Skip to content

জিহাদ শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে কত প্রকার? এর গুরুত্ব এবং জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পার্থক্য

জিহাদ শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে কত প্রকার এর গুরুত্ব এবং জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পার্থক্য

(১) জিহাদ শব্দের অর্থ কী?

জিহাদ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পরিশ্রম, সাধনা, কষ্ট, চেষ্টা ইত্যাদি।

(২) জিহাদ কাকে বলে?

ইসলামি পরিভাষায়, জান-মাল, ইলম, আমল, লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর দীনকে (ইসলামকে) সমুন্নত করাই হলো জিহাদ।

অনেকেই জিহাদ বলতে (শুধু) রক্তপাত ও কতল (হত্যা) বোঝেন। এটা সঠিক নয়। কেননা জিহাদ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। পৃথিবীর যা কিছু উত্তম তাতেই আল্লাহ সন্তুষ্টি। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই শুধু জিহাদ হতে পারে।

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,

“তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।”

(সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত ৭৮)

বস্তুত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব ধরনের চেষ্টা, শ্রম ও সাধনাই হলো জিহাদ।

(৩) জিহাদের কত প্রকার

ইসলামের দৃষ্টিতে জিহাদ তিন প্রকার।

ক) স্বীয় নফসের (প্রবৃত্তির) সাথে জিহাদ করা

যেমন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,

“প্রকৃত মুজাহিদ সে ব্যক্তি, যে আল্লাহর আনুগত্য করার ব্যাপারে নিজের নফসের (কুপ্রবৃত্তির) সাথে জিহাদ করে।”

(মুসনাদে আহমাদ)

এরূপ জিহাদকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সবচাইতে বড় জিহাদ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বদর যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে বলেছেন,

“আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের (কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ) দিকে ফিরে এসেছি।”

(কানযুল উম্মাল)

খ) জ্ঞানের সাহায্যে জিহাদ করা

এরূপ জিহাদকে পবিত্র কুরআনে জিহাদে কাবির (বড়) বলা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

“সুতরাং আপনি কাফিরদের আনুগত্য করবেন না এবং আপনি কুরআনের (জ্ঞানের) সাহায্যে তাদের সাথে প্রবল জিহাদ চালিয়ে যান।”

(সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৫২)

গ) ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা

এটি হলো জিহাদের সর্বোচ্চ স্তর। কেউ ধর্মদ্রোহী হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে আঘাত হানলে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।

(৪) জিহাদের গুরুত্ব

জিহাদ ইসলামের একটি আমল। জীবনের সকল ক্ষেত্রে দীনের বৈশিষ্ট্যসমূহ রক্ষা করা এবং ইসলামের বিধিবিধান ও অনুশাসন মেনে চলা যেমন একজন মুমিনের দায়িত্ব, অনুরূপভাবে দীন রক্ষা করা, দীনকে সমুন্নত রাখা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জিহাদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও তেমনিভাবে তার কর্তব্য।

মূলত শান্তির জন্য জিহাদ। বান্দাকে মানবীয় কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর অনুগত বানিয়ে দেওয়াই জিহাদের উদ্দেশ্য।

জিহাদের ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পায়ে ধূলি লাগে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।”

(বুখারি)

(৫) জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পার্থক্য

সন্ত্রাসবাদ বলতে আমরা বুঝি পার্থিব কোনো স্বার্থ লাভের আশায় বিশৃঙ্খলা ও তাণ্ডবলীলার মাধ্যমে জনসাধারণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ও তাদের ক্ষতি করা।

ইসলামি জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এক শ্রেণির লোক জিহাদ ও সন্ত্রাসকে এক করে ফেলেছে। বস্তুত উভয়ের মাঝে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান। বলা যায়, এ দুটো পরস্পর বিপরীত।

রাজ্য জয়, ক্ষমতা দখল, সম্পদের লোভ, খুন-খারাবি, লুটতরাজ এবং অন্যায় রক্তপাত জিহাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দাসত্বে নিয়ে আসা এবং জুলুম ও শোষণের অবসান ঘটিয়ে ইনসাফ ও ন্যায়ের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসাই জিহাদের উদ্দেশ্য।

মানুষকে সত্যনিষ্ঠ ও নৈতিকগুণে গুণান্বিত করাও জিহাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।”

(সূরা আল- আনফাল, আয়াত ৩৯)

পক্ষান্তরে, সন্ত্রাসবাদের উদ্দেশ্য হলো অন্যায়ভাবে রক্তপাত করে রাজ্য জয়, ক্ষমতা দখল, সম্পদ অর্জন করা এবং লুটতরাজ ও খুন-খারাবির মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।

ইসলাম জিহাদের মাধ্যমে মুসলমানদের রক্তপাত করতে শিখায়নি। বরং ইসলাম যে জিহাদের কথা বলে তাতে রক্তপাত নয়, মানবতার দিকনির্দেশনা দেয়। মুসলমানদের কোনো জিহাদেই নিরপরাধ সাধারণ লোকজনের কোনো ক্ষতি হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় তিনি প্রায় একশত-এর কাছাকাছি জিহাদে (যুদ্ধে) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সবগুলো জিহাদ মিলিয়ে উভয়পক্ষে পাঁচশ এর কম লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

বর্তমান যুগে জিহাদের নামে যেভাবে বোমাবাজি, জঙ্গিবাদ, খুন-খারাবি ও নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে, তার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এটা সন্ত্রাসেরই নামান্তর। বস্তুত জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ এক নয়।

উপরোক্ত আলোচনা ও বাস্তব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, জিহাদে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। জিহাদের সাথে সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, আমরা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও ইতিহাস জেনে জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করব এবং প্রকৃত মুসলমান হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করব।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts