Skip to content

 

রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- রোজার পরিচয় জানতে পারবেন; রোজার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন; রোজার সামাজিক শিক্ষা বিশ্লেষণ করতে পারবেন; সর্বপরি রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবেন।

নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো-

(১) রোজার পরিচয়

রোজার পরিচয়

রোজা বা সাওম অর্থ কি: সাওম ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে তৃতীয়। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত ও সুস্থ মুসলমানের ওপর রমাযান মাসে সাওম পালন করা ‘ফরয’ বা বাধ্যতামূলক। সাওম মানে বর্জন করা বা বিরত থাকা।

রোজা বা সাওম কাকে বলে: ইসলামি শরীআতের পরিভাষায় সুবহে সাদিকের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়াতের সাথে যাবতীয় পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম ‘সাওম’।

রোজা বা সাওম কখন থেকে শুরু হয়: হিজরি দ্বিতীয় বছরে রমাযান মাসে ইসলামে সাওম পালন করার বিধান চালু হয়। রমযান মাসকে সাওম সাধনার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। ‘রময’ শব্দের অর্থ-পুড়িয়ে ফেলা বা জ্বালিয়ে দেওয়া। মানুষের যাবতীয় খারাপ প্রবণতাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য বছর ঘুরে আসে রমযান মাস। এ মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। রমযান মাস ইবাদাতের মাস। মানুষ এ মাসে বেশি বেশি ইবাদাত করে।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ মর্মে ঘোষণা দেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হল, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”

(সূরা বাকারা, ২:১৮৩)

রমাযান মাসের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে মহানবি (স) মুহাররম মাসের দশ তারিখে সাওম পালন করতেন। এ সময়ে রাসূলে করীম (স) ইয়াহূদীদের রীতি অনুযায়ী সাওম পালন করতেন।

সাওম একটি প্রাচীন ধর্মীয় বিধান। রোজার প্রচলন সকল ধর্মের মধ্যে থাকলেও তার ধরন ও উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। 

See also  রোজা সম্পর্কে আলোচনা (a to z)

(২) রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব

আত্মিক উৎকর্ষ সাধন: আত্মিক উৎকর্ষ সাধনে রোযা একটি অপরিহার্য বা সকল যুগ ও কালের ইবাদাত। রোযা কেবল মুসলমানদের জন্যই অপরিহার্য নয় এবং পূর্ববর্তী কালের সকল নবী-রাসূলের উম্মাতের ওপর অপরিহার্য ছিল।

তাকওয়া সৃষ্টি: রোযার মাধ্যমে মানব হৃদয়ে তাকওয়া ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণায় কাতর হয়েও মহান প্রভুর ভালোবাসা ও ভয়ে বান্দার কিছু গ্রহণ না করা এবং যাবতীয় অন্যায়-অনাচার থেকে বিরত থাকা ‘তাকওয়ার’ নিদর্শন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদেও পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে পার।”

(আল-কুরআন)

রোযার মধ্যে কোনরূপ লৌকিকতা নেই। সাওম একমাত্র আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসারই নিদর্শন। রোযা মানুষের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। রোযা রাখলে মানব মনে খোদা-ভীতি জাগ্রত হয়, সংযমে ও আত্মশুদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করে এবং মানুষকে কঠোর সাধনায় অভ্যস্ত করে। এটা একটি নীরব ইবাদাত।

রোযা ঢাল স্বরূপ: রোযা মানুষকে ষড়রিপুর আক্রমণ থেকে ঢাল স্বরূপ বাঁচিয়ে রাখে। কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা ইত্যাদি রিপুর তাড়নায় মানুষ বিপদগামী হয়ে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়; রোযা মানুষের এসকল কুপ্রবৃত্তি দমন করে।

মহানবি (স) বলেছেন,

“রোযা ঢাল স্বরূপ”।

(আল-হাদিস)

রোযা মুক্তির উপায়: কিয়ামতের কঠিন মুহূর্তে রোযা বান্দার মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।

এ মর্মে মহানবি (স) বলেন,

“রোযা সুপারিশ করে বলবে, হে প্রভু! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে পানাহার ও অন্যান্য কামনা বাসনা হতে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল্লাহ সুপারিশ গ্রহণ করবেন।”

(বাইহাকী)

রোজার ফযীলতও অনেক বেশি। আল্লাহ নিজ হাতে এর প্রতিদান দেবেন।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে,

“সাওম একমাত্র আমার জন্য। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।”

(মিশকাত)

রমাযানের শেষের দশ দিন আরও তাৎপর্যপূর্ণ এ জন্য যে, এ সময়ে ইতিকাফ করা হয়। ইতিকাফে অনেক সওয়াব আছে। রমাযানের পুরো মাসই ফযীলতপূর্ণ।

See also  সাওম শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে? সাওমের শিক্ষা ও গুরুত্ব

ঈদুল ফিতর: রমযান বা সাওম শেষে আসে ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় পর্ব। এ দিনে মুসলমানরা ঈদগাহে জামাআতে ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করেন। সালাতের পূর্বে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিতরা আদায় করতে হয়।

রমযানের একমাস ফরয সাওম ব্যতীত নফল সাওমও আছে। বছরে পাঁচ দিন ব্যতীত অন্য যে কোন দিন তা পালন করা যায়।

(৩) রোজার সামাজিক শিক্ষা

সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি: রোজার অনুশীলনের মাধ্যমে সামাজিক জীবনে মানুষ ক্ষুধার্ত, অনাহারী ও অর্ধাহারী মানুষের দুঃখন্ডকষ্ট এবং ক্ষুধা-পিপাসার অসহ্য কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে।

আদর্শ সমাজ গঠন: সাওম পালনের মাধ্যমে মানুষ ষড়রিপুর তাড়না থেকে রক্ষা পায়। যার ফলে লোভ-লালসা, কামনাবাসনা, ক্রোধ, হিংসা-বিদ্বেষ, মিথ্যা প্রতারণা, প্রব না, পরনিন্দা, ঝগড়া-ফাসাদ, অশ্লীলতার চর্চা প্রভৃতি থেকে মুক্ত হয়ে সুষ্ঠু-সুন্দর আদর্শ জীবন লাভ করে থাকে।

সদ্ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে: সাওম সমাজের অবহেলিত ও মেহনতি মানুষের সাথে সদ্ব্যবহারের শিক্ষা দেয়।

এ প্রসঙ্গে নবী করীম (স) -বলেন,

“এ মাসে যারা দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার কওে, তাদের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং দোযখের আগুন হতে রক্ষা করেন।”

(আল-হাদিস)

দৈহিক সুস্থতা বিধান: রোজার মূল উদ্দেশ্য নৈতিক, আধ্যাত্মিক, ঈমানি গুণাবলি সৃষ্টি করে। কিন্তু এসব গুণাবলি অর্জনের পাশাপাশি দৈহিক কল্যাণের দিকটি কোনক্রমেই বাদ দেওয়া যায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে। অব্যাহত ভোগ মানুষের দেহযন্ত্রকে অবসন্ন ও একঘরে করে দেয়। এ জন্য মাঝে মধ্যে উপবাস থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

প্রশিক্ষণ: পবিত্র রমযান মাস হচ্ছে মুসলমানদের জন্য প্রক্ষিণের মাস। রমযান মাস হচ্ছে বছরের ১২ মাসের মধ্যে এক মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স। এটি সমাপ্ত করতে হবে দক্ষতার সাথে। আর এ দক্ষতা বাকি ১১ মাস কাজে লাগাতে হবে। রমাযান মাসের সাওম পালন একটি সমষ্টিগত ইবাদাত। এ মাসের আগমনের সাথে সাথে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে এক অনাবিল প্রাণচা ল্য দেখা দেয়। এ মাসে প্রতিযোগিতা শুরু হয় ইবাদাত-বন্দেগি, দান-খয়রাত, পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতায় কে কার চেয়ে বেশি অগ্রগামী হবে।

See also  রোজা সম্পর্কে আলোচনা (a to z)

ঐক্য ও সৎসাহস: রোজা এর মাধ্যমে ঐক্য ও সৎসাহস বৃদ্ধি পায়। এভাবে সাওম আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

আর্থ-সামাজিকতার ক্ষেত্রে: রোজার অর্থনৈতিক গুরুত্বও কম নয়। মানুষে মানুষে ভেদাভেদহীন ও শোষণমুক্ত আর্থ- সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সাওম বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম। মুসলমান এ মাসে দান-খয়রাত, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসে।

সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা: উন্নতি ও বিকাশের জন্য মানুষের উত্তম পরিবেশ প্রয়োজন। পবিত্র ও পুণ্যময় জীবন যাপনের জন্য পবিত্র ও সুন্দর অনুকূল পরিবেশ একান্ত অপরিহার্য। রমযান মাস মুসলমানদের জন্য এক সুন্দর ও পূতপবিত্র পরিবেশ নিয়ে আসে।

প্রিয় পাঠব বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা অর্জন করলাম।

রোজা বা সাওম মুসলমানদের মধ্যকার সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। রমাযান আসার সঙ্গে সঙ্গে সকল সামাজিক বৈষম্য দূরীভূত হয়। এ একটি মাস ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল মুসলমানকে সমভাবে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। যে ধনী ব্যক্তির ঘরে খাদ্য বস্তুর প্রাচুর্য রয়েছে, তাকেও দু এক দিন নয়, পুরো এক মাস দিনের বেলা অনাহারে কাটাতে হয়। সুতরাং মুসলিম জাহানে ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকল মানুষকে এ সময়ে একই পর্যায়ে এনে দেয়। রমযান মাসের ক্ষুধার অনুভূতি ধনীর অন্তরে দরিদ্রের জন্য সহানুভূতি জাগিয়ে দেয়।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page