(১) সুরা আসর এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সূরা আল-আসর আল-কুরআনের ১০৩তম সূরা। এটি মক্কা শরীফে অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা মাত্র ৩টি।
পবিত্র কুরআনের ছোট সূরাসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম। তবে এ সূরার মর্ম ও তাৎপর্য অত্যন্ত ব্যাপক। এ সূরার প্রথমে আল্লাহ তা’আলা আসর বা মহাকালের শপথ করেছেন। এ জন্য এ সূরার নাম রাখা হয়েছে আল-আসর।
মাত্র তিন আয়াতের এই সূরাটি আসলে মানুষের জন্য কষ্টিপাথরের মতো। কষ্টিপাথর দিয়ে মূল্যবান ধাতুর বিশুদ্ধতা যাচাই করা হয়। এই সূরাটির মধ্য দিয়ে আল্লাহ সফল মানুষ যাচাই করার পথ বলে দিয়েছেন।
(১) sura asor in bangla
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) وَالْعَصْرِ ওয়াল ‘আসর। শপথ অপরাহ্নের; إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ ইন্নাল ইনছা-না লাফী খুছর। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত; إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি ওয়া তাওয়া-সাওবিল হাক্কি ওয়া তাওয়া-সাও বিস্সাবরি। কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের এবং উপদেশ প্রদান করে ধৈর্য্যের৷
(২) সূরা আসর বাংলা উচ্চারণ
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম 1. ওয়াল ‘আসর। 2. ইন্নাল ইনছা-না লাফী খুছর। 3. ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি ওয়া তাওয়া-সাওবিল হাক্কি ওয়া তাওয়া-সাও বিস্সাবরি।
(৩) সূরা আসর বাংলা অর্থ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) 1. শপথ অপরাহ্নের; 2. নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত; 3. কিন্তু তারা ব্যতীত, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সত্যের এবং উপদেশ প্রদান করে ধৈর্য্যের৷
(৪) surah al asr bangla uccharon o ortho shoho chobi
(৫) সূরা আল আসর উচ্চারণ অডিও
(৬) sura asor bangla uccharon video
(৭) সুরা আসর এর শানে নুযুল
তাফসীরে আযীযী এর বর্ণনা অনুযায়ী,
জাহিলিয়া যুগে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর সাথে কালাদাহ ইবনে উসায়েদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। কালাদাহ প্রায়ই তার নিকট যাতায়াত করত।
আবু বকর (রা.) ইমান গ্রহণের পর একদিন কালাদাহ ইবনে উসায়েদ তার নিকট এসে বলল, “হে আবু বকর! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? তোমার ব্যবসা-বাণিজ্যে তো ভাটা লেগেছে। আয়-রোজগারের পথ তো প্রায় বন্ধ। তুমি কোন ধারণায় নিমজ্জিত হয়েছ? নিজেদের ধর্মকর্মও হারিয়েছ এবং দুনিয়াও হারিয়েছ। তুমি এখন উভয় দিক দিয়ে পূর্ণরূপে লোকসানে নিপতিত।”
আবু বকর সিদ্দীক (রা.) বললেন, “হে বোকা! যে লোক আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসুলের অনুগত হয়ে যায়, সে কখনো লোকসানে নিপতিত হয় না। যারা পরকাল সম্পর্কে কোনোই চিন্তাভাবনা করে না মূলত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত, তারাই লোকসানে নিপতিত। যারা কেবল জাগতিক উন্নতি লাভের জন্যই সদা চিন্তামগ্ন ও ব্যস্ত থাকে, তারাই একুল-ওকুল উভয় কুলই হারায়।”
আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর কথার সত্যতা প্রমাণ এবং এ ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে এ সূরা অবতীর্ণ হয়।
(৯) সূরা আসর এর তাফসীর/ব্যাখ্যা
কুর’আনের সবচেয়ে ছোট সূরাগুলোর একটি সূরা আসর, যার বাক্য সংখ্যা মাত্র তিনটি।
প্রথমে কথাগুলোর সত্যতা আঁচ করতে আল্লাহ সময়ের শপথ করেছেন এবং তারপর আল্লাহ এককথায় বলে দিয়েছেন মানুষ মাত্রই ক্ষতির মধ্যে আছে।
এরপর তিনি তাদের কথা বলেছেন যারা এর ব্যতিক্রম, অর্থাৎ তারা ক্ষতিগ্রস্ত নয়। তারা যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন, ঈমানদার হিসেবে নিজেকে সেভাবে সামলে রাখেন যেভাবে আল্লাহ খুশি হন এবং একইসাথে অপরকে সেই পথে ডাকেন। তারা তাদের এই পথে অবিচল থাকেন এবং বিপদে এই পথকে আঁকড়ে রাখেন। এরাই বিপদমুক্ত, এরাই সফল।
সূরা আছরে আল্লাহ তা‘আলা মহাকালের (সময়ের) শপথ করে বলেছেন যে, সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, তবে চারটি গুণবিশিষ্ট মানুষ ব্যতীত। সেই চারটি গুণ হলো-
- ইমান,
- সৎকর্ম,
- পরস্পরকে সত্য অবলম্বন ও
- ধৈর্য ধারণের উপদেশ দান।
সূরা আল-আসরের প্রথম আয়াতে-
আল্লাহ তা’আলা সময় বা মহাকালের শপথ করেছেন। মানুষের জীবনে সময় অত্যন্ত মূল্যবান। কেননা, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। মানুষ খুব অল্প সময় এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকে। এ সময়ের মধ্যেই মানুষকে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।
সুতরাং সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। যারা দুনিয়াতে সময়ের সদ্ব্যবহার করবে এবং নেক আমল করবে পরকালে তারাই সফলতা লাভ করবে। তাই সময়ের শপথ করে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় আয়াতে-
আল্লাহ তা’আলা মানুষের স্বাভাবিক অবস্থার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই মানবজাতি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের এই ক্ষতি ও ধ্বংস সুস্পষ্ট। কেননা, তারা সময়ের সদ্ব্যবহার করে না, আল্লাহ তা’আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে না।
যারা এরূপ মনগড়াভাবে জীবনযাপন করবে, তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ, তারা যতক্ষণ জীবিত থাকে ততক্ষণ তাদের দিনরাত মেহনত ও পরিশ্রমের সাথে অতিবাহিত হয়। অতঃপর যখন মৃত্যুবরণ করে তখনও তাদের আরাম ও শান্তি নসীব হয় না। বরং তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়।
তৃতীয় ও শেষ আয়াতে-
আল্লাহ তা‘আলা ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য চারটি আমলের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ মানবজাতির মধ্যে যারা এ চারটি কাজ করবে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বরং তারা সফলতা লাভ করবে।
আর যারা দুনিয়াতে এ কাজগুলো করবে না, তারা অবশ্যই দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কাজগুলো হলো ইমান আনা, সৎকর্ম করা, সত্যের উপদেশ দেওয়া ও ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া।
উপরে উল্লিখিত চারটি কাজের মধ্যে প্রথম দুটি কাজ ব্যক্তিগত-
অর্থাৎ প্রথমে ইমান আনতে হবে। তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
এরপর দ্বিতীয় কাজ হলো ভালো কাজ করা। আল্লাহ তা’আলা যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন তা পালন করতে হবে। আর তিনি যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এভাবে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য করার নামই নেক কাজ।
এবং শেষের কাজ দুটি সামাজিক। অর্থাৎ একা একা এ কাজ দুটি করা যাবে না-
এর প্রথমটি হলো সমাজের মানুষকে সত্যের উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ মানুষকে সত্য পথের দিকে ডাকা। তাদের নেক কাজে উৎসাহিত করা, অন্যায় কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা ইত্যাদি।
সামাজিক দায়িত্বের শেষটি হলো মানুষকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া। অর্থাৎ বালা-মুসবিত ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য, শরিয়তের হুকুম-আহকাম পালন করতে ধৈর্য, পাপাচার বর্জন করতে ধৈর্য, কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া।
মূলত এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা মানুষকে পরীক্ষা করেন। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে হতাশ ও নিরাশ হওয়া যাবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে, সত্যের পথে অবিচল থাকতে হবে এবং আল্লাহ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
(১০) sura asor er sikkha
- ১. সময় অত্যন্ত মূল্যবান। যারা দুনিয়াতে সময়ের সদ্ব্যবহার করবে এবং নেক আমল করবে পরকালে তারাই সফলতা লাভ করবে।
- ২. সকল মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, তবে চারটি গুণবিশিষ্ট মানুষ ব্যতীত। সেই চারটি গুণ হলো- ইমান, সৎকর্ম, অপরকে সত্যের উপদেশ এবং সবরের উপদেশ দান।
- ৩. আমরা ইমান আনব এবং নেক কাজ করব। কোনো প্রকার অন্যায়-অত্যাচার ও অনৈতিক কাজ করব না।
- 8. আমাদের বন্ধুবান্ধব, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে সত্য ও সুন্দরের দিকে আহ্বান করব। সবাইকে উত্তম চরিত্রবান ও নীতিবান হতে উৎসাহ দেবো।
- ৫. আমরা সত্যের পথে অবিচল থাকব, বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করব। হতাশ হয়ে কখনও অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করব না।
- ৬. আমরা পরস্পরকে সৎ কাজে উৎসাহ ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেবো।
একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে,
“রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবীগণের মধ্যে দুই ব্যক্তি ছিল, তারা পরস্পর মিলিত হলে একজন অন্যজনকে সূরা আসর পাঠ করে না শুনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না।”
(তাবরানী)
ইমাম শাফিয়ী (রহ.) বলেছেন,
“যদি মানুষ কেবল এ সূরাটি সম্পর্কে চিন্তা করত, তবে এটি তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।”
(ইবনে কাসির)
অর্থাৎ এ সূরার অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে পারলে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের পথ লাভ করত। সুতরাং আমরা এ সূরাটি অর্থসহ শিখব। অতঃপর এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানব এবং তদানুযায়ী আমল করব।
আলোচিত/উত্তরিত অনুসন্ধানসমূহ: সূরা আসর, সুরা আসর, sura asor, সূরা আসর বাংলা, surah al asr bangla, সূরা আসরের তাফসীর, sura asor bangla, সুরা আসরের তাফসীর, সূরা আল আসর, সুরা আসর বাংলা অর্থ সহ, সূরা আসর বাংলা অর্থ, সূরা আসর এর তাফসীর, সূরা আসর এর ব্যাখ্যা, sura asor in bangla, সূরা আসর এর বাংলা অর্থ, সূরা আল আসর এর তাফসীর, সূরা আছরের তাফসীর।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।