(১) ইবাদত কাকে বলে?
‘ইবাদাত’ আরবি শব্দ। এর অর্থ আনুগত্য করা, দাসত্ব করা।
ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদাত। সালাত, সাওম, যাকাত, হজ ইত্যাদি যেমন ইবাদাত, তেমনি জীবনের প্রতিটি কাজ ইসলামি বিধিবিধান মেনে পালন করাও ইবাদাত।
আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁর প্রেরিত রাসুলের দেখানো পথে জীবন পরিচালিত করাকে ইবাদাত বলে।
আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদাতের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়ত সমর্থিত যেকোনো উত্তম কাজই ইবাদাত।
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের লালন-পালন করেন। আমাদের জীবন, মৃত্যু সবই তাঁর হাতে। তিনি আমাদের জন্য এ মহাবিশ্বকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আকাশ-মাটি, চাঁদ-সূর্য, ফুল-ফল, নদী-নালা সবই তিনি আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমরা এসব উপভোগ করি। আল্লাহর দেওয়া অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করার পর আমাদের এর শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করতে হবে। নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর দেওয়া বিধান মেনে চলার নামই ইবাদাত।
মহান আল্লাহ পৃথিবীর সকল কিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য।
এ সম্পর্কে কুরআন মাজিদে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“আর আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছি।”
(সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬)
আল্লাহ তা’আলা যেহেতু মানুষকে ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন, তাই সব সময় তাঁর ইবাদাতে মশগুল থাকা মানুষের কর্তব্য।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সবসময় কি ইবাদাত করা সম্ভব? হ্যাঁ দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই ইবাদাত করা সম্ভব।
যেমন- আমরা খেতে বসলে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে যাওয়া শুরু করি, তাহলে যতক্ষন খাওয়ার মধ্যে থাকবো, ততক্ষণ আল্লাহর রহমত পেতে থাকবো। এটিও একটি ইবাদাত।
পড়ার সময় যদি “বিসমিল্লাহ’ বলে পড়া শুরু করি, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত লেখাপড়া করব, ততক্ষণই তা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে।
একজন অন্ধলোক রাস্তা পার হতে পারছেন না, তাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলে তা-ও আল্লাহর নিকট ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। এভাবে সব সময়ই আমরা ইবাদাত করতে পারি।
ইবাদাতের অংশ হিসেবে আমরা ভালো কাজ করতে পারি। অন্যকে ভালো কাজ করার পরামর্শ দিতে পারি। এতে উভয়ই সমান সওয়াব পাবো।
এ প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পরামর্শ বা সন্ধান দেবে, সে ঐ কাজটি সম্পাদনকারীর সমান সাওয়াব পাবে।”
(মুসলিম)
ইবাদাত করলে আল্লাহ খুশি হন। এতে দুনিয়ার জীবন সুখময় হয়। পরকালে জান্নাত লাভ করা যায়। আমরা আল্লাহর ইবাদাত করব, আল্লাহর পথে জীবনকে পরিচালিত করব। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারব।
(২) ইবাদত কত প্রকার?
ইবাদাতকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- ইবাদাতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদাত: শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে যে ইবাদাত করা হয়, তা হলো ইবাদাতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদাত। যেমন- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা ও রমযান মাসে রোযা রাখা।
- ইবাদাতে মালি বা আর্থিক ইবাদাত: অর্থ বা সম্পদ দ্বারা যে ইবাদাত করা হয় তাকে বলা হয় ইবাদাতে মাগি বা আর্থিক ইবাদাত। যেমন- যাকাত দেওয়া, সাদকা ও দান খয়রাত করা ইত্যাদি।
- ইবাদাতে বাদানি ও মালি বা শরীর ও অর্থ উভয়ের সংমিশ্রণে ইবাদাত: উল্লিখিত দুই প্রকার ইবাদাত ছাড়াও এমন কিছু ইবাদাত আছে যা শুধু শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে কিংবা শুধু অর্থ দিয়ে সম্পন্ন করা যায় না; বরং শরীর এবং অর্থ উভয়ের প্রয়োজন হয়। যেমন- হজ করা।
(৩) দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলনীয় কিছু ইবাদাত
ইসলামি জীবনব্যবস্থায় ইমান গ্রহণের পরপরই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায) আদায়, রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন, সামর্থ্যবান হলে হজ্জ পালন এবং যাকাত প্রদান কর বা অত্যাবশ্যক ইবাদাত। এগুলো তো পালন করতেই হবে। এর বাইরেও অনেক ভালো কাজ আছে যেগুলো পালনের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় উম্মত হিসেবে গণ্য হতে পারি। এবার এসো, দৈনন্দিন জীবনে পালন করা হয় এমন কিছু ইবাদাত সম্পর্কে জেনে নিই।
সালাম আদান-প্রদান:
সালাম হলো ইসলামি অভিবাদন। সালামের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। পরস্পরের দেখা সাক্ষাত হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থাৎ ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’ এর মাধ্যমে অপরের কল্যাণ কামনা করা হয় এবং অনুরূপভাবে ‘ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম’ বলে সালামের জবাব দেওয়া হয়।
মুসাফাহা:
মুসাফাহা শব্দের অর্থ হাতে হাত মেলানো। কোনো সাক্ষাৎকারীর হাত ধরে অভ্যর্থনা জানানোর নাম ‘মুসাফাহা’। ‘মুসাফাহা উভয় হাতে করতে হয়।
মু’আানাকা:
মু’আানাকা অর্থ গলায় গলা মেলানো বা কোলাকুলি। কোনো ব্যক্তির সাথে দীর্ঘদিন পর বা সফর থেকে ফিরে আসার পর সাক্ষাৎ হলে কোলাকুলি করা সুন্নত। কোলাকুলিকারী উভয়ে গলা মিলাবে। কোলাকুলির মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত হয় এবং হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়।
কুরআন তিলাওয়াত:
কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত অনেক। কুরআন তিলাওয়াত করা হলো নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদাত। কুরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহ তা’আলা খুশি হন। হাদিসে বর্ণিত আছে, পবিত্র কুরআনের প্রতিটি হরফ (অক্ষর) তিলাওয়াতের জন্য ১০টি করে সাওয়াব বা পূণ্য লেখা হয়। (তিরমিজি)
তাসবিহ পাঠ:
তাসবিহ অর্থ পবিত্রতা ঘোষণা করা, প্রশংসা করা, মহিমা ও গুণগান বর্ণনা করা ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলার প্রশংসামূলক বাক্যকে তাসবিহ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি হলো তাসবিহ। তাসবিহ পাঠ অত্যন্ত পুণ্যের কাজ।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।