Skip to content

 

আখিরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম

আখিরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নির্দিষ্ট এ সময়কাল অতিক্রমের পর কেউ এক মুহূর্তও পৃথিবীতে থাকতে পারে না। মৃত্যুর মাধ্যমে তাকে একটি নতুন জীবনে প্রবেশ করতে হয়। এ জীবন অনন্তকালের এর নাম আখিরাত বা পরকাল।

দুনিয়ার জীবনের নেক আমল ও বদ আমলের উপর নির্ভর করে এ জীবনে মানুষ অনন্ত সুখ বা অশেষ দুঃখ ভোগ করবে। আখিরাত জীবনের অনন্ত সুখময় স্থানের নাম জান্নাত। আর অশেষ দুঃখের আবাস হলো জাহান্নাম।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এমন নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধান প্রদান করেছেন যা অনুসরণ করলে মানুষ চিরসুখের জান্নাতের অধিকারী হবে। আর কেউ যদি আল্লাহর দেয়া এ অনুগ্রহ অস্বীকার করে ভিন্নপথ অবলম্বন করে, তাহলে তাকে অশেষ কষ্টের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এখানে আমরা আখিরাত জীবনের এ বিষয়সমূহ আমরা জানাবো।

(১) আখিরাত

ক) পরিচয়

মানুষের জীবনের দুটি পর্যায়। একটি দুনিয়া, অন্যটি আখিরাত। দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আখিরাত চিরস্থায়ী। দুনিয়ার জীবন অর্জনের, আখিরাত ভোগের। দুনিয়াতে মানুষ যেমন কাজ করবে আখিরাতে তেমন ফল ভোগ করবে।

রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র।

আখিরাত অর্থ পরকাল। মানুষের দুনিয়ার জীবনের পরের জীবনকে বলে পরকাল। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষ আখিরাতের জীবনে প্রবেশ করে। এ জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। এ জীবন অনন্তকালের।

দুনিয়াতে ভালো কাজ করলে আখিরাতের অনন্ত জীবনে শান্তি ও নাজাত পাওয়া যাবে। আর মন্দকাজ করলে পাওয়া যাবে শাস্তি।

খ) আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব

ইসলামি জীবন দর্শনে আখিরাতে বিশ্বাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-

i) আল্লাহর প্রতি ইমান: আখিরাতে বিশ্বাস না করলে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা হয় না। কেননা আল্লাহ তায়ালা আখিরাতের অনিবার্যতার কথা বলেছেন। একে অবিশ্বাস করলে তাই তাঁকেই অবিশ্বাস করা হয়।

ii) কিতাবের প্রতি ইমান: আল্লাহর কিতাবে আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। আখিরাতকে অবিশ্বাস করলে তাই আল্লাহর কিতাবকে অবিশ্বাস করা হয়।

iii) রিসালাতের প্রতি ইমান: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)সহ পৃথিবীর সকল নবী-রাসূল আখিরাতে বিশ্বাসের কথা বলেছেন। আখিরাতে অবিশ্বাস করা তাই পৃথিবীর সকল নবী-রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করার শামিল।

iv) পাপ থেকে বেঁচে থাকার উপায়: আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে পাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। একা একা থাকলেও সে পাপকাজ করতে পারে না। কেননা, যে আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে জানে সকল গোপন বিষয়ই আল্লাহ দেখেন এবং এ জন্য আখিরাতে তাঁর কাছে জবাব দিতে হবে।

v) উন্নত চরিত্র গঠন: আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে মিথ্যা বলা, প্রতারণা, চুরি, অপরের সম্পদ আত্মসাত, মদ্যপান, অন্যায় হত্যাকা-সহ সকল ধরনের অনাচার থেকে বাঁচিয়ে রাখে। ফলে তার চরিত্র সুন্দর হয়।

vi) দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা: আখিরাতে বিশ্বাসী লোক অন্যের ক্ষতি করে না। অন্যকে কষ্ট দেয় না। কারো অধিকার নষ্ট করে না। ফলে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় না। সর্বত্র শান্তি বজায় থাকে।

vii) দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি: আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠ করে তোলে। আখিরাতে জবাবদিহির আশঙ্কায় সে কাজে ফাঁকি দেয় না। খারাপ কাজ করে না। কাউকে ঠকায় না। সকল কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করে।

viii) স্থায়ী সফলতা লাভ: আখিরাতে বিশ্বাস ছাড়া অনন্তজীবনে মুক্তি পাওয়া যাবে না। বরং শাস্তি পেতে হবে। এ বিশ্বাস মানুষকে মন্দ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। ভালো কাজে উৎসাহ দেয়। ফলে সে স্থায়ী সফলতা ও কল্যাণ লাভ করে।

See also  আখিরাত শব্দের অর্থ, কী, কাকে বলে? আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব

ix) হতাশা মুক্ত জীবন: আখিরাতে বিশ্বাসী মানুষ হতাশ হয় না। কেননা পৃথিবীর জীবনের যে কোন কষ্ট আখিরাতের সুখের আশায় সে হাসিমুখে বরণ করে নেয়। দুনিয়াবি যে কোন ক্ষতি সে মেনে নিতে পারে।

বস্তুত তাওহিদ ও রিসালাতে বিশ্বাসের মত আখিরাতে বিশ্বাসও ঈমানের অঙ্গ। আখিরাতে বিশ্বাস ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না।

আল্লাহ তায়ালা মুমিন মুত্তাকীদের পরিচয় দিয়ে বলেন,

“তারা আখিরাতেও দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।”

(সূরা বাকারা ২:৪)

কাজেই মুমিন হতে হলে আখিরাতে বিশ্বাস করতে হবে।

গ) আখিরাতের জীবনের কয়েকটি দিক

মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের আখিরাতের জীবন শুরু হয়। এরপর মানুষ কবর জীবনে প্রবেশ করে। তারপর তার কিয়ামাত বা পুনরুত্থান হয়। সে হাশরে সমবতে হয়। সেখানে মহামহিম আল্লাহ তার পাপ-পুণ্যের পরিমাপ করেন। এরপর আল্লাহর ফায়সালা অনুসারে মানুষ জান্নাত বা জাহান্নাম লাভ করে।

i) মৃত্যু

আল্লাহ তায়ালা সকল প্রাণির জন্য মৃত্যু অবধারিত করে রেখেছেন।

কুরআন মাজীদে আছে,

“জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।”

(সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫)

যত ক্ষমতশালী হোক কোন মানুষ মৃত্যুকে রোধ করতে পারবে না। সকলকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। দুনিয়াতে যারা ভালো কাজ করবে, আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে তাদের মৃত্যু কম কষ্টের হবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে, আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে না, তারা ভয়ঙ্কর কষ্টের মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হবে।

ii) কবর

মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে কিয়ামাত পর্যন্ত যে সময় তার নাম বারযাখ বা কবর জীবন। কাউকে কবর দেয়া হোক বা না হোক সকলকেই এ পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। এ পর্যায়ে দু জন ফেরেশতা প্রত্যেককে তিনটি প্রশ্ন করবে।

-তোমার রব কে? َ
-তোমার দীন কী?
-রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হবে এ ব্যক্তি কে?

পৃথিবীতে যারা ভালো কাজ করেছে। আল্লাহর হুকুম মেনে চলেছে। তারা প্রশ্ন তিনটির উত্তর দিতে পারবে। তাদের কবর জীবন হবে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ। কবরেই তারা জান্নাতের সুখ লাভ করবে।

আর পৃথিবীতে যারা খারাপ কাজ করেছে, আল্লাহর হুকুম মেনে চলে নি তারা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাদের কবর জীবন অত্যন্ত কষ্টকর হবে। কবরেই তারা জাহান্নামের শাস্তি পেতে থাকবে।

iii) কিয়ামাত

কিয়ামাত অর্থ হল দাঁড়ান। একে বা’আছ বা পুনরুত্থানও বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা এ বিশ্বজাহানকে ধ্বংসশীল করে সৃষ্টি করেছেন। একদিন এ বিশ্ব ধ্বংস হবে। আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতা ইসরাফিল (আ) শিঙ্গায় ফুঁ দেবেন। শুরু হবে মহাপ্রলয়। এতে বিশ্বজাহান ধ্বংস হয়ে যাবে।

গ্রহমালা আর নক্ষত্রপুঞ্জ কক্ষচ্যুত হবে। বিশ্বজগতের এমন পরিণতি বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, ‘একসময় সূর্য শীতল হয়ে যাবে। চাঁদ আলোহীন হয়ে যাবে। গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে এবং পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।’

এরপর ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গায় পরবর্তী ফুঁ দেবেন। এতে আল্লাহর হুকুমে সকল মৃত মানুষ যে যেখানে আছে সেখান থেকে উঠে দাঁড়াবে। মৃত্যুর পরে মানুষের এই উঠে দাঁড়ানোকে কিয়ামাত বলা হয়।

iv) হাশর

হাশর অর্থ হল মহাসমাবেশ। কিয়ামাতের পর সকল মানুষ যখন পুনরুজ্জীবিত হবে তখন একজন আহ্বানকারী ফেরেশতা তাদেরকে এক বিশাল ময়দানে সমবেত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে। তাঁর আহ্বানে মানুষের এ মহাসমাবেশই হাশর। পৃথিবীর জীবনের ভালোমন্দ কাজের হিসাব নেয়ার জন্য মানুষকে এখানে সমবেত করা হবে।

দুনিয়ার জীবনে যারা ভালো কাজ করেছে, আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনেছে, হাশরে তাদের কোন কষ্ট হবে না। তৃষ্ণায় তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করবেন। একবার এ পানীয় পানের পর তাদের আর কখনো তৃষ্ণা হবে না। তারা আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে আনন্দিত মনে আল্লাহর বিচারের অপেক্ষা করবেন।

See also  পরকাল কী, কাকে বলে? পরকালের পর্যায়, জান্নাত ও জাহান্নাম

আর যারা ইমান আনেনি, খারাপ কাজ করেছে, হাশরে তাদের ভয়ঙ্কর কষ্ট হবে। প্রচন্ড-তাপে-ভীড়ে তাদের জীবন বিপন্ন হবে। তৃষ্ণায় তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে। কিন্তু তারা কোন পানীয় পাবে না।

হাশরে মহামহিম আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে দুনিয়ার কাজের হিসাব দিতে হবে। মানুষ এবং জিনকে দুনিয়ার কাজের লিখিত আমলনামা দেয়া হবে। শুরু হবে বিচার। আল্লাহ তায়ালা হলেন বিচারক। নবী-রাসূল, ফেরেশতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হবে সাক্ষী। বিচারে কাউকে বি ত করা হবে না।

v) মীযান ও বিচার

মীযান অর্থ হল পরিমাপ দন্ড। হাশরে আল্লাহ তায়ালা মীযান স্থাপন করবেন এবং এর মাধ্যমে মানুষ ও জিনের পাপ পুণ্যের পরিমাপ করবেন। পরিমাপে যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে তাঁরা জান্নাতের অধিকারী হবেন। আর যাদের পাপের পাল্লা ভারী হবে তারা জাহান্নামের অধিকারী হবে।

মহামহিম আল্লাহ বলেন,

‘‘যার পাল্লা ভারী হবে সে তো সন্তোষজনক জীবন লাভ করবে। কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে তার স্থান হবে হাবিয়া। তুমি কি জানো তা কী? তা হল অতি উত্তপ্ত আগুন।”

(সূরা কারিআ ১০১: ৬-১১)

এভাবে পরিমাপের মাধ্যমে মানুষের বিচার সম্পন্ন হবে। অণু পরিমাণ পাপ বা পুণ্যকাজও বাদ দেয়া হবে না। কারো প্রতি বিন্দুমাত্র পক্ষপাতিত্ব করা হবে না।

ঘ) সারসংক্ষেপ

মানুষের দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। সে জীবনে বিশ্বাস যেমন মানুষের দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর করে তোলে তেমনি দুনিয়ার সুন্দর জীবন আখিরাতে স্থায়ী সুখ নিশ্চিত করে। আখিরাতের জীবনের অনেকগুলো স্তর বা পর্যায় রয়েছে। মুমিন ব্যক্তি এর প্রতিটি স্তরেই পরম সুখ ও আনন্দে অতিবাহিত করবে।

(২) জান্নাত

ক) পরিচয়

মীযানে পূণ্যের পাল্লা যাদের ভারী হবে তাঁদের জন্য আল্লাহ পরম সুখের এক অনন্য বাসস্থান নির্মাণ করে রেখেছেন। এর নাম জান্নাত। জান্নাত অর্থ উদ্যান বা বাগান।

আখিরাতে জান্নাত মুমিনদের বাসস্থান হবে। এখানে থাকবে আরামের সব রকম ব্যবস্থা। মুমিনদের যে কোন বাসনা সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা হবে। জান্নাতে মুমিনগণ অসীম আনন্দ লাভ করবেন।

আল্লাহ বলেন,

“তোমাদের মন যা চায় সেখানে তোমাদের জন্য তা আছে। তোমাদের জন্য তা আছে যা তোমরা কামনা কর।”

(সূরা হা মীম সিজদাহ ৪১:৩১)

মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের মুমিন মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়দের সাথে পরমানন্দে বাস করবেন। এখানে তারা কোন দুঃখ, কষ্ট, অভাব ও ভয় অনুভব করবেন না। জান্নাতে তারা যে আনন্দ ও সুখ লাভ করবেন ভাষায় তার বর্ণনা দেয়া অসম্ভব।

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন,

“আমার নেক বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখে নি, কোন কান শোনে নি এবং কোন মানব হৃদয় কল্পনাও করতে পারে নি।”

(আল-হাদিস)

জান্নাতের অধিবাসীদের জন্য পরম আনন্দের বিষয় হবে মহান আল্লাহর দর্শন ও সান্নিধ্য লাভ। প্রতিদিনই তাঁরা এ সৌভাগ্য লাভ করবেন। জান্নাতে তাঁদের সুখ হবে চিরস্থায়ী। জ্বরা-দুঃখ-রোগ-শোক মুক্ত হয়ে জান্নাতের অধিবাসীরা অনন্তকাল অসীম সুখে বসবাস করতে থাকবেন। দুনিয়ার ভাল কাজ ও সৎজীবন যাপনের এমন অসীম প্রতিদান পেয়ে জান্নাতীরা আল্লাহর প্রতি পরম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন। আল্লাহও তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।

পৃথিবীতে যারা ভাল কাজ করেছেন, আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলেছেন, প্রতিটি কাজ করার আগে আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার কথা ভেবেছেন, আখিরাতে তারাই অনন্ত সুখের এ জান্নাত লাভ করবেন।

See also  আখিরাত মানে কি, কাকে বলে? আখিরাতের জীবনের স্তরসমূহ? আখিরাতে বিশ্বাসের তাৎপর্য গুরুত্ব  প্রভাব ভূমিকা

কুরআন মাজীদে আছে,

“যে ব্যক্তি তার প্রভূর সামনে হিসাব নিকাশের জন্য দাঁড়াতে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলে তার ঠিকানা জান্নাত।”

(সূরা নাযিআত ৭৯:৪০-৪১)

কুরআন মাজীদ ও হাদীসে জান্নাতের আটটি স্তরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হল-

  1. জান্নাতুল ফিরদাউস;
  2. দারুল মাকাম;
  3. জান্নাতুল মাওয়া;
  4. দারুল কারার;
  5. দারুস সালাম;
  6. জান্নাতু আদন;
  7. দারুন নাঈম এবং
  8. দারুল খুলদ।

আমরা আল্লাহর হুকুম মেনে চলব এবং চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত লাভের জন্য চেষ্টা করব।

খ) সারসংক্ষেপ

জান্নাত মুমিন বান্দাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার এক অতুলনীয় পুরস্কার। সকল মুমিন আখিরাতে জান্নাতে অনন্ত সুখে চিরদিন বসবাস করবে। নেক আমলের পরিমাণ ও মান অনুসারে বেহেশতের বিভিন্ন স্তরে মুমিনদের স্থান হবে। জান্নাতুল ফিরদাউস সর্বশ্রেষ্ঠ বেহেশত বা বেহেশতের সর্বোচ্চ মাকাম।

(৩) জাহান্নাম

ক) পরিচয়

মীযানে পাপের পাল্লা যাদের ভারী হবে তাদের জন্য আল্লাহ চরম দুঃখের এক ভয়ঙ্কর বাসস্থান নির্মাণ করে রেখেছেন। এর নাম জাহান্নাম। এটি হল নরক বা চিরশাস্তির স্থান। একে নার বা দোযখও বলা হয়।

জাহান্নাম চির দুঃখের স্থান। পৃথিবীতে যারা ইমান আনেনি, আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলেনি, রাসূলুল্লাহ (স) এর আদর্শ অনুসরণ করেনি বরং খারাপ কাজ করেছে, মানুষকে ঠকিয়েছে, মানুষের অধিকার হরণ করেছে, আখিরাতে তাদের চিরস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে জাহান্নাম নির্বাচিত হবে।

জাহান্নামে শান্তি ও স্বস্তিঃ থাকবে না। এখানে থাকবে ভীষণ শাস্তি, ভয়ঙ্কর কষ্ট, অসীম দুঃখ। পাপী লোকদের জাহান্নামের আগুনে পোড়ান হবে। ভয়ঙ্কর সে আগুন।

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন,

“তোমাদের এ পৃথিবীর আগুন জাহান্নামের আগুনের একাত্তর ভাগের একভাগ মাত্র।’ এ আগুনে পাপীরা অনন্তকাল জ্বলতে থাকবে। তাদের শরীরের চামড়া আর গোশত ঝলসে খসে পড়বে। আবার পরিবর্তন করে নতুন চামড়া ও গোশত দেয়া হবে যাতে পোড়ার যন্ত্রণা শেষ না হয়। এমন সীমাহীন শাস্তির পরও জাহান্নামীরা মারা যাবে না। আবার তারা ভালোভাবে বাঁচতেও পারবে না।”

(আল-হাদিস)

জাহান্নামে পাপীরা প্রচ- পিপাসার্ত হবে। তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে গরম রক্ত ও পুঁজ মেশানো দুর্গন্ধযুক্ত অতি উত্তপ্ত পানীয় ‘হামীম।’ এখানে তারা পঁচা রক্ত ও পুঁজের সাগরে হাবুডুবু খাবে। তাদের প্রচন্ড ক্ষুধা লাগবে। খেতে দেয়া হবে ‘যাক্কুম’ নামের কাঁটাময় দুর্গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। এ খাবার তাদের ভয়ঙ্কর শাস্তিকে আরো বাড়িয়ে দেবে।

আখিরাতে ধনসম্পদ বা অন্য কোন কিছুর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। পাপীরা ভয়ঙ্কর যন্ত্রণায় মৃত্যু কামনা করবে। পূনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রার্থনা করবে। কিন্তু তাদের মৃত্যু হবে না, বরং শাস্তি আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে।

আল্লাহর মুমিন বান্দারা কখনোই জাহান্নামে যাবে না।

কুরআনে বলা হয়েছে,

“যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হবে এবং দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেবে, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা।”

(নাযিয়াত ৭৯:৩৭-৩৯)

জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার কাজ পৃথিবীতেই করে যেতে হবে। রাসূলুল্লাহ (স) যে দীন নিয়ে এসেছেন তার আলোকে জীবন পরিচালনা করলে, আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চললে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।

কুরআন মাজীদ ও হাদীসের বর্ণনা অনুসারে জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে। এগুলো হল-

  1. জাহান্নাম;
  2. হাবিয়াহ;
  3. জাহীম;
  4. সাকার;
  5. সাঈর;
  6. হুতামাহ এবং
  7. লাযা।

বস্তুত, আখিরাতে জান্নাত লাভ হল পরম সফলতা আর জাহান্নাম লাভ হল চরম ব্যর্থতা। সুতরাং আমরা আল্লাহর প্রতি ইমান আনব, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকব, তাঁর হুকুম অনুসারে জীবন পরিচালনা করব। তাহলে জাহান্নামের ভয়ঙ্কর জীবনের পরিবর্তে আমরা জান্নাতের চিরসুখী জীবন লাভ করতে পারব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page