Skip to content

 

বাংলা মোনাজাতের দোয়াসমূহ

বাংলা মোনাজাতের দোয়াসমূহ

(১) মোনাজাত কী বা কাকে বলে?

মুনাজাত আরবি শব্দ। মুনাজাত অৰ্থ দোয়া, প্ৰাৰ্থনা, পরস্পর চুপি চুপি কথা বলা ইত্যাদি। আদবের সাথে কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহ তা’আলার কাছে কোনো কিছু চাওয়া বা প্রার্থনা করাকে মুনাজাত বলে।

মুনাজাত আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল। আল্লাহ চান বান্দা যেন বেশি বেশি প্রার্থনা করে। মুনাজাত একা একা করা যায় আবার কয়েকজন মিলে একত্রিত হয়েও করা যায়। মুনাজাত আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও নবির উপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে শুরু করা উত্তম। কীভাবে মুনাজাত করতে হয় তা মহানবি (সা.) শিখিয়ে দিয়েছেন।

আমাদের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন সবকিছুর জন্য আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট মুনাজাত করব।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।”

(সূরা আল-মু’মিন, আয়াত ৬০)

মুনাজাত মহান আল্লাহর একটি পছন্দনীয় ইবাদাত। মহান আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধন হল মুনাজাত। আল্লাহ চান বান্দা যেন মুনাজাতের মাধ্যমে বেশি বেশি তাঁর কাছে প্রার্থনা করে। তিনি বান্দার মুনাজাত কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেন,

“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।”

(সূরা আল-মু’মিন, আয়াত ৬০)

আল্লাহ তা’আলা আমাদের রব। তিনিই সবকিছু আমাদের দান করেন। দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত নিয়ামত তাঁরই দান। সুতরাং আমাদের উচিত তাঁরই কাছে সবকিছুর জন্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ তা’আলার নিকট কিছু চাওয়ার মাধ্যম হলো মুনাজাত করা।

মুনাজাতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের চাহিদা জানাতে পারি। আল কুরআনে মুনাজাতমূলক বহু আয়াত রয়েছে। এ পাঠে আমরা এরূপ তিনটি মুনাজাতমূলক আয়াত শিখব ও অর্থ জানব। এরপর এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নিকট মুনাজাত করব।

(২) আটটি বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস

মহানবি (সা.) উম্মতের মহান শিক্ষক। তিনি বলেন,

“আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।”

(ইবনে মাজাহ)

তিনি মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। কোন পথের অনুসরণ করলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করতে পারবে তা তিনি হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহর কাছে কীভাবে মুনাজাত করতে হবে হাদিসের মাধ্যমে তা তিনি উম্মতকে শিখিয়েছেন। অসংখ্য মুনাজাতমূলক হাসি রয়েছে। এখানে আমরা দুটি মুনাজাতমূলক হাদিস অর্থসহ শিখব এবং এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট ভক্তিসহকারে মুনাজাত করব।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন সম্পর্কে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।”

(তিরমিযি)

মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন মানবতার মহান শিক্ষক। তিনি সর্বদাই মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন। কিসে মানুষের ভালো হবে, কী কাজ করলে মানুষ সফলতা লাভ করবে, তা দেখিয়ে দিতেন। দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভের নানা পন্থা তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন। এর একটি হলো মোনাজাত। তিনি জানতেন আল্লাহ তায়ালার নিকট মোনাজাত করার মাধ্যমে আমরা সার্বিক কল্যাণ লাভ করতে পারি। এজন্য তিনি আমাদের বহু মোনাজাত শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিসের কিতাবসমূহে মোনাজাতমূলক বহু হাদিস আমরা দেখতে পাই। এ পাঠে আমরা মোনাজাতমূলক তিনটি হাদিস শিখব।

নিম্নে মুনাজাতমূলক আটটি হাদিস উপস্থাপন করা হলো।

ক) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-১

“হে আল্লাহ! হে অন্তরসমূহ ফিরানোর মালিক! তুমি আমাদের অন্তরসমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও।”

(সহিহ্ মুসলিম)

খ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-২

“হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে মুনাফিকি থেকে, আমার আমলকে রিয়া থেকে, আমার চোখকে খিয়ানত থেকে, আর আমার জিহবাকে মিথ্যা থেকে পবিত্র কর। কেননা চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্পর্কে তুমি অবশ্যই অবগত।”

(বায়হাকি)

গ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-৩

“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সুস্থতা, পবিত্রতা, উত্তম চরিত্র এবং তাকদিরের উপর সন্তুষ্ট থাকার মন মানসিকতা কামনা করি।”

(বায়হাকি)

ঘ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-৪

“হে মহান আল্লাহ! আপনি যেভাবে আমাকে সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবে আপনি আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন। ”

(মুসনাদে আহমাদ)

ঙ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-৫

“হে মহান আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করুন, আমাকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।”

(মুসলিম)

চ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-৬

“হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীন তথা ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।”

(তিরমিযি)

ছ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-৭

“হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি সঠিক পথের দিশা, আল্লাহভীতি, চারিত্রিক নির্মলতা ও স্বচ্ছলতা।”

(মুসলিম)

মহানবি (সা.) তাঁর উম্মতকে অসংখ্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন যেগুলোর মাধ্যমে তারা আল্লাহর কাছে তাদের প্রার্থনা জানাবে। এই হাদিসটি তার মাঝে অন্যতম। এই হাদিসে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো বান্দা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। প্রথমটি হলো হেদায়াত বা সঠিক, সরল পথের সন্ধান। যে পথে চললে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে তাকওয়ার কথা। তাকওয়া হলো, সকল কাজ আল্লাহর ইচ্ছানুসারে সম্পাদন করা। তৃতীয়ত বলা হয়েছে উত্তম চরিত্রের কথা। উত্তম চরিত্র মানুষের মহামুল্যবান সম্পদ। আর সবশেষে বলা হয়েছে স্বচ্ছলতার কথা। এই চারটি বিষয় যদি কোনো মানুষের মাঝে পাওয়া যায় তাহলে সে ই দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হবে।

জ) বাংলা মোনাজাতের দোয়ার হাদিস-৮

“হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান এবং পবিত্র রিযিক প্রার্থনা করছি।”

(ইবন মাজাহ)

জ্ঞান মানুষের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু সব ধরনের জ্ঞান দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য উপকারী হয় না। কিছু জ্ঞান অর্জন কেবল সময় নষ্ট ছাড়া কোনো কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না। এজন্য মহানবি (সা.) আমাদেরকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন যেন আমরা আল্লাহর নিকট উপকারী জ্ঞান চাই। এমন জ্ঞান যা আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতকে সাফল্যমণ্ডিত করবে। একইসঙ্গে হাদিসে আল্লাহর নিকট পবিত্র রিযিক চাওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কারণ রিযিক পবিত্র না হলে বান্দার কোনো দোয়া আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন না। তাই আমরা আল্লাহর নিকট উপকারী জ্ঞান এবং পবিত্র রিযিক চাইব যেভাবে হাদিস শরিফে শেখানো হয়েছে।

উপরোক্ত মোনাজাতমূলক হাদিসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো চর্চার মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ লাভ করতে পারি। অতএব, আমরা অর্থসহ এ মোনাজাতগুলো শিখব। এরপর এগুলোর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকট মোনাজাত করব। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সর্বোত্তম সফলতা দান করবেন।

(৩) ছয়টি বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত

আমরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে এ পৃথিবীতে বেঁচে আছি। প্রতিনিয়ত আমরা আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত ভোগ করি। এসব নেয়ামতের শুকরিয়া করা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করলে মহান আল্লাহ অখুশি হন। পার্থিব উপকরণসমূহ পাওয়ার জন্য আমরা অনেক কষ্ট করে থাকি। মহান আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে এগুলো আমাদের দান করেন। দুনিয়া আখিরাতের সমস্ত নেয়ামতের মালিক মহান আল্লাহ। তাই এগুলো অর্জন করোর জন্য তাঁরই নিকটে প্রার্থনা করা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা’আলার নিকট কোনকিছু পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করাকে মুনাজাত বলে।

মুনাজাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। হাদিসে মুনাজাতকে ইবাদাতের সারবস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মুনাজাতের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআন মাজিদে মুনাজাতমূলক অনেক আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি মুনাজাতের আয়াত এখানে উল্লেখ করা হলো। আমরা এগুলো শিখব এবং এর অর্থ জানব। এর পর এগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দোয়া করব।

ক) বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত-১

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতের কল্যাণ দান করুন; আর আমাদেরকে অমির শাস্তি হতে রক্ষা করুন।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২০১)

প্রত্যেক মুমিন বান্দা বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুর পর পুনরায় তাকে জীবিত করা হবে এবং তাঁর কৃতকর্মের হিসাব নেয়া হবে। মৃত্যুর পরবর্তী এই সময়কে বলা হয় আখিরাত। আখিরাতের সময়কাল পৃথিবীর মতো অস্থায়ী নয়। বরং তা হবে অনন্ত, অসীম যার কোনো শেষ নেই। একজন মানুষের আখিরাত আনন্দময় হবে নাকি কষ্টের হবে তা নির্ভর করে দুনিয়ায় সে কী আমল করেছে তার উপর। কেউ যদি দুনিয়ায় ভালো কাজ করে, আল্লাহর আনুগত্য করে তাহলে তার আখিরাত সুন্দর হবে। অপরদিকে কেউ যদি দুনিয়ায় খারাপ কাজ করে তাহলে তাকে আখিরাতে শাস্তি পেতে হবে। পৃথিবী হলো মুমিন বান্দার পরীক্ষার ক্ষেত্র। এজন্য একজন মু’মিনের দুনিয়ার জীবন গুরুত্বপূর্ণ আবার আখিরাতের জীবনও গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন, তারা যেন শুধু দুনিয়ার কল্যাণ কামনা না করে। বরং দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ ও সফলতা চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে।

খ) বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত-২

“হে আমার প্রতিপালক, আপনি তাঁদের দুজনকে (বাবা ও মা) দয়া করুন। যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”

(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৪)

আমরা পৃথিবীতে এসেছি আমাদের বাবা ও মায়ের মাধ্যমে। তাঁরাই আমাদেরকে লালনপালন করে বড় করেছেন। যখন আমরা খুব ছোট ছিলাম, নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারতাম না, নিজেদের হাতে খেতে পারতাম না, তখন মা-বাবা আমাদেরকে প্রতিপালন করেছেন। তাঁরা নিজেরা শত কষ্ট সহ্য করেও আমাদেরকে সুখে শান্তিতে রাখার চেষ্টা করেছেন। নিজেদের সুখ-শান্তির কথা ভুলে গিয়ে তাঁরা আমাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেছেন। মা গর্ভধারণের কষ্ট সহ্য করেছেন। বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে আমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। এসবের কোনো বিনিময় এবং প্রতিদান দেয়া আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই দোয়াটি শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা যেন এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার কাছে মা বাবার জন্য কল্যাণ কামনা করি।

গ) বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত-৩

“হে আমার প্রতিপালকা আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন।”

(সূরা তা-হা, আয়াত ১১৪)

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অসংখ্য মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। সাগরে প্রকাণ্ড নীল তিমি, স্থলের বিশালদেহী হাতি আরো কত কিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি যে কত বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর প্রাণী সৃষ্টি করেছেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু সকল কিছুর উপরে মানুষকেই আল্লাহ তা’আলা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সকল সৃষ্টির উপর মানুষকে মর্যাদা দেয়ার একটিই কারণ- আর তা হলো মানুষের জ্ঞান ও বিবেক। মানুষ তার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে। আল্লাহর আনুগতা করতে পারে যা অন্য কোনো প্রাণির পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মহানবি (সা.) বলেন- সকল মুসলিমের জন্য আন অন্বেষণ করা ফরয। সকল জ্ঞানের মালিক মহান আল্লাহ। তিনিই একমাত্র জ্ঞানদাতা। তিনি যাকে খুশি তা দান করেন। তাই আয়াতে মানুষকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যেন তারা আল্লাহর কাছে আন বৃদ্ধির জন্য মুনাজাত করে। আমরা জ্ঞানার্জনে কোন অবহেলা করব না। সর্বদা উপকারী জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সকল জ্ঞানের উৎস মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করব।

ঘ) বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত-৪

“হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।”

(সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত ২৩)

সর্বপ্রথম এ মুনাজাত হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করে জান্নাতে বসবাস করার নির্দেশ দেন। জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে সকল নিয়ামত ভোগ করার অনুমতি দেন। শুধু একটি গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেন। কিন্তু আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) শয়তানের প্ররোচনায় ঐ নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেন। তাঁদের এ কাজের জন্য মহান আল্লাহ তাঁদেরকে বেহেশত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেন। দুনিয়ায় এসে আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন। তাঁরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নাকাটি করতে থাকেন। পরিশেষে আল্লাহ তা’আলা দয়াপরবশ হয়ে তাঁদের উপর্যুক্ত মুনাজাত শিক্ষা দেন। অতঃপর হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) এ মুনাজাতের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাঁদের দোয়া কবুল করেন এবং ক্ষমা করে দেন।

এ আয়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা নানারকম পাপ করে থাকি। আমরা আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করে থাকি। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত অপরাধসমূহ স্বীকার করা। অতঃপর এ মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রতি দয়া করবেন এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।

ঙ) বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত-৫

“হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ থেকে আমাদের প্রতি দয়া করো এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করো।”

(সূরা আল-কাহফ, আয়াত ১০)

মুনাজাতটি আসহাবে কাহফের যুবকগণ করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা সূরা কাহফে তাঁদের ঘটনা ও মুনাজাত উল্লেখ করেছেন। আমাদের প্রিয়নবি (সা.)-এর আগমনের কয়েক শ বছর পূর্বের ঘটনা। দাকইয়ানুস নামক এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিল। সে ইমানদারদের উপর খুব অত্যাচার করত। তার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কয়েকজন যুবক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেন। তাঁদের সাথে একটি কুকুরও ছিল। তাঁদেরকে আসহাবে কাহফ বলা হয়। তাঁরা গুহাতে আল্লাহ তা’আলার ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। গুহায় থাকাবস্থায় তাঁরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে এ মুনাজাত করেন। আল্লাহ তা‘আলাও তাঁদের এ দোয়া কবুল করেন।

পুণ্যবান ব্যক্তিরা কখনোই আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত ত্যাগ করেন না। শত অত্যাচারেও তাঁরা যথাযথভাবে মহান আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকেন। এ জন্য প্রয়োজনে নিজেদের ঘরবাড়ি, দেশ ত্যাগ করতেও পিছপা হন না। আমরাও তাঁদের মতো আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত করব। কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত ছাড়ব না। বরং কোনো অসুবিধা দেখা দিলে আমরা মুনাজাতমূলক এ আয়াতটি পাঠ করে আল্লাহ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব। ফলে তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন এবং আমাদের সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবেন।

চ) বাংলা মুনাজাতের দোয়ার আয়াত-৬

“হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।”

(সূরা ত্বোয়া-হা, আয়াত ২৫, ২৬, ২৭, ২৮)

মিসর দেশে ফিরাউন নামে এক বাদশাহ ছিল। সে ছিল খুবই অত্যাচারী, অহংকারী, দাম্ভিক এবং কুফরিতে চরমভাবে নিমজ্জিত। তার রাজ্য ছিল বিশাল এবং সৈন্য সংখ্যা ছিল অগণিত। বহু বছর ধরে তার শাসন চলে আসছিল। সে এতটাই দাম্ভিক ছিল যে, নিজেকে ‘সর্বোচ্চ প্রভু’ বলে দাবি করত। আল্লাহ তা‘আলা হযরত মুসা (আঃ) কে প্রেরণ করেন তার নিকট দ্বীন-ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তখন মুসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার কাছে এই দোয়াটি করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন। তাঁর বক্ষকে ইমান ও নবুয়াতের জন্য প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন, তাঁর দ্বীন প্রচারের কাজকে সহজ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর জিহ্বার জড়তাকে দূর করে দিয়েছিলেন, যাতে মানুষ তাঁর কথা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে।

আমরাও আল্লাহ তা’আলার নিকট দোয়া করব যেন তিনি আমাদের বক্ষকে ইমান, সৎকাজ ও জ্ঞানের জন্য প্রশস্ত করে দেন; লেখাপড়াসহ আমাদের সকল ভালো কাজকে সহজ করে দেন এবং আমাদের জিহ্বার জড়তাকে দূর করে দেন-যাতে আমরা সুন্দরভাবে মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারি, মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারি।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page