(১) কুফর শব্দের অর্থ কী?
কুফর শব্দের আভিধানিক অর্থ অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, ঢেকে রাখা, গোপন করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি।
(২) কুফর কী?
ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিশ্বাসের নাম ইমান। আর এসব বিষয়ে অবিশ্বাস করা হলো কুফর।
(৩) কুফর কাকে বলে?
ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার মনোনীত দীন ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর কোনো একটিরও প্রতি অবিশ্বাস করাকে কুফর বলা হয়।
(৪) কুফর কিসের বিপরীত?
কুফর হলো- ইমানের বিপরীত।
(৫) কাফির কারা বা কাদের বলা হয়?
কাফির অর্থ অবিশ্বাসী, অস্বীকারকারী। মানুষ নানাভাবে কাফির বা অবিশ্বাসী হতে পারে। যেমন:
যে ব্যক্তি কুফরে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় কাফির। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি ইসলামের কোনো মৌলিক বিষয়ে অবিশ্বাস করে তখন তাকে কাফির বলা হয়।
- আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব অবিশ্বাস বা অস্বীকার করার দ্বারা। অর্থাৎ ‘আল্লাহ নেই’ এমন কথা বললে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে।
- আল্লাহ তায়ালার গুণাবলি অস্বীকার করা। যেমন- আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা বা রিজিকদাতা না মানা
- ইমানের মৌলিক সাতটি বিষয়ে অবিশ্বাস করা। যেমন- ফেরেশতা, নবি-রাসুল, আসমানি কিতাব, আখিরাত, তকদির ইত্যাদি অবিশ্বাস করা।
- ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো অস্বীকার করা। যেমন সালাত, যাকাত, সাওম, হজ ইত্যাদিকে ইবাদত হিসেবে না মানা৷
- হালালকে হারাম মনে করা। যেমন- হালাল খাদ্যকে হারাম মনে করে না খাওয়া।
- হারামকে হালাল মনে করা। যেমন- মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ইত্যাদিকে হালাল বা জায়েজ মনে করা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে কাফিরদের অনুকরণ করা, তাদের ধর্মীয় চিহ্ন ব্যবহার করা।
- ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা। যেমন, মহানবি (সাঃ) কিংবা কুরআনকে নিয়ে ঠাট্টা-উপহাস করা।
উপরোল্লিখিত কাজগুলো করার মাধ্যমে মানুষ কাফির হয়ে যায়। এমতাবস্থায় পুনরায় ইমান আনতে ও খাঁটি মনে তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এরূপ ঘৃণ্য কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।
(৫) কুফরের পরিণতি ও কুফল
মানবজীবনে কুফরের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কুফরের ফলে শুধু দুনিয়াতেই নয় বরং আখিরাতেও মানুষকে শোচনীয় পরিণতি বরণ করতে হবে। এর কতিপয় কুফল নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ক) অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতা
- কুফর মানুষের মধ্যে অবাধ্যতা ও অকৃতজ্ঞতার জন্ম দেয়।
- আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনিই আমাদের লালন-পালন করেন। পৃথিবীর সকল নিয়ামত তাঁরই দান।
- কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে অবিশ্বাস করে, এসব নিয়ামত অস্বীকার করে। সে আল্লাহ তায়ালার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। আল্লাহ তায়ালার বিধি-নিষেধ অমান্য করে। ফলে সমাজে সে অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিচিত হয়।
খ) পাপাচার বৃদ্ধি
- কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, পরকাল, হাশর, মিযান, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি অবিশ্বাস করে। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে মানুষকে তার কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে এরূপ ধারণাও অস্বীকার করে। তার নিকট দুনিয়ার জীবনই প্রধান।
- সুতরাং দুনিয়ায় ধন-সম্পদের ও আরাম-আয়েশের লোভে সে নানারকম অসৎ ও অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, সুদ-ঘুষ, জুয়া ইত্যাদিতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে সমাজে পাপাচার বৃদ্ধি পায়।
গ) হতাশা সৃষ্টি
- স্বভাবগতভাবেই মানুষ ভরসা করতে পছন্দ করে। আশা-ভরসা না থাকলে মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে না।
- কাফির ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও তকদিরে অবিশ্বাস করে। ফলে সে যেকোনো বিপদে আপদে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্যধারণ করতে পারে না। অন্যদিকে তকদিরে বিশ্বাস না থাকায় যেকোনো ব্যর্থতায় সে চরম হতাশ হয়ে পড়ে। ফলে তার জীবন চরম হতাশাগ্রস্তভাবে অতিবাহিত হয়।
ঘ) অনৈতিকতার প্রসার
- কুফর মানবসমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটায়।
- আখিরাত, জান্নাত ও জাহান্নামে বিশ্বাস না থাকায় কাফির ব্যক্তি নৈতিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না এবং দুনিয়ার স্বার্থে মিথ্যাচার, অনাচার, ব্যভিচার ইত্যাদি যেকোনো পাপ ও অনৈতিক কাজই সে বিনা দ্বিধায় করতে পারে।
- নবি-রাসুলগণকে বিশ্বাস না করায় তাঁদের নৈতিক চরিত্র এবং শিক্ষাও সে অনুসরণ করে না। এভাবে কুফরের মাধ্যমে সমাজে অনৈতিকতার প্রসার ঘটে।
ঙ) আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি
- কুফরির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রতি অবিশ্বাস, অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতা সৃষ্টি হয়।
- কাফির আল্লাহ তায়ালার বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধের কোনো পরোয়া করে না। বরং আল্লাহ তায়ালা, ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বিদ্রোহ ও বিরোধিতা করে। ফলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আর যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন, সে যত ক্ষমতা ও সম্পদের মালিক হোক না কেন তার ধ্বংস অনিবার্য।
চ) অনন্তকালের শাস্তি
- কুফর একটি মারাত্মক পাপ। সুতরাং এ থেকে সকলেরই বেঁচে থাকা উচিত।
- পরকালে কাফিররা জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা কুফরি করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ৩৯)
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।