Skip to content

যাকাতের হিসাব/নিসাব ও যাকাত প্রদানের খাত

যাকাতের হিসাব, নিসাব ও যাকাত প্রদানের খাত

যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত। ঈমান আনার পর নামাজ, রোজা ও হজ্জ এর মত এটিও একটি বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ইবাদত।

যাকাত নামক এই ইবাদতে ধনী মুসলিমগণ এবং অভাবী মুসলিমগণ অংশগ্রহণ করেন। এখানে ধনী মুসলিমগণ নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ/সম্পদের মালিক হলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ/সম্পদ গরিব মুসলিমদের প্রদান করেন।

নিম্নে সোনা, রুপা প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু বা নগদ টাকার ওপর যাকাতের হিসাব/নিসাব তুলে ধরা করা হলো-

(১) যাকাতের হিসাব/নিসাব

যাকাতের হিসাব, নিসাব

নিসাব অর্থ পরিমাণ। সাহিবে নিসাব মানে যাকাত প্রদানের নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ যার আছে।

সারা বছর যার কাছে নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৫ গ্রাম সোনা) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য (৫৯৫ গ্রাম রুপা) থাকে অথবা এর বাজারমূল্য সমপরিমাণ টাকা থাকে এরূপ প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর যাকাত প্রদান ফরয (বাধ্যতামূলক), যা বছরে শতকরা ২.৫% পারসেন্ট (মোট সম্পদের চল্লিশ ভাগের একভাগ) যাকাতের হার নির্ধারিত হয়েছে। এটাই যাকাতের হিসাব/নিসাব।

ধনীর সম্পদের ওপরে মজুদকৃত অর্থ উপরোক্ত হিসাব নিসাব পরিমাণ না হলে যাকাত দিতে হয় না। এক বস্তু থেকে একই বছর দু’বার যাকাত গ্রহণ করা যাবে না।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, 

“এক বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মালের যাকাত নেই।”

(তিরমিযী হা/৬৩২; ইবনু মাজাহ হা/১৭৯২; আলবানী, সনদ ছহীহ)

নিসাব পরিমাণ বলতে কি বুঝানো হয়: সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৫ গ্রাম সোনা) অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য (৫৯৫ গ্রাম রুপা) এর বাজারমূল্যকে নিসাব বলা হয়।

জ্ঞাতব্য: স্বর্ণ-রূপা দ্বারা উদ্দেশ্য খালিস স্বর্ণ-রূপা, সেটি মুদ্রা হতে পারে, যেমন স্বর্ণের জুনাই বা পরিশোধিত স্বর্ণও হতে পারে, যা দিয়ে এখনো গহনা তৈরি করা হয় নি। অনুরূপ আকরিক অর্থাৎ অশোধিত স্বর্ণ-রূপার বিধান।

মাসআলা: কেউ স্বর্ণ-রূপা দু’টি বস্তুর মালিক, একটিও নিসাব বরাবর নয়, সে কি স্বর্ণ-রূপা জমা করবে? অর্থাৎ স্বর্ণ ও রূপার বাজার দর যোগ করে যদি দেখে শুধু স্বর্ণ বা শুধু রূপার নিসাব বরাবর হয়, তার কি যাকাত দেওয়া ওয়াজিব?

বিশুদ্ধতম অভিমত হচ্ছে, স্বর্ণ ও রূপা স্বতন্ত্র দু’টি বস্তু, একটির সাথে অপরটি যোগ করে নিসাব পূর্ণ করার কোনও দলীল নেই। কেননা আহলে ইলমদের বিশুদ্ধ মত মোতাবেক এই অবস্থায় স্বর্ণের সাথে রূপা যোগ করা জরুরি নয়, স্বর্ণ বা রূপা কারও ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না, যতক্ষণ না স্বতন্ত্রভাবে স্বর্ণ বা রূপা যাকাতের নিসাব বরাবর হবে।

এ কথা নগদ অর্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, অর্থাৎ কেউ যদি নগদ অর্থের মালিক হয়, যাকাতের নিসাব পূর্ণ করার জন্য স্বর্ণ বা রূপা বা ব্যবসায়ী পণ্যের সাথে নগদ অর্থ যোগ করা জরুরি। কারণ, যাকাতের সম্পদ বলতে যা বুঝানো হয়, অলঙ্কার, নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ী পণ্য তার অন্তর্ভুক্ত। এ কথার অর্থ স্বর্ণের যাকাত টাকা দিয়ে, টাকার যাকাত স্বর্ণ দিয়ে আদায় করা বৈধ। কারণ, একটি অপরটির প্রতিনিধিত্ব করে।

অতএব, কারও নিকট যদি নগদ অর্থ ও স্বর্ণ থাকে, একটির সাথে অপরটি যোগ করা জরুরি। অর্থাৎ স্বর্ণকে বাজারমূল্য অনুযায়ী টাকার অংকে নিয়ে আসবে, অতঃপর নগদ অর্থ ও স্বর্ণের মূল্য হিসেব করবে, যদি নিসাব পরিমাণ হয় উভয়ের যাকাত দিবে, অর্থাৎ যৌথভাবে স্বর্ণ ও নগদ অর্থের যাকাত দিবে, যদি তার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়।

অনুরূপ কারও নিকট যদি নগদ অর্থ ও রূপা থাকে অথবা নগদ অর্থ, স্বর্ণ ও রূপা থাকে, সে স্বর্ণ-রূপার মূল্য ও নগদ অর্থ যোগ করে যাকাত দিবে, তবে একটি বিষয় স্মরণ রাখবে যে, এক বস্তু থেকে একই বছর দু’বার যাকাত গ্রহণ করা যাবে না।

(২) যাকাতের খাত: যাকাত প্রদানের খাত কয়টি?

যাকাতের খাত, যাকাত প্রদানের খাত কয়টি

যাকাত প্রদানের খাত ৮টি।

যাকাত ধনবান মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরয। ইসলামে যাকাত রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস। যাকাত আদায় ও বণ্টনের জন্য রাষ্ট্রীয় বিভাগ ছিল। কোন লোক ব্যক্তিগতভাবে এটি আদায় ও ব্যয় করলে এর পুরোপুরি হক আদায় হয় না। কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক এটি আদায় ও খরচ করতে হবে। 

আল-কুরআনে বলা হয়েছে,

“যাকাত কেবল মিসকীন ও অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং যাকাত সংগ্রহে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের এবং যাদের অন্তরকে (আল্লাহর দিকে) আকৃষ্ট করা প্রয়োজন তাদের জন্য এবং বন্দিদের মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য আল্লাহর পথে- এবং মুসাফিরের জন্য এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।”

(সূরা তাওবা ৯:৬০)

কুরআনে উল্লিখিত এ ৮টি যাকাতের খাতেই যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। যথা-

  1. ফকির অর্থাৎ যারা একেবারে নিঃস্ব নয়; কিন্তু যাদের মালের পরিমাণ নিসাবের কম, তাদের এ শ্রেণীতে গণ্য করা হয়।
  2. মিসকীন বা বিত্তহীন লোক যার কিছুই নেই। মিসকীন শব্দের অর্থ অচল বা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, অন্ধ ও বিকলাঙ্গ ব্যক্তিরা এ পর্যায়ভুক্ত।
  3. যাকাত সংগ্রহকারী কর্মচারীবৃন্দ। এ সকল কর্মচারীর জন্য যাকাত তহবিল থেকে ব্যয় করা যাবে ।
  4. সত্যের সন্ধানী ব্যক্তিগণ। যে সমস্ত ব্যক্তি ইসলামের প্রতি অনুরাগী, কিন্তু অর্থের অভাবে সেই সত্যতা প্রকাশ করতে সক্ষম নয়, তাদের যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করা যায়। ইসলাম গ্রহণ করার ফলে যারা নিজস্ব বিষয়-সম্পত্তি হারিয়েছে তাদেরও যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে।
  5. বন্দিদের মুক্তিদানের ব্যাপারে তাদের মালিকদের যাকাত তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা যায়।
  6. ঋণ পরিশোধে অসমর্থ লোক। সমাজে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে ঋণমুক্ত করার জন্য এক-অষ্টমাংশ ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু এ অর্থ এমনভাবে প্রদান করতে হবে যাতে অলসতার প্রশ্রয় দেওয়া না হয়।
  7. বিপদগ্রস্ত ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছবার জন্য সাহায্যের মুখাপেক্ষী প্রথিক। প্রবাসে অবস্থানকালে অর্থের অভাবের কারণে মুসাফিরগণ বিপন্ন হয়ে পড়লে তাদের যাকাত তহবিল থেকে সাহায্য করা যায়।
  8. ইসলামের রক্ষা ব্যবস্থা। অর্থাৎ ফি-সাবিলিল্লাহি বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা যেতে পারে। জিহাদে যোগদানকারীকেও যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।

(৩) যাকাত ফরয হওয়ার শর্ত

যাকাত ফরয হওয়ার শর্তসমূহ

নিম্নলিখিত শর্তে একজন মুসলমানের প্রতি যাকাত ফরয। যেমন-

  • যাকাতদাতাকে মুসলমান হতে হবে;
  • যাকাত প্রদানকারীকে বুদ্ধিমান হতে হবে;
  • যাকাত প্রদানকারীকে স্বাধীন হতে হবে, পরাধীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয নয়;
  • যাকাত প্রদানকারীকে বালেগ হতে হবে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয নয়;
  • নিসাবের মালিক হতে হবে। নিসাবের কম হলে যাকাত ফরয নয়;
  • ঋণমুক্ত হতে হবে। ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তির ওপর যাকাত দেওয়া ফরয নয়;
  • নিসাবের মালিক থাকা অবস্থায় সম্পদ পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হবে; পাগল, অমুসলমানের ওপর যাকাত ফরয নয়।

কেবল সোনা, রুপা প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু বা নগদ টাকার ওপরই যাকাত ফরয নয়, মুসলমানদের অনেক সম্পদের ওপরই যাকাত ফরয। যেমন-

  • খেতের ফসল;
  • গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া-দুম্বা, উট;
  • ব্যবসায়িক পণ্যদ্রব্য।

এই তিনটি ক্ষেত্রেও যাকাত দিতে হয়।

নিম্নে খেতের ফসল, গবাদি পশু এবং ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর যাকাতের হিসাব/নিসাব তুলে ধরা হলো-

(৪) খেতের ফসলের যাকাতের হিসাব

খেতের ফসলের যাকাতের হিসাব

যে সকল শস্যের যাকাত ফরয: যে সকল শস্য জমিতে উৎপন্ন হয় তা যদি মানুষের সাধারণ খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয় এবং তা ওযন ও গুদামজাত করা যায়, সে সকল শস্যেই কেবল যাকাত ফরয। হাদীছে বর্ণিত গম, যব, কিসমিস ও খেজুর চারটি শস্যের যাকাতের কথা বলা হলেও এই চারটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং ওযন ও গুদামজাত সম্ভব সকল শস্যই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ধান, ভুট্টা ইত্যাদি।

গুদামজাত অসম্ভব এমন শস্যের যাকাত ফরয নয়। যেমন- শাক-সবজি বা কাঁচা মালের কোন যাকাত (ওশর) নেই।

কৃষিপণ্যের যাকাতের হিসাব/নিছাব/পরিমাণ: বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা নদী-নালার পানিতে উৎপন্ন ফসলের উপর ‘ওশর’ (দশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। আর কৃত্রিম সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের উপর ‘অর্ধ ওশর’ (বিশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত ওয়াজিব। পাঁচ ওয়াসাক (১৮ মন ৩০ কেজি) এর কম উৎপন্ন ফসলের যাকাত নেই।

ওয়াসাক’-এর পরিমাণ: ১ ওয়াসাক সমান ৬০ ‘ছা’। অতএব ৫ ওয়াসাক সমান (৬০ × ৫) = ৩০০ ‘ছা’। ১ ‘ছা’ সমান ২ কেজি ৫০০ গ্রাম হলে ৩০০ ‘ছা’ সমান ৭৫০ কেজি হয়। অর্থাৎ ১৮ মন ৩০ কেজি। এই পরিমাণ শস্য বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয। আর নিজে পানি সেচ দিয়ে উৎপাদন করলে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরয।

বৃষ্টির পানি ও কৃত্রিম সেচ উভয় মাধ্যমে উৎপাদিত শস্যের যাকাতের পরিমাণ: যে শস্য শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি অথবা শুধুমাত্র কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় না। বরং কিছু অংশ বৃষ্টির পানিতে এবং কিছু অংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়, সে শস্যের যাকাত বের করার নিয়ম হল, যদি বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হয় তাহলে, দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে  বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যাদি অর্ধাংশ বৃষ্টির পানিতে এবং অর্ধাংশ কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাহলে অর্থাৎ দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ যাকাত দিতে হবে।

অর্থাৎ কারো ২০ মণ ধান উৎপন্ন হওয়ার জন্য বৃষ্টির পানির পরিমাণ বেশী হলে তার দশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ দুই মণ যাকাত দিতে হবে। আর কৃত্রিম সেচের পরিমাণ বেশী হলে বিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ এক মণ যাকাত দিতে হবে। আর অর্ধাংশ বৃষ্টির পানি ও অর্ধাংশ নিজের সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হলে তার দশ ভাগের তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ এক মণ বিশ কেজি যাকাত দিতে হবে।

কোন সময় শস্যের যাকাত আদায় করতে হয়: শস্য যখন পরিপক্ক হবে এবং তা কর্তন করা হবে তখন শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, শস্য কর্তন করে তা সংরক্ষণের যথাস্থানে রাখার পূর্বে নষ্ট বা হারিয়ে গেলে তার উপর যাকাত ফরয নয়। তবে তা সংরক্ষণের যথাস্থানে রাখার পরে মালিকের অলসতা বা অবহেলার কারণে নষ্ট হলে বা হারিয়ে গেলে তার উপর যাকাত ফরয। আর তা সংরক্ষণের যথাসাধ্য চেষ্টা করার পরে নষ্ট বা হারিয়ে গেলে তার উপর যাকাত ফরয নয়।

শস্য উৎপাদনের ব্যয় বাদ দিয়ে যাকাত আদায় করতে হবে কি: হ্যা, খরচ যাই হোক না কেন তা বাদ না দিয়ে উৎপাদিত পূর্ণ শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যদি কেউ ঋণ করে থাকে, তাহলে শস্য কর্তনের পরে প্রথমে শস্য উৎপাদনের জন্য যে ঋণ নিয়েছে তা পরিশোধ করে অবশিষ্ট শস্যের যাকাত আদায় করতে পারে।

বাৎসরিক লিজ নেয়া জমি থেকে উৎপাদিত শস্যের যাকাত: লীজের টাকা বাদ দিয়ে বাকী শস্যের যাকাত আদায় করতে হবে, না-কি উৎপাদিত সমুদয় শস্য হিসাব করে যাকাত দিতে হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে গ্রহণীয় মত হল, জমিতে উৎপাদিত শস্য নিছাব পরিমাণ হলে তার ওশর বা যাকাত প্রদান করা আবশ্যক।

জমিতে শস্যের পরিবর্তে মাছের চাষ করা হলে তার যাকাতের বিধান: কোন জমিতে শস্যের পরিবর্তে মাছের চাষ করলে মাছের ওশর বা যাকাত দিতে হবে না। কারণ মাছের কোন ওশর নেই। তবে মাছের চাষ যদি ব্যবসায় পরিণত হয়, তাহলে বছর শেষে মূলধন ও লভ্যাংশ হিসাব করে নিছাব পরিমাণ হলে, তাহলে শতকরা ২.৫ টাকা বা ৪০ ভাগের ১ ভাগ হিসাবে তার যাকাত দিতে হবে।

আলুর যাকাতের বিধান: আলুর ওশর বা যাকাত দিতে হবে না। কেননা যমীন থেকে উৎপাদিত যেসব খাদ্য-শস্য স্বাভাবিকভাবে এক বছর পর্যন্ত থাকে না বরং তার আগেই পচন দেখা দেয়, সেগুলোর ওশর নেই। তবে এগুলির বিক্রয়লব্ধ টাকা যদি এক বছর সঞ্চিত থাকে এবং তা যদি নিছাব পরিমাণ হয়, তাহলে শতকরা ২.৫ টাকা বা ৪০ ভাগের ১ ভাগ হিসাবে তার যাকাত দিতে হবে।

(৫) গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও উটের যাকাতের হিসাব

গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও উটের যাকাতের হিসাব

গৃহপালিত গবাদিপশু হলো গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া ও উট। এছাড়া অন্য কোনো পশুতে যাকাত ফরয হয় না। কেবল অন্যসব পশু দিয়ে ব্যবসা করা হলে তখন যাকাত ফরয হয়।

গবাদিপশুর যাকাত আবশ্যক হওয়ার জন্য শর্ত: গবাদিপশুর যাকাত আবশ্যক হওয়ার জন্য অধিকাংশ ফকীহ শর্ত দিয়েছেন যে পশু অবশ্যই ‘সায়েমা’ হওয়া। সায়েমা হলো যে পশু বছরের অধিকাংশ সময় বৈধ (সাধারণ) চারণভূমি থেকে খাদ্য আহরণ করে। আর যে পশুকে মালিক নিজ খরচে খাওয়ায় সেটার উপর যাকাত নেই, তবে সেই পশু ব্যবসার জন্য হলে তখন যাকাত আবশ্যক হবে।

আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, সায়েমা (চারণভূমিতে চরে খায় এমন) উট, গরু ও ছাগল-ভেড়ার ওপর যাকাত ফরয হবে; যদি সেগুলোর সংখ্যা নেসাব পরিমাণে পৌঁছে। আর নেসাবের সূচনা উটের ক্ষেত্রে পাঁচটি থেকে। গরুর ক্ষেত্রে ত্রিশটি থেকে। আর ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে চল্লিশটি থেকে।

যে সব পশুকে মালিক খাদ্য দেয় এবং যেগুলোকে কাজে খাটায় সেগুলোর উপর যাকাত ফরয কিনা এ ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে যাকাত ফরয নয়। সুতরাং যে পশু বা উটকে মালিক নিজে খাদ্য দেয় সেটার উপর যাকাত ফরয হবে না। আর কাজে কাজে ব্যবহৃত পশুতে কোনো সদাকা (যাকাত) নেই।

তবে ইমাম মালেক ও একদল আলেমের মতে, যে পশুকে মালিক নিজে খাদ্য দেয় এবং যে পশুকে কাজে খাটানো হয় সেগুলোর উপরও ফরয হয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

উটের যাকাতের হিসাবনেসাব: আলেমদের ঐকমত্যে পাঁচটি উট। পাঁচ উটে একটা ছাগল বা ভেড়া যাকাত দিতে হবে। এরপর দশটি উটে দুটি ছাগল বা ভেড়া। পনেরটি উটে তিনটি ছাগল বা ভেড়া। বিশটি উটে চারটি ছাগল বা ভেড়া। চব্বিশটি বা তার চেয়ে কম সংখ্যক উটের যাকাত প্রতি পাঁচটি উটের বিপরীতে একটি ভেড়া বা ছাগল দিয়ে আদায় করতে হবে।

যদি উটের সংখ্যা পঁচিশে পৌঁছে তখন পঁয়ত্রিশটি পর্যন্ত উটের যাকাত একটি মাদী ‘বিনতে মাখায’ (যে উট দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছত্রিশে পৌঁছলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি মাদী ‘বিন্তে লাবূন’ (যে উট তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছেচল্লিশে পৌঁছলে ষাট পর্যন্ত সঙ্গমযোগ্য একটি ‘হিক্কা’ (যে মাদী উট চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা একষট্টিতে পৌঁছলে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি ‘জাযা‘আ’ (যে উটনী পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছে)। উটের সংখ্যা ছিয়াত্তরে পৌঁছলে নব্বই পর্যন্ত দুইটি ‘বিনতে লাবূন’। উটের সংখ্যা একানব্বইতে পৌঁছলে একশ বিশ পর্যন্ত সঙ্গমযোগ্য দুটি ‘হিক্কা’। উটের সংখ্যা একশ বিশের অধিক হলে (অতিরিক্ত) প্রতি চল্লিশটির জন্য একটি করে ‘বিনতে লাবূন’ এবং (অতিরিক্ত) প্রতি পঞ্চাশটির জন্য একটি করে ‘হিক্কা’।

আর যার কাছে চারটির বেশি উট নেই সেগুলোর উপর কোন যাকাত ফরয হবে না। তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু উটের সংখ্যা যখন পাঁচটিতে পৌঁছবে তখন একটি ভেড়া বা ছাগল ওয়াজিব হবে।

গরুর যাকাতের হিসাব/নেসাব: অধিকাংশ আলেমের মতে ত্রিশটি। প্রতি ত্রিশটি গরুতে একটি তাবী‘ অথবা তাবী‘য়া এবং প্রতি চল্লিশটি গরুতে একটি মুসিন্নাহ।

তাবী হলো এমন গরুর বাছুর যে এক বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এমন গরুর বাছুরকে তাবী (পশ্চাৎগামী) বলা হয় যেহেতু সে তার মাকে অনুসরণ করে চলে। (আর স্ত্রী-লিঙ্গের ক্ষেত্রে তাবীয়া বলা হয়)। মুসিন্নাহ হলো এমন গাভী যার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এমন গরুর অন্য নাম সানিয়্যাহ।

ছাগল-ভেড়ার যাকাত: চারণভূমিতে চরে এমন ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে চল্লিশটি হতে একশ বিশটি পর্যন্ত একটি ছাগল বা ভেড়া। এর বেশি হলে দুইশটি পর্যন্ত দুটি ছাগল বা ভেড়া। দুইশর অধিক হলে তিনশ পর্যন্ত তিনটি ছাগল বা ভেড়া। তিনশর বেশি হলে প্রতি একশ-তে একটি করে ছাগল বা ভেড়া। 

কারো মালিকানায় চারণভূমিতে চরে এমন ছাগলের সংখ্যা চল্লিশ হতে একটিও কম হলে তার উপর যাকাত নেই। তবে স্বেচ্ছায় দান করলে তা করতে পারে।

(৬) ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাতের হিসাব

ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাতের হিসাব

অর্থাৎ যেসব বস্তু দিয়ে ব্যবসা করা হয়, যেমন ব্যবসার নানা পণ্য, জমি, গাড়ি ও ব্যবসার অন্যান্য সামগ্রী। অধিকাংশ আলিম বলেন: ব্যবসায়ী পণ্যে যাকাত ওয়াজিব। এটিই বিশুদ্ধ মত।

ব্যবসায়ী পণ্যে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ:

  1. মালিকানা পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবসায়ী পণ্যের পূর্ণ মালিক হওয়া, যেমন ক্রয় বা হেবা বা মিরাস বা অন্য কোনোভাবে ব্যবসায়ী পণ্যের পূর্ণ মালিক হওয়া। এটিই বিশুদ্ধ মত। অতএব, কেউ যদি ব্যবসায়ী পণ্যের আমানতদার বা রক্ষণাবেক্ষণকারী বা জিম্মাদার হয় তার ওপর যাকাত ফরয হবে না।
  2. ব্যবসায়ী পণ্যের উদ্দেশ্য ব্যবসা হওয়া, যদি জমা ও ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে সম্পদের মালিক হয়, ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে গণ্য হবে না।
  3. ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য স্বর্ণ বা রূপার নিসাব সমপরিমাণ হওয়া, অর্থাৎ সে যদি যাকাতের জন্য স্বর্ণের নিসাবকে গ্রহণ করে, তাহলে দেখবে তার ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য স্বর্ণের নিসাবের মূল্য বরাবর কি-না। আর যদি রূপার হিসেব আমলে নেয়, তাহলে দেখবে তার ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য রূপার নিসাবের মূল্য বরাবর কি-না।
  4. ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হওয়া।

ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাতের হিসাব/নিসাব: ব্যবসায়ী পণ্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়, প্রতি হিজরী বছর তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে। অধিকাংশ আলিম এ কথা বলেছেন, এটিই বিশুদ্ধ। যদি ব্যবসায়ী পণ্যে যাকাত ওয়াজিব হয়, নিম্নের নিয়মে যাকাত বের করবে।

প্রথমত: হিজরী এক বছর পূর্ণ হলে ব্যবসার পণ্য পৃথক করবে, যেমন যাকাত দানকারীর নিকট যত মাল আছে সব মালের বর্তমান পাইকারি দর জানবে, অর্থাৎ যে মূল্য দিয়ে কিনেছে বা যে দামে বিক্রি করবে সেই দাম নয়, বরং বর্তমান দাম হিসেব করবে।

দ্বিতীয়ত: যাকাতের জন্য নিজের তরলমানি বা নগদ-ক্যাশ হিসেব করবে। যেমন, স্বর্ণ, রূপ ও নগদ অর্থ, তবে যার যাকাত দিয়েছে একই বছর তার ওপর দ্বিতীয়বার যাকাত ওয়াজিব হবে না। অতঃপর তার সাথে ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য যোগ করবে,

উদাহরণস্বরূপ যদি স্বর্ণ, রূপা ও নগদ অর্থ থাকে, স্বর্ণ ও রূপার মূল্য হিসেব করবে নিম্নের পদ্ধতিতে-

একগ্রাম স্বর্ণের বাজার দরকে তার নিকট যত গ্রাম স্বর্ণ রয়েছে, সেই সংখ্যা দিয়ে পূরণ দিবে; একই পদ্ধতি অনুসরণ করবে রূপার ক্ষেত্রে, অতঃপর স্বর্ণ ও রূপার মূল্যের সাথে যোগ করবে নগদ অর্থ, অতঃপর স্বর্ণ-রূপার মূল্য, নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য যোগ করবে। এভাবে পুরো সম্পদের যাকাত বের করবে, এক হাজার টাকা থেকে ২৫ টাকা, অর্থাৎ স্বর্ণ ও রূপার মূল্য, নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য থেকে ২.৫ পার্সেন্ট যাকাত দিবে।

কেউ যদি স্বর্ণ ও রূপার ব্যবসা করে, সে স্বর্ণ-রূপার যাকাত দিবে ব্যবসায়ী পণ্য হিসেবে, যদি তার শর্ত পূরণ হয়। এ মাসআলায় ব্যবহারের অলঙ্কার যোগ হবে না, কারণ সেটি ব্যবসায়ী পণ্য নয়, অতএব, তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না।

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জ্ঞাতব্য:

  • যদি কারও নিকট ঋণ থাকে তার ওপর যাকাত নেই। এটি বিশুদ্ধ মত।
  • কেউ যদি ঋণগ্রস্ত হয়, আর বছর শেষে ঋণ পরিশোধ করার সময় হয়, তবে আগে ঋণ দিবে, ঋণের যাকাত তার ওপর নেই। যদি ঋণ পরিশোধ করার সময় না হয়, তাহলে ঋণ এবং ঋণ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ও ব্যবসায়ী পণ্যের মূল্য যোগ করে যাকাত দিবে, কারণ তার মালিকানায় থাকা সকল সম্পদের যাকাত দেওয়া তার ওপর ওয়াজিব।
  • চলতি বছর ট্যাক্স, কাস্টমস, কর্মচারীদের বেতন, ঘর ভাড়া, ব্যক্তিগত ও সংসার খরচ বাবদ যা ব্যয় হয়েছে তার ওপর যাকাত নেই।
  • জ্ঞাতব্য যে, ব্যবহারের আসবাব-পত্রে যাকাত নেই, অর্থাৎ যে ঘরে ব্যবসায়ী পণ্য রাখা হয় সে ঘরের যাকাত নেই। কারণ যাকাত ওয়াজিব হয় ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর। হ্যাঁ, কেউ যদি ঘরের ব্যবসা করে এবং এক বা একাধিক ঘরের মূল্য যাকাতের নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তার ওপর যাকাত ফরয হবে, যদি হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়।
  • অনুরূপ যেসব আসবাব-পত্র মূলধন, যেমন উৎপাদন যন্ত্র, মেশিন ও পরিবহন গাড়ি ইত্যাদির ওপর যাকাত নেই। অনুরূপ ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সির ওপর যাকাত নেই, তবে তার মুনাফায় যাকাত ওয়াজিব, যদি তার নিসাব পরিমাণ মুনাফার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়।
  • কেউ এক পণ্যের ব্যবসা করে, অতঃপর যদি দ্বিতীয় পণ্যের ব্যবসা শুরু করে, কোন পণ্য থেকে বছর গুনবে? এ মাসআলায় বিশুদ্ধ মত ও উত্তম পন্থা হচ্ছে প্রথম পণ্য থেকে বছর গণনা করা। কারণ, ব্যবসার ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্যই আসল, পণ্য আসল নয়।
  • ব্যবসায়ী পণ্যের যাকাত ব্যবসায়ী পণ্য দিয়ে দেওয়া বৈধ, অনুরূপ তার মূল্য দিয়ে দেওয়াও বৈধ।
  • দু’জন ব্যক্তি এক পণ্যের ব্যবসা করে, তাদের কারও অংশই নিসাব পরিমাণ নয়, কিন্তু দু’জনের অংশ যৌথভাবে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায়, এমতাবস্থায় তাদের কারও ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না, যতক্ষণ না তাদের প্রত্যেকের অংশ যাকাতের নিসাব সমপরিমাণ হবে। হ্যাঁ, দু’জন থেকে যার অংশ নিসাব পরিমাণ হবে, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে, অপরের ওপর নয়।
  • উদাহরণত কেউ যদি গাড়ি অথবা নিজের ব্যবহারের জন্য জমি অথবা বাড়ি নির্মাণ করার জন্য খরিদ করে, যা দিয়ে তার ব্যবসার নিয়ত ছিল না, অতঃপর প্রয়োজন না থাকায় অথবা অধিক মুনাফার উদ্দেশ্যে সেটি বিক্রি করে দেয়, এতে উক্ত গাড়ি ও জমি ব্যবসায়ী পণ্য হবে না। কারণ, এগুলো ব্যবসার জন্য খরিদ করা হয় নি। অতএব, তাতে যাকাত নেই। আর যদি নিজের সংগ্রহে রাখার জন্য কোনও বস্তু খরিদ করে অতঃপর সেটি দিয়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেয়, যখন থেকে ব্যবসার সিদ্ধান্ত নিবে তখন থেকে ব্যবসায়ী পণ্য হবে। তার নিসাব পরিমাণ মূল্যের ওপর যদি হিজরী এক বছর পূর্ণ হয় যাকাত ওয়াজিব হবে।

(৭) যাকাত ও সাদাকা (দানের) মাঝে পার্থক্য

যাকাত ও সাদাকা (দানের) মাঝে পার্থক্য

ইসলামে দান দুই প্রকার- বাধ্যতামূলক ও স্বেচ্ছামূলক। বাধ্যতামূলক দান হচ্ছে যাকাত। স্বেচ্ছামূলক দানকে বলা হয় সাদাকা। সাদাকার জন্য কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যে কোন মুসলিম যে কোন সময়ে এ ধরনের দান করতে পারে।

সাদাকা বাধ্যাতমূলক না হলেও এটি খুবই প্রশংসনীয় কাজ। কুরআনে সাদাকার সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে।

সাদাকার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। মানুষ তার সামর্থ্যানুযায়ী যত ইচ্ছা সাদাকা দিতে পারে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আল্লাহর জন্য ইচ্ছামত দান করা ভালো।

নিম্নলিখিত ব্যক্তিকে সাদাকা গ্রহণকারী হিসেবে অনুমোদন করা হয়। যথা-

  • নিকট আত্মীয়-স্বজন;
  • ইয়াতীম;
  • অভাবগ্রস্ত;
  • মুসাফির;
  • ভিক্ষুক;
  • বন্দির মুক্তিপণ ক্রয়ের জন্য;
  • আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে জীবিকা উপার্জনে অক্ষম এমন গরিব লোক।

একজন মুসলমানকে বাৎসরিক জীবন নির্বাহের পর দেনা-পাওনা বাদে যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাকে যাকাত দিতে হবে। যাকাতের সম্পদ কুরআন নির্দিষ্ট ৮টি খাতে প্রদান করতে হবে। যাকাত বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত। সাদাকা হলো সেচ্ছা দান। সাদাকার ফযিলত ও সাওয়াব অনেক।

প্রিয় দ্বীনী ভাই-বোন, উপরোক্ত আলোনার মাধ্যমে আমরা যাকাতের হিসাব/নিসাব ও যাকাত প্রদানের খাত কয়টি ও কি কি তা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে পারলাম।

আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো তাহলে ও উপকারি আসে তাহেল অবশ্যই অপর মুসলিম ভায়ের সাথে শেয়ার করে দিবেন। এ ধরণের উপকারি ইসলামিক কন্টেন্ট পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। জাজাকাল্লাহ খায়রান।

[সূত্র: ওপেন স্কুল, islamqa.info ও hadithbd.com]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts