প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোন, এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সূরা বাকারার ২৪ ও ২৫ নং আয়াতের অনুবাদ জানতে পারবেন। সূরা বাকারার ২৪ ও ২৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ও শিক্ষা বুঝতে পারবেন।
নিম্নে সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে সূরা বাকারার ২৪ ও ২৫ নং আয়াতের অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা তুলে ধরা হলো-
অনুবাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
২৪. | فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا۟ وَلَن تَفْعَلُوا۟ فَٱتَّقُوا۟ ٱلنَّارَ ٱلَّتِى وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَٰفِرِينَ ফাইল্লাম তাফ‘আলূওয়া লান তাফ‘আলূফাত্তাকুন্না-রাল্লাতী ওয়াকূদুহান্না-ছুওয়াল হিজা-রাতু উ‘ইদ্দাত লিলকা-ফিরীন। অতঃপর যদি তোমরা এমনটা করতে না পার এবং নিঃসন্দেহে তোমরা এটা কখনও করতে পারবে না। অতএব তোমরা ভয় কর, সেই আগুনকে যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। |
২৫. | وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ كُلَّمَا رُزِقُوا۟ مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوا۟ هَٰذَا ٱلَّذِى رُزِقْنَا مِن قَبْلُ وَأُتُوا۟ بِهِۦ مُتَشَٰبِهًا وَلَهُمْ فِيهَآ أَزْوَٰجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ওয়া বাশশিরিল্লাযীনা আ-মানূওয়া‘আমিলুসসালিহা-তি আন্না লাহুম জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু কুল্লামা- রুঝিকূমিনহা- মিন ছামারাতির রিঝকান কা-লূহা-যাল্লাযী রুঝিকনা- মিন কাবলু ওয়া উতূবিহী মুতাশা-বিহাওঁ ওয়া লাহুম ফীহাআঝওয়া-জুম মুতাহহারাতুওঁ ওয়া হুম ফীহা- খা-লিদূ ন। আর যারা ইমান এনেছে ও ভালো কাজ করেছে তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার নিচ দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত। যখনই সেই জান্নাত থেকে তাদেরকে ফলমূল খেতে দেওয়া হবে তখন তারা বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেওয়া হত এটা তো তাই। তাদেরকে অনুরূপ ফলই দেওয়া হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য পূতপবিত্র সঙ্গিনী রয়েছে এবং তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। |
ব্যাখ্যা
২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
এ আয়াতটি কুরআনের অন্যতম মু‘জিযা, আল্লাহর চিরন্তন ভবিষ্যদ্বাণী ও চ্যালেঞ্জ।
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, কাফির, মুশরিক ও অমুসলিমগণ সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও কুরআনের অনুরূপ কোন সূরা তারা রচনা করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলার এ ঘোষণা ও চ্যালেঞ্জ শোনার পর কাফির ও মুশরিকরা ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
‘মানুষ ও পাথর হবে যার জ্বালানি’ দ্বারা বুঝা যায় যে, কেবল কাফিররাই জাহান্নামের জ্বালানি হবে না; বরং সে সাথে তাদের নিজেদের হাতে গড়া পাথরের মূর্তিসহ যেগুলোকে তারা দেবতা হিসেবে উপাসনা করত, সেগুলোও দোযখের ইন্ধন এবং জ্বালানি হবে। এসব দেবতা ও মূর্তিগুলো কোন অবস্থাতেই আল্লাহর সমকক্ষ নয়, তা সেখানে বাস্তবে দেখানো হবে। কুরআনের আয়াতে এরূপ চ্যালেঞ্জ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানেও এ চ্যালেঞ্জ কার্যকর রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা কার্যকর ও বলবৎ থাকবে। কিন্তু কোন যুগেই কোন পক্ষ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সে ঘোষণাই জারি করেছেন।
২৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
যারা কুরআনকে আল্লাহর বাণী ও হযরত মুহাম্মাদ (স) কে আল্লাহর নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় নিজেদের জীবন পরিচালনা করে আলোচ্য আয়াতে তাদের জন্য চির শান্তিময় জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর একত্ব ও রাসূলের রিসালাতের অস্বীকারকারীগণ তাদের উপাস্য দেব-দেবীসহ যেমন দোযখে ভীষণ শাস্তি ভোগ করবে, তেমনি তাদের বিপরীত আল্লাহভীরু সৎকর্মশীল লোকেরা জান্নাতে মহাসুখ ও পরম শান্তি উপভোগ করবে।
এ আয়াতে জান্নাতের পরম শান্তির উদাহরণগুলোর মধ্য থেকে যেসব উপকরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ-
- তলদেশ দিয়ে প্রবাহমান ঝরণাধারা
- বিভিন্ন ফল-মূল
- সতী-সাধ্বী স্ত্রী
- চিরকাল অবস্থান।
ক) তলদেশ দিয়ে প্রবহমান ঝরণাধারা
জান্নাতে আল্লাহ ইমানদার ও সৎকর্মশীল বান্দাদের চিত্তবিনোদনে ও পিপাসা নিবারণের জন্য এমন স্বচ্ছ পানির ঝরণা সৃষ্টি করেছেন যার পানি সুশীতল, সুগন্ধময় ও সুমিষ্ট হবে।
খ) বিভিন্ন ফল-মূল
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদের আহারের জন্য নানা রকম ফল-মূলের ব্যবস্থা করবেন। বেহেশতে অসংখ্য ফল ও ফুলের বৃক্ষরাজি থাকবে। বেহেশতিরা যখন যা খেতে চাইবে তখন তা দেওয়া হবে। ফল-মূলের আকৃতি পৃথিবীর বিভিন্ন ফলমূলের অনুরূপ হবে; কিন্তু স্বাদে ও গন্ধে পৃথিবীর ফল অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম ও স্বতন্ত্র হবে। পরিচিত ফল-মূল পরিবেশনের কারণ এই যে, অপরিচিত ফল-মূলের প্রতি মানুষের মন সহজে আকৃষ্ট হয় না। সুতরাং আকর্ষণ সৃষ্টির উদ্দেশেই আল্লাহ জান্নাতবাসীদের সামনে পরিচিত ফল-ফলাদি পরিবেশন করতে বলবেন।
গ) পবিত্র ও সতী সাধ্বী স্ত্রী
আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে মানুষের প্রশান্তির জন্য সঙ্গী প্রদান করবেন। বেহেশতে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত নির্মল ও পবিত্র হবে। কোনরূপ গোলমাল ও মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে না। পৃথিবীতে যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সত্যপন্থী হয় তবে বেহেশতেও তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই বসবাস করবে।
ঘ) চিরস্থায়ী অবস্থান
ইমানদার নর-নারী জান্নাতে চিরকাল অবস্থান করবেন। কারণ আনন্দ যদি স্থায়িভাবে উপভোগ করার নিশ্চয়তা না থাকে তবে মনে পরিপূর্ণ প্রশান্তি আসে না। শান্তি চলে যাওয়ার দুঃশ্চিন্তা প্রতি মুহূর্তে মনে উদিত হলে মনে পরিপূর্ণ স্বস্তি থাকে না। তাই আল্লাহ ঘোষণা করে দিয়েছেন, বেহেশতে মানুষ চিরকাল অবস্থান করবে।
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চূড়ান্তভাবে মানুষকে বেহেশতে ও দোযখে প্রবেশ করানোর পর দুম্বা আকারের মৃত্যুকে সকলের সামনে জবাই করে ফেলা হবে, যাতে জান্নাতীদের মনে মৃত্যুভয় এবং জাহান্নামীদের মনে শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার আশা সৃষ্টি হতে না হয়।
শিক্ষা
এ দুটি আয়াত থেকে আমরা এ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি যে-
- দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার জন্য ইমান আনা জরুরি।
- আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানের সাথে সাথে তার নাযিলকৃত কুরআনকে জীবন বিধান রূপে গ্রহণ করতে হবে।
- সৎ কর্মমূলক জীবন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।