Skip to content

আখলাকে যামিমাহ কি/বলতে কি বুঝায়? বর্জনীয় কেন/কুফল? আখলাকে যামিমাহ উদাহরণ

আখলাকে যামিমাহ কি, বলতে কি বুঝায়, বর্জনীয় কেন, কুফল, আখলাকে যামিমাহ উদাহরণ

(১) আখলাকে যামিমাহ কি/বলতে কি বুঝায়?

যে খারাপ কাজ বা আচরণ মানুষকে হীন ও নিন্দনীয় করে তোলে তাকে আখলাকে যামিমাহ বা নিন্দনীয় চরিত্র বলে। যেমন- অহংকার, ঘুষ, অশ্লীলতা, পরশ্রীকাতরতা, ঘৃণা, চৌর্যবৃত্তি ইত্যাদি।

(২) আখলাকে যামিমাহ বর্জনীয় কেন/কুফল?

আখলাকে যামিমাহ্ এর কারণে ওইসব ব্যক্তি সমাজ জীবনে নিন্দনীয় হয়। তারা মানুষের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের দ্বারা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। অন্যায় ও অসৎ কাজের প্রসার ঘটে। তারা আল্লাহ ও রাসুলের অপ্রিয় হয়। এর ফলে তারা পরকালে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে। তাই আমাদের সকলকে আখলাকে যামিমাহ্ বা নিন্দনীয় চরিত্র থেকে দূরে থাকতে হবে। এর ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে, পরিবেশ হবে সুন্দর, মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা লাভ করা সম্ভব হবে।

(৩) আখলাকে যামিমাহ উদাহরণ

ক) অহংকার

i) পরিচয়

অহংকার শব্দের অর্থ অহমিকা, আমিত্ব, গর্ব, দর্প, দম্ভ, বড়াই, নিজেকে বড় ভাবা ইত্যাদি। নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় গণ্য করা এবং অন্যকে তুচ্ছ ও নিকৃষ্ট মনে করাকে অহংকার বলা হয়। যে অহংকার করে তাকে অহংকারী বলে। অহংকারী ব্যক্তি বিভিন্ন দিক থেকে নিজেকে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেয় এবং নিজেকে অন্যদের তুলনায় উত্তম মনে করে।

অহংকারের ধরন তিনটি-

  1. অন্তরে অহংকার পোষণ করা।
  2. চালচলন ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অহংকার প্রকাশ করা।
  3. কথাবার্তায় অহংকার প্রকাশ করা।

মানুষ বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য, শক্তি, সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে অহংকার করে থাকে। যেমন ধনী ও সম্পদশালীর মধ্যে অর্থের গৌরব, স্ত্রীলোকদের মধ্যে সৌন্দর্যের বড়াই এবং ক্ষমতাবানদের মধ্যে ক্ষমতার দম্ভ, বিদ্বান লোকদের মধ্যে বিদ্যার গর্ব ইত্যাদি।

ii) কুফল

অহংকারের কুফল অনেক এবং এর অপকারিতা বর্ণনাতীত। অহংকারের কারণেই ইবলিস অভিশপ্ত হয়ে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী,

“তুমি এ স্থান হতে নেমে যাও। এ স্থানে থেকে অহংকার করবে তা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও। নিশ্চয়ই তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।”

(সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৩)

অহংকারী ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে ঘৃণিত। আল্লাহর কাছে অপছন্দণীয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।”

(সূরা লুকমান, আয়াত ১৮)

মহানবি (সাঃ) এ বিষয়ে বলেন,

“যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

(মুসলিম)

প্রতিটি মানুষের কোনো না কোনো অভাব আছে। সুতরাং অহংকার করা তার জন্য শোভা পায় না। অহংকার শুধু তাঁরই শোভা পায়, যার কোনো অভাব নেই।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 

“আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, অহংকার আমার ভূষণ।”

(মুসলিম)

আমরা অহংকার বর্জন করব। কেননা মানুষের কোনো জিনিস নিয়েই অহংকার করার অবকাশ নেই। আমরা এ পাঠে শিখলাম, অহংকার পতনের মূল। অহংকারী অভিশপ্ত। আমরা অহংকার করব না।

খ) অশ্লীলতা

i) পরিচয়

অশ্লীলতা অর্থ জঘন্যতা, কদর্যতা, নির্লজ্জতা, অভদ্রতা ও যৌন বিষয়ক কুৎসিত আচরণ। অশ্লীলতার দ্বারা নির্লজ্জ ও কুরুচিপূর্ণ কথা ও কাজকে বোঝানো হয়। এছাড়া যেসব কুকর্ম ধৃষ্টতাসহকারে প্রকাশ্যে করা হয় সেগুলোকেও অশ্লীল বলা হয়।

ii) কুফল

অশ্লীলতা একটি বড় অপরাধ। এটা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। সমাজকে কলুষিত করে। নিষ্পাপ ও কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র হনন করে যুবক-যুবতীদের কুকর্মের প্রতি প্রলুব্ধ করে।

আল্লাহ তায়ালা অশ্লীলতাকে হারাম ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ বলেন,

“বলুন, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা।”

(সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত ৩৩)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,

“প্রকাশ্য কিংবা গোপন অশ্লীল আচরণের নিকটেও যাবে না।”

(সূরা আল-আনআম, আয়াত ১৫১)

অশ্লীল আচরণকারী সকলের নিকট ঘৃণিত। 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“যার মধ্যে অশ্লীলতা আছে, তা তাকে ত্রুটিযুক্ত করে। আর যার মধ্যে লজ্জাশীলতা আছে, তা তাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।”

(তিরমিযি)

খ) পরশ্রীকাতরতা

i) পরিচয়

পরশ্রীকাতরতা অর্থ অন্যের উন্নতি ও সৌভাগ্য দেখে ঈর্ষা প্রকাশ করা। অর্থাৎ কারো ধন-দৌলত, সম্মান, ভালো ফল বা উচ্চ মর্যাদা দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া এবং তার ধ্বংস কামনা করাকে পরশ্রীকাতরতা বলা হয়।

See also  হিংসা কী, কাকে বলে? হিংসার কুফল ও এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান

ii) কুফল

পরশ্রীকাতরতা একটি মারাত্মক মানসিক ব্যাধি। এ ব্যাধি বহু কারণে সৃষ্টি হয়। যেমন শত্রুতা, অহংকার, নিজের অসদুদ্দেশ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা, নেতৃত্বের লোভ ইত্যাদি। এসব কারণে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির প্রতি হিংসা বিদ্বেষ করে থাকে। ইসলাম এ কাজগুলো হারাম ঘোষণা করেছে। পরশ্রীকাতরতার অপকারিতা সীমাহীন। হযরত আদম (আঃ)-এর পদমর্যাদা দেখে ইবলিস তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়। ফলে সে অভিশপ্ত হয় এবং আল্লাহ তায়ালার দয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

মানব সৃষ্টির পর ঈর্ষার কারণেই সর্বপ্রথম পাপ সংঘটিত হয়। আদম (আঃ)-এর পুত্র কাবিল পরশ্রীকাতরতার বশবর্তী হয়ে তারই আপন ভাই হাবিলকে হত্যা করে। পরশ্রীকাতরতা মানুষের পুণ্য কাজগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।

এ সম্পর্কে মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয় পরশ্রীকাতরতা তেমনই পুণ্যকে ধ্বংস করে দেয়।”

(মুসনাদে আহমাদ)

পরশ্রীকাতরতা মানুষের শান্তি বিনষ্ট করে। মনে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখে। পরশ্রীকাতর ব্যক্তি আল্লাহ এবং মানুষের কাছে ঘৃণিত। কেউ তাকে ভালোবাসে না। কেউ তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে না। সমাজের লোকেরা তাকে এড়িয়ে চলে। পরশ্রীকাতরতা সমাজে ঝগড়া-ফাসাদ, মারামারি ও অশান্তি সৃষ্টি করে। মানুষের মনে অহংকার সৃষ্টি হয়। অহংকার মানুষের পতন ঘটায়।

আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে পরশ্রীকাতরতা থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দিয়েছেন।

আমাদের প্রতিজ্ঞা আমরা পরশ্রীকাতর হব না। নিজের পতন নিজে ডেকে আনব না। হিংসা করব ন। সমাজের শান্তি বিনষ্ট করব না।

গ) ঘৃণা

i) পরিচয়

ঘৃণা অর্থ অবজ্ঞা, অপছন্দ, উপেক্ষা, তাচ্ছিল্য, তুচ্ছ জ্ঞান করা। কাউকে তুচ্ছ মনে করে তাকে সহ্য করতে না পারা এবং তার থেকে দূরে সরে থাকাকেই পরিভাষায় ঘৃণা বলে।

অহংকার, শত্রুতা, পদমর্যাদার লিপ্সা প্রভৃতি কারণে ঘৃণার উদ্রেক ঘটে। ঘৃণা করা অন্যায় তবে ক্ষেত্রবিশেষ ঘৃণা একটি মানবীয় গুণ। যেমন মন্দ কাজে ঘৃণা করা প্রশংসনীয়। সমাজে চুরি, ডাকাতি, হাইজ্যাক, সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হেরোইন সেবন ইত্যাদি ঘৃণিত কাজ। এগুলোকে ঘৃণা করা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। তবে মনে রাখতে হবে পাপ কাজকে ঘৃণা করব পাপীকে নয়।

ii) কুফল

অনেক ক্ষেত্রে ঘৃণা একটি মহা গুরুতর ব্যাধি। এতে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। ঘৃণাকারী কখনো মনে শান্তি লাভ করতে পারে না। এতে তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ক্ষতি সাধিত হয়।

মহানবি (সাঃ) বলেন,

“পূর্ববর্তী উম্মাতের দুটি রোগ তোমাদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে, হিংসা এবং ঘৃণা।”

(বায়হাকি)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন,

“তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না, একে অপরকে ঘৃণা করো না, একে অন্যের ক্ষতি করার জন্য কৌশল করো না বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।”

(বুখারি ও মুসলিম)

ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য শয়তানের বৈশিষ্ট্য। শয়তান হযরত আদম (আঃ)-এর প্রতি তাচ্ছিল্য করার কারণেই অভিশপ্ত হয়েছে। আমরা কাউকে ঘৃণা করব না।

আমরা ঘৃণার কুফল উপলব্ধি করব। সকলের প্রতি উদার হব। ভালো কাজে প্রশংসা করব। অর্থ, বিদ্যা বা সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠিতে কাউকে ঘৃণা বা হেয় করব না। তবে মন্দ কাজকে ঘৃণা করব। মন্দ কাজকে ঘৃণা না করলে সমাজে তা ধীরে ধীরে বৈধ বলে পরিগণিত হয়।

ঘ) চৌর্যবৃত্তি

i) পরিচয়

চৌর্য অর্থ চুরি। চৌর্যবৃত্তি অর্থ চোরের পেশা অথবা চোরের কাজ। কারো মালিকানাভুক্ত সম্পদ সংরক্ষিত স্থান থেকে গোপনে হাতিয়ে নেয়ার নাম চুরি বা চৌর্য।

ii) চুরির কুফল

নিরাপত্তাহীনতা: চুরির জন্য সম্পদ ও জীবন নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়। কারণ কখনো কখনো চোর ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মালিককে খুনও করে।

সামাজিক শান্তি বিনষ্ট: চৌর্যবৃত্তির কারণে মানুষ শান্তিতে ঘুমোতে পারে না। সম্পদ পাহারা দিতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। সর্বদা সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সামাজিক শান্তি ও স্বস্তি বিনষ্ট হয়।

সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি: চুরির দ্বারা সমাজে আরও নতুন নতুন অপরাধ সৃষ্টি হয়। চোর শুধু তার কাজ চুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে না বরং সে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, খুন এবং মাঝে মাঝে সম্ভ্রমহানির ঘটনাও ঘটায়।

চৌর্যবৃত্তি একটি ঘৃণিত কাজ: সমাজের নিন্দনীয় কাজগুলোর অন্যতম চৌর্যবৃত্তি। সমাজে চোরকে মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে। চোরকে মানুষ আত্মীয় হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে। পরিবার ও সমাজের লোকেরা তাকে ঘৃণার চোখে দেখে।

See also  নিফাক শব্দের অর্থ কী, কাকে বলে? নেফাক বলতে কী বুঝায়? নিফাকের কুফল ও প্রতিকার

পরকালীন শাস্তি: চুরি একটি অত্যন্ত জঘন্য ধরনের নিষিদ্ধ কাজ। এর ফলে ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন থাকতে পারে না। আল্লাহ তার জন্য পরকালেও ভয়াবহ শাস্তির অঙ্গীকার করেছেন।

iii) চুরি প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা

চুরির জন্য পরকালে শাস্তির অঙ্গীকার ছাড়াও এ অনৈতিক অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ইসলাম পার্থিব দণ্ডবিধানও দিয়েছে।

মৌলিক প্রয়োজন মেটানো: কেউ যাতে অন্ন, বস্ত্র বা মৌলিক চাহিদার অভাবে চুরি না করে তার জন্য সেসবের ব্যবস্থা করতে হবে। তার কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা: অভাব না থাকা সত্ত্বেও স্বভাবগত কারণে কেউ যদি চুরি করে তাহলে সব দেশ এবং সব সমাজেই সেজন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, ইসলাম ধর্মেও তার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“পুরুষ চোর আর মহিলা চোর তাদের হাত কেটে দাও। তারা যা করেছে এ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।”

(সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩৮)

নৈতিকতাবোধ জাগ্রতকরণ: সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের অন্তরে চৌর্যবৃত্তির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করা। চোরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার মাধ্যমে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা।

পরকালির শাস্তি: চুরি শুধু সামাজিক অপরাধই নয়, ধর্মীয় বিবেচনায় একটি হারাম কাজ। দুনিয়ায় ঘৃণা ও শাস্তি ছাড়াও আখিরাতে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

ঙ) ঘুষ

i) পরিচয়

ঘুষ অর্থ উৎকোচ। এর আরবি প্রতিশব্দ ‘রেশওয়াত’। অবৈধ সহায়তার জন্য প্রদত্ত গোপন পারিতোষিকই ঘুষ। কর্তব্যরত কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে কাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিছু দেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত।

কোনো ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করে উপঢৌকন গ্রহণ করাও ঘুষ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল, আর এ সুপারিশের প্রতিদানস্বরূপ তাকে কিছু উপহার দেওয়া হলে, সে যদি তা গ্রহণ করে, তবে সে সুদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হবে।”

(কিতাবুল কাবায়ির)

ii) কুফল

ঘুষ একটি সামাজিক অপরাধ। ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। ঘুষ গ্রহীতাকে সকলে ঘৃণা করে। ঘুষ গ্রহণ এবং দেওয়া দুটিই পাপ কাজ। ঘুষ গ্রহীতা ও দাতার উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষিত হয়।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়।”

(ইব্‌ন মাজাহ্)

ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া উভয়ই অমার্জনীয় অপরাধ। ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি।

রাসুল (সাঃ) বলেন,

“ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই জাহান্নামি।”

(তাবারানি)

কোনো কর্মচারী তার বেতনের অতিরিক্ত জনগণ থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করা অবৈধ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

“কোনো ব্যক্তিকে যদি আমরা কোনো কাজে নিয়োগ করি এবং এ জন্য তাকে বিনিময় দান করি, আর সে বিনিময়ের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করে, তবে তা খিয়ানত হিসাবে গণ্য হবে।”

(আবু দাউদ)

iii) ঘুষ প্রতিরোধে ইসলামি বিধান

ইসলাম ঘুষকে হারাম ঘোষণা করেছে। মুমিনদের ঘুষ আদান প্রদান না করার বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ ঘুষের সম্পদকে হারাম ও অপবিত্র ঘোষণা করেছেন। মুমিনদের দায়িত্ব হলো এ নিষিদ্ধ অপবিত্র কাজে অংশগ্রহণ না করা।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী,

“আপনি বলুন, হারাম ও অপবিত্র জীবিকা এবং পবিত্র জীবিকা সমান নয়। যদিও হারামের আধিক্য তোমাকে বিস্মিত করে। কাজেই হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর- যাতে সফলকাম হতে পার।”

(সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ১০০)

কিয়ামত দিবসে ঘুষ গ্রহীতার পরিণতি হবে খুবই লজ্জাজনক। মহানবি (সাঃ) বলেছেন,

“যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম! ব্যক্তি যা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করবে কিয়ামতের দিন সে তা নিয়েই উপস্থিত হবে।”

(আল-হাদিস)

সর্বোপরি মহানবি (সাঃ) ঘুষদাতা ও গ্রহীতার জন্য জাহান্নামের সংবাদ দিয়েছেন।

আমরা সমাজকে ঘুষের অভিশাপ থেকে মুক্ত করব। নিজেরা কখনো ঘুষ আদান-প্রদান করব না। সামাজিক অপরাধ হিসাবে এ অভিশপ্ত কাজ প্রতিরোধ করব।

চ) সন্ত্রাস

i) পরিচয়

সন্ত্রাস হলো ফিতনা-ফাসাদের আধুনিক রূপ। সন্ত্রাস শব্দের অর্থ অতিশয় ত্রাস বা ভয়ের পরিবেশ। অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে বা জোর খাটিয়ে মানুষের কাছ থেকে কিছু আদায় করা বা আদায়ের পরিবেশ সৃষ্টির নীতিকে সন্ত্রাস বলে।

See also  ফিতনা-ফাসাদ বলতে কী বুঝায়? কুফলসমূহ ও এটি সম্পর্কে ইসলামি বিধান

ii) সন্ত্রাসের কুফল

সন্ত্রাসের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়। মানুষের স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন ব্যাহত হয়। সন্ত্রাসকবলিত জনপদে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। যখন তখন কেউ অপমৃত্যুর শিকার হতে পারে। সন্ত্রাসের কারণে মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা থাকে না। সম্ভ্রমের নিরাপত্তা থাকে না। পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। বিদ্বেষ বেড়ে যায়। আইন-শৃঙ্খলা ও প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

iii) সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলামের বিধান

ইসলাম সন্ত্রাস প্রতিরোধে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থেকে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। আর এ যুদ্ধকে মুমিনদের ইমান রক্ষার যুদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছে।

আল্লাহর বাণী,

“এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয়।”

(সূরা আল- আনফাল, আয়াত ৩৯)

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা:

সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজকে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত অপছন্দ করেন। মহান আল্লাহ সন্ত্রাসকে হত্যার চেয়ে জঘন্য আখ্যা দিয়েছেন।

আল্লাহর বাণী,

“ফিতনা (বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস) হত্যার চেয়ে জঘন্য।”

(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯১)

যারা আল্লাহর এ নিষেধাজ্ঞার পরও বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয় বা সন্ত্রাস সৃষ্টির কাজ অব্যাহত রাখবে, তাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহ বলেন,

“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় এটাই তাদের শাস্তি যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে বিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা এবং পরকালেও তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।”

(সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩৩)

কারণ উদঘাটন ও নিরসন:

ইসলাম সন্ত্রাসের কারণ উদঘাটন ও তা নিরসনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। এ জন্য ইসলামে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বেকারত্ব ও নৈতিক অবক্ষয় রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি জোর দিয়েছে।

নৈতিকতাবোধ জাগ্রতকরণ:

জীবনের সকল পর্যায়ে ইসলামি বিধান কার্যকর করে ও নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করে সন্ত্রাস দূর করা যায়। নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সন্ত্রাসী কাজকে ঘৃণা করা এবং সন্ত্রাসীকে সামাজিকভাবে বয়কট করার মাধ্যমে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা যায়।

ছ) এইচআইভি এবং এইডস

বর্তমান শতাব্দীর এক মহাআতঙ্কের নাম এইডস। আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগেও এইডস বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ রোগটি ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকায় সমকামীদের মধ্যে ধরা পড়ে। যে ভাইরাস থেকে এ রোগটি হয় তার নাম Human Immune Deficiency Virus, এর সংক্ষিপ্ত নাম HIV- এটি একটি ঘাতক ব্যাধি।

HIV দ্বারা কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তাকে “এইচআইভি বহনকারী” হিসেবে চিহ্নিত Y করা হয়। এ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে রক্তের রোগ প্রতিরোধকারী T4 কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

বয়স, জাতি, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সবাই এইচআইভি দ্বারা সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এইচআইভি মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের তরল পদার্থের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তরল পদার্থগুলো হলো রক্ত, বীর্য, মাতৃদুগ্ধ ইত্যাদি। যদি এইচআইভি আক্রান্ত পুরুষ বা মহিলার শরীরের তরল পদার্থ কোনো সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে, তবে তিনি এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।

এইচআইভি এবং এইডস যেসব কারণে ছড়ায় তার মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো-

  1. অবৈধ মেলামেশা।
  2. মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো।
  3. অপরিশোধিত রক্ত শরীরে প্রবেশ করানো।

প্রতিরোধের উপায়সমূহ-

  1. সুস্থ বৈবাহিক জীবনযাপন করা।
  2. নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা এড়িয়ে চলা।
  3. মাদক ও নেশা জাতীয় সকল জিনিস বর্জন করা।
  4. অপরিশোধিত রক্ত শরীরে প্রবেশ না করানো।

আমরা ইসলামি বিধিবিধান মেনে চলব। সামাজিক অপরাধসমূহ এড়িয়ে চলব। আমরা নিজেকে এবং সমাজকে সকল অপরাধ ও রোগসংক্রমণ থেকে রক্ষা করব।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts