প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আল্লাহর দয়ায় আপনার সকলেই ভালো আছেন।
আজকে আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে- শানে নুযুল কাকে বলে, শানে নুযুল কি, শানে নুযুল এর গুরুত্ব; সূরা আল-বাকারা নাযিলের কারণ ও সময়কাল; সর্বপরি, সুরা বাকারার শানে নুযুল এবং সূরা বাবারার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
(১) শানে নুযুল কাকে বলে? শানে নুযুল কী? শানে নুযুল এর গুরুত্ব
শানে নুযুল কাকে বলে: কুরআন মাজীদ অন্যান্য আসমানি কিতাবের মত একত্রে নাযিল হয়নি। জীবন সমস্যা ও ঘটনার আলোকে অল্প-অল্প করে সমাধানমূলক বক্তব্যসহ তেইশ বছরে নাযিল হয়েছে। উসূলে তাফসীরের পরিভাষায় একে সাবাবে নুযুল বা শানে নুযুল বলা হয়।
শানে নুযুল কি: তাফসীরকারকদের পরিভাষায় কুরআনের আয়াতগুলো নাযিলের কারণ ও প্রেক্ষাপটকে শানে নুযুল বলা হয়।
যেমন- হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে,
“নিশ্চয় আমরা আপনাকে মহান বিজয় দান করেছি।”
(সূরা আল-ফাতহ ৪৮:১)
এভাবে যে আয়াত বা সূরা যে কারণে নাযিল হয়েছে সেটি সে আয়াত বা সূরার শানে নুযুল।
শানে নুযূলের গুরুত্ব: আল-কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপটের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন শানে নুযুল যদি সাহাবী হতে বর্ণিত হয়, তাহলে তা হাদিসে মারফু-এর পর্যায়ভুক্ত হবে এবং তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে আয়াতটি শানে নুযূলের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। শানে নুযুল জানা থাকলে আয়াতের সঠিক মর্ম, বিধান ও হুকুম ভালভাবে বোঝা যায়। মুফাসসিরগণ বলেন, কুরআনের মর্ম বোঝার জন্য শানে নুযুল হলো একটি উত্তম উপায়। আইন-বিধান প্রণয়নের জন্য শানে নুযূলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
(২) সুরা বাকারার শানে নুযুল
এ সুরা বাকারার শানে নুযুল বা সূরাটি নাযিলের ঐতিহাসিক পটভূমি হচ্ছে-
মহানবী (স) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে আসার ফলে ইসলাম প্রচার ব্যাপক হতে থাকে। তখন কুরাইশদের সাথে সাথে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান এবং মুনাফিকরা ইসলামের গতিরোধ করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারা ইসলামের প্রতি অমূলক নানারকম অপবাদ প্রচার করতে থাকে। এমনকি তারা পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী হওয়ার ব্যাপারে নানারূপ সন্দেহমূলক উক্তি করতে থাকে। তখন আল্লাহ তা‘আলা কাফির, মুশরিক, ইয়াহুদি, খ্রিস্টান ও মুনাফিকদের সেই মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদে সূরা আল-বাকারা নাযিল করেন।
এ সূরায় ইসলাম বিদ্বেষীদের সমস্ত অপবাদের জবাব দেওয়া হয়। কুরআন যে একান্ত আল্লাহ তা‘আলারই সত্য বাণী, ইসলাম যে বিশ্বমানবতার একমাত্র দিশারী তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। (তাফসীরে হাক্কানী)
তাফসীরে নুরুল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- এ সূরার শানে নুযুল হল এই যে, মালিক ইবন সাইফ নামক এক ইয়াহুদি কুরআনের বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাতো যে-এটা সেই পবিত্র গ্রন্থ নয়, যার নাযিল হওয়ার সুসংবাদ পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবে দেওয়া হয়েছিল। তখন পবিত্র কুরআন সম্পর্কে যাবতীয় সন্দেহ দূর করার জন্য এ সূরা নাযিল করা হয়। এতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়- এটা সেই কিতাব,যাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই।
(৩) সূরা বাবারার বিষয়বস্তু
আল-কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ সূরা হচ্ছে সূরা আল-বাকারা। এ সূরাটি মহানবী (স)-এর হিজরতের পর মদীনায় অবতীর্ণ হয়। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ২৮৬ এবং এতে ৪০টি রুকু রয়েছে।
- সূরা আল-বাকারায় ইসলামের অধিকাংশ মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে।
- এ সূরার মধ্যে সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত, বিবাহ-তালাক, হালাল-হারাম, ব্যবসায়-বাণিজ্য, জিহাদ ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
- হযরত আদম আ. ও হাওয়ার আ. সৃষ্টি কাহিনী, তাঁদের জান্নাতে অবস্থান, ফেরেশতা কর্তৃক তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, শয়তানের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ ও জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ ও তাঁদের তাওবা কবুল করার কথা ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
- মুনাফিকদের পরিচয়, বৈশিষ্ট্য এবং ইয়াহুদিদের প্রতি আল্লাহর বিভিন্ন অনুগ্রহ এবং তাদের নাফরমানীর কথাও বর্ণিত হয়েছে।
- মুসলমানদের কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে মাসজিদুল হারাম নির্বাচনের ঘটনাও এ সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে।
- সবশেষে দুনিয়া ও আখিরাতে পরম কল্যাণ, সাফল্য অর্জনের নিমিত্তে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের একটি হৃদয়গ্রাহী দু‘আও শিক্ষা দিয়েছেন এ সূরায়।
আল-কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সূরা হচ্ছে সূরা আল-বাকারা। তবে এ সূরার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময় নাযিল হয়েছে। কারো মতে, এটা মদীনায় নাযিল হওয়া প্রথম সূরা। এ সূরার আয়াতগুলো সব ধারাবাহিকভাবে নাযিল হয়নি এবং এ সূরাটি সম্পূর্ণ না হতেই অন্যান্য সূরার আয়াতসমূহ নাযিল হতে শুরু করে। এ সূরাগুলোর সকল আয়াত একত্রে এবং ধারাবাহিকভাবেও নাযিল হয়নি।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।