মসজিদ ইসলামি সমাজের প্রাণকেন্দ্র এবং পবিত্রতম স্থান। ইসলামি সমাজব্যবস্থায় মসজিদ একাধারে ইবাদত-বন্দেগির স্থান, সামাজিক ও ধর্মীয় মিলনায়তন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিচার ও আনুগত্যের সূতিকাগার।
মুসলিম জাতির ঈমানআকিদা, ইবাদত, বন্দেগি হতে আরম্ভ করে তাদের শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শাসন, সংস্কার, রাষ্ট্র পরিচালনা, গবেষণা, সমস্যা নির্ণয় ও সমাধান চিন্তা এবং বাস্তবায়ন ও কার্যকরী করার কেন্দ্ররূপে মসজিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মসজিদে আগত প্রত্যেক মুসলমান এক ইমামের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামায আদায় করে ইসলামের সুদৃঢ় ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয় এবং নেতার আনুগত্যের এলাহি আদেশ বাস্তবায়ন করে। মসজিদের ইমামকে গণমানুষের নেতা হিসেবে অনেক দায়-দায়িত্ব পালন করতে হয়।
(১) ইসলামি সমাজে মসজিদের ভূমিকা ও গুরুত্ব
ক) মসজিদের পরিচয়
মসজিদ অর্থ ‘সিজদার স্থান’। ইসলামের পরিভাষায়, নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থানকে মসজিদ বলে।
মসজিদকে ‘মহান আল্লাহর ঘর’ বলা হয়ে থাকে। মসজিদ ইসলামি সমাজব্যবস্থায় ইবাদত-বন্দেগির স্থান, সামাজিক ও ধর্মীয় মিলনায়তন, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বিচার ও সম্প্রীতি লেনদেনের মাধ্যম, নেতৃত্ব ও আনুগত্যের প্রশিক্ষণালয়।
খ) সমাজজীবনে মসজিদের গুরুত্ব ও ভূমিকা
- মসজিদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি। মসজিদে নববী ছিল আল্লাহর নবির সকল কাজ-কর্মের কেন্দ্র। আল্লাহর ঘর মসজিদ শুধু সালাতের ঘরই নয়; এটা ফালাহ বা মানব কল্যাণ কেন্দ্র। তাই মুয়াযযিন পাঁচ বেলা মুসল্লিদেরকে শুধু সালাতের জন্য নয়, ফালাহ বা মানব কল্যাণের জন্যও আল্লাহর ঘরের দিকে আহ্বান করে থাকে।
- সমাজ ও জীবনকে মসজিদমুখী ও মসজিদ কেন্দ্রিক করে গড়ে তুলতে পারলে সমাজের সব সমস্যার সমাধান এখান থেকেই করা সম্ভব হবে। আমাদের সমাজকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন পাঁচ বেলা নামাযই নয়, প্রতিটি কর্মেই মসজিদের প্রভাব থাকে।
- একটি নির্দিষ্ট এলাকার মুসল্লিগণ দৈনিক পাঁচবার নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করার জন্য যখন মসজিদে মিলিত হয়, তখন একই ইমামের পিছনে সমাজের ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাদা-কালো সব শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি জাগ্রত হয়।
- একই ইমামের পিছনে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে সালাত আদায় করার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে নেতার আনুগত্য ও শৃঙ্খলাবোধের সৃষ্টি হয়।
- সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মসজিদের ভূমিকা অতুলনীয়। মহান আল্লাহর একটি সমাজের মুসলমান মসজিদে সমবেত হয়ে পরস্পরকে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তোলে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ-সৃিষ্টতে মসজিদের ভূমিকা রয়েছে।
- সমাজের মুসলমানগণ দৈনিক পাঁচবার মসজিদে মিলিত হয়ে আমির-ফকির, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নীচু সবাই এককাতারে একই ইমামের পিছনে একত্রিত হয়ে সকল ভেদাভেদ ও বৈষম্য ভুলে অপূর্ব সাম্যের নিদর্শন স্থাপন করে।
- মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান পরস্পরের সাথে মিলিত হয়। পরস্পরের কথাবার্তা, কুশল বিনিময় ও আদর, শ্রদ্ধা, সম্ভাষণ, সালাম বিনিময় হয়। ফলে তাদের পরস্পরের মধ্যে আন্তরিকতা, স্নেহ, শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।
- মুসলমানগণ আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য মসজিদে সমবেত হয়। তখন সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি পাবার আশায় সকলে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখে। নীরবতা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ইমামের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলের সাথে নামাযের সব করণীয় আদায় করে। এ থেকে শান্তি ও শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত হয়।
- মসজিদ মানুষকে নিয়মানুবর্তিতাও শিক্ষা দেয়। একই নিয়মে দৈনিক পাঁচবার নামায আদায়, আযান-ইকামত ও ইমামের পিছনে নিয়মমাফিক সবকিছুই করার মাধ্যমে সকলকে নিয়মানুবর্তী করে গড়ে তোলে।
- মসজিদ মানুষকে সময়ানুবর্তিতারও শিক্ষা দান করে। নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ের মধ্য দিয়ে মানুষকে সময়ানুবর্তিতা, দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে।
- মসজিদ আল্লাহর ঘর বলে সেখানে সর্বদা পাক-পবিত্র অবস্থায় প্রবেশ করতে হয়। কাজেই আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদ পবিত্রতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত। এরই প্রভাবে সমাজের সর্বত্র এ পবিত্র ভাবের বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে।
- মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থায় সমাজের সর্বপ্রকার জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম পরিচালনার কেন্দ্র হচ্ছে মসজিদ। জনহিতকর কাজকর্ম পরামর্শের ভিত্তিতে মসজিদ থেকেই করা যায়। মসজিদে নববীতে সব ধরনের কাজই নবি (সাঃ) করতেন। মসজিদে পাঠাগার স্থাপন, শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা এবং কুরআন-হাদিস শিক্ষার ব্যবস্থা করে সামাজিক সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তার করা যায়।
- মসজিদ ইসলাম প্রচারের মূল কেন্দ্র। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদিনায় গিয়ে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মদিনার মসজিদে মুসলমানদেরকে ইসলামের বিধি-নিষেধ সম্পর্কে শিক্ষাদান ও ইসলাম প্রচার ও প্রসারে উৎসাহ প্রদান করা হতো। একইভাবে সাহাবায়ে কিরামগণও মসজিদ কেন্দ্রিক ইসলাম প্রচার করতেন।
- ইসলামের প্রাথমিক যুগে মসজিদ রাষ্ট্র ও ধর্মের কেন্দ্রভূমি ছিলো। রাষ্ট্রের কাজকর্ম মসজিদেই সম্পাদিত হতো। মসজিদ ছিলো জনগণের প্রধান সভার স্থান। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে নববীতে বসে যাবতীয় বিচার কার্য পরিচালনা করতেন।
গ) সার সংক্ষেপ
মসজিদ ইবাদত বন্দেগির স্থান। মসজিদ ইসলামি সমাজের প্রাণকেন্দ্র। ইসলামি সমাজব্যবস্থায় মসজিদ একাধারে ইবাদাত গৃহ, শিক্ষাকেন্দ্র, মিলনায়তন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনার কেন্দ্র। তাই মসজিদকে সমাজের সকল কাজ-কর্ম ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কেন্দ্র বলা যায়।
মসজিদ মানুষের মিলন কেন্দ্র। আজকের বিশ্ব মুসলিম সমাজ মসজিদ কেন্দ্রিক জীবন হতে দূরে সরে যাওয়ার কারণে অনেক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। মসজিদে নববীর মত আবার আমাদের মসজিদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
(২) নিরক্ষরতা দূরীকরণ, গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় মসজিদের ভূমিকা
ক) মসজিদে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা
ইসলামের প্রথম শিক্ষালয় হচ্ছে মসজিদ। পৃথিবীর প্রথম মসজিদ বায়তুল্লাহ ছিলো মানবজাতির প্রথম শিক্ষাগার। শিক্ষা বিস্তারে মসজিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা প্রসঙ্গে নবি করিম (সাঃ) বলেছেন, কোনো ব্যক্তিবর্গ যদি আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে কুরআন পাঠ করে ও পরস্পরকে শিক্ষাদান করে, তাহলে তাদের ওপর শান্তি নাযিল হয়।
i) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগে
মহানবি (সাঃ) মদিনার মসজিদে বসে সাহাবায়ে কিরামগণকে ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন।
মহানবি (সাঃ) মসজিদভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি সাহাবায়ে কিরামগণকে মসজিদসমূহকে কর্মমুখর রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ সময় মসজিদে দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি সব ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা ছিলো।
ii) খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে
মহানবি (সাঃ) কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মসজিদের সর্বজনীন ব্যবহারই পরবর্তীকালে শিক্ষার গণমুখী প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে।
মহানবি (সাঃ)-এর নির্দেশনা অনুসারে সাহাবায়ে কিরামগণও মসজিদকে শিক্ষা প্রদানের কাজে প্রয়াসী হন। এ সময় নতুন নতুন অ লে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মসজিদভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রম একটি রাষ্ট্রীয় শিক্ষাকার্যক্রম হিসেবে স্বীকৃত হয়।
iii) উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনামলে
এ সময় ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান, তাহযীব, তমদ্দুন ও উত্তম চরিত্রের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে মসজিদ ব্যবহৃত হত। এ সময় মদিনা, মক্কা, কূফা, বসরা, সিরিয়া, মিসর, মরক্কো, স্পেন, ইয়ামান, খোরাসান প্রভৃতি শহরের জামে মসজিদগুলো সাহাবা ও তাবেঈগণের প্রচেষ্টায় প্রধান শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়।
হিজরি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে ফিকহ ও হাদিসশাস্ত্রের ইমামগণও মসজিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রেখেছেন। যেমন- মিসরের আল আযহার জামে মসজিদই পরবর্তিতে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
iv) মসজিদসংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
আব্বাসী শাসনালে মসজিদকে কেন্দ্র করে ইসলামি শিক্ষার প্রসার ঘটে। এ সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। ফলে মসজিদে শিক্ষার্থীদের সংকুলান না হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষাস্তর মসজিদের সাথে সংযুক্ত রেখে উচ্চ শিক্ষা স্তরটি আলাদা করা হয়। তখন উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলো মাদরাসা আর প্রাথমিক শিক্ষা স্তরকে মক্তব বলা হতো।
খ) নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় মসজিদের ভূমিকা
নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। যেমন-
- মসজিদকে কেন্দ্র করে মক্তব গড়ে তোলা যায়। মক্তব মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশের প্রতি গ্রামে ও মহল্লায় মসজিদ আছে।
- এখানে ইমাম, মুয়াযযিন সাহেবের কাছে ছোট ছেলে-মেয়েরা সূরা-কিরাআত, কায়দা, কুরআন শরিফ পড়া শিখে। প্রয়োজনীয় মাসআলা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়।
- এখানে আলাদা ঘর তৈরি করতে হয় না, মসজিদকেই মক্তব ঘর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া আলাদা কোনো শিক্ষক রাখারও প্রয়োজন হয় না। ইমাম ও মুয়াযযিন সাহেব শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
- মসজিদই হবে মুসলিম শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। নারী-পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সকলের জন্য কুরআন-হাদিসসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা দানের জন্য ফোরকানিয়া মক্তব প্রতিষ্ঠা করা।
- মসজিদে শিক্ষার মাধ্যমে শুধু শিক্ষিত মানুষ নয়, আদর্শ মানুষ সৃষ্টির দিকে শিক্ষকের লক্ষ্য থাকে। এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা শিশুর মনে প্রথম থেকেই জাগ্রত করা হয়। ফলে শিশুর মনে নৈতিক শিক্ষার ভিত তৈরি হয়।
- শিশুমন অত্যন্ত কোমল ও উর্বর। এ সময় যে শিক্ষা মক্তবে দেয়া হয়, তাই তাদের মন-মানসিকতায় স্থায়ীভাবে গেঁথে থাকে। কাজেই আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে মসজিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গ) সার সংক্ষেপ
মসজিদে পাঠাগার স্থাপন, শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। সামাজিক সংস্কার ও শিক্ষা বিস্তারে মসজিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিরক্ষরতা দূরীকরণার্থে মসজিদকে ব্যবহার করা খুবই শ্রেয়।
মহানবি (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ছিল ইসলামের প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। এ মসজিদ থেকেই প্রখ্যাত ওলামায়ে কিরাম, যুগশ্রেষ্ঠ, মনীষী, ফকিহ, মুহাদ্দিস, বিচারক, রাষ্ট্রনায়ক, ইমাম ও পথ প্রদর্শকগণ শিক্ষা লাভ করেছেন। তাঁরা বিশ্ববাসীকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন।
(৩) মসজিদের ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলি
ক) ইমামের পরিচয়
ইমাম অর্থ নেতা, পরিচালক ও অগ্রনায়ক। ইসলামের সোনালী যুগে ইমাম বলতে বোঝাতো ইসলামি সমাজের সামগ্রিক নেতৃত্ব যাঁরা দিতেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সমাজ-সভ্যতা, সমাজের পরিচালনার সামগ্রিক নেতৃত্বে ছিলেন ইমামগণ।
ইসলামের সোনালি যুগে সমাজ ও রাষ্ট্রের যারা নেতৃত্ব দিতেন তাঁরাই আবার মসজিদে সালাতেরও নেতৃত্ব দিতেন। এজন্য সমাজ ও মসজিদের একই নেতা বা ইমাম ছিলেন।
খ) ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলি
মসজিদে সালাতের নেতৃত্ব এবং সমাজের সংস্কার, উন্নয়নমূলক কার্য পরিচালনা ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে নেতৃত্ব দেয়ার মত উপযুক্ত ইমাম নিয়োগ করা প্রয়োজন।
ইমাম হলেন নেতা। কাজেই নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্য ইমাম নিয়োগ করা খুবই জরুরি।
মহানবি (সাঃ) বলেছেন,
“তোমরা তোমাদের মধ্যকার সর্বোত্তম লোককে ইমাম নিযুক্ত কর। কেননা, তাঁরা তোমাদের এবং তোমাদের রবের মধ্যে প্রতিনিধিত্বকারী।”
(দারে কুতনী)
ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলির বিশেষ দিকগুলো নিম্নরূপ-
i) আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক থাকা
ইমামকে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের অধিকারী, সৎ কাজের আদেশ দানকারী, মন্দ কাজ থেকে বিরতকারী এবং সত্যের বাণী প্রকাশে সক্ষম হতে হবে।
ii) আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র কাম্য
সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে, লোক দেখানোর মনোভাব দূর করতে হবে, মানুষের প্রশংসা ও গুণকীর্তনে সীমালংঘন করতে পারবে না এবং এক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করতে হবে। লোকের কাছে স্বল্পে সন্তুষ্ট থাকতে হবে এবং সে জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
iii) বিশুদ্ধ ও সুমিষ্ট উচ্চারণে কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী
ইমাম মসজিদে নামাজে ইমামতি করেন, তাই ইমামকে তাজবীদ সহকারে সুন্দর ও উত্তম কুরআন তেলাওয়াত জানতে হবে।
iv) কুরআন ও হাদিসের যথাযথ জ্ঞান
কুরআন ও হাদিসের সাথে সর্বদা সম্পর্ক রাখতে হবে এবং তা গভীর অধ্যয়ন করতে হবে ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল উদ্ভাবন করতে হবে।
v) জ্ঞানী হওয়া
সূক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী হওয়া, ব্যাপক লেখাপড়া করা, যে সমাজে বাস করে সেই সমাজ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল হওয়া এবং সেই সমাজের অন্যান্য মতাদর্শ, দর্শন, চিন্তাধারা ও সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এছাড়াও ইসলামের ইতিহাস ও মানব সভ্যতা তার ইতিহাস জানতে হবে। যেন যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে তুলে ধরা সম্ভব হয়।
vi) আরবি ভাষায় দক্ষ
আরবি ভাষায় দক্ষতা ও পারদর্শিতা থাকতে হবে। একইসাথে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা জানা থাকলে ইসলামের খিদমতে নিজেকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হবে।
vii) উত্তম চরিত্রের অধিকারী
ইমামকে উত্তম চরিত্র ও সুন্দর আচরণের অধিকারী হতে হবে, যাতে লোকেরা তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন এবং তার আহ্বানে সাড়া দিতে পারে।
viii) ধৈর্যশীল
ইমামের যথেষ্ট ধৈর্য ও সহ্যশক্তি থাকতে হবে যেন মসজিদের পাড়া বা মহল্লার লোকদেরকে ইসলামি জ্ঞান দানে অধৈর্য হয়ে না পড়েন।
ix) জনমানুষের আস্থাশীল
ইমামের একটি অন্যতম দিক হলো- অধিকাংশ লোক যাকে ইমাম বানাতে সম্মত নয়, এমন ব্যক্তিকে ইমাম নিযুক্ত করা উচিত নয়। তবে অল্পসংখ্যক লোক ইমাম বানাতে অসম্মতি প্রকাশ করলে তার এ অসম্মতি ধর্তব্য নয়।
x) নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন
একজন ইমামকে সামগ্রিক দিক থেকে যোগ্যতম ও নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন হতে হবে। তা হলেই ইমামের দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হবে।
গ) সার সংক্ষেপ
ইমাম যোগ্য, দক্ষ, বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞ হলে মসজিদ তার ভূমিকা পালন সক্ষম হবে। পক্ষান্তরে, ইমাম যদি দুর্বল, অদক্ষ, কম-জ্ঞানের অধিকারী হয়; তাহলে মসজিদ ইবাদতখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে এবং সে তার আসল ও মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে।
তাই আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক, কুরআন ও হাদিসের যথাযথ জ্ঞান, আরবি ভাষায় দক্ষ, উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও ধৈর্যশীল প্রভৃতি গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে।
(৪) ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ক) ইবাদতের ক্ষেত্রে ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ইমামকে ইবাদতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয়-
- ইমাম সাহেবের প্রথম দায়িত্ব হলো নামায প্রতিষ্ঠা করা। তিনি মুসলমানদেরকে সালাতে উদ্বুদ্ধ এবং সালাত কায়েম রাখার জন্য মুসল্লিদেরকে কুরান ও হাদিসের বক্তব্য এবং ওয়ায-নসিহত শোনাবেন।
- ইমাম সাহেব ঈদের সালাতের ব্যবস্থা করবেন। ঈদের সালাতের গুরুত্ব, ফযিলত, মাসআলামাসায়েল সম্বন্ধে মুসল্লিদের আগে থেকেই জানাবেন। ঈদের দিনের করণীয়, ঈদের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা সম্বন্ধে মুসল্লিদের বলবেন।
- ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে বিভিন্ন ইবাদতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করবেন। তিনি ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে নিজে অগ্রণী হবেন এবং মুসল্লিদেরকে উৎসাহ ও প্রেরণা দিবেন। অন্যান্য ইবাদত অনুষ্ঠানের যথাযথভাবে পালনের দিকে মুসল্লিদেরকে অবহিত করবেন।
- ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে হজ্জ পালনে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করবেন। যারা হজ্জ পালনের উপযুক্ত, সেসব মুসল্লিদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সাথে কথা বলবেন। তাঁদেরকে হজ্জ পালনে উদ্বুদ্ধ করবেন। হজ্জ পালনের মাসআলা-মাসায়েল ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করবেন।
- ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে যাকাত দানে উদ্বুদ্ধ করবেন। মুসল্লিদের মধ্যে যাঁরা যাকাত দিতে পারবেন তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করবেন। তাদের যাকাতের মাসআলা-মাসায়েল বলে দেবেন। মসজিদকেন্দ্রিক যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
- ইমাম সাহেব সাদাকাতুল ফিতর আদায়ে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করবেন। সাদাকাতুল ফিতরের গুরুত্ব, উদ্দেশ্য ও ফযিলত সম্বন্ধে মুসল্লিদের অবহিত করবেন।
- মুসল্লিদের কুরবানির মাসআলা-মাসায়েল, ফযিলত শিক্ষা ও গুরুত্ব বুঝিয়ে দেবেন। ইমাম সাহেব কুরবানির শিক্ষানুসারে গরিব-দুঃখীদের মাঝে কুরবানির গোশত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
- তিনি ইসলামি দিবসসমূহ উদ্যাপন করবেন। সিরাতুন্নবী (সাঃ), শবেবরাত, শবেকদর, শবেমিরাজ, আশুরা ইত্যাদির গুরুত্ব, শিক্ষা ও ফযিলত সম্বন্ধে আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রচনা প্রতিযোগিতা এবং আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
খ) ইমামের সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য
সমাজের নেতা হিসেবে ইমাম সাহেব বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ইমামের সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্যের বিশেষ দিকসমূহ নিম্নরূপ-
- নিক্ষরতা দূরীকরণে গণশিক্ষা ও নৈশ বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনায় ইমাম সাহেবকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুসারে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সমাজে কল্যাণমূলক অবদান রাখতে হবে। অসুখ-বিসুখ, বিপদাপদে সেবা ও সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
- ইমাম সাহেবকে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সমস্যা সমাধানের উপায়-পদ্ধতি নির্দেশ করতে হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, যোগাযোগ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সমস্যা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাধানের কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
- ইমাম সাহেব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। মসজিদ এলাকার নালা-নর্দমা পরিষ্কার, ডোবা-পুকুর পরিচ্ছন্নকরণ, ঝোপ-ঝাড় কর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। মুসল্লিদের শরীর, পোষাক ও বাসস্থান পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব ও ফযিলত বর্ণনা করবেন।
- ইসলামি সমাজে ইমাম পরিবারে বিবাহ পড়ানো, পারিবারিক কলহ নিরসন এবং তালাকের ব্যাপারে মীমাংসাকারীর ভূমিকা পালন করে থাকেন। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত, কাফন-দাফন, উত্তরাধিকারী সম্পত্তি বণ্টন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকেন।
- মসজিদ এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কী কী কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, ইমাম সাহেব তার দিকনির্দেশনা দিবেন। ইমাম সাহেব জনগণকে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও ফযিলত বর্ণনা করে উদ্বুদ্ধ করবেন।
- ইমাম সাহেব সমকালীন বিষয় সম্পর্কে মুসল্লিদের অবহিত করার সাথে সাথে এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যেমন-পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষ নিধন ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ইসলামি নীতিমালা উপস্থাপণ করতে পারেন।
গ) সার সংক্ষেপ
ইমাম সমাজের নেতা। তাই ইমাম সাহেবকে সমাজের সবচেয়ে বিচক্ষণ, উত্তম নেতা ও পরিচালকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই ইসলামি সমাজব্যবস্থা থেকে মানুষ উপকৃত হবে। ইসলামি সমাজব্যবস্থার সুফল পেয়ে সবাই সুখী-সমৃদ্ধ জীবন যাপন করতে পারবেন। আর আল্লাহর শোকর আদায়ের জন্য লোকেরা আন্তরিকতার সাথে মসজিদ পানে ছুটে আসবে।
(৫) জুমআর খুতবা ও এর বিষয়বস্তু
ক) জুমুআর খুতবার পরিচয়
খুতবা মানে ভাষণ, বক্তৃতা ও উপদেশ।
ইসলামি পরিভাষায়, জুমুআর নামাযের পূর্বে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক ইত্যাদি বিষয় সম্বলিত উপদেশমূলক যে ভাষণ দিয়ে থাকেন তাকেই জুমুআর খুতবা বলে।
খ) খুতবার বিষয়বস্তু
খুতবা হচ্ছে ইসলাম প্রচারের উত্তম উপায়। তাই খুতবায় সুপরিকল্পিত বিষয়বস্তু অনুসরণ করে বক্তব্য প্রদান জরুরি। জুমুআর খুতবার মৌলিক দিকসমূহ নিম্নরূপ-
- জুমুআর খুতবায় ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা ও সন্দেহ-সংশয় দূর করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি ভ্রান্ত মতবাদ ও দর্শন থেকে দূরে থাকার বিষয়ে উপদেশ দেয়া এবং যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে সেগুলোর ভ্রান্তি ও দুর্বলতা তুলে ধরে সেগুলোর ওপর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করা। যেন মানুষ আল্লাহর সন্তেুাষ লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর মনোনীত জীবনব্যবস্থা ইসলামের ওপর টিকে থাকে।
- পরকালের শাস্তি ও পুরস্কারের বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং ‘আমর বিল মারুফ’ ও ‘নেহী আনিল মুনকার’ অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে ওয়ায-নসিহত করা।
- সমাজে চলমান সমস্যা ও সংকট আলোচনা করে এ বিষয়ে ইসলামের সমাধান পেশ করা। মহিলা ও পরিবারের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা দরকার। ইসলামের বিভিন্ন উপলক্ষ ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা করা। যেমন- রমযান, হজ্জ, যাকাত, আশুরা, মিরাজ ইত্যাদি। মুসল্লিরা যেন সে সব বিষয়ে জানার জন্য আরো বেশি আগ্রহী হয়।
- ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এ ছাড়াও মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা সম্পর্কেও আলোকপাত করতে হবে; যাতে করে মুসলমানরা তাদের অন্য জায়গার সমস্যাগ্রস্ত ভাইদের ব্যাপারে চিন্তা ও অনুভূতির ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন না থাকে।
- মুসলমানের অন্তরে ইমানি প্রেরণা সৃষ্টি করতে হবে, মুসলমানের পবিত্র স্থান ও ভূমির সংরক্ষণের বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। মুসলমানের ইজ্জত-সম্মান, আকিদা-বিশ্বাস ও ইসলামি শরীআহ প্রতিরক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করে দাওয়াতে দ্বীনের পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।
- খুতবা হলো ইসলামের বাণী প্রচারের একটি অন্যতম মাধ্যম; কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খুতবার মাধ্যমে সাহাবিদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিতেন। কোনো ব্যক্তি, দল বা প্রশাসনের প্রচারণার উদ্দেশ্য থেকে খুতবাকে মুক্ত রাখতে হবে এবং তা আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট করতে হবে।
- খুতবার একটি অন্যতম বিষয়বস্তু হলো দুআ। ইমাম সাহেব প্রথম খুতবায় হাম্দ, দরুদ ও কিরাআত ছাড়াও সবার উদ্দেশ্যে নসিহত করবেন, অতঃপর বসবেন। দ্বিতীয় খুতবায় হাম্দ ও দরুদসহ সকল মুসলমানের জন্য দু‘আ করবেন।
খ) সার সংক্ষেপ
জুমুআর নামায ও খুতবা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদাত। জুমআর নামায বড় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়, তাই এখানে একসাথে অনেক লোকের সমাগম হয়। এ খুতবায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সমসাময়িক বিষয়াদি ও ইসলামের বিভিন্ন তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহে পরামর্শ দেয়া সম্ভব হয়।
সর্বোপরি খুতবার মাধ্যমে জনগণের মাঝে সমকালীন যুগ জিজ্ঞাসার জবাব এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ হিসেবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উৎসাহী করা হয়।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]