(১) সূরা ফালাক বাংলা
সূরা আল-ফালাক পবিত্র কুরআন মাজিদের ১১৩ নম্বর সূরা। সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরায় ব্যবহৃত আল-ফালাক শব্দ থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। এই সূরার আয়াত সংখ্যা মাত্র ৫টি এটি। যথা-
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম • কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। • মিন শাররি মাখালাক্ব। • ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব। • ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাসাতি ফিল্ উকাদ। • ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।
(২) সূরা ফালাক আরবি
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ • قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ • مِن شَرِّ مَا خَلَقَ • وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ • وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّـٰـثَــٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ • وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
(৩) সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ
শুরু | بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) |
১ম আয়াত | قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক। বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, |
২য় আয়াত | مِن شَرِّ مَا خَلَقَ মিন শাররি মাখালাক্ব। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে, |
৩য় আয়াত | وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব। অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়, |
৪র্থ আয়াত | وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাসাতি ফিল্ উকাদ। গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে |
৫ম আয়াত | وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ। এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। |
(৪) সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ছবি
(৫) surah falaq uccharon audio mp3
(৬) surah falaq bangla uccharon video mp4
(৭) সূরা ফালাক এর ফজিলত
সূরা আল-ফালাক এবং সূরা আন-নাস এর মাঝে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই সূরা দুটি একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।
হাদিসে আছে- এই সূরা দুটি পড়ে ফুঁক দিলে যাদুর ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। আর যে নিয়মিত সূরা দুটি পাঠ করে তাকে কোন যাদু ক্ষতি করতে পারে না। মহানবি (সা.) রাতে ঘুমানোর সময় সূরা দুটি পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে পুরো শরীর মুছে নিতেন।
সাধারণত যেকোনো বিপদ–আপদ থেকে আল্লাহর কাছে নিরাপদ আশ্রয় চাওয়ার জন্য এই সূরা এবং এর পরের সূরা নাসের আমল সুন্নত। মহানবী (সা.)–ও বিপদে–আপদে ও অসুস্থতায় এই দুটো সূরার ওপর আমল করতেন। তাঁর ক্ষতি করার জন্য তাঁকে জাদু করে রশিতে ১১টি গেরো দেওয়া হয়েছিল। এই দুটি সূরার ১১টি আয়াত পড়ে সেই ১১টি গেরো খোলা হয়।
এই সূরা বিভিন্ন ধরনের শয়তান এবং জীন এর উপদ্রব থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য অনেক কার্যকরী।
নিচে তার কয়েকটি ফজিলত দেওয়া হলো-
- সকাল এবং বিকাল এই সূরা পাঠ করলে থাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।
- কালো জাদু থেকে মুক্ত থাকার জন্য বা চিকিথসা করার জন্য এটি অনেক উপকারী।
- শয়তান এবং জীন এর আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এটি পড়লে ভালো সুফল পাওয়া জায়।
- হিংসুটে ব্যাক্তিদের থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই সূরা অনেক কার্যকরী।
- কোনো যায়গায় ভয় পেলে এই সূরা পাঠ করলে ভয় কেটে জায় ইত্যাদি।
সূরা ফালাক এর ফজিলত নিয়ে বর্ণীত হাদিস কিছু নিচে দেওয়া হলো-
হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি সকালবেলা তিনবার সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করবে, তাকে সেই দিন কোনও যাদুকর বা জাদুকরী ক্ষতি করতে পারবে না।”
(বুখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করবে, তার শরীরে কোনও রোগব্যাধি প্রবেশ করবে না।”
(আবু দাউদ)
আবূ সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বে জিনের ক্ষতি থেকে এবং মানুষের বদনজর থেকে আশ্রয় চেয়ে দুআ করতেন। এক সময় সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাজিল হলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোকে গ্রহণ করলেন এবং অন্য সবকিছু বাদ দিলেন।”
(তিরমিযি)
আবদুল্লাহ্ ইবন খুবাইব তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
“আমি মক্কার পথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নির্জনে পেয়ে তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, বল। আমি বললাম, কি বলবো? তিনি বললেন, বল, আমি বললাম কি বলবো? তিনি বললেন, বল, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার…। (কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।) তিনি পুরোটা পড়লেন। এরপর বললেনঃ কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। এই সূরাও শেষ করলেন। আমিও উনার সাথে সাথে পড়লাম। এরপর তিনি বললেনঃ এ দু’টির চেয়ে উত্তম কিছু দিয়ে মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না।”
(নাসাঈ)
রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন,
“যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়।”
(আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
ওকবা ইবনে আমের হতে বর্ণিত, হাদীসে রসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,
তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থাৎ কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।
(সহীহ মুসলিম)
হাদিসে রয়েছে,
“এক সফরে রসূলুল্লাহ (সা:) ওকবা ইবনে আমেন-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো। অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন।”
(আবু দাউদ, নাসায়ী)
(৮) সূরা ফালাক এর শানে নুযুল
সূরা আল ফালাক ও পরবর্তী সূরা নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ঘটনাটি হাদিসে বর্ণিত এভাবে আছে,
জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্ (সা:)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। [জিবরাঈল] (আ:)] আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসুলুল্লাহ (সা:) লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।
(মুসনাদে আহমদ)
হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত আছে,
“রসুলুল্লাহ (সা:)-এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা (রা:)-কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা’আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ’সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সা:) সে কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।”
(সহীহ্ বোখারী শরীফ)
মুসনাদে আহমদের রেওয়ায়েতে আছে,
রসুলুল্লাহ (সা:) -এর এই অসুখ (যাদু) ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল।
(মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা নং ১৪৮৫)
(৯) সূরা ফালাক এর তাফসীর/ব্যাখ্যা
সূরা আল-ফালাক এবং সূরা আন-নাস সূরাদ্বয়ের উপকারিতা ও কল্যাণ অপরিসীম। এই সূরা দুটিতে কীভাবে বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে তা শেখানো হয়েছে।
সূরা আন-নাস এ বিশেষভাবে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বাঁচার পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। আর সূরা আল-কালাকে শেখানো হয়েছে বিভিন্ন মাখলুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়।
আকাশ এবং পৃথিবীর সবকিছুই মহান আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি। কোনো কিছুই তিনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির পিছনেই রয়েছে হিকমত এবং কল্যান।
আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য কিছু ক্ষতিকর জিনিস সৃষ্টি করেছেন, যেন বান্দা সেসবের ক্ষতির ভয়ে পৃথিবীর সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষি হয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
এই সূরায় অন্ধকার রাতের বিপদ থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। কারণ রাতের অন্ধকারেই অধিকাংশ খারাপ কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। আর যাদুকররা তাদের ক্ষতিকর যাদুর কাজ সাধারণত রাতের বেলায় করে থাকে।
সূরার চার নং আয়াতে নারী যাদুকরের কথা বলা হলেও এখানে নারী ও পুরুষ উভয় প্রকার যাদুকর উদ্দেশ্য। কারণ যাদুকর পুরুষ হতে পারে আবার মহিলাও হতে পারে। উভয় প্রকার যাদুকরের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সূরার শেষ আয়াতে হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। সূরা আল-ফালাক এবং সূরা আন-নাস পাঠ করে শরীরে ফুঁক দিলে আল্লাহ তাআলা সব ধরনের অনিষ্ট থেকে মানুষকে আশ্রয় প্রদান করেন।
(১০) সূরা ফালাক এর শিক্ষা
পৃথিবীতে ভালো-মন্দ, ক্ষতিকর, উপকারী সবকিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ তা’আলা। সবই তাঁর অধীন। তাই এসবের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য এবং এগুলোর উপকার লাভ করার জন্য আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে।
আলোচিত/উত্তরিত অনুসন্ধানসমূহ: sura falak, সূরা ফালাক, surah falaq bangla, সুরা ফালাক, সুরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ, surah falaq in bangla, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, falak sura bangla, ফালাক সূরা, surah falaq bangla uccharon, সুরা ফালাক বাংলা, surah al falaq bangla, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ফালাক এর তাফসীর, সূরা ফালাক এর ফজিলত, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল, সূরা ফালাক আরবি, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ, সূরা ফালাক শিক্ষা, সুরা ফালাক আরবি।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।