Skip to content

 

হাদিস কাকে বলে? হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

হাদিস কাকে বলে, হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

(১) হাদিস কাকে বলে?

হাদিস আরবি শব্দ। এর অর্থ কথা, বাণী। ইসলামের পরিভাষায় মহানবি (সা.)- এর বাণী, কর্ম ও তাঁর মৌন সম্মতিকে হাদিস বলা হয়।

(সাহাবিগণ মহানবি (সা.)-এর সামনে ইসলামী শরীআত সম্পর্কিত কোন কথা বলেছেন বা কোন কাজ করেছেন আর মহানবি (সা.) তা নিষেধ করেননি কিংবা নীরব থেকেছেন এটাকে বলা হয় মৌন সম্মতি।)

(২) সিহাহ সিত্তার হাদিস গ্রন্থসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

মহানবি (সা.)-এর জীবদ্দশায় প্রথম দিকে কুরআনের সাথে মিলে যাওয়ার আশঙ্কায় হাদিস লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন। তখন আরবের লোকদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত ছিল প্রখর। তাঁরা যা শুনতেন তা-ই তাদের মুখস্থ হয়ে যেত। মহানবি (সা.) তাঁদেরকে হাদিস মুখস্থ করার প্রতি উৎসাহিত করেন।

মহানবি (সা.) বলেন,

“ঐ ব্যক্তি খনা হবে যে আমার হাদিস শুনবে, সংরক্ষণ করবে এবং যেভাবে শুনেছে ঠিক সেভাবেই অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে।”

(তিরমিযি)

মহানবি (সা.)-এর এ বাণীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহাবিগণ হাদিস মুখস্থ করেন। এবং তা যথাযথভাবে অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দেন। মহানবি (সা.)-এর ইন্তিকালের পর খুলাফায়ে রাশিদীন ও উমাইয়া শাসনামলে দীর্ঘদিন এভাবে প্রধানত: হাদিস মুখস্থ করে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া সাহাবিগণ হাদিস শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে হাদিসের প্রসার ও প্রচার করেন। বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে তাঁদের নিকট হাদিসের শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো কোনো সাহাবি ও তাবেঈ মহানবি (সা.)-এর বহু হাদিস লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন।

হিজরি ১০০ সালে উমাইয়া খলিফা উমর ইবন আব্দুল আযীয সরকারিভাবে হাদিস লিখার হুকুম জারি করেন। পরবর্তীকালে হিজরি তৃতীয় শতকের মুহাদ্দিসগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে সমস্ত হাদিস গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন। এ সময় হাদিসের বেশ কিছু বিশুদ্ধ কিতাব সংকলন করা হয়। এর মধ্যে সিহাহ্ সিত্তাহ’ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। এ ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতেও হাদিস সংকলন অব্যাহত থাকে। আর এভাবেই আমরা মহানবি (সা.)-এর হাদিস লাভ করি।

বুখারি: ইমাম বুখারি (রহ.) ১৬ বছর সাধনা করে বিশ্ববিখ্যাত ‘সহিহ আল বুখারি’ গ্রন্থ সংকলন করেন। তাঁরই নামানুসারে সহিহ বুখারি নামকরণ করা হয়। ইমাম বুখারি (রহ.) তার সংগৃহীত ছয় লক্ষের অধিক হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৭৭৬১টি হাদিস সন্নিবেশ করেন। তিনি হাদিস সংগ্রহের সময় খুবই আন্তরিক ও সতর্ক ছিলেন। সন্দেহ সৃষ্টি হলে সে হাদিস গ্রহণ করতেন না। তিনি হাদিস গ্রন্থসংকলন করার সময় রোজা রাখতেন, গোসল করতেন এবং দু’রাকাআত এস্তেখারা নামাজ আদায় করতেন। এ জন্যই বিশ্ব দরবারে ‘বুখারি’ সর্বোচ্চ প্রশংসিত বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

মুসলিম: ইমাম মুসলিম (রহ.) ১৫ বছর পরিশ্রম করে ‘সহিহ মুসলিম’ সংকলন করেন। তাঁর নামানুসারে ‘সহিহ মুসলিম’ নামকরণ করা হয়। তিনি ৩ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৪ হাজার হাদিস এ গ্রন্থে উপস্থাপন করেন।

আবু দাউদ: ইমাম আবু দাউদ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুনান আবু দাউদ’ নামকরণ করা হয়। ইমাম আবু দাউদ (রহ.) ৫ লক্ষ হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে ৪ হাজার ৮ শত হাদিস এ গ্রন্থে সন্নিবেশ করেন।

নাসাঈ: ইমাম নাসাঈ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুনান নাসাঈ’ নামকরণ করা হয়। নাসাঈ শরিফে মোট ৪৪৮২টি হাদিস সন্নিবেশিত করা হয়েছে।

তিরমিযি: ইমাম তিরমিযি (রহ.)-এর নামানুসারে ‘জামে’ তিরমিযি’ নামকরণ করা হয়েছে। তিরমিযি শরিফে ৫ লক্ষ হাদিস থেকে বাছাইকৃত ১৬০০ হাদিস সন্নিবেশিত করেন।

ইবনে মাজাহ: ইবনে মাজাহ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুনান ইবনে মাজাহ’ নামকরণ করা হয়েছে। ইবনে মাজাহ (রহ.) কয়েক লক্ষ হাদিস থেকে মাত্র ৪ হাজার হাদিস এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেনে।

(৩) হাদিসের গুরুত্ব

ইসলামি জীবনদর্শনের মূলভিত্তি আল-কুরআন এবং দ্বিতীয় ভিত্তি আল-হাদিস। আল-কুরআনে জীবনবিধানের মৌলিক নীতিমালা দিয়েছে এবং আল-হাদিসে সেই মৌলিক নীতিমালার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আল-হাদিস হচ্ছে কুরআনের নির্ভুল ব্যাখ্যা, আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ তথা তাঁর বাণী, কাজ ও নির্দেশনাবলির বিস্তারিত বিবরণ। মানুষ দৈনন্দিন জীবনে চলতে ফিরতে অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ সকল সমস্যার নিখুঁত সমাধান রয়েছে হাদিসের মধ্যে।

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য হাদিস অপরিহার্য। মানব জাতিকে ন্যায়-নীতি, সত্য ও শান্তির পথে আনতে দিকনির্দেশনা দেয় হাদিস। মুসলমানদের জীবনে হাদিস অধ্যয়ন ও চর্চা খুবই জরুরি।

ইসলামি জীবন বিধানের মূল উৎস হলো কুরআন ও হাদিস। পবিত্র কুরআন হলো ইসলামের মৌলিক ভিত্তি এবং হাদিসে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়নের নমুনা পাওয়া যায়।

হাদিস আল-কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা। হাদিস ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় অপরিহার্য উৎস। কুরআনের পরেই হাদিসের স্থান। হাদিস হচ্ছে রাসুল (সা.)- এর জীবনলেখ্য ও কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই ইসলামি শরিয়তে হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম।

পবিত্র কুরআনে যেসব নিয়ম-কানুন সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে হাদিসে। উদাহরণস্বরূপ, সালাত ও সাওমের কথা বলা যেতে পারে। কুরআন শরিফে বলা হয়েছে, সালাত কায়েম করো এবং যাকাত দাও। হাদিসে কীভাবে সালাত আদায় করতে হবে, কখন সালাত পড়তে হবে এবং কী পরিমাণ যাকাত দিতে হবে, কাকে দিতে হবে, কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে।

See also  মহানবি (সাঃ)-এর ১০টি হাদিস এবং তার ব্যখ্যা ও শিক্ষা সমূহ

এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা, কথাবার্তা, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার-আচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ধি-চুক্তি, বিবাহ ও তালাক সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান পাওয়া যায় হাদিসে।

এ ছাড়া মানবাধিকার, প্রাণীর অধিকার, পরিবেশের সংরক্ষণসহ মানব জীবনের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ রয়েছে হাদিসে। এমনকি মানুষের স্বাস্থ্যগত সকল প্রকারের নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে।

সর্বোপরি মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মের প্রতিটি বিষয় নিখুঁতভাবে পরিচালনা করার জন্য হাদিসের নির্দেশনা একান্ত প্রয়োজন।

কোনো মুসলমান হাদিসকে অস্বীকার করতে পারে না। কেননা, আল্লাহ তা’আলা রাসুল (সা.)-এর সকল কাজকে গ্রহণ করতে বলেছেন এবং যা নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করতে বলেছেন।

এ বিষয়ে কুরআন শরিফে ঘোষণা করা হয়েছে,

“রাসুল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাকো।”

(সূরা হাশর, আয়াত ০৭)

মানবজাতিকে সুপথে পরিচালিত করার বাস্তব নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে।

এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,

আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, যদি তা শক্তভাবে ধরে রাখো তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ বা হাদিস।

(মুয়াত্তা মালিক)

(৪) হাদিসের প্রয়োজনীয়তা

হাদিস ইসলামি শরীআতের দ্বিতীয় উৎস। কুরআন মাজিদের পরই সুন্নাহ বা হাদিসের স্থান। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইসলামের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। এতে ইসলামের আহকাম, মূলনীতি ও নির্দেশাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। আর এ সংক্ষিপ্ত নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন করার জন্য মহানবি (সা.) প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতেন। তাঁর ও ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণই হচ্ছে হাদিস।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়। কুরআন মাজিদে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু দিনে রাতে কত ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে, প্রতি ওয়াজে কত রাকআত পড়তে হবে, কিভাবে রুকু-সিজদাহ করতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআনে নেই। অনুরূপভাবে কুরআানে থাকাত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কত পরিমাণ দিতে হবে, তার কোন উল্লেখ কুরআন মাজিদে নেই। আল্লাহর হুকুম অনুসারে মহানবি (সা.) এ গুলোর বিস্তারিত নিয়ম কানুন বর্ণনা করেছেন হাদিসের মাধ্যমে। এ কারণেই কুরআনের ন্যায় হাদিসের গুরুত্ব অপিরসীম। তাই কুরআন বুঝতে ও সে অনুসারে আমল করতে হাদিস অপরিহার্য।

মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন,

“রাসুল তোমাদের যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।”

(সূরা আল-হাশর, আয়াত ৭)

মহানবি (সা.) হাদিসের প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন,

“আমি তোমাদের কাছে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা এই দুটি আঁকড়ে থাকবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি তাঁর রাসুলের সুন্নাহ।”

(মুয়াত্তা ইমাম মালেক)

(৫) অর্থসহ নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক দুটি হাদিস

পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতও নির্দেশ যেমন মানুষকে সৎপথের সন্ধান দেয়, তেমনি রাসুলের হাদিসগু সমগ্র মানব জাতিকে সত্য, ন্যায় ও শান্তির পথে পারচালিত করে। অতএব আমরা বলতে পারি মানব জীবনে হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

কথায় ও কাজে সৎ-সুন্দর ও মার্জিত থাকার নাম নীতি ও নৈতিকতা। মানব জীবনে নীতি ও নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম।

বলা হয়ে থাকে নীতিহীন মানুষ পশুর সমান। তাকে সকলে ঘৃণা করে। তার সাথে কেউ লেন-দেন ও চলা-ফেরা করে না। সে সমাজে মাথা উঁচু করে বসবাস করতে পারে না। পক্ষান্তরে নীতিবান মানুষকে সকলে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। সকলে তাঁর অনুকরণ করে। সকলে তাঁকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে।

আমাদের প্রিয়নবি (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম নীতির অধিকারী। কোন অনিয়ম তাঁকে কখনও স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি সর্বদা নীতি ও আদর্শের পরিপূর্ণ অনুশীলন করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্র তথা উত্তম নীতি নৈতিকতার পরিপূর্ণতা দানের জন্য। মহানবি (সা.) পবিত্র হাদিসে মানব জাতিকে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন।

নিচে নীতি-নৈতিকতামূলক দুটি হাদিস অর্থসহ উল্লেখ করা হল। আমরা এগুলো শিখব এবং এর শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করব।

ক) হাদিস-১

“যে ব্যক্তি আমানত রক্ষা করে না, তার ইমান নেই আর যে ব্যক্তি ওয়াদা পালন করে না তার দীন নেই অর্থাৎ সে প্রকৃত দীনদার নয়।”

(মুসনাদ আহমাদ)

শিক্ষা:

দুনিয়া এবং আখিরাতে সাফল্য লাভের জন্য একজন মানুষকে ভালো গুণাবলি অর্জন করতে হয়। যে গুণাবলি তাকে আল্লাহর কাছে এবং মানুষের কাছে পছন্দনীয় করে তোলে। আমানত রক্ষা করা এবং ওয়াদা পালন করা সেগুলোর মাঝে অন্যতম।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমরা অনেকের সাথে অনেক ওয়াদা করে থাকি। সেই গুয়াদাগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে। যদি আমরা ওয়াদা পালন না করি তাহলে মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে এবং আল্লাহর কাছে আমরা খারাপ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয়। ওয়াদা পালন না করার জন্য আল্লাহর কাছে আমাদের শাস্তি পেতে হবে।

See also  হাদিস সংরক্ষণ ও সংকলন এবং হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

একইভাবে কেউ যখন আমাদের কাছে কোনো কিছু আমানত রাখবে, আমাদের দায়িত্ব হলো সেই আমানতকে যথাযথভাবে রক্ষা করা। যদি আমানতের খেয়ানত করি অথবা আমানত রক্ষা না করি তাহলে আমাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

তাই আমরা ওয়াদা পালন করব এবং আমানত রক্ষা করব। মহানবি (সা.) মানব জাতিকে এই হাদিসের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মুমিন ও দীনদার হওয়ার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।

খ) হাদিস-২

“সত্য (মানুষকে) পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। আর পুণ্য জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।”

(বুখারি ও মুসলিম)

শিক্ষা:

সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। প্রকৃত কথা, কাজ, বিষয়, অবস্থা ইত্যাদি গোপন না করে হুবহু প্রকাশ করাকে সত্যবাদিতা বলা হয়।

সত্যবাদীকে সকলে পছন্দ করে, ভালোবাসে। সকলে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) সত্যবাদী ছিলেন। তিনি জীবনে কোন মিথ্যা বলেননি। তিনি মানুষকে সত্য কথা বলা ও সত্যনিষ্ঠ হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা সত্য মানুষকে সকল পাপাচার থেকে বিরত রাখে।

সত্যবাদী লোক কোন অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে পারে না। সর্বদা ভালো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। ফলে তার ইহকালীন জীবন যেমন সুন্দর ও সার্থক হয় তেমনি আখিরাতে জান্নাত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবে।

যেহেতু সততা মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে এবং পুণ্যের পথে ধাবিত করে। আর পুণ্য জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। সুতরাং আমরা সর্বদা কথা ও কাজে সত্যনিষ্ঠ হবো এবং মিথ্যা পরিহার করব। তাহলেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।

(৬) নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় হাদিস

সততা, সত্যবাদিতা, সৌজন্যমূলক আচরণ, সুন্দর স্বভাব, মিষ্টি কথা, উন্নত চরিত্র, দয়া-মায়া, ক্ষমা, ভালোবাসা, পরস্পর সহযোগিতা -এ সবকিছুর সমন্বয় হলো নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ। মানুষের জীবন ও সমাজকে সুন্দর করতে হলে এই নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অনুসরণ অপরিহার্য।

উত্তম চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ ব্যতীত কোন ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির উন্নতি হতে পারে না। তাই আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য এ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি।

একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চাল-চলন, উঠা-বসা, আচার-ব্যবহার, লেন-দেন সবকিছুই যখন প্রশংসনীয় ও গ্রহণযোগ্য হয় তখন তাকে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তি বলে। এইরূপ নৈতিকতা ও মানবিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বোত্তম লোক বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেছেন,

“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যার চরিত্র উত্তম।”

(বুখারি ও মুসলিম)

নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ হলো একজন মানুষের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যা অর্জন করলে তার জীবন হয় সুন্দর ও উন্নত। এর মাধ্যমে সে অর্জন করে সম্মান ও ভালোবাসা। সমাজের সকলে এ আদর্শ অনুশীলন করলে সমাজ হয় সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিময় এক আবাসস্থল।

অন্যদিকে সমাজে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ না থাকলে সমাজে শান্তি থাকে না। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে দয়া, মায়া, ঐক্য, ভালোবাসা ইত্যাদি সদগুণাবলির চর্চা থাকে না। মানুষ পরস্পরকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করে। ফলে সমাজে নানা অরাজকতা ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।

মহানবি (সা.)-এর হাদিস নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা পূর্বপাঠে হাদিসের পরিচয় লাভ করেছি। হাদিসের মাধ্যমে আমরা প্রিয়নবি (সা.) এর বাণী ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি মানুষের সাথে কীরূপ আচরণ করতেন তা জানতে পারি। তাঁর উত্তম চরিত্রের কথা জানতে পারি। তিনি আমাদের জন্য কী দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন তাও আমরা হাদিস পড়ে জানতে পারি।

হাদিস শরিফে প্রিয়নবি (সা.) আমাদের নানাবিধ নৈতিক ও মানবিক আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। স্নেহ, মমতা, দয়া, ক্ষমা, সাম্য, মৈত্রী, ভাতৃত্ব, ভালোবাসা, পরস্পর সহযোগিতা ইত্যাদি গুন অনুশীলনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। আবার পরনিন্দা, মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, চুরি-ডাকাতি করা, গালিগালাজ করা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা ইত্যাদি খারাপ কাজ করতে আমাদের নিষেধ করেছেন।

হিংসা-বিদ্বেষ, পূর্ব-অহংকার, খোশামোদ-তোষামোদ ইত্যাদিও খারাপ অভ্যাস। এগুলো মানবিক আদর্শের বিপরীত। এগুলো নৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। এগুলো থেকেও বিরত থাকার জন্য মহানবি (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন,

“আর তোমরা অবশ্যই মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকবে। কেননা মিথ্যা পাপ কাজের দিকে ধাবিত করে। আর পাপ কাজ জাহান্নামের পথে ধাবিত করে।”

(মুসলিম)

সৎ গুণাবলির অনুশীলন ও অসৎ গুণাবলি থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে আমরা উত্তম চরিত্রবান হতে পারি। এগুলো আমাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষায়ও সাহায্য করে। এভাবে হাদিসের শিক্ষা আমাদের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

হাদিস শরিফে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনচরিত ও উত্তম চরিত্রের আদর্শ বর্ণিত আছে। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।

আল্লাহ তাআলা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলেছেন,

“আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। ”

(সূরা আল-কালাম, আয়াত ৪)

মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি সবসময় নৈতিক ও মানবিক গুণাবালি অনুসরণ করতেন। তাঁর একটি উপাধি ছিল আল-আমিন। আল-আমিন অর্থ বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত, সত্যবাদী।

See also  হাদিস সংরক্ষণ ও সংকলন এবং হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

তিনি সবসময় সত্য কথা বলতেন। কথা ও কাজে সততা অবলম্বন করতেন। কেউ কোন কিছু আমানত বা গচ্ছিত রাখলে তিনি তা মালিকের নিকট যথাযথভাবে ফেরত দিতেন। তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলতেন না, ওয়াদা ভঙ্গ করতেন না, বিশ্বাসঘাতকতা করতেন না। ফলে তাঁর শত্রুরাও তাকে আল-আমিন বা বিশ্বাসী নামে ডাকত।

এভাবে দেখা যায়, সবধরনের সৎগুণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্রে বিদ্যমান ছিল। তিনি ছিলেন ক্ষমাশীল, দয়াবান, অতিথিপরায়ণ, মিষ্টভাষী। তিনি অন্যায় ও অম্লীল কাজ কখনো করতেন না। সারাজীবন তিনি মানুষকে উত্তম চরিত্র সম্পর্কে হাতেকলমে শিক্ষা দিয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এ আদর্শ নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষার উজ্জ্বল প্রমাণ। প্রিয়নবি (সা.)-এর চরিত্র অনুসরণ করলে কখনোই নৈতিক ও মূল্যবোধ লঙ্ঘিত হবে না। বরং এর দ্বারা আমরা প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারব।

এজনাই আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ মধ্যে রয়েছে উত্তম অনুপম আদর্শ।”

(সূরা আল-আহযাব, আয়াত ২১)

রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শ হাদিস শরিফে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা স্বরূপ। আমরা হাদিস পড়ে এগুলো জানব এবং সে অনুযায়ী আমল করব। তাহলে আমরা নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারব।

(৭) হাদিসের আলোকে নৈতিক শিক্ষা

মানুষের জীবন ও সমাজকে সুন্দর করতে হলে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ চরিত্রের অনুসরণ অপরিহার্য। উত্তম চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ ব্যতীত কোন ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির উন্নতি হতে পারে না।

আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন উন্নত ও মহান চরিত্রের অধিকারী । নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের জন্য তিনি সকলের নিকট প্রশংসিত ছিলেন । তাঁর নীতি-নৈতিকতা এবং আদর্শ চরিত্রের বিবরণ হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে।

উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতা শিক্ষা দানের জন্য মহানবি (সাঃ)-এর আবির্ভাব । মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি।”

(বায়হাকি)

পবিত্র কুরআনে নৈতিকতা অর্জন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আছে। মহানবি (সাঃ)- এর হাদিসেও নৈতিকতা অর্জন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। কী কী নৈতিক গুণ অর্জন করলে মানবজীবন সুন্দর ও সফল হবে মহানবি (সাঃ)-এর পবিত্র হাদিসে এ সম্পর্কে যেমন তার বিবরণ রয়েছে তেমনি অনৈতিক কার্যাবলি বর্জনেরও জোর তাগিদ রয়েছে।

সততা, সত্যবাদিতা, শালীনতাবোধ, সৃষ্টির সেবা, আমানত রক্ষা, ক্ষমা, দয়া, পরোপকারিতা, ধৈর্য, ভ্রাতৃত্ববোধ, সমাজসেবা, দেশপ্রেম, পরমতসহিষ্ণুতা, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি কর্তব্য এবং শিক্ষক ও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা, ছোটদের প্রতি স্নেহ, সহপাঠীদের প্রতি সুন্দর আচরণ ইত্যাদি নৈতিক গুণের বিবরণ হাদিস শরিফে রয়েছে। মহানবি (সাঃ) নিজ জীবনে এসব নৈতিক গুণ বাস্তবায়ন করে নিজেকে বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নীতিবান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

অন্যদিকে তিনি মহানবি (সাঃ) অনৈতিক আচার আচরণ যেমন- মিথ্যাচার, পরনিন্দা, গালি দেওয়া, হিংসা, ক্রোধ, লোভ, প্রতারণা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, অহংকার, অশ্লীলতা, পরশ্রীকাতরতা, ঘৃণা, চৌর্যবৃত্তি সন্ত্রাস ইত্যাদি বর্জন করার জোর তাগিদ দিয়েছেন এবং এসবের কুফল ও ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তিনি তাঁর হাদিসে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

নৈতিকতা ও অনৈতিকতা সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস নিম্নে বর্ণিত হলো-

দয়া-মায়া ও সৃষ্টির সেবা সম্পর্কে মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো, তাহলে আসমানের অধিপতি মহান আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।”

(তিরমিযি)

মহানবি (সাঃ) আরও বলেন,

“সমগ্র সৃষ্টিজগৎ আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই প্রিয়, যে তার পরিবারের প্রতি অনুগ্রহ করে।”

(বায়হাকি)

শালীনতা সম্পর্কে মহানবি (সাঃ) বলেন,

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশালীন ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন।”

(তিরমিযি)

আমানত সম্পর্কে মহানবি (সাঃ) বলেন, 

“যার আমানতদারি নেই তার ইমানও নেই।”

(মুসনাদে আহমাদ)

শ্রমিকের পারিশ্রমিক দ্রুত আদায়ের তাগিদ দিয়ে মহানবি (সাঃ) বলেন,

“শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।”

(ইবনে মাজাহ)

মহানবি (সাঃ) এভাবে অসংখ্য হাদিসের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষাকে যেমন জগতবাসীর নিকট তুলে ধরেছেন তেমনি অনৈতিকতা ও অসচ্চরিত্র থেকেও বেঁচে থাকতে মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তাঁর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

“সেই ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান, যার জিহবা ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে ।”

(বুখারি ও মুসলিম)

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কারণ, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়, হিংসা তেমনি পুণ্যকে ধ্বংস করে দেয়।”

(আবু দাউদ)

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।”

(মুসলিম)

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সকল পাপই ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতার পাপ তিনি ক্ষমা করেন না।”

(বায়হাকি)

মহানবি (সাঃ)-এর পবিত্র হাদিস আমরা অধ্যয়ন করে নৈতিকতা ও সচ্চরিত্র সম্পর্কে জানব এবং আমাদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করব। আবার অনৈতিক কাজ ও অসচ্চরিত্রের দিকগুলো সম্পর্কে মহানবি (সাঃ)-এর হাদিস জানব। এসবের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানব এবং সেসব বর্জন করে চলব। এতে আমাদের জীবন সুন্দর হবে । সবাই আমাদের ভালোবাসবে। আমরা জীবনে সফল হব । পরকালে আমরা মুক্তি ও জান্নাত লাভ করব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page