Skip to content

শরিয়ত ও তাসাউফের মধ্যে সম্পর্ক

শরিয়ত ও তাসাউফের মধ্যে সম্পর্ক

নিম্নে শরিয়ত ও তাসাউফের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

শরিয়ত হলো আল্লাহ ও তার রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর দিকনির্দেশনার সমষ্টি। অতএব, শরিয়তের প্রধান বা মৌলিক উৎস দুইটি। যথা- আল্লাহর বাণী কুরআন ও তার রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতি (সুন্নাহ)।

অপরদিকে, তাসাউফ হলো কুরআন ও সুন্নাহকে পাশ কাটিয়ে, ইসলামের নাম দিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা উদ্দেশ্যের কথা বলে, মানব সৃষ্ট নতুন একটি মতবাদ। তাসাউফেরই সমার্থক সুফিবাদ।

ইসলাম হলো আল্লাহর বাণী কুরআন ও তার রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর বাণী, কর্ম ও মৌনসম্মতি (সুন্নাহ)। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা জন্য করে পবিত্র কুরআন ও মুহাম্মদ (সাঃ) এর দেখানো ও শেখানো মতবাদ বাদ দিয়ে, মানুষের সৃষ্টি করা নতুন পদ্ধতি ও মতবাদ সৃষ্টি করা মানে পথভ্রষ্টতা।

তাই বলা যায়, ইসলামি শরিয়ত ও তথাকথিত সুফিবাদ বা তাসাউফের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তোমাদের প্রত্যেকের জন্য ‘শরিয়ত’ ও সুষ্ঠপথ নির্ধারণ করেছি।”

(সূরা মায়িদা-৫: ৪৮) 

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। তাই স্বাভাবিক কারণেই ইসলামের সব বিধি-বিধান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মুসলিম জাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবন, আত্মার পরিশুদ্ধিসহ সর্ব প্রকার দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।

ইসলাম সকল যুগের সকল প্রকার মানুষের জন্য প্রয়োজ্য। এর কোন পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন নেই। ইসলাম নিখুঁত নির্ভুল, যথাযথ ও সর্বত্তোম জীবন ব্যবস্থা। কারণ এটা মানব সৃষ্ট ব্যবস্থা নয়, এটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আলামেনের পক্ষ থেকে। ইসলামে তাসাউফ সাধানা বা সুফিবাদ নামক মানব সৃষ্ট কোন মতমাদ বা অন্য কোন ব্যবস্থা স্থান নেই।

বিদআতপন্থী তথাকথিত সুফিবাদের সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্ক নেই। সুতরাং যারা তাসাউফ সাধনা মানেন কিন্তু শরিয়ত মানার প্রয়োজন বোধ করেন না-এরূপ সুফিবাদকে ইসলাম সমর্থন করে না। কাজেই তথাকথিত যে সব বিদআতপন্থী সুফি ইসেোমের মৌলিক ইবাদত সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি পালন করবে না, তারা প্রকৃত মুসলমান নয়। অনুরূপভাবে যারা ইসলামি শরিয়তকে বাদ দিয়ে কেবল তাসাউফ সাধনা বা মোরাকাবার নামে ধ্যানমগ্ন থাকার ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন-সেটাকেও প্রকৃত তাসাউফ বা সুফিবাদ বলা যায় না। তাই স্পষ্ট করেই বলা যায়- শরিয়ত ছাড়া তাসাউফ হতে পারে না। শরিয়ত ছাড়া তাসাউফ বৈরাগ্যবাদের শামিল। বৈরাগ্যবাদের সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্ক নেই।

ইসলামে বৈরাগ্যবাদ নেই। ইসলাম বিশ্বাসের ধর্ম, ইসলাম কর্মের ধর্ম। বিশ্বাস ও কর্মের সমন্বয় ছাড়া ইসলাম ধর্ম অর্থবহ হয় না। পবিত্র ইসলাম ধর্ম কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা চলে। কুরআন ও সহিহ হাদিসের বিধি-বিধানের সাথে সম্পর্ক থাকবে না- ইসলামে এমন তাসাউফের স্থান নেই।

সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সুফিবাদ বা তাসাউফ শাস্ত্র ইসলামের অংশ নয়।

মূলত, সাহাবী ও তাবেঈদের যুগ থেকে খালেস ইসলামী তাসাউফের একটি ধারা চলে আসছিল। এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনই ছিল এর একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। কিন্তু পরবর্তীতে এর কর্মধারায় নানা আবর্জনা এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে গেল যে, মুসলিমদের এক বিরাট গোষ্ঠিও এই আবর্জনা ধোয়া পানি পান করেই আত্মতৃপ্তি লাভ করতে লাগল। হিজরী অষ্টম শতকে এসে সুফীবাদ এক গোমরাহী ও ভ্রান্ত মতবাদে পরিণত হয়।

তাসাউফের লেবাস ধরে নির্ভেজাল ইসলামী আকীদাহর বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রীক দর্শন, সর্বেশ্বরবাদ, অদ্বৈত্ববাদ ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। আবর্জনা মিশ্রিত সুফীবাদের দাবীদাররা ইলমকে যাহেরী-বাতেনীতে বিভক্ত করতে থাকে, একজনের বক্ষদেশ থেকে অন্যজনের বক্ষদেশে জ্ঞানের গোপন বিস্তার হয় বলে প্রচার করতে থাকে এবং কামেল পীর-মুরশিদ ও আল্লাহর প্রেমে পাগল ভক্তের জন্য শরীয়তের বিধি-বিধান মেনে চলার প্রয়োজন নেই ইত্যাদি ভ্রান্ত চিন্তা-বিশ্বাস তাসাউফের নামে মুসলিমদের বিরাট এক অংশের উপর চেপে বসে।

আল্লাহর অলী ও তাঁর নেক বান্দাদের ব্যাপারে অমুসলিমদের ন্যায় মুসলিমরাও বাড়াবাড়ি শুরু করে। তাদের কাছে ফরিয়াদ জানাতে এবং নিজেদের দিলের মাকসুদ পূরা করতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলেমগণও অলীদের কবরে ধরণা দিত।

তাই, ইসলামের নামে এই সব জাহেলীয়াতের অন্ধকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করে খালেস তাওহীদের দিকে মুসলিমদেরকে ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের সবার চেষ্টা করাতে হবে। মানুষকে তাওহীদ ও শির্কের পার্থক্য সম্পর্কে সুস্পষ্টরূপে অবগত করতে হবে, জাহেলীয়াতের সকল চেহারা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত করতে হবে। জাহেলীয়াতের মূলোৎপাটন করে মুসলিমদের জন্য সরাসরি কুরআন, সুন্নাহ এবং সাহাবী ও তাবেঈদের আমল থেকে নির্ভেজাল আকীদাহ ও আমল তুলে ধরতে হবে।

আলেমদের দায়িত্ব মুসলিমদের সামনে ইসলামের পরিচ্ছন্ন আকীদাহ্ বিশ্বাস তুলে ধরেন এবং সকল প্রকার শির্ক-বিদআত ও ইসলামের নাম নিত্য নতুন মানসৃষ্ট মতবাদ থেকে মুসলমানদের পরিশুদ্ধ করা।

কুরআন ও সহিহ হাদিসে ইসলামের বাহ্যিক বিষয়ের সার্বিক দিক-নির্দেশনা ও রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা লাভের দিক-নির্দেশনা, উভয়টিই দেওয়া হয়েছে। যে তাসাউফ সাধনা বা সুফিবাদ নামক মানব সৃষ্ট মতবাদ, রাসূল (সাঃ) এর জীবনাদর্শের সাথে মিলে না, তা অবশ্যই কুফরি ও বাতিলযোগ্য। কেননা কুরআন ও সান্নাহ থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় হয়েছে, তা ছাড়া আল্লাহকে পাওয়ার দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।

[সূত্র: ডঃ সালেহ ফাওযান]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/islam

Islamic information to the point!View Author posts