Skip to content

 

মুসাফিরের নামাজ: কসর নামাজের নিয়ম

মুসাফিরের নামাজ, কসর নামাজের নিয়ম

এখানে আমি সহজ ও সুন্দরভাবে ‘মুসাফিরের নামাজ’ বা ‘কসর নামাজের নিয়ম’ সমূহ উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এর থেকে আমার প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোনেরা উপকৃত হবেন, ইংশাআল্লাহ।

তো চলুন জেনে নিই মুসাফিরের নামাজ/কসর নামাজের নিয়ম-

(১) মুসাফিরের নামাজ

মুসাফির-

‘মুসাফির’ আরবি শব্দ। এর অর্থ সফরকারী। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমনকারীকে মুসাফির বলা হয়।

হানাফী স্কুল অফ থট অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফর করার নিয়তে বের হয়ে নিজ শহর বা গ্রাম পেরিয়ে গেলেই তিনি মুসাফির হয়ে যান। আর এ অবস্থায় গন্তব্যস্থলে সর্বচ্চো ১৫ দিন অবস্থান করার নিয়ত না করা পর্যন্ত মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন।

মুসাফিরের নামাজ-

মুসাফির অবস্থায় কসর করে নামাজ পড়াকে মুসাফিরের নামাজ বলে।

কসরের নামাজ-

‘কসর’-এর অর্থ হলো কম করা বা সংক্ষেপ করা। মুসাফির ব্যক্তি পথিমধ্যে চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরয নামায (অর্থাৎ জোহর,আসর ও ঈশার ফরয নামায) কে দুই রাকআত পড়বে। একে কসরের নামাজ বলে।

ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত,

“আমি মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে ছিলাম, তিনি সফরে (চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায) দুই রাকাআতের বেশি পড়তেন না। আবুবকর ও ওমর একই রকম নামায পড়তেন।”

(বুখারী ও মুসলিম)

মানুষের জীবনে সফর কিংবা ভ্রমণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষ যখন নিজের আবাসস্থলে থাকে, তখন পূর্ণাঙ্গ নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু ভ্রমণে বা সফরে মুসাফির অবস্থায় যোহর, আসর ও এশার ফরজ নামাজ কসর (কম করা বা সংক্ষেপ) করতে হয়।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

“তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য সালাতের কসর করায় কোনো দোষ নেই।”

(সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)

কসর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক ধরনের সুবিধা। শরিয়াত নির্ধারিত দূরত্ব বা তার বেশি দূরে সফর করা কালে নামাজ সংক্ষেপ করা ইসলামের বিধান।

এখানে আমি সহজ ও সুন্দরভাবে ‘মুসাফিরের নামাজ’ বা ‘কসর নামাজের নিয়ম’ সমূহ তুলে ধরেছি। আশা এর থেকে আমার দ্বীনি ভাই-বোনেরা উপকৃত হবেন ইংশাআল্লাহ।

(২) কসর নামাজের নিয়ম

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,

“আল্লাহতায়ালা তোমাদের নবীর জবানে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।”

(সহিহ্ মুসলিম)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,

“মুসাফির যদি (জামআতের নামাজে) মুকিমদের সঙ্গে সালাতে শরিক হয়, তবে সে যেন তাদের মতো চার রাকাআত সালাত পড়ে।”

(ইবনে আবি শাইবা)

কসর নামাজের নিয়ম হলো-

  1. মুসাফির ব্যক্তি চার রাকাআত বিশিষ্ট যোহর, আসর ও এশার ফরজ নামাজ, চার রাকাআত এর বদলে শুধু দুই রাকাআত পড়বেন। বাকি দুই রাকাত কসর করতে অর্থ্যাৎ বাদ দিতে হবে।
  2. কসর শুধু চার রাকাআত বিশিষ্ট নামাজেই হয়ে থাকে। অতএব, মাগরিব ওয়াক্ত ও ফজরের ওয়াক্তের নামাজে কোনো কসর নেই, যেহেতু এগুলো চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ নয়।
  3. কসর শুধু ফরজ নামাজ গুলোর ক্ষেত্রে হয়। সুন্নত নামাজ ও বিতরের ক্ষেত্রেও কোন কসর নেই।
  4. মুসাফির ব্যক্তির চলন্ত অবস্থায় ও ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নাত ছেড়ে দেওয়া দুরস্ত আছে। ব্যস্ততা না থাকলে সব সুন্নাত পড়তে হবে।
  5. মুসাফিরের জন্য মুকীমের ইমাম হয়ে নামাজ পড়া জায়েয আছে। এক্ষেত্রে সে দুই রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফেরাবে এবং মুকীম একাকী নামায শেষ করে নিবে। মুসাফিরের জন্য মুস্তাহাব হলো সালাম ফিরিয়ে মুক্তাদীর বলা “আপনারা নামায পূর্ণ করুন, আমি মুসাফির”।
  6. মুসাফির ব্যক্তি জামাতে মুকিম ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে, ইমামের অনুসরণ করে পূর্ণ নামাজ আদায় করবে, কসর করবে না।

মুসাফিরের নামাজ/কসর নামাজ একাধিক ওয়াক্তে একসাথে পড়া-

  1. মুসাফিরের জন্য দু’টি নামাজ এক সাথে পড়ার অবকাশ রয়েছে।
  2. জোহরের নামাযকে আসরের নামাযের সময়ে দেরি করে একসাথে পড়া যায়। প্রত্যেক নামাযকে আলাদা আলাদা করে পড়তে হবে। প্রথমে জোহর তারপর আসর পড়তে হবে।
  3. আসরের নামাযকে সময়ের আগে জোহরের সময়ে একসাথে পড়াও জায়েয আছে। এক্ষেত্রেও প্রথমে জোহর তারপর আসর পড়তে হবে।
  4. তদ্রুপভাবে মাগরিব ও ঈশার নামাযের ক্ষেত্রেও করতে পারবে।
  5. ফজর ও জোহর বা মাগরিব ও আসর একত্রে পড়া জায়েয নেই।

মুসাফিরের নামাজের আরো কতিপয় মাসআলা-

  1. বিমান, গাড়ি, স্টিমার, ট্রেন, উট, পর্বতারোহণ ও পদব্রজ ভ্রমণের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সবগুলোই সফর বা ভ্রমণের আওতাভুক্ত। সব সফরেই নামায কসর করতে হবে।
  2. যারা লঞ্চ, স্টীমার, প্লেন, বাস, ট্রাক ইত্যাদির চালক বা কর্মচারী, তারাও অনুরূপ দূরত্বের সফর হলে পথিমধ্যে কসর পড়বে। আর গন্তব্য স্থানের মাসআলা উপর্যুক্ত নিয়ম অনুযায়ী হবে।
  3. ১৫দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হয়নি এবং পূর্বেই চলে যাবে চলে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না- এভাবে ১৫দিন বা তার বেশি থাকা হলেও কছর পড়তে হবে।
  4. মুসাফির তার নিজের এলাকা ত্যাগ করার পূর্বে কছরের নামায পড়া জায়েয হবে না। নিজের এলাকা ত্যাগ করার পর থেকে কসরের বিধান পালন করতে হবে।

সবেশেষে, ব্যক্তিগত প্রয়োজন, অফিসিয়াল কাজকর্ম কিংবা আনন্দ-ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে দূর-দূরান্তে সফর করতে হয়। মানুষ নিজের আবাস্থলে থাকলে পুরোপুরি নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু ভ্রমণে গেলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তখন নামাজ সংক্ষেপ করাই ইসলামের বিধান।

মুসাফিরের জন্য নামায সংক্ষিপ্ত করে পড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য উপহার স্বরূপ। তাই মুসাফিরের জন্য ওয়াজিব হলো সেই উপহার গ্রহণ করা উচিত।

অর্থাৎ, মুসাফির চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরয নামাজ একাকী পড়লে অবশ্যই কসর করবে অর্থ্যাৎ দুই রাকআত কম পড়বে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ নামাজ পড়া ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর করেছেন। আর এইভাবে সংক্ষেপে নামাজ আদায়ের মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা কল্যাণ রেখেছেন।

আজকের এই পোষ্টটি থেকে আমরা মুসাফিরের নামাজ বিভাবে পড়তে হবে অর্থ্যাৎ কসর নামাজের নিয়ম জেনে নিলাম। পোষ্টটি এভানেই সমাপ্ত করছি, আবারও কথা হবে নামাজ সম্পর্কিত অন্য কোন আলোচনায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আন্তারিকতার সাথে আদায় করার তৌফিক দানকরুন, আল্লাহুম্মা আমিন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts

You cannot copy content of this page