(১) সূরা কারিয়াহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সূরা আল-কারিআহ মক্কি সূরাসমূহের মধ্যে অন্যতম। এটি পবিত্র কুরআনের ১০১তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১১টি।
এ সূরার প্রথম শব্দ আল-কারিআহ। কারিআহ অর্থ সজোরে আঘাতকারী। কিয়ামত বা মহাপ্রলয় পৃথিবীকে সজোরে আঘাত করবে বলে একে কারিআহ বলা হয়।
এ সূরায় কিয়ামতের নানা অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্য এ সূরার নাম রাখা হয়েছে আল-কারিআহ বা মহাপ্রলয়।
(২) surah al qariah bangla
সূরা কারিয়াহ | بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) |
১ম আয়াত | الْقَارِعَةُ আল কা-রি‘আহ। করাঘাতকারী, |
২য় আয়াত | مَا الْقَارِعَةُ মাল কা-রি‘আহ। করাঘাতকারী কি? |
৩য় আয়াত | وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ ওয়ামাআদরা-কা মাল কা-রি‘আহ। করাঘাতকারী সম্পর্কে আপনি কি জানেন? |
৪র্থ আয়াত | يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ ইয়াওমা ইয়াকূনুন্না-ছুকাল ফারা-শিল মাবছূছ। যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতংগের মত, |
৫ম আয়াত | وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنفُوشِ ওয়া তাকূনুল জিবা-লুকাল‘ইহনিল মানফূশ। এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত। |
৬ষ্ঠ আয়াত | فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ ফাআম্মা-মান ছাকুলাত মাওয়া-ঝীনুহ। অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, |
৭ম আয়াত | فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ ফাহুওয়া ফী ‘ঈশাতির রা-দিয়াহ। সে সুখী জীবন যাপন করবে। |
৮ম আয়াত | وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ ওয়া আম্মা-মান খাফফাত মাওয়াঝীনুহূ। আর যার পাল্লা হালকা হবে, |
৯ম আয়াত | فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ ফাউম্মুহূহা-বিইয়াহ। তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। |
১০ম আয়াত | وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ ওয়ামাআদরা-কা মা-হিয়াহ। আপনি জানেন তা কি? |
১১তম বা শেষ আয়াত | نَارٌ حَامِيَةٌ না-রুন হা-মিয়াহ। প্রজ্জ্বলিত অগ্নি! |
(৩) সূরা ক্বারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম 1. আল কা-রি‘আহ। 2. মাল কা-রি‘আহ। 3. ওয়ামাআদরা-কা মাল কা-রি‘আহ। 4. ইয়াওমা ইয়াকূনুন্না-ছুকাল ফারা-শিল মাবছূছ। 5. ওয়া তাকূনুল জিবা-লুকাল‘ইহনিল মানফূশ। 6. ফাআম্মা-মান ছাকুলাত মাওয়া-ঝীনুহ। 7. ফাহুওয়া ফী ‘ঈশাতির রা-দিয়াহ। 8. ওয়া আম্মা-মান খাফফাত মাওয়াঝীনুহূ। 9. ফাউম্মুহূহা-বিইয়াহ। 10. ওয়ামাআদরা-কা মা-হিয়াহ। 11. না-রুন হা-মিয়াহ।
(৪) সূরা আল কারিয়া বাংলা অনুবাদ/অর্থ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি 1. করাঘাতকারী, 2. করাঘাতকারী কি? 3. করাঘাতকারী সম্পর্কে আপনি কি জানেন? 4. যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতংগের মত, 5. এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মত। 6. অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, 7. সে সুখী জীবন যাপন করবে। 8. আর যার পাল্লা হালকা হবে, 9. তার ঠিকানা হবে হাবিয়া। 10. আপনি জানেন তা কি? 11. প্রজ্জ্বলিত অগ্নি!
(৫) সূরা আল কারিয়া বাংলা উচ্চারণ ছবি
(৬) surah al qariah bangla uccharon audio
(৭) সূরা ক্বারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ ভিডিও
(৮) সূরা কারিয়াহ নাযিলের কারণ
তৎকালীন আরবে মানুষ যখন পারস্পরিক ছন্-সংঘাত, লুটতরাজ ও পাপাচারে লিপ্ত ছিল তখন তাদেরকে কিয়ামতের মহাপ্রলয় এবং হাশরের বিচার ও দোযখের কঠিন শান্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ সূরাটি নাজিল হয়েছে।
(৯) সূরা কারিয়াহ এর ব্যাখ্যা
সুরা আল-কারিআহ এর মধ্য আল্লাহ তায়ালা দুই ধরনের বিষয় উল্লেখ করেছেন।
সূরার প্রথম ৫টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের অবস্থা বর্ণনা করেছেন।
কিয়ামতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এজন্য এ সূরায় তিনি আল-কারিআহ বা মহাপ্রলয় শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করেছেন।
কিয়ামতের দিন এ পৃথিবীর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। বড় বড় পাহাড়-পর্বত পর্স্ত সেদিন ধুনিত পশমের ন্যায় উড়তে থাকবে। মানুষ কীটপতঙ্গোর ন্যায় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। আসমান, জমিন, সাগর, নদী, বন-জঙ্গল সবকিছুই সেদিন ধংস হয়ে যাবে। সেদিন শুধু আল্লাহ আয়ালা থাকবেন। তিনি ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ সূরায় দ্বিতীয় পর্যায়ে শেষ ৬টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার কাজকর্মের পরিণতি বর্ণনা করেছেন।
হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষের হিসাবনিকাশ নেওয়া হবে। মানুষের পাপপুণ্য পাল্লায় ওজন করা হবে।
যার আমল আন্তরিকতাপূর্ণ ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সংখ্যায় কম হলেও তার আমলের ওজন বেশি হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সংখ্যায় তো নামায, রোযা, সদকা-যাক্বাত, হজ্জ অনেক করে, কিন্তু আন্তরিকতা ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্য কম, তার আমলের ওজন কম হবে।
দুনিয়াতে যে পুণ্য বা নেক কাজ করবে, তার পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে। সে লাভ করবে চিরশাস্তির জান্নাত। সে সেখানে সন্তুষ্ট চিত্তে বসবাস করবে।
অপরদিকে যার পণ্যের পাল্লা হালকা হবে তার পাপের পাল্লা ভারী হবে। তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হাবিয়া নামক দোযখ হবে তার বাসস্থান। হাবিয়া খুবই গভীর স্থান। এতে রয়েছে উত্তপ্ত আগুন। সেখানে পাীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।
(১০) সূরা কারিয়াহ এর শিক্ষা
- এ দুনিয়ার জীবন ও দুনিয়া উতয়ই ক্ষণস্থায়ী।
- মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গোটা দুনিয়া ও সৃমিজগৎ ধ্বংস করে দেবেন।
- হাশরে মানুষের ভালোমন্দের বিচার করা হবে।
- নেককার ব্া্তির স্থান হবে চিরশাস্তির জান্নাত।
- আর পাপীদের ঠিকানা হবে য্রণাদায়ক শাস্তির জাহান্নাম ।
আমরা এ সূরাটি অর্থসহ মুখস্থ করব। এ সূরার শিক্ষা অনুসারে সর্বদা ভালো কাজ করব। অন্যায় ওপাপ কাজ থেকে বিরত থাকব ।
আলোচিত/উত্তরিত অনুসন্ধানসমূহ: সূরা কারিয়াহ , surah al qariah bangla, সূরা আল কারিয়া, সূরা ক্বারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ।
[সূত্র: এনসিটিবি]