প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ১৩ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন। সূরা বাকারার ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ১৩ ও ১৪ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
১৩. | وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ ءَامِنُوا۟ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ قَالُوٓا۟ أَنُؤْمِنُ كَمَآ ءَامَنَ ٱلسُّفَهَآءُ أَلَآ إِنَّهُمْ هُمُ ٱلسُّفَهَآءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ ওয়া ইযা-কীলা লাহুম আ-মিনূকামাআ-মানান্না-ছুকা-লআনু’মিনু কামাআমানাছছুফাহাউ ‘আলাইন্নাহুম হুমুছছুফাহাউ ওয়ালা-কিল্লা-ইয়া‘লামূন। যখন তাদেরকে বলা হয়, যে সকল লোক ইমান এনেছে তোমরাও তাদের মত ইমান আনো। তারা বলে, নির্বোধগণ যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ইমান আনব? সাবধান! এরাই নির্বোধ, কিন্তু এরা জানে না। |
১৪. | وَإِذَا لَقُوا۟ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوْا۟ إِلَىٰ شَيَٰطِينِهِمْ قَالُوٓا۟ إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِءُونَ ওয়াইযা- লাকুল্লাযীনা আ-মানূকা-লআ-মান্না-ওয়াইযা- খালাও ইলা-শাইয়াতীনিহিম কা-লূইন্না- মা‘আকুম ইন্নামা নাহনুমুছতাহঝিউন। আর তারা যখন ইমানদারদের সাথে মিশে তখন বলে, আমরা ইমান এনেছি। আবার যখন তারা তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথেই রয়েছি- আমরা তো তাদের সাথে উপহাস করি। |
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
১৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
মহান আল্লাহ বলেন, যখন মুনাফিকদেরকে প্রকৃত ইমানদারগণের ন্যায় পূর্ণ সততার সাথে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ইমান আনার জন্য বলা হয়; তখন জবাবে তারা বলে, ‘আমরা কী নির্বোধ লোকদের ন্যায় ইমান আনবো। মুনাফিকদের মতে, সত্যিকার নিষ্ঠাবান মুমিন হওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ মুসলিমগণ শুধু সত্য ও সততার জন্যই সমগ্র দেশের শত্রুতা মাথা পেতে নিয়েছে। তাদের মতে, সত্য ও সততার বিতর্কে জড়িত না হয়ে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ।
মুনাফিকদের ভ্রান্ত নীতির জবাবে আল্লাহ তাঁর রাসূল (স)-কে স্মরণ করিয়ে দেন যে, মূলত মুনাফিকরাই নির্বোধ-মূর্খ। কিন্তু অহংকার ও অজ্ঞতার কারণে তারা নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। অন্যান্য লোক যেভাবে ইমান এনেছে, তোমরাও অনুরূপভাবে ইমান আনো। এখানে লোক বলতে সাহাবীগণকে বোঝানো হয়েছে। আর সাহাবীগণের ঈমানের অনুরূপ ইমানই গ্রহণযোগ্য।
এ আয়াতের বক্তব্য হতে যেসব শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি তা হচ্ছে-
- ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে ইমান গ্রহণ করতে হবে।
- নিজের ইমান সাহাবীগণের ঈমানের অনুরূপ করতে হবে।
- পার্থিব সুযোগ-সুবিধা লাভ ও মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য ইমান গ্রহণ করা বোকামি।
- সর্বযুগের ভ্রান্তবাদীরাই সৎপথ অবলম্বনকারীদের বিভিন্ন অপনামে আখ্যায়িত করত। ঙ. মুনাফিকী চরিত্র বর্জন করে খাঁটি মুমিন জীবন গড়ে তুলতে হবে।
১৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
এটি মুনাফিকদের আর একটি বৈশিষ্ট্য। রাস্তা-ঘাটে কিংবা বাজারে-বন্দরে কোথাও মুসলিমদের সাথে দেখা হলে তারা তাদের বলত যে, আমরাও তোমাদের মত আল্লাহ ও রাসূলের (স) ওপর ইমান এনেছি। কিন্তু নির্জনে ও গোপনে যখন তারা তাদের দুষ্ট দলপতি ও নেতাদের সাথে মিলিত হত তখন তারা বলত যে, আমাদের কথা শুনে তোমরা মনে করো না যে, আমরা মুসলিম হয়ে গেছি বরং আমরা তোমাদের সাথেই আছি। ইমান আনার কথা বলে আমরা মুসলিমদের সাথে কেবল ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে থাকি এবং তাদের তথ্য তোমাদের নিকট পাচার করছি।
‘শয়তান’ শব্দটি আরবি ভাষায় দাম্ভিক, অহংকারী, স্বৈরাচার ও মদমত্ত ব্যক্তিকে শয়তান বলা হয়ে থাকে। মানুষ এবং জিন উভয়ের ক্ষেত্রেই এ শব্দ ব্যবহৃত হয়। কুরআনে যদিও এ শব্দটিকে জিন শয়তান সম্পর্কেই অধিকতর ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু কোন কোন স্থানে এটা শয়তান প্রকৃতির মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। শায়াতীন (شياطين) শব্দ দ্বারা কুরআন নাযিল হওয়াকালীন ইসলামের ঐসব প্রধান প্রধান দুশমন ও বড় বড় সর্দারগণকে বুঝানো হয়েছে; যারা ইসলামের বিরোধিতায় সকলের অগ্রণী ছিল।
সারসংক্ষেপ
মুনাফিকরা কপট বিশ্বাসী। এরা ইমান আনার ভান করে মুলিম সমাজ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়। অপর দিকে মুনাফিকরা কাফির মুশরিকদের সাথে গোপনে মিলিত হয়ে থাকে। তারা বলে, আমরা তোমাদেরই লোক। মুসলিমদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য মুসলিম হওয়ার ভান করে থাকি। এদরে সরদার হলো আবদুল্লাহ ইবনে উবাই।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।