Skip to content

ইসলামের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা

ইসলামের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা

আলোচ্য বিষয়:

পৃথিবীর যে কোন দেশ, জাতি, বর্ণ, ধর্ম বা সম্প্রদায়ের লোকের জন্য ইসলামের দ্বার সবসময় উন্মুক্ত। বিশ্বজাহানের সকল মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে তাঁর রহমত হিসেবে প্রেরণ করার যে ঘোষণা আল-কুরআনে রয়েছে তা থেকেও ইসলামের আন্তর্জাতিকতা প্রমাণিত হয়।

ইসলাম বিশ্বজাহানের সকল মানুষের জীবনযাপনের আহকাম প্রদান করেছে। পৃথিবীর সকল মানুষকে ‘উখুওয়াত’ বা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। সকল মানুষকে এক উম্মাহ বা জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাদের সকলের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তারা যেনো কোনোভাবেই ইসলামের হিরন্ময় জ্যোতি থেকে দূরে চলে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য অনন্য বৈশিষ্ট্যবাহী দাওয়াহ প্রবর্তন করেছে। এভাবে ইসলাম মানুষের আন্তর্জাতিক জীবনকে শান্তি, সংহতি সম্প্রীতিময়, ও সহযোগিতাপূর্ণ করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা প্রদান করেছে।

(১) ইসলামে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা International Relationship বলতে সভ্য ও স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিরাজমান পারস্পরিক সম্পর্ককে বুঝায়। এ সম্পর্কের সর্বজনগ্রাহ্য স্বতঃসিদ্ধ কোনো সংজ্ঞা নির্ণয় করা বেশ কঠিন।

তা স্বত্বেও বলা যায়, যে সকল নিয়মকানুন, বিধি-বিধান, মূলনীতি ও সংবিধানের ভিত্তিতে রাষ্ট্রসমূহ এবং বিভিন্ন জাতির পারস্পরিক অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের নীতি নির্ধারিত হয়, তাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলা যায়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্ব ব্যবস্থার এক অনিবার্য বাস্তবতা। কেননা বিশ্বের কোনো দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর নয়। যার জন্য কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই একাকী চলা সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নতি, অগ্রগতি ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের স্বার্থেই পারস্পরিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এক রাষ্ট্রকে অন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে হয়।

তাই বলা যায়, পারস্পরিক এই নির্ভরশীলতার জন্যই রাষ্ট্র ও জাতিসমূহ যে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।

বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলার খলিফা ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে ইসলাম মানুষের মধ্যে বিশ্বায়নের যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ দিয়ে দিয়েছে তার দাবি আদায়ের জন্যে বিশ্ব মানব সমাজের সদস্যরা পরস্পর পরস্পরের সাথে বাধ্যতামূলক ও মানবিকভাবে যে সম্পর্ক গড়ে তোলে ও অক্ষুণœ রাখে তাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলা যায়।

ক) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা

ইসলাম আন্তর্জাতিক ধর্ম। বিশ্বমানবের মুক্তির জন্যই ইসলামের অমিয়বাণী নিয়ে মহানবি (সাঃ) বিশ্বজাহানে আবির্ভূত হয়েছেন। সে জন্য তাঁকে বিশ্বনবি বলা হয়। প্রকৃতিগত কারণেই তাই আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যেমন-

i) বিশ্বমানব এক জাতি

ইসলামে প্রথমেই বিশ্বের সকল মানুষকে একটি অভিন্ন জাতির সদস্য হিসেবে অভিহিত করে।

মহান আল্লাহ বলেন,

“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রভুক্ত করেছি , যেন তোমরা পরস্পর পরস্পরকে চিনতে পার।”

(সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)

ii) সাম্যবাদ

ইসলাম পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে মর্যাদা ও অধিকারের সাধারণ সমতা ঘোষণা দিয়ে বলেছে,

“হে মানুষ! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে জাহিলিয়াতের আভিজাত্য, গৌরব ও পূর্বপুরুষের বংশমর্যাদা নিয়ে অহঙ্কার ও বড়ত্বের অর্থহীন অভিব্যক্তি দূর করে দিয়েছেন। তোমরা জেনে রেখো, পৃথিবীর সকল মানুষই আদমের সন্তান, আর আদমকে তো মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”

(আল-হাদিস)

iii) বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও আদর্শিক ভ্রাতৃত্ব

হযরত আদম ও হাওয়া (আ) এর সন্তান হিসেবে মানুষকে সাধারণ ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ করেছে।

যেমন মহান আল্লাহর বানী, َ

“মানুষ একই উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত”

(আল-কুরআন)

আর ইসলামি আদর্শে বিশ্বাসী ও অনুশীলনকারী হিসেবে ইসলামি আদর্শিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।

মহান আল্লাহ বলেন,

“মুমিনরা অবশ্যই পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা হুজুরাত ৪৯:১০)

iv) চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি পূরণ

মহান আল্লাহ বলেন,

কাফির-মুশরিকদের সাথে চুক্তি করলেও এ হুকুম মেনে চলতে হবে। আর চুক্তিভঙ্গ না করলে সম্পর্ক সুসম্পর্কে পরিণত হবে।

“তোমরা পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি পূরণ কর। কেননা এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।”

(সূরা বনী ইসরাইল ১৭:৩৪)

v) সংঘর্ষ পরিহার

ইসলামের আন্তর্জাতিক নীতির প্রধান মন্ত্র হলো “যুদ্ধ নয় শান্তি”। এ ক্ষেত্রে মহানবি (সাঃ)-এর হুদায়বিয়ার সন্ধি শ্রেষ্ঠতম দৃষ্টান্ত।

vi) ন্যায়নীতি ও দয়া প্রদর্শন

আন্তর্জাতিক লেনদেন ও সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে কঠোরভাবে ন্যায় নীতির অনুশীলন করতে হবে। অন্য দেশ ও জাতির মধ্যে সাধারণভাবে ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক টেকসই রাখা যায়।

মহান আল্লাহ বলেন,

“তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে।”

(সূরা হুজুরাত ৪৯:১)

vii) হজ্জের বিশ্বসম্মেলন

প্রতিবছর মক্কায় হজ্জ সম্মেলনও আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বাস্তব পদক্ষেপসমূহের বিশেষ দিক। এখানে বিভিন্ন দেশ, বর্ণ ভাষা ও পদমর্যাদার মানুষ একীভূত হয়ে এক অবিস্মরণীয় সাম্য সুন্দর সম্পর্ক ও সহাবস্থানের জন্ম দেয়।

খ) সারসংক্ষেপ

ইসলাম একটি আন্তর্জাতিক জীবনব্যবস্থা। শান্তিপূর্ণ অবস্থান, পারস্পরিক সন্ধি সম্পাদন এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে সম্পর্কে, ইমানী দায়িত্বশীলতায় ইসলাম আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি-সংহতি ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ও অবিসংবাদিত ভূমিকা পালন করে

(২) ভ্রাতৃত্ব (উখুয়াত)

ক) পরিচয়

ইসলাম বিশ্ববাসীর মধ্যে সর্বাত্মক শান্তি ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মানুষের মধ্যে সহযোগিতা ও সহানুভূতির ধারা চালু করতে চায়। মানুষের জীবন সুন্দর সুখময় করে তুলতে চায়। আর এ চাওয়া সামগ্রিকভাবে সফল ও সার্থক হয়ে ওঠে ইসলামের ‘উখুওয়াত’ বা ভ্রাতৃত্ব নীতির উপর।

উখুওয়াত (اخوة) আরবি পরিভাষা। এটি আখুন (اخ) শব্দের বহুবচন। অর্থ ভাই, সাথী বা বন্ধু। ব্যবহারিক অর্থ ভ্রাতৃত্ব, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন।

মিসবাহুল লুগাত শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে, পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার সম্পর্ককেই উখুওয়াত বা ভ্রাতৃত্ব বলে।

উখুওয়াতকে যথার্থভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য এর প্রকারগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। যথা-

i) বিশ্ব উখুওয়াত

হযরত আদম (আ) ও হাওয়া (আ) কে আদি পিতা-মাতা বিবেচনায় বিশ্বের সকল দেশ, জাতি, বর্ণ, ধর্ম ও সময়ের মানুষ এ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। কুরআন মাজীদে এ ভ্রাতৃত্বের স্বীকৃতি রয়েছে।

ii) আদর্শিক উখুওয়াত

কোনো এক ও অভিন্ন আদর্শ, মতবাদ বা ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন ও অনুশীলনের কারণে বিশ্বাসী অনুসারীদের মাঝে এ ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে। ইসলামি উখুওয়াত বা ভ্রাতৃত্ব একটি আদর্শিক ভ্রাতৃত্ব।

iii) ভৌগোলিক উখুওয়াত

একই দেশে, একই সমাজে পাশাপাশি বসবাসের কারণে অভিন্ন ভাষার লোকদের মধ্যে এ ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে। প্রতিবেশীর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এ ভ্রাতৃত্বের হক আদায় করা হয়।

iv) জন্মগত উখুওয়াত

অভিন্ন মাতা-পিতা বা অভিন্ন পিতা ভিন্ন মাতা কিংবা অভিন্ন মাতা ভিন্ন পিতার ঔরসে জন্মগ্রহণের কারণে এ ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠে। সুতরাং জন্মগত বা আদর্শিক কিংবা ভৌগোলিক কারণে অথবা আদি মাতা-পিতার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে আন্তরিকতা, হৃদ্যতা, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের যে সম্পর্ক হয়, তাই হলো উখুওয়াত বা ভ্রাতৃত্ব।

খ) বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলামি উসুওয়াতের গুরুত্ব

ইসলামি উখুওয়াত বা ইসলামি ভ্রাতৃত্ব হলো আদর্শিক ভ্রাতৃত্ব। ইসলামি আদর্শে বিশ্বাস এবং বাস্তব জীবনে তার অনুশীলনের মাধ্যমে ইসলামি উখুওয়াত প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এ ভ্রাতৃত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-

i) ইমানের দাবি

উখুওয়াত কারো ইচ্ছাধীন বিষয় নয় বরং ইমান আনলেই উখুওয়াত প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশ-কালের সীমা সেখানে কোনো বাধা হবে না।

মহান আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।”

(সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১০)

ii) সৌহার্দ্য সম্প্রীতিতে

আল্লাহ বলেন,

“তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর; যখন তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু। এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, অতঃপর তাঁরই অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেলে।”

(সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব তাই মানুষে মানুষে স্নেহ, মায়া, মমতা ও শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি গড়ে তোলে। এর ফলে পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ-কলহের অবসান ঘটে। সে জন্য ইসলামি উখুওয়াতে অভ্যস্ত মানুষ বৃহত্তর প্রেক্ষিতে এ ভ্রাতৃত্বের বিশ্বায়ন ঘটাতে পারে। যা বিশ্বভ্রাতৃত্বের চির কাক্সিক্ষত অবিনাশী চেতনায় পরিণত হয়।

iii) সাহায্য সহযোগিতায়

ইসলামি উখুওয়াত পারস্পরিক সহযোগিতাকে বাধ্যতামূলক করে তোলে।

রাসূল (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করেন।”

(সহিহ মুসলিম)

iv) সহানুভূতিতে

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব নিবিড় ভালোবাসা ও উপলব্ধিতে মুসলিমদের আবদ্ধ করে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“তুমি মুমিনদেরকে তাদের পারস্পরিক দয়া প্রদর্শন, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনের ব্যাপারে একই দেহের মতো দেখবে। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ কষ্ট অনুভব করে তখন তার জন্য সমগ্র দেহই নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে।”

(আল-হাদিস)

আর এ উপলব্ধি সাধারণ্যে ছড়িয়ে দিলে তা সহানুভূতিশীল বিশ্বভ্রাতৃত্বে পরিণত করে।

v) শক্তিমত্তায়

ইসলামি উখুওয়াত সম্মিলিত শক্তিমত্তার এক বিপুল সমন্বয়।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“মুমিনগণ একত্রে মিলিত একটি অট্টালিকার মতো, যার এক অংশ অন্য অংশকে সুদৃঢ় রাখে।”

(আল-হাদিস)

ফলে সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ মুমিনগণ অপদস্থ, পরাজিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন না। ইসলামি উখুওয়াতের এ ঐক্য ও শক্তি বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের শক্তিমত্তায় পরিণত হতে পারে।

vi) আত্মশুদ্ধি ও আত্মরক্ষায়

পারস্পরিক ত্রুটি সংশোধন ও ধ্বংস থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষায় ইসলামি উখুওয়াত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“মুমিন মুমিনের আয়না এবং অন্য মুমিনের ভাই। সে তার ভাইকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে এবং পেছন থেকে হিফাজত করে।”

(আবুদাউদ)

vii) নিরাপত্তায়

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব পারস্পরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। সে তাকে নিপীড়ন করবে না এবং শত্রুর কাছে সমর্পণও করবে না।”

(সহিহ বুখারি)

viii) বিবাদ মীমাংসায়

ইসলামি উখুওয়াত পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ, মতানৈক্য-জটিলতা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলে।

আল্লাহ বলেন,

“মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কর।”

(সূরা হুজুরাত ৪৯:১০)

ix) সাম্য প্রতিষ্ঠায়

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“অনারবদের ওপর আরবদের বা আরবদের ওপর অনারবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। বরং তোমরা সবাই আদম সন্তান এবং আদম মাটির তৈরি।”

(তিরমিযি)

এভাবে ইসলামি উখুওয়াতে মানুষ হিসেবে মানুষে মানুষে অধিকার ও মর্যাদায় সমতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠায়: ইসলামি উখুওয়াত সম্মিলিত শক্তিমত্তার বিপুল প্রকাশ। কেননা এ ভ্রাতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকা ফরয।

মহান আল্লাহ বলেন,

“তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দীনকে আঁকড়ে ধরো এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”

(সূরা আলে ইমরান ৩:১০৩)

কাজেই ইসলামি উখুওয়াত প্রতিষ্ঠিত থাকলে সমাজে, দেশে ও বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজ করে।

গ) সারসংক্ষেপ

ইসলামি উখুওয়াত বা ইসলামি ভ্রাতৃত্ব হলো বিশ্বভ্রাতৃত্বেরই সবচেয়ে উদার, আন্তরিক ও গ্রহণযোগ্য উপায়।

কুরআন মাজীদে আছে,

“সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত।”

(সূরা বাকারা ২:২১৩)

সে জন্য স্বভাবতই ইসলামি ভ্রাতৃত বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় অধ্যবদী ভূমিকা পালন করে।

(৩) উম্মাহ

মানুষের পারস্পরিক পরিচিতি সহজ করার জন্য কুরআনে যে সকল পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে ‘উম্মাহ’ তার অন্যতম। এখানে উম্মাহ’র পরিচয় এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য আলোচিত হলো।

ক) উম্মাহর ধারণা

উম্মাহ বা উম্মাত (امة) শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আরবি পরিভাষা। এটি একবচন। বহুবচন উমামুন (امم)। এর আভিধানিক অর্থ হলো- জনসমষ্টি, জাতি, মহানবির অনুসারী, দল, গোষ্ঠী প্রভৃতি। অবশ্য অনুগ্রহ, মর্যাদা, সময়, শরীঅত ও কল্যাণকর অর্থেও এ শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সাধারণ পরিভাষায়, ‘উম্মাহ’ বলতে এমন একদল জনগোষ্ঠীকে বুঝায় যাদের মধ্যে বংশীয় ঐক্য, ধর্মীয় ঐক্য কিংবা ভৌগোলিক সহাবস্থানের জন্য কোনো রকম অভিন্ন সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়।

কুরআন মাজীদে ‘উম্মাহ’ কে দুটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন-

প্রথমত, উম্মাহ হলো সমগ্র মানব জাতি। কেননা তারা সবাই একই আদি পিতা-মাতা থেকে উৎসারিত।

যেমন আল্লাহ বলেন,

“সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মত।”

(সূরা বাকারা ২:২১৩)

দ্বিতীয়ত, উম্মাহ বলতে প্রত্যেক নবির কওম বা অনুসারীদের বুঝায়।

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আমি প্রত্যেক উম্মাহ বা জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।”

(সূরা নাহল ১৬:৩৬)

‘উম্মাহ’ হলো তিনটি পর্যায়ক্রমিক ধ্যান-ধারণার ধারাবাহিকতা। যেমন-

এক. বিশ্বউম্মাহ: এক অভিন্ন উৎস তথা হযরত আদম-হাওয়া (আ) থেকে উৎসারিত হিসেবে বিশ্বজাহানে সকল ধর্ম বর্ণ-জাতি ও সময়ের মানুষগণ বিশ্ব উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত।

দুই. নবিগণের উম্মাহ: মহান আল্লাহ প্রতিটি জাতির কাছে নবি-রাসূল প্রেরণ করেছেন। মহানবি-রাসূলের অনুসারী জাতি তাদের উম্মাহ হিসেবে গণ্য হয়।

তিন. উম্মাতে মুহাম্মদী বা মুসলিম উম্মাহ: দেশ ভিত্তিক জাতি, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মুসলিমগণকে নিয়ে গড়ে উঠেছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব ও কর্তব্য

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন বিশ্বশান্তির অগ্রদূত। সে জন্য তাঁর অনুসারী মুসলিম উম্মাহর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকে। যেমন-

i) ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর উজ্জ্বল কীর্তি হলো সকল দেশের সকল জাতি ও বর্ণের মুসলিমদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা।

মহান আল্লাহ বলেন,

“মুমিনরা অবশ্যই ভাই ভাই।”

(সূরা হুজুরাত ৪৯:১০)

ii) সহানুভূতি প্রতিষ্ঠা

মুসলিম উম্মাহ ইমানের অনিবার্য দাবিতে পারস্পরিক হৃদ্যতা-সহানুভূতি প্রদর্শন করে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে মুমিনরা একটি দেহের মতো।”

(সহিহ মুসলিম)

iii) সাম্য প্রতিষ্ঠা

মানুষে মানুষে ভেদাভেদ হলো বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টির কারণ। এ জন্য মুসলিম উম্মাহ সাম্যবাদিতার সুষম আদর্শ উপস্থাপন করে।

আল্লাহর নবী বলেন,

“আরবের ওপর অনারবের বা অনারবের ওপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই।”

(মুসনাদে আহমাদ)

iv) মিত্রতা ও মীমাংসা প্রতিষ্ঠা

ঝগড়া-বিবাদ ফায়সালা করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন,

“মুমিনগণ একে অপরের ভাই। কাজেই তোমাদের ভাইদের সম্পর্ক সংশোধন করে দাও।”

(সূরা হুজুরাত ৪৯:১০)

মুসলিম উম্মাহ অভ্যন্তরীণ সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তি ও স্থিতি সুনিশ্চিত করতে পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে এবং এর মাধ্যমে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“যে মুসলিম অপর ভাইয়ের প্রয়োজন মেটায় আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাবেন।”

(আল-হাদিস)

v) অমুসলিমদের প্রতি দায়িত্ব

মুসলিম উম্মাহ অমুসলিমদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখবে এবং সদ্ব্যবহার করবে। নিজেদের জীবন দর্শন ও চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে তারা তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাবেন। এ জন্য বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করে শান্তি বিনষ্ট করবে না।

মহান আল্লাহ বলেন,

“দ্বীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নাই।”

(সূরা বাকারা ২:২৫৬)

খ) সারসংক্ষেপ

মুসলিম উম্মাহ একটি স্বতন্ত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বজাহানে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে এবং নিজেদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখবে। ইসলামি আদর্শের পুরোপুরি অনুশীলন ও অনুসরণের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ নিজেদের মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করতে পারে, পাশাপাশি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার নিজস্ব দায়িত্বও পালন করতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন কাম্য নয়।

(৪) ইসলামি দাওয়াহ

ক) পরিচয়

দাওয়াহ অর্থ প্রার্থনা বা দু’আ করা, সাহায্য কামনা করা, আহ্বান বা নিমন্ত্রণ করা ইত্যাদি। দাওয়াহ হলো কথা,কাজ ও অন্য কোন মাধ্যমে কাউকে নিজের প্রতি বা কোনো বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা।

আল্লাহর দ্বীনের প্রতি মানুষকে ডাকা বা আহ্বান করার নাম দাওয়াত।

দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম এবং তার বিধি-বিধান, শিক্ষা ও নীতি মানুষের কাছে সহজ্জ ভাষায়, গ্রহণীয় পদ্ধতিতে পেশ করে তা গ্রহণের জন্য সাধারণকে আহ্বান জানানো হয়। যে জন্য যেনতেনভাবে ইসলাম প্রচার বা ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দেয়াকে দাওয়াত বলা হয় না। বরং দাওয়াত হলো হিকমত ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানুষের কাছে আল্লাহর দ্বীন ব্যাখা করা। অবস্থা, প্রেক্ষিত, পাত্র ও সময় বিবেচনা করে যথোপযুক্তভাবে মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানানো।

এক কথায়, পরিবেশ ও ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী বুদ্ধিমত্তা ও সুন্দর উপদেশের সঙ্গে ইসলামের প্রতি লোকদের আহ্বান জানানোই দাওয়াত। এটি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজ।

খ) গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামে দাওয়াহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ কাজ।

মানুষকে ইসলামের পথে হিদায়াত দেয়া এবং আল্লাহর পথে পরিচালনার জন্য দাওয়াত অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ মানুষের কাছে ইসলামের আদর্শ, হুকুম-আহকাম, মূলনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করে দাওয়াতের কাজ করা হয়।

দাওয়াত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্ববহ কাজ। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে যে সকল নবি ও রাসূল (আঃ) পাঠিয়েছেন তাঁরা সবাই দাওয়াতের কাজ করেছেন।

i) আল্লাহ তাআলা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ পালন

আল্লাহ তাআলা দাওয়াত বা দ্বীন প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সকল মুসলমানের উচিত ইসলাম প্রচার ও ইসলামি শিক্ষা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।

ii) ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা

দাওয়াত ইসলাম প্রচার ও প্রসারের সর্বাধিক কার্যকর মাধ্যম। দাওয়াত ছাড়া ইসলাম প্রচারের কথা কল্পনা করা যায় না। কেননা দাওয়াত মানেই প্রচার, মানুষের কাছে ইসলামের আহ্বান জানানো, মানুষকে ইসলামের প্রতি, ইসলামের সুমহান আদর্শ ও জীবনধারার প্রতি ডাকা, ইসলাম গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।

iii) ইসলাম সংরক্ষণ

ইসলাম এবং ইসলামি জীবনধারা ও নীতি আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে দাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। দাওয়াত ছাড়া ইসলাম যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। মানুষের পক্ষেও ইসলামের নীতি আদর্শে টিকে থাকা সম্ভব না।

দাওয়াত সর্বোত্তম কাজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান করে, সৎ কাজ করে এবং ঘোষণা করে : নিশ্চয় আমি একজন মুসলিম।”

(সূরা হামীম আস-সিজদা ৪১:৩৩)

iii) মুসলিম উম্মাহর জাতীয় দায়িত্ব

দাওয়াতের কাজ করা মুসলিমদের জাতীয় দায়িত্বের অংশ।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা প্রয়োজন যারা (মানুষকে) কল্যাণের পথে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে। এরাই সফলকাম।”

(আলে ইমরান ৩:১০৪)

দাওয়াত ছাড়া মুসলিম উম্মাহ এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কাজেই তা আবশ্যক এবং অপরিহার্য।

আল্লাহর কিতাব ও প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান এবং বিধানগত বৈষয়িক শিক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে দাওয়াত পরিচালিত হয়। এর ফলে দাঈ এবং যাদের কাছে দাওয়াহ প্রদান করা হয় তারা উভয়ই ক্রমাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থেকে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন।

iv) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ

দাওয়াত আল্লাহর কাজ, আল্লাহ নির্দেশিত কাজ। নিছক আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষ দাওয়াতের কাজ করে। এবং এ পথে অপরিসীম কষ্ট সহ্য করে। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার জন্যই মুমিনদের এ ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকারে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।

আখিরাতে জাহান্নামের ভয়াবহ ও চিরস্থায়ী আযাব থেকে নিজেকে এবং পরিজনদেরকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে দাওয়াত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে দাঈ নিজে সতর্ক হন এবং অন্যদের সতর্ক করেন। এতে দুপক্ষই নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।

v) বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি

এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে দাওয়াহ পরিচালিত হয় বলে এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য ঐক্য ও ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়।

গ) সারসংক্ষেপ

  • মানুষকে সত্য ও সুন্দরের পথে আহ্বান জানানো এবং তাদেরকে সে পথে পরিচালনার উদ্দেশে দাওয়াত পরিচালিত হয়। প্রথম নবি হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে বিশ্ব নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রেরিত সকল নবি-রাসূল এ সব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে দাওয়াতের কাজ পরিচালনা করেছেন। যে জন্য মানুষের জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে সফলতা লাভের জন্য দাওয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
  • দাওয়াত এমন একটি প্রক্রিয়া যা ছাড়া ইসলামের প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তি সম্ভব নয়। দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পার্থিব মুক্তির জন্যই তাই দাওয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় কাজ।

(৫) ইসলামি দাওয়াহ মাধ্যম ও কৌশল

কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ ইসলামি দাওয়াত প্রদানের রীতি-নীতি ও পদ্ধতি নির্দেশ করে বলেছেন,

“হে রাসূল (সাঃ) আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলুন সবচেয়ে সুন্দরভাবে। নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক সবচেয়ে ভালো জানেন কে তার পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় এবং যারা সঠিক পথে পরিচালিত তিনি তাদের সম্পর্কেও সবচেয়ে ভালো জানেন।”

(সূরা নাহল ১৬:১২৫)

ইসলামি দাওয়াহর কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ মাধ্যম ও যথার্থ পদ্ধতি অনুসরণ করা না হলে এ কাজে সফলতা লাভ সম্ভব নয়। এ জন্য নিম্নোক্ত মাধ্যম ও পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে-

  1. যার নিকট দাওয়াহ পেশ করা হবে তার উন্নত মানবিক গুণের বা ভালো কোনো দিকের প্রশংসা করা তাকে মহান আল্লাহ কী কী নি’য়ামত দান করেছেন তা উল্লেখ করা।
  2. যে বিষয় সে পছন্দ করে সে বিষয়কে কেন্দ্র করে দাওয়াহ প্রদান করা;
  3. আবেগ উদ্দীপক মনোহর বক্তব্য পেশ করা। পূর্ববর্তী নবি-রাসূল ও সৎ লোকদের দাওয়াত সংশ্লিষ্ট মর্মস্পর্শী ঘটনা উল্লেখ করা;
  4. জান্নাতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ও শান্তি এবং জাহান্নামের ভয়ানক অন্তহীন শাস্তি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা;
  5. ব্যক্তির প্রকাশ্য কোনো ত্রুটি থাকলে সহানুভূতি ও কল্যাণময়তার সঙ্গে এমনভাবে তিরস্কার করা যাতে সে কষ্ট না পায়, কিন্তু তার বিবেক ও বিচেনাবোধ জাগ্রত হয়;
  6. দাওয়াত গ্রহণ করলে মহান আল্লাহ কী কী পুরস্কার ও সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন তা স্মরণ করিয়ে দেয়া;
  7. ব্যক্তির বিপদে-অসুবিধায় দয়া দেখানো, কষ্টে অংশ নেয়া এবং যে কোনো সমস্যায় সহানুভূতি ও মমতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানো। ব্যক্তির অভাব দূর করায় ভূমিকা রাখা, সাহায্য করা এবং রোগ-ব্যাধিতে খোঁজ-খবর নেয়া, সম্ভব হলে সেবা করা।
  8. ব্যক্তি বয়োঃকনিষ্ঠ হলে স্নেহ প্রকাশ পায় এমনভাবে নাম ধরে আহ্বান করা; আর বয়োঃজ্যেষ্ঠ হলে সম্মান প্রকাশ পায় এমনভাবে পদবি বা সম্বন্ধের সূত্র ধরে সম্বোধন করা।
  9. দাওয়াত বোধগম্য করে তোলার জন্য ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি দৃষ্টান্ত দেয়া। খেয়াল রাখা দরকার, দৃষ্টান্ত যেন এমন বিষয়ে হয় যা ব্যক্তি পছন্দ করে।
  10. ব্যক্তির কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে দাওয়াত পেশ না করে বরং তার কথাও শোনা। তাকে বলতে দেয়া। বিভিন্ন বিষয়ে তার পরামর্শ গ্রহণ করা। এতে ব্যক্তি সম্মানবোধ করবে এবং দাঈর প্রতি আগ্রহী হবে।
  11. ব্যক্তির বোঝার ক্ষমতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় বিষয়ই শুধু উল্লেখ করা। প্রাথমিক দাওয়াতেই সব ধর্মতত্ত্ব বা ইবাদত দর্শন ব্যাখ্যা করে ব্যক্তির মধ্যে কোনো রকমের দ্বিধা তৈরি না করে দেয়া।
  12. ব্যক্তির সময়, গ্রহণের মানসিকতা, মানসিক অবস্থা, শারীরিক সুস্থতা, পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে দাওয়াত প্রদানের উপযুক্ত মনে হলে দাওয়াত প্রদান করা। অবস্থা অনুকূল না হলে দাওয়াত না দিয়ে তার বর্তমান সমস্যার প্রতি মনোযোগ দেয়া;
  13. যথাসম্ভব সংক্ষেপে, সুস্পষ্টভাবে, কোনো রকম দ্ব্যর্থতা ছাড়া দাওয়াত পেশ করা;
  14. ব্যক্তির সব প্রশ্নের জবাবে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা। মনগড়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ না করা বা ভীত না করা। কোনো বিষয় জানা না থাকলে বিনয়ের সঙ্গে অজ্ঞতা প্রকাশ করা;
  15. ব্যক্তির প্রত্যয় জন্মানোর জন্য প্রয়োজন হলে কেবল আল্লাহর নামে শপথ করা। অন্য কোনো বস্তু বা বিষয়ের নামে শপথ করা যাবে না;
  16. ব্যক্তির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা হেয় জ্ঞান করে দাওয়াত প্রদান করলে সে দাওয়াত কোনোক্রমেই সফলতা লাভ করে না;
  17. ব্যক্তির বক্তব্য বা আচরণ বাহ্যত আক্রমণাত্মক এবং আপত্তিকর হলেও ধৈর্য ধারণ করা। ধৈর্য হারিয়ে ফেললে সঠিকভাবে দাওয়াত পেশ করা যাবে না। বরং এমন আচরণ করা হয়ে যেতে পারে যা দাওয়াতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর;
  18. বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিকে ছোট-খাটো উপহার দেয়া, বিশেষ দিনে তাকে আমন্ত্রণ জানানো ও মেহমানদারী করা;
  19. যুক্তিগ্রাহ্যভাবে দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে দাওয়াত প্রদান করা;
  20. ব্যক্তির সঙ্গে যৌক্তিক বিষয় ও পদ্ধতিতে বিতর্ক করা। বিতর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম যে পদ্ধতি দাঈ সে পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। কাউকে আহত করা বা অর্থহীন বিতর্ক তৈরির উদ্দেশে বিতর্ক করবেন না। দৃষ্টান্ত হিসেবে অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক ঘটনা উল্লেখের পরিবর্তে বুদ্ধি সমর্থিত, চিন্তার বিষয় সমৃদ্ধ ঘটনা উল্লেখ করা;
  21. দাওয়াত সমর্থক এবং ব্যক্তির পরিচিত ও প্রসিদ্ধ বিষয়ের দৃষ্টান্ত পেশের মাধ্যমে দাওয়াত উপস্থান করা;
  22. দাওয়াতের বিরোধীপক্ষ দাওয়াতের যে সব বিষয়কে অস্বীকার করছে বা অসত্য মনে করছে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সেগুলোর সত্যতা প্রমাণে প্রয়োজনীয় দলিল- প্রমাণ ব্যবহার করা। তাদের বিশ্বাস বহাল রেখে দাওয়াতী কাজ করলে তা কার্যকর হবে না।
  23. দাওয়াত বিরোধী ব্যক্তির বিশ্বাস, কার্যক্রম, জীবনাচার, যোগ্যতা ও দক্ষতা এবং উপাসনা নিয়ে কোনো রকমের উপহাস বা বিদ্রুপ না করা। তাকে কোনোভাবে তুচ্ছ বা হাস্যকর প্রমাণের চেষ্টা না করা।
  24. ব্যক্তির বোধ-বিশ্বাস ও জীবনাচারের সব বিষয়ে একত্রে দাওয়াত প্রদান না করা। বরং গুরুত্ব অনুসারে বিষয় ভাগ করে নিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণগুলো থেকে পর্যায়ক্রমে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ পর্যালোচনা এবং আল্লাহর হুকুম অবহিত করা।
  25. ব্যক্তিভেদে দাওয়াতের পদ্ধতি ও কৌশলে পরিবর্তন আনা। কারণ যারা নিরপেক্ষ জ্ঞানানুসন্ধানী, যারা বিতর্ক পছন্দ করেন না এবং যারা সংশয়বাদী ও বিতর্কপ্রিয় তাদের উভয়ের কাছে একইভাবে দাওয়াত দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
  26. দাওয়াতের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সততা অবলম্বন করা।
  27. মহান আল্লাহর অনন্য সাধারণ সৃষ্টিরাজির সৃষ্টিকৌশল, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য সুষমা, এ ক্ষেত্রে মানুষের উপলব্ধি ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, সৃষ্টিজগতের বিশালতা, এর আবর্তন-বিবর্তন, শৃঙ্খলা ইত্যাদির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এ সবকিছুই যে এক মহাশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অনিবার্য করে তোলে সে বিষয়টি তুলে ধরা।
  28. ব্যক্তির নিজের দেহ ও আত্মা সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ। কীভাবে মাতৃগর্ভে মানুষের জন্ম, কীভাবে তার পৃথিবীতে আগমন, মানুষের বেড়ে ওঠা, কর্মক্ষম হওয়া, জ্ঞান অর্জন করা, বুদ্ধি-বিবেচনা রেখে কাজ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ এবং চিন্তা-গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করা।

মানুষের নিকট সহজ্জভাবে দাওয়াহ উপস্থাপনের জন্য এমন মাধ্যম ও কৌশল অবলম্বন করা উচিত, যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। মানুষের মনন ও বিশ্বাসকে আহত করে দাওয়াতে সফলতা লাভ সম্ভব নয়।

(৬) দাঈ এর গুণাবলী

যিনি দাওয়াহ প্রদান করেন তাঁকে দাঈ বা মুবাল্লিগ বলা হয়। দাঈর জন্য কিছু আবশ্যক গুণ রয়েছে। যেমন-

মুমিন-মুসলিম ও জ্ঞানী: দাঈগণ অবশ্যই মুসলিম হবেন। তাঁরা ইসলামি শিক্ষা, জীবন-দর্শন ও রীতি-নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞানসম্পন্ন হবেন। কেননা, নিজেরা না জানলে অন্যদের জানানো সম্ভব নয়।

i) অধিক আমলকারী

তাঁরা নিজেরা প্রত্যেক ইসলামি কাজের পুরোপুরি অনুশীলন ও অনুসরণ করবেন। দাঈ নিজে যা বলবেন, তা করেও দেখাবেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“কেন সে কথা বল, যা তোমরা নিজেরা কর না?”

(সূরা সাফ্ফ ৬১:২)

সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হওয়া: দাঈ সত্যবাদী না হলে তার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। কোনো বিষয়েই তার উপর আস্থা রাখবে না। কাজেই দাঈকে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হতে হবে।

ii) বিনয়ী

তাঁরা বিনয়ী, নম্র, মিষ্টভাষী ও সদালাপী হবেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে।”

(সূরা ত্বাহা ২০:৪৪)

iii) স্পষ্ট ভাষী

বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও একাধিক ঝামেলা এড়ানোর জন্য দাঈকে স্পষ্টভাষী হতে হবে।

iv) পরিস্থিতি ও পাত্র খেয়াল করা

দাঈ ব্যক্তিভেদে বোধগম্য করে সহজ্জ ভাষায় দাওয়াহ উপস্থাপন করবে। তা না হলে দাওয়াহ ব্যর্থ হতে বাধ্য।

v) পুনরাবৃত্তি করা

শ্রোতাম-লীর বুঝতে অসুবিধা হলে দাঈ পুনরাবৃত্তি করে ঠিক করে দেবে। তার মধ্যে পুনরাবৃত্তি করার ধৈর্য ও মানসিকতা থাকতে হবে।

vi) ইচ্ছার খেয়াল করা

দাঈগণ ব্যক্তির মানসিকতা ও গ্রহণেচ্ছার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেবেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“দীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।”

(সূরা বাকারা ২:২৫৬)

vii) বর্ণনায় স্বেচ্ছাচারিতা রোধ

দাঈগণ কখনোই নিজেদের ইচ্ছামত কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা করবেন না।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“যে ইচ্ছা করে আমার সম্পর্কে মিথ্যা বলে সে যেন দোযখের আগুনে নিজের ঠিকানা তৈরি করে নেয়।”

(শু’আবুল ইমান)

viii) কৌশলী ও যুক্তিবাদী

দাঈকে দীন প্রচারে কৌশলী ও যুক্তিবাদী হতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন,

“তুমি হিকমত, কৌশল এবং উত্তম উপদেশের সাথে তোমার রবের দিকে আহ্বান জানাও এবং তাদের সাথে সর্বোত্তম পন্থায় বিতর্ক কর।”

(সূরা নাহল ১৬:১২৫)

ix) তাকওয়াবান হওয়া

তাঁরা আল্লাহভীরুতার জীবন্ত প্রতীক হবেন। লোকেরা যেন তাদের জীবনাচার দেখেই তাকওয়ায় গুণান্বিত হওয়ার উৎসাহ পায়।

x) অন্যান্য ধর্ম ও ভাষাজ্ঞান থাকা

দাঈদের অন্যান্য ধর্ম এবং প্রচলিত বিখ্যাত ভাষাসমূহে দক্ষ হতে হবে।

xi) সেবাধর্মী

দাঈ সেবাধর্মী হবেন। সেবার মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে তার পক্ষে অত্যন্ত সহজেই মানুষের আপন হওয়া সম্ভব।

দাঈকে সর্বজনগ্রাহ্য এমন কিছু গুণাবলির অধিকারী হতে হয়, যা দেখে লোকেরা নিজেরা তার অনুশীলন করে। ইসলামি দাওয়াতের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দাঈ। কাজেই দাঈকে আদর্শ স্থানীয় হতে হয়, নচেত দাওয়াহ ফলপ্রসূ হয়না।

দাঈ ইসলামের বাস্তব বা জীবন্তরূপ। তাকে দেখে বা তার নিকট থেকে শুনে মানুষ ইসলামের জ্ঞান লাভ করে। তাই দাঈকে আবশ্যকীয়ভাবে ইসলামের আদর্শ মোতাবেক উন্নত নৈতিক ও বৈষয়িক জীবনের অধিকারী হতে হয়। প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়।

(৭) খিদমতে খালক

পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষকে তিনি প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। সমাসীন করেছেন ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা আসনে। স্বভাবতই একজন মানুষকে তাই তাঁর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের জন্য অন্য মানুষসহ সকল সৃষ্টির প্রতি বেশ কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়।

‘খিদমত’ ও ‘খালক’ আরবি ভাষার দুটি শব্দ। খিদমত অর্থ সেবা করা, পরিচর্যা করা, যত্ন নেওয়া, শুশ্রুষা করা। অপরদিকে খালক হলো সৃষ্টি জগৎ ও সৃষ্টি জীব। আল্লাহ তাআলার সকল সৃষ্টি যা এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ‘খিদমাতুল খালক’ হলো সৃষ্টির সেবা, পরিচর্যা বা সৃষ্টি জীবের খিদমত করা।

এ বিশ্বে মহান আল্লাহর যে অগণিত, অসংখ্য সৃষ্টি রয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা হিসেবে মানুষের কর্তব্য হলো বিশ্বব্যাপী সেই সৃষ্টি রাজির সুবিধা-অসুবিধা লক্ষ করা, অসুবিধা দূর করতে সাহায্য করা, পরিচর্যা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা।

অর্থাৎ মানুষের ওপর হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক এবং ‘হাক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার হক বলে দু’রকম হক আদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। এর মধ্যে হাক্কুল্লাহ আদায়ের নাম ইবাদত আর হাক্কুল ইবাদ আদায়কে ‘খিদমতে খালক’ বলা যায়।

এক কথায়, সৃষ্টি জীবের সাথে আল্লাহ নির্দেশিত মানবিক আচরণই খিদমতে খালক।

ক) খিদমতে খালকের ক্ষেত্রে মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য

খিদমতে খালক বা সৃষ্টি সেবার জন্য মানুষ যে সব কাজ করতে হয় তা হলো সবার প্রতি সদয় আচরণ: জড় ও জীব নির্বিশেষে বিশ্বের প্রতিটি বস্তু ও পদার্থের সাথে যথাযথ আচরণ করা মানুষের কর্তব্য।

যেমন বিশ্বনবি (সাঃ) বলেন,

“সমগ্র সৃষ্টিই মহান আল্লাহর পরিবারতুল্য। সৃষ্টির মধ্যে সে ব্যক্তিই মহান আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়, যে আল্লাহর পরিবারের প্রতি প্রসন্ন আচরণ করে।”

(শু‘আবুল ইমান)

i) মানবসেবা

একজন মানুষের দায়িত্ব সেবা-যত্ন ও সহযোগিতায় অন্য মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক ও সুন্দর করে তোলা।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“মানুষ যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, ততক্ষণ আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।”

(সহিহ মুসলিম)

ii) আত্মীয়-স্বজনের সেবা

মাতা, পিতা, ভাই, বোন, সন্তান-সন্ততি, স্বামী, স্ত্রী, মামা, খালা, চাচা, ফুফু প্রমুখ মানুষের আত্মীয়। এদের সাথে সদাচরণ ও তাদের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়া এবং বিপদে পাশে দাঁড়ানো দায়িত্ব।

মহান আল্লাহ বলেন,

“আত্মীয়দের দিবে তার প্রাপ্য।”

(সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:২৬)

iii) প্রতিবেশীর সেবা

অসুস্থ, অভাবগ্রস্ত বা বিপদাপন্ন প্রতিবেশীর দুরবস্থা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“যে পেটপুরে খায় কিন্তু তার প্রতিবেশী থাকে ক্ষুধার্ত, সে মুমিন নয়।”

(বায়হাকি)

iv) ইয়াতিমদের সেবা

শৈশবে পিতৃ-মাতৃহীনরা ইয়াতিম হিসেবে পরিচিত। সাধারণত তারা অসহায় ও অভিভাবকত্বহীন হয় বলে তাদের সেবার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

v) অভাবগ্রস্তের সেবা

যে কোনো রকমের অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির অভাব দূর করার কাজে এগিয়ে আসতে হবে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের অভাব দূর করে আল্লাহ তার অভাব দূর করে দেবেন।”

(আল-হাদিস)

vi) ক্ষুধার্তের সেবা

ক্ষুধার্তকে সাধ্যমত খাদ্য দিতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও আর বন্দিকে মুক্ত কর।”

(বুখারি)

vii) অসুস্থের সেবা

আর্ত-পীড়িত মানুষের সেবা করা ইসলামের মৌলিক আদর্শ।

মহানবি (সাঃ) মানুষের বিভিন্ন দায়িত্ব বর্ণনা করে বলেছেন,

“আর সে যখন অসুস্থ হবে, তার সেবা করবে।”

(আল-হাদিস)

viii) বস্ত্রহীনের সেবা

অসমর্থ-অক্ষম মানুষের কাপড়ের অভাব পূরণের জন্য সাধ্যমত তাদেরকে কাপড় দিতে হবে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি অপর মুসলিমকে কাপড় দেবে, কিয়ামতে আল্লাহ তাকে সবুজ বর্ণের জান্নাতি পোশাক পরাবেন।”

(আবু দাউদ)

ix) সর্বজনীন সেবা

জাতি-বর্ণ-অ ল, দুর্বল-সবল, ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকল মানুষের সাহায্য ও সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“পৃথিবীতে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করবেন।”

(আল-হাদিস)

x) পথচারীর সেবা

অনেক বিত্তশালী মানুষ সফরে এসে অসহায় অবস্থায় পড়তে পারে। আবার অনেকে ঘরবাড়ির আশ্রয় হারিয়ে পথে বসবাস করতে বাধ্য হতে পারে। তাদের সকলের প্রতি সদয় হতে হবে।

xi) জীবজন্তু ও পশুপাখির সেবা

জীব জন্তু ও পশু পাখি আল্লাহর সৃষ্টি বৈচিত্র্যের এক বিশেষ অংশ। এগুলোর সুস্থ, সুন্দর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ স্বাভাবিক জীবনযাপনের ওপর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এজন্য জীব জন্তু ও পশু পাখির সেবায় মানুষ আত্মনিয়োগ করবে। অপ্রয়োজনে জীব জন্তু হত্যা থেকে বিরত থাকবে।

xii) উদ্ভিদ ও জড় পদার্থের সেবা

উদ্ভিদ মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য বস্তু। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, জ্বালানি ও অক্সিজেন সরবরাহ, ফল-ফুল-কাঠ প্রদান এবং বন্যা, মহামারি, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরিতে উদ্ভিদ প্রয়োজনীয়।

বিভিন্ন জড় পদার্থ, খনিজদ্রব্য প্রভৃতি নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক বিষয়ের স্বাভাবিকতা মানুষের সুন্দর জীবনযাপনের জন্য অনিবার্য। সে জন্য মানুষ প্রয়োজনীয় বৃক্ষরোপণ ও প্রাকৃতিক বস্তু ও বিষয়ের যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অপ্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছেড়ার ব্যাপারেও মহানবি (সাঃ) নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

খ) সারসংক্ষেপ

আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব সংরক্ষণ করতে হলে প্রত্যেকটি মানুষের উচিত খিদমতে খালকের কাজে আত্মনিয়োগ করা। মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমার প্রতি যেমন সদয় হয়েছেন তুমিও ততখানি সদয় হও। সুতরাং খিদমতে খালক ইসলামের অনিবার্য দাবি।

(৮) মানবাধিকার সংরক্ষণে ইসলাম

মানবাধিকার হলো মানুষের অধিকার। যে অধিকার নিয়ে মানুষ জন্মায়, যা তাকে বিশিষ্টতা দেয়, যা হরণ করলে সে আর মানুষ থাকে না এবং যে অধিকার থেকে প্রকৃতপক্ষে মানুষকে আলাদা করার কোনো উপায় নেই তাকে মানবাধিকার বলে।

মানবাধিকার সংরক্ষণে ইসলাম অকাট্য বিধান দিয়েছে যেমন- অধিকার লাভের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিজের অবস্থান ও সম্মান জানা। কারণ অবস্থান ও সম্মান অনুসারে অধিকারের তারতম্য হয়ে থাকে। ইসলাম এ কারণে পৃথিবীর সকল মানুষকে জানিয়েছে, মানুষ এতো বড় না যে, সে নিজেকে খোদা দাবি করবে, আবার এতো ছোটো না যে, পৃথিবীর যে কোনো কিছুকে বা কাউকে খোদা বানিয়ে পূজা করবে। বরং মানুষ আল্লাহর খলীফা। পৃথিবীর সকল কিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি। সুতরাং মানুষ আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নিকট মাথা নিচু করবে না।

ক) মানবাধিকার রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা

i) জীবনের নিরাপত্তা

জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। অধিকাংশ মানুষই তাই যে কোনো মূল্যে বাঁচতে চায়। ইসলাম মানুষকে জীবনের নিরাপত্তা লাভের পূর্ণ অধিকার প্রদান করেছে। তাই কেউ কাউকে হত্যা করতে পারবে না, হত্যার হুমকি দিতে পারবে না, এমনকি এমন আচরণও করতে পারবে না; যাতে অন্যের শান্তি ও স্বস্তি বিনষ্ট হয়। অন্যের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইসলাম হত্যাকে হারাম এবং হত্যার বিনিময়ে আইনত হত্যার বিধি প্রবর্তন করেছে, যা অত্যন্ত কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়।

ii) সম্মান

জীবনের মতো মানুষের নিকট তার সম্মানও খুব প্রিয়। কিছু কিছু মানুষ একে জীবনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। মানুষের এই অতি প্রিয় বিষয়টি যেনো কোনো কারণে নিরাপত্তাহীনতায় না পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য ইসলাম পর্দা, অন্যের ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার বিধান দিয়েছে। এবং উপহাস, মন্দ ধারণা, মন্দ নামে ডাকা, দোষারোপ করা, দোষ খুঁজে বেড়ানো ও গীবত করার মতো বিষয়সমূহ হারাম করেছে।

iii) সম্পদের সুরক্ষা

বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান সম্পদ সব মানুষেরই প্রয়োজন। কেউ-ই এ প্রয়োজন অস্বীকার করে না, উপেক্ষা করে না। এ কারণে অর্থ-সম্পদ মানুষের খুবই প্রিয়। কারণ সুখময় ও সাচ্ছন্দপূর্ণ জীবন গড়ার ক্ষেত্রে অর্থ আবশ্যক। অর্থ-সম্পদ উপার্জন, স য় ও ব্যয়ে তাই মানুষের প্রচেষ্টা অপরিসীম। ইসলাম মানুষের অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। একজনের জন্য অন্যের সম্পদ ভোগ, দখল বা আত্মসাৎকে হারাম করেছে। চুরির জন্য হাতকাটার মতো কঠোর বিধি প্রবর্তন করেছে।

iv) ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা

মানুষকে বিবেকসম্মত শালীন কথা বলার অধিকার দিয়েছে ইসলাম। একে চর্চা করার উৎসাহ দিয়েছে নানাভাবে। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে হযরত উমর ফারুক (রা) বলেছেন, আমার জন্য কল্যাণ নেই, যদি আমি না শুনি। তোমাদের জন্যও কল্যাণ নেই, যদি তোমরা না বলো।

v) উপার্জন ও ভোগের স্বাধীনতা

ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করবে এবং ভোগও করবে। এ ক্ষেত্রে তাকে বাধা দেয়া যাবে না। কারণ এ অধিকার আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

“পুরুষ যা উপার্জন করে তা পুরুষের আর নারী যা উপার্জন করে তা নারীর।”

(সূরা নিসা ৪:৩২)

রাষ্ট্র বা ধর্ম এ অধিকার থেকে ব্যক্তিকে বিরত করতে পারবে না।

vi) সুবিচার লাভের অধিকার

মানবাধিকার রক্ষায় ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সকলের জন্য সুবিচার। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অ ল, গোত্র, গোষ্ঠী, বংশ, অর্থ, লিঙ্গ, বিত্ত, ক্ষমতা, বৈভব ইত্যাদি কোনোকিছু ব্যক্তির সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বরং সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুবিচার পাবে। রাষ্ট্র অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রবল হবে এবং দুর্বলের ব্যাপারে নমনীয় হবে।

ইসলামের এ ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হলে, মানবাধিকার সুরক্ষায় নতুন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন হবে না বরং এমনিতেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

খ) সারসংক্ষেপ

ইসলাম মানবাধিকার সংরক্ষণের এক অনিবার্য ব্যবস্থাপনা। এতে মানুষের সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সম্পদ উপার্জন ও ভোগের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। মানুষের ব্যক্তি, বাক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। ইসলাম ধর্ম মেনে চললে, স্বভাবতই সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠতম রূপই প্রতিষ্ঠিত হবে।

(৯) পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলাম

মানুষের সুস্থ, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং কাক্সিক্ষত জীবনযাপনের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। পরিবেশ সংরক্ষণ বলতে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক বিষয়গুলো প্রকৃত অবস্থায় রক্ষা করা বুঝায়। ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে।

ক) পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা

আল্লাহ তাআলা বিশ্ব জাহান সৃষ্টি করেছেন। বিশ্ব জাহানের মধ্যে মানুষের আবাসস্থল নির্ধারণ করেছেন। পৃথিবীর পরিবেশকে তিনি মানুষের উপযোগী এবং মানানসই করে সৃষ্টি করেছেন। এর কোনো কিছু ধ্বংস করা বা অন্যায়ভাবে নষ্ট করা মানুষের জন্যই বিপজ্জনক।

কেননা মানুষের প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখেই পৃথিবীর প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করা হয়েছে। এর কোনো কিছু বদলে দিলে বা নষ্ট করে ফেললে মানুষই তার খারাপ প্রভাব ভোগ করবে। ইসলাম মানুষের জন্য এ কাজটি হালাল রাখেনি।

মহান আল্লাহ বলেন,

‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’’

অন্যত্র মহান আল্লাহ তাআলা জলে, স্থলে, শূন্যে মানুষের অন্যায়ের জন্য বিপর্যয় নেমে আসার কথা ঘোষণা করেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিভিন্ন বাণী ও কর্মসূচি থেকে বিষয়টি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যায়। সাধারণভাবে পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিকে ইসলাম আল্লাহর পরিবারের সদস্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। ইরশাদ হয়েছে, সৃষ্টিজগত আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সে যে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করে। এই ভালো ব্যবহার করার অর্থই হলো পরিবেশ সংরক্ষণ করা।

এরই আওতায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যুদ্ধকালীন সময়েও বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন।

পানির কূপ নষ্ট করতে এমনকি পানি অপচয় করতেও নিষেধ করেছেন। পশু-পাখির প্রতি নির্দয় হওয়া, অকারণে পশু-পাখি হত্যা করা এমনকি অকারণে গাছের একটি পাতা ছেঁড়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উপরন্তু গাছ লাগানোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“কোনো মুসলিম যদি কোনো গাছ লাগায় বা কোনো ফসল বপন করে আর সেখান থেকে অন্য মানুষ বা পশুপাখি খাবার গ্রহণ করে, তাহলে তা তার জন্য সাদকাহ হিসেবে গণ্য হয়।”

(সহিহ বুখারি)

ইসলামে পানির শুদ্ধতা রক্ষা অনিবার্য করা হয়েছে। কেননা, পবিত্র-বিশুদ্ধ পানি ছাড়া পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এই অনিবার্যতা পানি দূষণ রোধ করে। এমনিভাবে অন্যকে কষ্ট দেওয়া, অন্যের ক্ষতি করা হারাম করা হয়েছে।

এ কারণেই শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, আবহাওয়া ও জলবায়ু দূষণের মতো স্বেচ্ছাপ্রণোদিত কোনো কাজ ইসলামে হালাল রাখা হয়নি।

ইসলাম পরিবেশ সুরক্ষায় অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ভূমিকা রেখেছে। মুসলিমগণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে এ বিধানসমূহ পালন করলে পরিবেশ সুরক্ষা হবে এবং পৃথিবী মানুষের বাসোপযোগী থাকবে।

খ) সারসংক্ষেপ

আল্লাহ তাআলা মানুষের বসবাসের উপযোগী করে পৃথিবীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এই পরিবেশের জন্য তিনি পরিমাণ মতো সবকিছু দিয়েছেন। মানুষ এর কোনো কিছু যদি ধ্বংস করে বা ক্ষতি করে তাহলে আল্লাহ নির্ধারিত পরিমাণ বিনষ্ট হয়ে পরিবেশের ভারসাম্যতা নষ্ট হয়। তাই নিজেদের স্বার্থেই মানুষকে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts