(১) ফিতনা-ফাসাদ বলতে কী বুঝায়?
ফিতনা ও ফাসাদ উভয়টি আরবি শব্দ। ফিতনা অর্থ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, কলহ ইত্যাদি।
ইসলামি পরিভাষায়, ফিতনা-ফাসাদ বলতে বিশৃঙ্খলা-বিপর্যয় সৃষ্টি বুঝায়। অর্থাৎ সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার বিপরীত অরাজক পরিস্থিতিই ফিতনা-ফাসাদ।
মানবসমাজে ভয়-ভীতি, অত্যাচার-অনাচার ইত্যাদির মাধ্যমে নানা বিপর্যয় সৃষ্টি করা যায়। এরূপ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিই ফিতনা-ফাসাদ।
সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানি, গুম, খুন, অপহরণ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি ফিতনা-ফাসাদের অন্তর্ভুক্ত। অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, কলহ, ষড়যন্ত্র, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদিও ফিতনা-ফাসাদের অন্যরূপ।
(২) ফিতনা-ফাসাদের কুফল
ইসলাম শান্তির ধর্ম, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। এতে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার কোনো স্থান নেই। বরং ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী, উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি ইসলামের মূল ভিত্তি।
ইসলামের সকল আচার-আচরণ, বিধি-বিধান বিজ্ঞানসম্মত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত। জামাআতে সালাত আদায় এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, সাদা-কালো সবাই সারিবদ্ধভাবে এক ইমামের নেতৃত্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। সকলে একই সাথে রুকু-সিজদাহ করে, সালাত আদায় করে। এতে শৃঙ্খলাহীনতার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালার অন্যান্য বিধি-বিধানও তদ্রূপ। এমনকি এ গোটা মহাবিশ্বও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত সুশৃঙ্খল পন্থায় পরিচালিত। কোথাও কোনোরূপ অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনা নেই।
আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনও এরূপ শৃঙ্খলাপূর্ণ হওয়া উচিত। এটাই ইসলামের লক্ষ্য। কিন্তু ফিতনা-ফাসাদ এ লক্ষ্য পূরণের প্রধান অন্তরায়।
- ফিতনা-ফাসাদের ফলে জীবনের সর্বস্তরেই বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় নেমে আসে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।
- যে সমাজে ফিতনা-ফাসাদ প্রসার লাভ করে সে সমাজ কখনো উন্নতি করতে পারে না। সমাজের ঐক্য-সংহতি বিনষ্ট হয়। এরূপ সমাজে মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের কোনো নিরাপত্তা থাকে না। মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় না।
ফিতনা-ফাসাদ সমাজে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের জন্ম দেয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে।
এককথায়, ফিতনা-ফাসাদের ফলে সমাজে ও দেশে অরাজকতা দেখা দেয়। শান্তি ও উন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
বস্তুত ফিতনা-ফাসাদ অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ। এর দ্বারা সমাজে সকল অন্যায়-অত্যাচারের দরজা খুলে যায়। অরাজক পরিস্থিতিতে অসৎ মানুষেরা সব ধরনের পাপ কাজের সুযোগ পায়।
এজন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“ফিতনা হত্যার চেয়েও জঘন্য।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯১)
ফিতনা-ফাসাদ সমাজে অনৈতিকতার জন্ম দেয়, নিন্দনীয় চরিত্র চর্চার প্রসার ঘটায়। ফিতনা-ফাসাদ সমাজের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে।
(৩) ফিতনা-ফাসাদ সম্পর্কে ইসলামি বিধান
ফিতনা-ফাসাদ সম্পূর্ণরূপে ইসলামি আদর্শের বিরোধী। এটি হারাম বা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করাকে নিষেধ করেছেন।
তিনি বলেন,
“পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাতে তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না।”
(সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৫৬)
পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষ তার অন্যায় ও মন্দকর্মের মাধ্যমে পৃথিবীতে নানা ধরনের ফিতনা- ফাসাদ সৃষ্টি করে। যারা ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে তারা খুবই জঘন্য চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা তাদের ঘৃণা করেন।
তিনি বলেন,
“তুমি পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করতে চাইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।”
(সূরা আল-কাসাস, আয়াত ৭৭)
মানবজীবনে ফিতনা-ফাসাদের কুফল ও পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা সদাসর্বদা এ থেকে বেঁচে থাকব। উত্তম গুণাবলির অনুসরণ ও সৎকর্মের মাধ্যমে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করব। যেকোনো প্রকার সন্ত্রাস ও অরাজকতার বিরুদ্ধে সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।