দর ও কল্যাণকর হবে তারও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুল প্রেরণ না করলে মানব সভ্যতার উন্নয়ন ঘটতো না।
  • আল্লাহ তা’আলা পরম দয়ালু। দুনিয়াতে নবি-রাসুল না পাঠিয়ে এবং মানুষকে আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সতর্ক না করে তাদের অন্যায় ও পাপ কাজের জন্য পরকালে শাস্তি দেওয়া তাঁর অভিপ্রায় নয়। এ জন্য তিনি যুগে যুগে সতর্ককারী হিসেবে নবি-রাসুলগণকে এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।

(৬) রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব

রিসালাতে বিশ্বাসের অর্থ হলো, নবি-রাসুলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন বা তাঁরা আল্লাহর যে বাণী আমাদের কাছে পৌঁছিয়েছেন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা। তাওহিদে বিশ্বাসের পরই রিসালাতে বিশ্বাস করা অপরিহার্য।

রিসালাত তথা নবি-রাসুলগণকে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না। কেননা নবি-রাসুলগণই আমাদেরকে আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে জানিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহ তাআলার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস না করলে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর বাণীকে অস্বীকার করা হয়। তাই রিসালাতে বিশ্বাস তাওহিদে বিশ্বাসকে পরিপূর্ণ করে।

রিসালাতে বিশ্বাস করা ইমানের অন্যতম অপরিহার্য একটি অঙ্গ।।

(৭) মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর রিসালাত

নবুওয়াত ও রিসালাতের ধারাবাহিকতায় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হলেন সর্বশেষ। তিনি একাধারে নবি ও রাসুল। কারণ তিনি নতুন শরিয়ত ও কিতাব প্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁকে প্রদত্ত দীন বা জীবনবিধানের নাম ‘ইসলাম’ এবং তাঁর ওপর অবতীর্ণ আসমানি কিতাবের নাম ‘আল কুরআন’।

তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে এ পৃথিবীতে আগমন করেন এবং ৪০ বছর বয়সে অর্থাৎ ৬১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি নবুওয়াত লাভ করেন।

তাঁর পূর্বের রাসুল হযরত ঈসা (আঃ)-এর রিসালাতের দায়িত্ব পালনের সময়কাল থেকে তাঁর নবুওয়াত লাভের মাঝে সময়ের ব্যবধান ছিল। ৫০০ বছরের বেশি। এ দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নবি-রাসুলের আগমন না ঘটায় সারা পৃথিবীর মানুষ তখন পথভ্রষ্টতা, অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার ও পাপাচারের চরম সীমায় পৌঁছেছিল। এ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ তাঁকে রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে জগৎসমূহের রহমত ও বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করেন।

মানবতার কল্যাণের জন্য জগতে যত নবি- রাসুল এসেছিলেন তাঁরা কেবল কোনো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ও বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছিলেন কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্ববিষয়ে ও সর্বদিক থেকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন।

অন্য নবি-রাসুলগণ কোনো বিশেষ অঞ্চল বা বিশেষ সময়ের জন্য প্রেরিত; কিন্তু হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সকল দেশ, জাতি এবং সর্বকালের জন্য প্রেরিত। তাই তিনি হলেন বিশ্বনবি। তাঁর শরিয়ত কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। মহান আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে দীন ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন।

মহানবি (সা.) এর রিসালাত প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তিনিই তাঁর রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্ত দীনের উপর একে জয়যুক্ত করবার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।”

(সূরা আল-ফাতহ, আয়াত ২৮)

হযরত মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবি। তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবি-রাসুল আগমনের ধারা বন্ধ হয়েছে। তাঁর পরে আর কোনো নবি-রাসুল এ দুনিয়াতে আসবেন না। এ জন্য তাঁকে ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

তাঁকে শেষ নবি আখ্যা দিয়ে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

“মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবি। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। ”

(সুরা আল-আহযাব, আয়াত ৪০)

আমরা সকল নবি-রাসুলের প্রতি ইমান আনবো এবং আমাদের নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর দেখানো পথে আমাদের জীবন পরিচালনা করব।

আলোচনাটি এখানেই সমাপ্ত হলো। আশা করা যায় রিসালাত কি, রিসালাত কাকে বলে, রিসালাত বলতে কি বুঝায়, মূলত নবি ও রাসুলের মাঝে পার্থক্য কি ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে পারলাম। পোষ্টটি শেষ অবধি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এ ধরণের আরও বিভিন্ন ইসলামিক বিষয়গুলো জানতে আমাতের ওয়েবসাইটে নিয়মনি ভিজিট করুন।

জাজাকাল্লাহ খায়রান।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page