প্রিয় দ্বীনী ভাই-বোন। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আজকে হাজির হলাম নতুন একটা পোষ্ট নিয়ে। এই পোষ্টতে আমি সূরাতুল কদর এর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ (with 100% Clear Picture + Audio mp3 + Video mp4 download option) সহ উক্ত সূরা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব, ইংশাআল্লাহ। আপনি যদি সূরাতুল কদর সম্পর্কে জানতে ও সূরাটি শিখতে চাই তাহেল এই পোষ্টটি আপনার জন্যই। চলুন শুরু করা যাক।
(১) সূরাতুল কদর এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
- সূরাতুল কদর একটি মাক্কী সূরা।
- এটি পাবত্র কুরঅনের ৯৭ তম সূরা।
- সূরাতুল কদর এর আয়াত সংখ্যা ৫টি।
- রুকুর সংখ্যা এর রুকুর সংখ্যা ১টি।
- সূরাতুল কদর এর পূর্ববর্তী সূরার নাম ‘সূরা আলাক্ব’।
- সূরাতুল কদর এর পরবর্তী সূরার নাম ‘সূরা বাইয়্যিনাহ’।
এ সূরায় ‘লাইলাতুল কাদর’-এর ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরায় লাইলাতুল কাদর শব্দটি মোট তিনবার এসেছে। এর কাদর শব্দ থেকে এ সূরার নাম রাখা হয় সূরাতুল কদর।
সূরাতুল কদর আল-কুরআনের অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন সূরা। এটি মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয় অথ্যাৎ এটি মাক্কী সূরা। এর আয়াত সংখ্যা পাঁচটি। সূরাতুল কদর কুরআন মজিদের ৯৭তম সূরা।
(২) সূরাতুল কদর এর বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ৷
ক্রমিং | সূরাতুল কদর এর আয়াত | সূরাতুল কদর এর বাংলা উচ্চারণ | সূরাতুল কদর এর বাংলা অর্থ |
---|---|---|---|
1. | إِنَّا أَنْزَلْنَهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ | ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর। | নিশ্চয়ই আমি এটি (আল-কুরআন) অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে। |
2. | وَمَا أَدْرَكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِة | ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর। | আর আপনি কি জানেন এ মহিমান্বিত রাতটি কী? |
3. | لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنَ الْفِ شَهْة | লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। | মহিমান্বিত রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। |
4. | تَنَزَّلُ الْمَلَئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ | তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর। | সে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিবরাইল ফেরেশতা) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। |
5. | سَلْمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِةُ | ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর। | সে রাতের উষা উদয় হওয়া পর্যন্ত শান্তিই শান্তি (বিরাজ করে)। |
(৩) সূরাতুল কদর এর ছবি
সূরাতুল কদর এর বাংলা অর্থ:
সূরাতুল কদর এর বাংলা উচ্চারণ:
(৪) সূরাতুল কদর অডিও, ভিডিও ও পিডিএফ
সূরাতুল কদর এর অডিও:
সূরাতুল কদর এর ভিডিও:
সূরাতুল কদর এর পিডিএফ:
(৫) সূরাতুল কদর এর ব্যাখ্যা
- সূরাটির ১ নং আয়াতে তথ্য অনুযায়ী জানা যায় আল কদরের রাতে ইসলামের নবি মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রতি তার ধর্মীয় ঐশী গ্রন্থ কুরআন অবতীর্ণ হয়।
- ২ থেকে ৫ নং আয়াত (শেষ পর্যন্ত) আল কদরের রাত্রির মর্যাদা-মহিমা বর্ণিত ও প্রশংসিত হয়েছে।
লাইলাতুল কাদর বা কাদরের রাত অত্যন্ত মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত রাত। আল্লাহ তায়ালা এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। এ রাতের ইবাদত হাজার মাস একাধারে ইবাদত করার চেয়ে উত্তম। আমাদের আয়ুষ্কাল খুবই সীমিত। এ অবস্থায়
এ রাতে ইবাদত করলে আমাদের নেকির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত স্বরূপ। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাকে রহমত, বরকত ও শান্তির সওগাত দিয়ে প্রেরণ করেন। এ রাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুখ-শান্তি ও রহমত বিরাজ করতে থাকে।
(৬) সূরাতুল কদর এর শিক্ষা
এ সূরা থেকে আমরা নিম্নোক্ত শিক্ষা পাই-
- লাইলাতুল কাদর অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত।
- এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।
- এ রাতে ফেরেশতাগণ শান্তি ও কল্যাণ নিয়ে দুনিয়ায় নেমে আসেন।
- এ রাতে সারাক্ষণ শান্তি ও রহমত বর্ষিত হয়।
আমরা যথাযথভাবে লাইলাতুল কাদর উদযাপন করব। বেশি বেশি নফল ইবাদত বন্দেগি করব। এ রাতের সামান্য সময়ও আমরা ইবাদত না করে কাটাব না। তাহলে আমরা হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা বেশি সাওয়াব লাভ করব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনে শান্তি ও কল্যাণ দান করুন।
(৭) সূরাতুল কদর তাফসির
সূরাতুল কদর এর প্রথম আয়াত:
إِنَّا أَنْزَلْنَهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
নিশ্চয়ই আমি এ (কুরআন)কে অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাত্রিতে (শবেকদরে)। [1]
[1] অর্থাৎ, এই রাতে তা (কুরআন) অবতীর্ণ আরম্ভ করেছেন। অথবা তা ‘লাওহে মাহ্ফূয’ হতে দুনিয়ার আসমানে অবস্থিত ‘বাইতুল ইযযাহ’তে এক দফায় অবতীর্ণ করেছেন। আর সেখান থেকে প্রয়োজন মোতাবেক নবী (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তা ২৩ বছরে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
জ্ঞাতব্য যে, ‘লাইলাতুল কদর’ রমযান মাসেই হয়ে থাকে; অন্য কোন মাসে নয়। সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ নং আয়াতে প্রমাণ পাওয়া যায়, উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘রমযান মাস; যাতে কুরআনকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।’’
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
সূরাতুল কদর এর দ্বিতীয় আয়াত:
وَمَا أَدْرَكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِة
আর কিসে তোমাকে জানাল, মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি কি? [2]
[2] এখানে প্রশ্নবাচক শব্দ ব্যবহার করে এই রাতের মর্যাদা ও গুরুত্ব অধিকরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেন সৃষ্টি এর সুগভীর রহস্য পূর্ণরূপে জানতে সক্ষম নয়। একমাত্র আল্লাহই এ ব্যাপারে পূর্ণরূপ অবগত।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
সূরাতুল কদর এর তৃতীয় আয়াত:
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنَ الْفِ شَهْة
মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। [3]
[3] অর্থাৎ, এক রাত্রির ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। আর হাজার মাসে ৮৩ বছর ৪ মাস হয়। উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার উপর কত বড় আল্লাহর অনুগ্রহ যে, তিনি তাকে তার সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে অধিকাধিক সওয়াব অর্জন করার সহজ পন্থা দান করেছেন।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
সূরাতুল কদর এর চতুর্থ আয়াত:
تَنَزَّلُ الْمَلَئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ
ঐ রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। [4]
[4] এখানে ‘রূহ’ বলে জিবরীল (আঃ)-কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জিবরীল (আঃ) সহ ফিরিশতাগণ এই রাতে ঐ সকল কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, যা আল্লাহ এক বছরের জন্য ফায়সালা করে থাকেন।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
সূরাতুল কদর এর পঞ্চম আয়াত:
سَلْمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِةُ
শান্তিময় [5] সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।
[5] অর্থাৎ এতে কোন প্রকার অমঙ্গল নেই। অথবা এই অর্থে ‘শান্তিময়’ যে, মু’মিন এই রাতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে। অথবা ‘সালাম’-এর অর্থ প্রচলিত ‘সালাম’ই। যেহেতু এ রাতে ফিরিশতাগণ ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে সালাম পেশ করেন। কিংবা ফিরিশতাগণ আপোসে এক অপরকে সালাম দিয়ে থাকেন।
তিরমিযী দা’ওয়াত পরিচ্ছেদ, ইবনে মাজাহ দু’আ অধ্যায়, দু’আ বিল্আফবে ওয়াল আফিইয়াহ পরিচ্ছেদে শবেকদর রাত্রের জন্য নবী (সাঃ) খাস দু’আ বলে দিয়েছেনঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফ্ওয়া ফা’ফু আন্নী।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
(৮) সূরাতুল কদর এর শানে নুযুল
একদা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বনি ইসরাইলের এমন একজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, যিনি সমস্ত রাত ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন এবং সারা দিন জিহাদ করতেন। এভাবে এক হাজার মাস যাবৎ অবিরাম আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মগ্ন থাকেন। এ বিবরণ শুনে সাহাবিগণ বিস্ময় প্রকাশ করলেন। অতঃপর নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আফসোস করতে লাগলেন।
সাহাবিগণ ভাবলেন— আমরা এক হাজার মাস ইবাদত করার সুযোগ পাব না। অথচ পূর্ববর্তীগণ বহু বছর বেঁচে থাকতেন। বেশি দিন ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। ফলে আমরা ইবাদতের সাওয়াবে কোনো দিন তাদের সমান হতে পারব না। সাহাবিগণের আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এ সূরা নাজিল করেন। এতে তিনি জানিয়ে দেন যে, লাইলাতুল কাদরের এক রাতের ইবাদত হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম।
(৯) সূরাতুল কদর এর ঐতিহাসিক পটভূমি
হযরত আবু যর গেফারী বর্ণিত রেওয়ায়েতে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেন, ইবরাহীম-এর সহীফাসমূহ ৩রা রমযানে, তাওরাত ৬ই রমযানে, ইঞ্জিল ১৩ই রমযানে এবং যাবুর ১৮ই রমযানে অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআন পাক ২০শে রমযানুল-মোয়ারকে নাযিল হয়েছে।
(তাফসিরে মাযহারী, কাজী সানাউল্লাহ পানিপতি)
হাদীসে আছে,
শবে-কদরে জিবরাঈল ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামায অথবা যিকরে মশগুল থাকে, তাদের জন্যে রহমতের দোয়া করেন। ফেরেশতাগণ শবে-কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কোন কোন তফসীরবিদ একে “সালাম্মুন” এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এ অর্থ করেছেন যে, এ রাত্রিটি যাবতীয় অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে শান্তিস্বরূপ।
(ইবনে-কাসীর, মাযহারী)
শবে-কদরের এই বরকত রাত্রির কোন বিশেষ অংশে সীমিত নয়; বরং ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত।
(১০) উপসংহার
সূরাতুল কদর একটি ৫ আয়াতের ছোট সূরা তাই আমাদের সবার উচিত এটি মুখস্থ রাখা যাতে আমরা সালাতে এটি তিলাওয়াত করতে পারি।
সূরাতুল কদর কদর বাংলা উচ্চারণ থেকে মুখস্থ করার পাশাপাশি অডিও শুনুন। অডিও শুনলে সূরা যেমন দ্রত মুখস্থ হবে তেমন সূরার মধ্যে উচ্চারণে কথাও ভুল হলে শুদ্ধ হয়ে জাবে।
সূরাতুল কদর এর ছবি এবং অডিও ডাউনলোড করার আমরা ডাউনলোড অপশন দিয়ে রেখেছি, লিংক দেওয়া হয়েছে ওখান থেকে অতি সহজেই ডাউনলোড করে নিতে করতে পারবেন।
আমার এই সূরাতুল কদর বিষয়ক লিখাটি ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে আপনিও সওয়াবের ভাগিদার হবেন।
আল্লাহ হাফেজ।
[সূত্র: এনসিটিবি]