Skip to content

 

আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি? আখলাকে হামিদাহ উদাহরণ

আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি, আখলাকে হামিদাহ উদাহরণ

(১) আখলাকে হামিদাহ অর্থ কি?

আখলাক অর্থ চরিত্র, স্বভাব। আর হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয়। সুতরাং আখলাকে হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয় চরিত্র, সচ্চরিত্র।

(২) আখলাকে হামিদাহ কী/কাকে বলে?

মানবজীবনের উত্তম গুণাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র বলে।

আখলাকে হামিদাহ বলতে মানুষের দৈনন্দিন কাজ কর্মের মাধ্যমে যেসব উত্তম আচার-ব্যবহার, চালচলন এবং স্বভাবের প্রকাশ পায় সেসবের সমষ্টিকে বোঝায়। একে হুসনুল খুলুক ও বলা হয়। যেমন- পরোপকারিতা, শালীনতাবোধ, সৃষ্টির সেবা,আমানত রক্ষা, শ্রমের মর্যাদা, ক্ষমা, ধৈর্য, সততা, দেশপ্রেম, সমাজসেবা প্রভৃতি ইত্যাদি। এ সকল চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি সমাজে নন্দিত ও সম্মানিত।

(৩) আখলাকে হামিদাহ উদাহরণ

ক) ধৈর্য

i) পরিচয়

ধৈর্য এর আরবি প্রতিশব্দ ‘সবর’ (সা)। যার অর্থ ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, বিরত রাখা ইত্যাদি।

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে সহিষ্ণুতার সাথে আল্লাহর বিধান মোতাবেক সকল কর্তব্য পালন করাকে ধৈর্য বলে।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ধৈর্য বিশ্লেষণ করলে এর ৩টি বিশেষ দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে-

  1. অবৈধ ও হারাম বস্তু থেকে নিজের নফস বা প্রবৃত্তিকে বিরত রাখতে ধৈর্যধারণ করতে হয়।
  2. আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্যে ধৈর্যধারণ করতে হয়।
  3. যেকোনো বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করতে হয়।

ii) তাৎপর্য

ধৈর্য মানবজীবনের একটি মহৎ গুণ। এটি মানবজীবনের সফলতার চাবিকাঠি। ধৈর্যের অনুশীলন ছাড়া ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না।

ধৈর্যধারণ করা খুবই কঠিন কাজ তথাপি সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য তা করা অপরিহার্য। সমাজ জীবনে শান্তি শৃঙ্খলা ও কল্যাণময় জীবনযাপনের জন্য ধৈর্যের (সবরের) গুরুত্ব অপরিসীম।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে অফুরন্ত প্রতিদান দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“অবশ্যই ধৈর্যশীলগণকে তাদের প্রতিদান অগণিতভাবে দেওয়া হবে।”

(সূরা আয্-যুমার, আয়াত -১০)

ধৈর্যের বিপরীত হচ্ছে অধৈর্য। অধৈর্য মানুষকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে জীবনে চলার পথে মানুষকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে।

মানুষের জীবনে আসে সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদ, সফলতা-বিফলতা ও জয়-পরাজয়। এসব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণের প্রয়োজন হয়। বিপদে যেমন সুদিনের আশায় ধৈর্যধারণ করতে হয়, তেমনি সুদিনে আত্মহারা না হয়ে ধৈর্যধারণ করতে হয়।

সুখশান্তি প্রাপ্তিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে, জীবনে যাঁরা বড় হয়েছেন তাঁরা সবাই ছিলেন ধৈর্যশীল।

বিখ্যাত নবি হযরত ইবরাহিম (আঃ) ছিলেন ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক। জালিম শাসক নমরুদের মূর্তি পূজার বিরোধিতা করায় তিনি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তিনি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে সাহায্য চান নি।

এমনিভাবে হযরত আইয়ুব (আঃ)ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর দেহে পচন ধরেছিল। শরীর থেকে গোশত খসে পড়েছিল। আত্মীয়স্বজন তাঁকে ত্যাগ করেছিল। তাঁর সন্তানাদি মারা গিয়েছিল। তাঁর ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এমন কঠিন মুহূর্তেও তিনি ধৈর্যহারা হন নি।

আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ও ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর ধৈর্য ছিল অতুলনীয়। তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তবু ধৈর্য হারান নি। সকল বিপদেই তিনি ছিলেন অটল ও অবিচল।

শরিয়তের বিধান পালন করতেও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, রমযান মাসের সিয়াম পালন, প্রচুর অর্থ ব্যয় করে হজ সম্পাদন, সঞ্চিত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর ধৈর্যধারণ করতে হয়।

এমনিভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বিভিন্ন স্তরে ধৈর্যধারণের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা সকল বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করব। বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করব।

আমরা ধৈর্যশীল হব।

খ) ভ্রাতৃত্ব

উয়াত শব্দের আভিধানিক অর্থ ভ্রাতৃত্ব। পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্ব বলে।

মানুষের মাঝে এ হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা বিভিন্নভাবে গড়ে ওঠে।

ভ্রাতৃত্বকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-

  1. ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব,
  2. বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং
  3. ইসলামি ভ্রাতৃত্ব।

i) ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব

একই পিতার ঔরসে বা একই মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করার কারণে যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয় তাকে ঔরসজাত ভ্রাতৃত্ব বলে।

See also  আমানত অর্থ, কী, কাকে বলে? আমানত রক্ষার গুরুত্ব

ii) বিশ্বভ্রাতৃত্ব

পৃথিবীর সকল মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ)। এ কারণে বিশ্বের সকল মানুষই ভাই ভাই। ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে মানুষের আকার-আকৃতি, স্বভাব-প্রকৃতি এবং বর্ণ ও ভাষার মধ্যে ভিন্নতা দেখা দেয়। আর এভাবে মানুষ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবু তারা পরস্পর ভাই ভাই। কারণ তারা সবাই এক আদম (আঃ) হতে সৃষ্টি।

মহান আল্লাহ বলেন,

“হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩)

রাসুল (সাঃ) বলেছেন,

“তোমরা প্রতেকেই আদম (আঃ) হতে এবং আদম মাটি হতে সৃষ্টি।”

(বুখারি)

এ আয়াত ও হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতে সকল মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।

iii) ইসলামি ভ্রাতৃত্ব

আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম, ইসলামের মূলবাণী-আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল। যারা এই কালিমায় বিশ্বাসী তারা যেকোনো বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও অঞ্চলের অধিকারী হোক না কেন, তারা ইসলামি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নিশ্চয়ই মুমিনগণ ভাই ভাই।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১০)

হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন,

“মুসলমান মুসলমানের ভাই।”

(বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। ইসলামে উঁচু-নিচু, সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর বিশ্বের সকল মুসলমান পরস্পরের ভাই। একই দীনসূত্রে আবদ্ধ।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“অনারবগণের উপর যেমন আরবগণের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি আরবগণের উপরও অনারবগণের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।”

(বিদায় হজের ভাষণ)

ইসলামি ভ্রাতৃত্ব এতই সুদৃঢ় যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) পৃথিবীর সকল ইমানদারগণকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন। দেহের কোনো একটি অঙ্গে অসুখ হলে যেমন পুরো দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তেমনি পৃথিবীর কোনো একপ্রান্তে একজন মুসলিম বিপদে পতিত হলে সকল মুসলমানের অন্তর ব্যথিত হয়।

কোনো মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। এমনকি যদি কখনো পরস্পরের মধ্যে কোনো কলহ সৃষ্টি হয় তখন অপর মুসলমান ভাইয়েরা তা মিটিয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। কোনো মুসলমান নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অপর মুসলমান ভাইয়ের জন্যেও তা পছন্দ করবে অন্যথায় সে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে না।

প্রিয় নবি (সাঃ) বলেন,

“মুমিনগণ পরস্পর মিলে একটি ইমারতস্বরূপ, এর এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে রাখে।”

(বুখারি ও মুসলিম)

আমরা পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ থাকব। সুখে-দুঃখে একে অপরের সঙ্গে শরিক থাকব।

গ) নারীর মর্যাদা

i) পরিচয়

ইসলামে নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর আদি পুরুষ হযরত আদম (আঃ) এবং আদি নারী বিবি হাওয়া (আঃ)। আর এ দুইজন থেকে পৃথিবীর সকল নর-নারীর সৃষ্টি। ইসলামে নর ও নারী উভয়ের সমমর্যাদা স্বীকৃত। মাতা, কন্যা, ভগ্নী, স্ত্রী প্রভৃতি হিসেবে সমাজে নারীদের যে বিশেষ অধিকার ও স্থান রয়েছে তা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করলে নারীর মর্যাদা সমুন্নত হবে।

ii) ইসলামে নারীর মর্যাদা

ইসলাম একমাত্র ধর্ম যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য না করে নারীকে পুরুষের সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন আরব সমাজে নারীর অবস্থা ছিল করুণ। সেখানে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হতো। কোনো কোনো সম্প্রদায় কন্যাসন্তানকে জীবিত কবর দিত।

কুরআন মজিদে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

“তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কত নিকৃষ্ট।”

(সূরা আন-নাহল, আয়াত ৫৮-৫৯)

মহানবি (সাঃ)-এর আবির্ভাবের পর নারী ফিরে পায় স্বীয় মর্যাদা।

ইসলামে বলা হয়েছে,

“মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।”

(নাসায়ি)

নবি করিম (সাঃ)-এর একটি হাদিসে পিতা অপেক্ষা মায়ের অধিকার বেশি বলে উল্লেখ আছে। আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে নারী পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারী।

See also  মিতব্যয়িতা কী, কাকে বলে? মিতব্যয়িতার গুরুত্ব

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নিশ্চয়ই আমি নষ্ট করে দেই না তোমাদের মধ্য থেকে কোনো আমলকারীর আমলকে, সে পুরুষই হোক আর নারীই হোক, তোমরা একে অপরের অংশ।”

(সূরা আলে ইমরান, ১৯৫)

ইসলামে স্বামীর সংসারে স্ত্রীর বিশেষ মর্যাদা স্বীকৃত। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের ভূষণ আর তোমরা (স্বামীরা) তাদের ভূষণ।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)

মহান আল্লাহ আরও ঘোষণা করেন,

“নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের।”

(সূরা আল- বাকারা, আয়াত ২২৮)

নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার ব্যাপারে মহানবি (সাঃ) বিদায় হজের ভাষণে বলেন,

“তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে তাদের গ্রহণ করেছ।”

(মুসলিম)

সম্পত্তি লাভের বেলায়ও ইসলাম নারীকে পিতা ও স্বামীর উভয়ের সম্পত্তির অধিকারিণী করেছে। প্রয়োজনীয় বিদ্যার্জন এবং অর্থ উপার্জনে ইসলাম নারীদের অনুমতি দান করেছে।

আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারে দেখা যায় যে, পিতা-মাতার ইনতিকালের পর উত্তরাধিকারসূত্রে যা প্রাপ্য তা নারীদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এ ধরনের কাজ কুরআন সুন্নাহর আলোকে হারাম। যারা এরূপ করবে পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

ঘ) সমাজসেবা

i) পরিচয়

সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে স্বেচ্ছায় গৃহীত কাজকে সমাজসেবা বলে। ব্যাপক অর্থে মানবকল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য গৃহীত সকল কর্মসূচিই সমাজসেবা নামে পরিচিত।

ii) তাৎপর্য

সমাজে নানা শ্রেণি ও পেশার লোক বাস করে। তারা সকলে সমান নয়। তাদের সুযোগ-সুবিধাও সমান নয়। কেউ বিপুল সম্পদের অধিকারী আবার কেউ কপর্দকহীন। সম্পদশালী ব্যক্তিগণ অভাবী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও তাঁদের সম্পদ ব্যয় করবে। সমাজের অবহেলিত মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠান গড়বে। এটাই ইসলামের নির্দেশ।

মহান আল্লাহ বলেন,

“এবং তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।”

(সূরা আয্-যারিয়াত, আয়াত ১৯)

অর্থশালী ব্যক্তি সমাজের অবহেলিত মানুষের কল্যাণে এমন প্রতিষ্ঠান গড়বে, যে প্রতিষ্ঠানে অভাবী লোকেরা কাজ করে তাদের আর্থিক সমস্যার সুরাহা করবে। বাঁচার অবলম্বন খুঁজে পাবে। গ্রামের উন্নয়নের বিরাট বাধা দূর করার জন্য গ্রামে-গঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সমাজসেবামূলক কাজ।

সমাজকে অশিক্ষা ও নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে বলেন,

“পাঠ করুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।”

(সূরা আল-আলাক, আয়াত ১)

হাদিসে বলা হয়েছে,

“জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।”

(ইবনে মাজাহ ও বায়হাকি)

সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকার উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলে সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে। সমাজ সংশোধনমূলক প্রতিটি কার্যক্রমই সমাজসেবার অন্তর্ভুক্ত। সমাজে কোনো বিশৃঙ্খলা বা গোলযোগ সৃষ্টি হলে তা দূর করতে হবে। কারণ বিশৃঙ্খলা সমাজের পরিবেশকে নষ্ট করে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“ফিত্না (বিশৃঙ্খলা) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯১)

সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করা, পরস্পরের কলহ ও দ্বন্দ্ব মেটানো সমাজসেবার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও।”

(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত ৯) 

সর্বস্তরের জনগণের উপকারে আসে এমন সব কাজের অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই করা দরকার। যেমন- ভাঙা রাস্তা মেরামত করা, নতুন রাস্তা নির্মাণে সাহায্য করা, পুল-সাঁকো নির্মাণ করা, রুগ্‌ণ ব্যক্তির সেবা করা, আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, রাস্তার পাশে ছায়াদার বৃক্ষ রোপণ করা, বৃক্ষ সংরক্ষণ করা ইত্যাদি।

জনসেবা দ্বারা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য লাভ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“আল্লাহ বান্দাকে ততক্ষণ সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে।”

(মুসলিম)

আরবিতে একটি বাক্য প্রচলিত আছে,

“জাতির নেতা তিনিই যিনি তাদের সেবক।”

(প্রবাদ বাক্য)

সমাজ সেবা মানবিক দায়িত্ব। আমরা সমাজের সেবা করব। সমাজকে ভালো করে গড়ে তুলব। সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করব। মানব সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সমাজসেবা করব।

ঙ) দেশপ্রেম

i) পরিচয়

জন্মভূমির প্রতি মানুষের অন্তরে একটি স্বাভাবিক আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং ভালোবাসা জন্মায়। ক্রমান্বয়ে এ আকর্ষণ বা ভালোবাসা বিস্তৃতি লাভ করে সমগ্র দেশ, দেশের মাটি ও দেশের জনগণের প্রতি৷ মাতৃভূমি তথা দেশের প্রতি এ প্রীতি ও দরদের আকর্ষণকেই দেশপ্রেম বলে।

See also  শালীনতা অর্থ, মানে কী, কাকে বলে? শালীনতার গুরুত্ব

দেশপ্রেম মানবজীবনের একটি মহৎ গুণ। দেশপ্রেমের মূলেই আছে দেশের ভূখণ্ডকে ভালোবাসা। দেশের জনগণকে ভালোবাসা, দেশের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা রক্ষা এবং দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রথা, রীতি-নীতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান করা কর্তব্য।

ii) গুরুত্ব

দেশপ্রেমের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম দেশপ্রেমের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

মহানবি (সাঃ) তাঁর জন্মভূমি মক্কাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন, মক্কার অধিবাসীদের ভালোবাসতেন। তাদের হিদায়াতের জন্য তিনি অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করেন। কাফিরদের অত্যাচারে সাহাবিগণকে মহানবি (সাঃ) আবিসিনিয়ায় হিজরতের অনুমতি প্রদান করলেও তিনি মক্কায় অবস্থান করেন। পরবর্তীতে কাফিরদের কঠিন ষড়যন্ত্রের কারণে এবং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন মক্কার দিকে বার বার ফিরে তাকান, আর কাতর কণ্ঠে বলেন, “হে আমার স্বদেশ! তুমি কত সুন্দর! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার আপন গোত্রীয় লোকেরা যদি ষড়যন্ত্র না করত, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।”

সাহাবিগণও স্বদেশ মক্কাকে খুব ভালোবাসতেন। মদিনায় হিজরতের পর হযরত আবু বকর (রা.) এবং হযরত বিলাল (রা.) কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হন। তখন তাঁরা মক্কার তৃণলতা, পাহাড়-পর্বত এবং পানির কথা স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবিগণের এ অবস্থা দেখে বলেন, “হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেরূপ ভালোবাসি, তদ্রূপ অথবা তার চেয়েও অধিকভাবে আপনি আমাদের অন্তরে মদিনার প্রতি ভালোবাসা দান করুন।”

দেশপ্রেম মানুষকে দেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক নিজের জানমাল উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“দেশরক্ষায় একদিন এক রাতের প্রহরা (রিবাত) ক্রমাগত এক মাসের রোযা এবং সারারাত ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়া অপেক্ষাও উত্তম।”

(মুসলিম)

বলা হয়-

“দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।”

(প্রচলিত প্রবাদ)

দেশপ্রেম মানুষকে দায়িত্ব সচেতন করে তোলে। দেশের উন্নতিসাধনে সজাগ রাখে। দেশের সম্পদ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব, দেশের উন্নতি করব। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।

চ) পরমতসহিষ্ণুতা

i) পরিচয়

পরমত বলতে বুঝায় অপরের মত, পথ বা আদর্শ, সেটা ধর্মীয় হতে পারে এবং আদর্শিকও হতে পারে। আবার রাজনৈতিকও হতে পারে। অন্যের মতামতকে অবজ্ঞা না করে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া বা অন্যের মত বা আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাকে পরমতসহিষ্ণুতা বলে। অন্যের ধর্মীয় মতামত বা রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণ করাকে পরমতসহিষ্ণুতা বলে।

পরমতসহিষ্ণুতা মানবচরিত্রের প্রশংসনীয় গুণ। এ গুণটির কারণেই সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় থাকে। এ গুণটির কারণেই মানুষ তার নিজস্ব পরিবেশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় থাকে। সৌহার্দ ও সম্প্রীতির সৃষ্টি হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সদ্ভাব বজায় থাকে।

ii) গুরুত্ব

পারিবারিক শান্তি লাভ:

একটি সুস্থ ও সুন্দর পারিবারিক জীবনের জন্য পরমতসহিষ্ণুতার গুরুত্ব অপরিসীম। পারিবারিক জীবনের সুখ শান্তি এর উপর নির্ভরশীল। পরিবারের অন্য সদস্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন বা সহানুভূতির মনোভাব পোষণ করার মাধ্যমে পারিবারিক শান্তি লাভ করা যায়।

সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা:

পারিবারিক সুখ-শান্তির মতো সামাজিক সুখ-শান্তি ও পরমতসহিষ্ণুতার উপর নির্ভরশীল। সমাজে বিভিন্ন মতাদর্শের লোক থাকতে পারে, তাদের সাথে সমঝোতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। তাদের মতের প্রতি সহিষ্ণুতার মনোভাব পোষণ করলে শান্তি বজায় থাকবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মতামত ও আদর্শের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। তাহলেই সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

রাষ্ট্রীয় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা:

পরমতসহিষ্ণুতার উপর রাষ্ট্রীয় শান্তিশৃঙ্খলা নির্ভরশীল। একটি দেশে নানা ধর্ম, বর্ণ ও মতের লোক বসবাস করে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, সমঝোতা ও সহাবস্থানের জন্য পরমতসহিষ্ণুতা অপরিহার্য।

আন্তর্জাতিক স্থীতিশীলতা:

পরমতসহিষ্ণুতার কারণেই আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর অভাবে পারস্পরিক সহাবস্থান কঠিন হয়ে যায়। আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক লাভের প্রধান পূর্বশর্ত পরমতসহিষ্ণুতার আদর্শ। ভিন্ন দেশ ও সমাজের আদর্শ, রীতিনীতি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপন ও পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা সম্ভব হয়৷

ইত্যাদি।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page