প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ১ও ২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা সম্পর্কে জানেতে পারবেন। আলিফ-লাম-মীম দ্বারা কি বুঝায়, তা বুঝতে করতে পারবেন। ‘যালিকাল কিতাব’- দ্বারা কোন কিতাব বোঝানো হয়েছে তা বুঝতে পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ১ ও ২ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
১. | الم আলিফ লাম মীম। (বিচ্ছিন্ন হরফ) |
২. | ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ যা-লিকাল কিতা-বুলা-রাইবা ফীহি হুদাল লিলমুত্তাকীন। এটা সেই কিতাব; এতে কোন সন্দেহ নেই; এটা আল্লাহভীরুদের জন্য পথপ্রদর্শক। |
ব্যাখ্যা
আলিফ-লাম-মীম (الٓـمّٓ ۚ)
আলিফ-লাম-মীম, আরবী বর্ণমালার তিনটি হরফ। কুরআন মাজীদে আরও ২৯টি সূরার শুরুতে এরূপ এক বা একাধিক হরফের উল্লেখ আছে। একে হরফে মুকাত্তায়াত’ বা ‘বিচ্ছিন্ন হরফ’ বলে। কুরআনের অধিকাংশ তাফসীরকারগণ বলেন- এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা জানেন। এ জন্য তাঁরা এর ব্যাখ্যা করেন না। তবে আবার কেউ কেউ এর ব্যাখ্যা করে থাকেন। আল্লাম যামাখশারী (র) বলেন, এটা কুরআনের অন্যতম নাম।
যা-লিকাল কিতাবু লা রইবা ফি (ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ)
যালিকা হলো- দূর জ্ঞাপক বা দূর নির্দেশক সর্বনাম। এর অর্থ হচ্ছে ঐ, তা, এটা। কিন্তু আরবি ভাষায় ‘যালিকা’ কখনও ইহা, এই অর্থেও ব্যবহৃত হয়। তাফসীরকাগণের মতে যালিকা দ্বারা সেই কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যার ওয়াদা আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (স)-এর সাথে ইতঃপূর্বে করেছেন।
কিতাব দ্বারা কুরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা একথা বুঝানো হয়েছে যে, সূরা ফাতিহাতে যে ‘সীরাতুল মুস্তাকীম’ বা সরল সহজ পথের প্রার্থনা করা হয়েছে, সমগ্র কুরআন সে প্রার্থনারই জবাব। এর অর্থ হচ্ছে- “আমি তোমাদের প্রার্থনা শুনেছি এবং হিদায়াতের প্রোজ্জ্বল জ্যোতি কুরআন নাযিল করেছি, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা তোমাদের জন্য পথের দিশারী।”
হুদাল্লিল্-মুত্তাকীন (هُدًى لِلْمُتَّقِينَ)
হুদা অর্থ- হিদায়াত, পথপ্রদর্শন। কুরআন মানব জাতির জন্যই পথপ্রদর্শক।
মুত্তাকীন অর্থ- কষ্টদায়ক বস্তু হতে সাবধানতা অবলম্বন করা।
‘তাকওয়া’ শব্দের আভিধানিক অর্থ-ভয়ের জিনিস থেকে আত্মরক্ষা করা। ইসলামি পরিভাষায় পাপাচার হতে আত্মরক্ষা করার নাম তাকওয়া (রাগিব)। একবার হযরত উমর (রা) উবাই ইবনে কা‘ব (রা)- কে তাকওয়ার ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আপনি কি কখনো কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করেছেন? হযরত উমর বললেন, হাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তখন কী করেছিলেন? তিনি বললেন, আমি সাবধানতা অবলম্বন করে দ্রুত গতিতে সে পথ অতিক্রম করেছিলাম। হযরত উবাই ইবনে কাব (রা) বললেন, এটাই তাকওয়া (কুরতুবী)। অর্থাৎ সতর্ক ও সাবধানতার সাথে পথ চলা।
এই কুরআন, আল্লাহকে যারা ভয় করে তাদের জন্য পথ নির্দেশনা। এ কথার মর্ম হচ্ছে- কুরআন মাজীদ হিদায়াত ও সত্যের পথ-নির্দেশ। তবে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে কয়েকটি গুণ বর্তমান থাকা আবশ্যক। ব্যক্তিকে পরহেযগার বা মুত্তাকী হতে হবে। মন্দ, অন্যায় ও পাপ হতে বিরত থাকতে হবে। কল্যাণকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সত্যের সন্ধানী হতে হবে এবং সে অনুযায়ী জীবন যাপনের জন্য কাজ করতে হবে। তা হলে কুরআন থেকে হিদায়াত পাওয়া যাবে।
শিক্ষা
উক্ত দুটি আয়াতে থেকে আমরা যা শিক্ষা পাই, তা হলো-
- হুরুফ আল-মুকাত্তা‘আত (বিচ্ছিন্ন) অক্ষরগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আল্লাহই অবগত আছেন।
- কুরআন মাজীদে কোন সন্দেহ নেই। এটি আল্লাহর কিতাব।
- আল-কুরআন মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত (পথনির্দেশ।)
সারসংক্ষেপ
শরীআতের পরিভাষায় পথভ্রষ্ট করার বিষয়সমূহ থেকে আত্মাকে দূরে রাখার নাম ‘তাকওয়া’। আর এ বৈশিষ্ট্য যে লোকের মধ্যে পাওয়া যায় তাকে মুত্তাকী বলা হয়।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।