Skip to content

 

ওযু করার নিয়ম

ওযু করার নিয়ম

বিসমিল্লাহি রহমানির রহিম। আজকের ইসলামিক আলোচনায় আপনাকে স্বাগতম।

আপনি যদি ওযু করার নিয়ম, ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ ওযুর ফরজ ৪টি কি কি, ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি ইত্যাদি বিষয়গুলো জানাতে চান, তাইলে এই পোষ্টটি আপনার জন্যই।

তো চলুন ওযু করার নিয়মসমূহ আমরা জেনে নিই-

(১) ওযু শব্দের অর্থ কি ও ওযু কাকে বলে?

ওযু আরবি শব্দ। এর অর্থ পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও উজ্জ্বলতা।

অজু ও দৈহিক পবিত্রতার অন্যতম মাধ্যম। ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজু করা শর্ত।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়- পবিত্ৰতা অর্জনের জন্য শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী মুখমণ্ডল, দুই হাত কনুইসহ) ও দুই পা (টাখনুসহ) ধৌত করা এবং মাথা মাসাহ্ করার নাম ওযু। এ চারটি কাজ ওযুর ফরজ। তবে কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ইত্যাদি ওযুর সুন্নাত।

(২) ওযু করার নিয়ম

অজু কীভাবে করতে হয়, ওযু করার নিয়ম মহানবী (সা.) সাহাবিদের শিখিয়ে গেছেন।

নিম্নে মাত্র ৭টি ধাপে, রাসূল (সা.) এর সুন্নত অনুযায়ী, সম্পূর্ণ ওযু করার নিয়ম তালিকা আকারে, ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হলো-

  1. ওযু করার জন্য প্রথমে পবিত্রতার নিয়তে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হবে।
  2. এরপর দুই হাতে পানি নিয়ে কবজি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করতে হবে। এক হাতের আঙুল দিয়ে অন্য হাতের আঙুল খিলাল করতে হবে।
  3. এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে। গড়গড়া করে কুলি করা উত্তম। তবে রোযাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না।
  4. তারপর নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক পরিষ্কার করতে হবে। তারপর পুরো মুখমণ্ডল তিন বার এমনভাবে ধৌত করতে হবে যাতে চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। যাদের ঘনদাড়ি আছে, তারা আঙুল দিয়ে দাড়ি খিলাল করবে।
  5. এরপর ডান হাত কনুইসহ তিন বার ধৌত করবে। একই সঙ্গে ডান হাত দিয়ে বাম হাত কনুইসহ তিন বার ধৌত করবে। হাতে ঘড়ি, আংটি ইত্যাদি থাকলে তা এমনভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে, যাতে সবখানে ভালোভাবে পানি পৌঁছে যায়।
  6. অতঃপর দুই হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করবে।
  7. সবশেষে দুই পা টাখনুসহ ভালোভাবে ধৌত করতে হবে যাতে একটু জায়গাও শুকনো না থাকে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: যদি ওযু করার স্থানে ক্ষত বা ব্যান্ডেজ থাকে আর রোগী যদি আশঙ্কা করে যে, পানি লাগলে ক্ষতস্থানের ক্ষতি হবে, এমতাবস্থায় ঐ স্থানের চারপাশে পানি দিয়ে বৌত করে শুধু ব্যান্ডেজের ওপরে মাসাহ করবে। তবে ক্ষতস্থান শুকিয়ে গেলে অবশ্যই পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।

ওযুর কাজগুলো পরপর করে যেতে হবে। অর্থাৎ এক অঙ্গের পর অন্য অঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে ধৌত করতে হবে। অনেকক্ষণ থেমে থেমে করা যাবে না।

(৩) ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ

যেসব কারণে ওযু ভঙ্গ হয় তা নিম্নরূপ-

  • প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হলে।
  • শরীরের কোন স্থান হতে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে গেলে।
  • মুখভর্তি বমি হলে। থুথু ও কাশি বাতীত বমির সঙ্গে রক্ত, পুঁজ, খাদ্য বা অন্যকিছু বের হলেও শুযু ভেঙে যাবে।
  • থুথুর সঙ্গে বেশি পরিমাণ রক্ত এলে।
  • শুয়ে অথবা হেলান দিয়ে ঘুমালে।
  • নেশাগ্রস্ত হলে।
  • বেহুঁশ হলে।
  • নামাজে অট্টহাসি দিলে।

(৪) ওযুর ফরজ ৪টি কি কি?

যে কাজটি আল্লাহর তরফ হতে সুনিশ্চিতরূপে আদেশ করা হয়েছে তাকে ফরজ বলে।

ওযুর ফরয চারটি। এ চারটির মধ্যে কোনো একটি বাদ পড়লে ওযু হবে না। যথা-

  1. সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধৌত করা।
  2. উভয় হাত কনুইসহ একবার ধৌত করা।
  3. মাথার চারভাগের একভাগ একবার মাসাহ্ করা।
  4. উভয় পা টাখনুসহ একবার ধৌত করা।

(৫) ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি?

চারটি ফরজ ব্যতীত ওযুতে বাকি অন্যান্য যত কাজ দলীল দ্বারা প্রমাণিত, সেগুলোই হলো সুন্নাত।

নিম্নে ওযুর ২০টি সুন্নত তুলে ধরা হলো-

  1. অজুর শুরুতে মনে মনে নিয়ত করা।
  2. বিসমিল্লাহ পড়া।
  3. ডান অঙ্গ আগে ধৌত করা।
  4. উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া।
  5. মিসওয়াক করা।
  6. কুলি করা।
  7. নাকে পানি দেওয়া।
  8. রোজাদার না হলে ভালোভাবে কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়া।
  9. প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধোয়া।
  10. দাড়ি খিলাল করা।
  11. আঙুলসমূহ খিলাল করা।
  12. পুরো মাথা মাসেহ করা।
  13. উভয় কানের ভেতরে ও বাইরে মাসেহ করা।
  14. মাথার সামনের অংশ থেকে মাসেহ শুরু করা।
  15. গর্দান মাসেহ করা।
  16. ধোয়ার সময় অঙ্গগুলোকে ঘষেমেজে ধোয়া।
  17. একটি অঙ্গ শুকানোর আগেই পরের অঙ্গ ধোয়া।
  18. অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমণ্ডল, তারপর হাত ধোয়া, এরপর মাথা মাসেহ করা এবং পা ধোয়া।
  19. বাঁ হাত দিয়ে প্রথমে ডান হাত ধোয়া এবং বাঁ হাত দিয়ে প্রথমে ডান পা ধোয়া।
  20. ওযূর অঙ্গগুলো তিন বার করে ধৌত করা।

(৬) ওযুর গুরুত্ব

ওযু ব্যতীত সালাত আদায়, কাবাঘরের তাওয়াফসহ বেশ কিছু ইবাদাত করা যায় না।

ভালোভাবে ওষু করলে মন প্রফুল্ল থাকে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে। ইবাদাতেও একাগ্রতা আসে।

ওযুর ফজিলত সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেন,

“আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে চিনতে পারবো।’ জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আপনি কীভাবে আমাদের চিনবেন? নরি করিম (সা.) উত্তরে বললেন, ‘ওযুর ফলে আমার উম্মতের মুখমণ্ডল এবং হাত-পা উজ্জ্বলতায় চকচক করবে। তাতেই আমি আমার উম্মতকে চিনতে পারব।”

(বুখারি ও মুসলিম)

তো আজকের মত এখানেই বিদায়। আশা করি আমরা ওযু করার নিয়ম, ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ ওযুর ফরজ ৪টি কি কি, ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে ও বুঝতে পেরেছি।

আমরা ওযু করার নিয়মগুলো মেনে উত্তম রূপে ওযু করব ও শুধু মহান বব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্যই ইবাদত করুব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।

Queries discussed: ওযু শব্দের অর্থ কি, ওযু কাকে বলে, ওযু করার নিয়ম, ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ ওযুর ফরজ ৪টি কি কি, ওযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি, ওযুর গুরুত্ব।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page