(১) হজ শব্দের অর্থ কী?
‘হজ’ এর আভিধানিক অর্থ হলো- সংকল্প করা, ইচ্ছা করা।
(২) হজ কাকে বলে?
ইসলামের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জিলহজ মাসের নির্ধারিত দিনসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ যিয়ারত করাকে হজ বলে।
(৩) হজ কী?
হজ ইসলামের পঞ্চম ভিত্তি।
হজ ঐ সমস্ত ধনী-মুসলমানের উপর ফরজ যাদের পবিত্র মক্কায় যাতায়াত ও হজের কাজ সম্পাদন করার মতো আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য রয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন,
“মানুষের মধ্যে যার আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য আছে তার উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা অবশ্য কর্তব্য।”
(সূরা আল-ইমরান, আয়াত ৯৭)
সামর্থ্যবানদের জন্য হজ জীবনে একবার পালন করা ফরজ।
নিচে হজের স্থান সমূহের একটি চিত্র দেওয়া হলো-
(৪) হজের ফরজ ও ওয়াজিব সমূহ
ক) হজের মোট ৩টি ফরজ রয়েছে
- ইহরাম বাঁধা (আনুষ্ঠানিকভাবে হজের নিয়ত করা)।
- ৯ই জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
- তাওয়াফে যিয়ারত (১০ই জিলহজ ভোর থেকে ১২ই জিলহজ পর্যন্ত যেকোনো দিন কাবা শরিফ তাওয়াফ করা)।
খ) হজের মোট ৭টি ওয়াজিব রয়েছে
- ৯ই জিলহজ দিবাগত রাতে মুযদালিফা নামক স্থানে অবস্থান করা।
- সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ (দৌড়ানো) করা।
- ১০, ১১, ও ১২ই জিলহজ পর্যায়ক্রমে মিনায় তিনটি নির্ধারিত স্থানে ৭টি করে কংকর (পাথর কণা) শয়তানের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা।
- কুরবানি করা।
- মাথা কামানো বা চুল কেটে ছোট করা।
- বিদায়ী তাওয়াফ করা (এটি মক্কার বাইরের লোকদের জন্য ওয়াজিব)।
- দম দেওয়া। (ভুলে বা স্বেচ্ছায় হজের কোনো ওয়াজিব বাদ পড়লে তার কাফফারা হিসাবে একটি অতিরিক্ত কুরবানি দেওয়া)।
(৬) হজের ধর্মীয় গুরুত্ব
ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা হাজ্জ নামে একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ হজের ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকেও হজের গুরুত্বের ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
“মাকবুল (আল্লাহর নিকট গ্রহণীয়) হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নেই।” (বুখারি-মুসলিম)। হজের মাধ্যমে বিগত জীবনের গুনাহ মাফ হয়। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করে সে যেন নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়।”
(ইবনে মাজাহ)
হজ অস্বীকারকারী কাফির হয়ে যাবে। আমাদের উচিত আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হজ করার ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
(৭) হজের সামাজিক গুরুত্ব
হজের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব তৈরি হয়। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলিম একই স্থানে সমবেত হয়। হজ বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মেলন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“এবং মানুষের নিকট হজের ঘোষণা করে দাও; তারা তোমার নিকট (মক্কায়) আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে আরোহণ করে। তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।”
(সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ২৭)
হজে এসে সবাই একই রকম পোশাক পরিধান করে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করে। সম্মিলিত কণ্ঠে আওয়াজ করে বলতে থাকে- লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক: হাজির হে আল্লাহ! আমরা তোমার দরবারে হাজির।
(৮) হজের শিক্ষা ও তাৎপর্য
- ধন-সম্পদ, বর্ণ-গোত্র ও জাতীয়তার দিক থেকে মানুষে মানুষে পার্থক্য থাকলেও হজ এসব ভেদাভেদ ভুলিয়ে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে শেখায়।
- হজ মুসলমানদের আদর্শিক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে। রাজা-প্রজা, মালিক-ভৃত্য সকলকে সেলাইবিহীন একই কাপড় পরিধান করায়। একই উদ্দেশ্যে মহান প্রভুর দরবারে উপস্থিত করে সাম্যের প্রশিক্ষণ দেয়।
- হজ মানুষকে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলাবোধের শিক্ষা দিয়ে সহানুভূতিশীল করে গড়ে তোলে। বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়। পারস্পরিক ভাব ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সৌহার্দবোধ জাগ্ৰত করে। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার কারণে সাধারণ মানুষ হাজিদের সম্মান করে থাকে।
সুতরাং, আল্লাহর রহমত পেতে হলে তাঁর আদেশ পালনার্থে ধনী মুসলমানদের যতশীঘ্র সম্ভব হজ আদায় করা উচিত। আমরাও হজ থেকে শিক্ষা লাভ করে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হব।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।