সাহু শব্দের অর্থ হলো ভুলে যাওয়া। সাহু সিজদাহ অর্থ ভুল সংশোধনমূলক সিজদাহ।
নামাজে কিছু বিষয় আছে, যা ভুলক্রমে হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে নামাজ শেষে দুটি অতিরিক্ত সিজদা আদায় করতে হয়, এ সিজদাকে সাহু সিজদা বলে।
সালাতের কার্যক্রমে ভুলক্রমে কোন ওয়াজিব বাদ পড়লে যেমন রাকাআত সংখ্যা ভুলে কম-বেশি হয়ে গেলে তা সংশোধনের জন্য সালাতের শেষ বৈঠকে দুটি সিজদাহ দেওয়া ওয়াজিব। শরিয়তের দৃষ্টিতে এই রকম সিজদাই হলো সাজদাতুস সাহবু বা সাহু সিজদাহ।
রাসুল (সা.) নামাজের ভুল সংশোধনের জন্য এই রকম আমল করেছেন যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
তাই নামাজের মধ্যে ভুল করে ফেললে সাহু সিজদা করতে হয়। আজ আমরা সাহু সিজদাহ নিয়ম ও সাহু সিজদাহ কখন দিতে হয় এই বিষয়ে আলোচনা করব।
(১) সাহু সিজদাহ নিয়ম
সাহু সিজদার নিয়ম হানাফি মাজহাব মতে-
- সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু শুরু করে ‘আবদুহু ওয়ারাসুলুহু’ পর্যন্ত পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাতে হয়।
- অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দু’টি সিজদাহ আদায় করতে হয়।
- উল্লেখ্য, সিজদাহ দুটিতে নিয়ম অনুযায়ী তাসবিহ পড়তে হয়।
- এরপর বসে যথানিয়মে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু), দরূদ শরিফ ও দোয়া মাসূরা পড়ে দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হয়।
(২) সাহু সিজদাহ কখন দিতে হয়?
- সালাতের কোনো ওয়াজিব ভুলক্রমে ছুটে গেলে।
- কোনো ওয়াজিব পুনরায় বা দুইবার আদায় করা হলে।
- সালাতের কোনো ওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় না করা করলে বা কোনো ওয়াজিব পরিবর্তন হলে।
- ভুলক্রমে নামাজের কোন ফরজ দুইবার আদায় করা হলে।
- নামাজের ফরজসমূহ আদায় করতে গিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা। যেমন কোন আগের কাজ ভুলে পরে করা, বা পরের কাজ আগেই করে ফেলা।
উদাহরণ স্বরূপ-
কত রাকাআন নামাজ পড়েছি সঠিক মনে না থকার কারণে, কারণে দুই রাকআত এর নামাজ তির রাকআত পড়েফেলা। আবার চার কাত বিশিষ্ট নামাজ তিন রাকআন বা পাঁচ রাকআত পড়ে ফেলা।
ভুলে রুকু না করেই সিজদায় চলে যাওয়া।
দুই বার সেজদা করা ফরজ, কিন্তু যদি ভুলে একবার সিজদা করে পরের রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তখন ওই রাকাত দুই সিজদা দিয়ে সম্পন্ন করে ছুটে যাওয়া সিজদাও এর সঙ্গে মিলিয়ে নেবে। শেষে সিজদায়ে সাহু করবে।
চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজে দুই রাকআত পর প্রথম বৈঠকে বসে ভুলে তাশাহহুদের সঙ্গে দরুদ ইত্যাদি পড়ে ফেলা।
যদি তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠকে বসতেই ভুলে গেলে, তা ফরজ নামাজ হোক বা নফল নামাজ, সিজদায়ে সাহু দিতে হবে।
অনেক সময় এমনটা হয়, দুই রাকাআত পর না বসে ভুলে আবার তৃতীয় রাকাআতের শুরু করার পরে খেয়াল হয়, ওহ এখন তো বসার কথা ছিল!
যে সালাতে সূরা তেলাওয়াত প্রকাশ্যে/স্বশব্দে/জোড়ে পড়ার বিধান, সেই সালাতে গোপনে তেলাওয়াত পড়া। অপরপক্ষে যে সালাতে সূরা তেলাওয়াত গোপনে করা হয়, সেই সালাতে প্রকাশ্যে তেলাওয়াত করা।
প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা পড়তে হয়, কোন এক রাকাতে তা পড়তে ভুলে গেলে, ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে সাহু সিজদা দিতে হবে।
ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতেই কেরাত পড়া বা সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ভুলে গেলে, যদি চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজ হয়ে তবে, শেষ দুই রাকাতে তা পড়ে নেবে। তবে সিজদায়ে সাহু দেবে।
শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়তে ভুলে যাওয়া।
বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে কুনুত পড়তে ভুলে যাওয়া। ইত্যাদি।
অর্থ্যাৎ ভুল বলতে সুন্নত ও মুস্তাহাবের ভুলের কথা বলা হয়নি। বরং নামাজের কোনো ফরজ ভুলক্রমে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বা পরে আদায় করা, এক ফরজ একাধিকবার আদায় করা, নামাজের কোনো ওয়াজিব ছুটে যাওয়া বা তা আদায়কালে কোনো পরিবর্তন অথবা বিলম্ব করা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে, এগুলো ক্ষেত্রে সাহু সিজদাহ করা আবশ্যিক।
এই আলোচনা থেকে আমরা সাহু সিজদাহ নিয়ম ও সাহু সিজদাহ কখন দিতে হয় তা জানলাম। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের পরিভাষাগুলো সঠিকভাবে জানার ও মানার তাওফিক দান করুন, আমিন।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।