(১) surah fatiha in bangla
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। আর রহমানির রহীম। মালিকি ইয়াওমিদ্দীন। ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকানাছতাঈন। ইহদিনাসসিরাতাল মুছতাকীম। সিরাতাল্লাযীনা আনআম তাআলাইহিম। গাইরিল মাগদূ বিআলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। আমিন।
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু। প্রতিফল দিবসের মালিক। আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি। আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন। তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট। কবুল করুন।
(১) সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। ১ম আয়াত: ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন। অর্থ: সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। ২য় আয়াত: ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ উচ্চারণ: আর রহমা-নির রহীম। অর্থ: অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু। ৩য় আয়াত: مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ উচ্চারণ: মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। অর্থ: প্রতিফল দিবসের মালিক। ৪র্থ আয়াত: إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ উচ্চারণ: ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন। অর্থ: আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি। ৫ম আয়াত: ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ উচ্চারণ: ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম। অর্থ: আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন। ৬ষ্ঠ আয়াত: صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ উচ্চারণ: সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম। অর্থ: তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। ৭ম/শেষ আয়াত: غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص উচ্চারণ: গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন।(আমিন) অর্থ: এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট।(কবুল করুন)
(২) সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ছবি, অডিও এবং ভিডিও
(৩) সূরা ফাতিহা এর নাম ও পরিচয়
আল-ফাতিহা কুরআন মাজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরা। এটি কুরআন মাজিদের সর্বপ্রথম সূরা ফাতিহা অর্থ সূচনা, শুরু, আরম্ভ, ভূমিকা, মুখবন্ধ ও উপক্রমণিকা। যেহেতু এ সূরা কুরআন মাজিদের শুরুতে অবস্থিত, সে জন্য এ সুরার নাম করণ করা হয়েছে আল-ফাতিহা।
এ সূরা দ্বারাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত সালাত শুরু করা হয়। এটি কুরআন মাজিদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাযিলকৃত সূরা। এটিকে ফাতিহাতুল কিতাব বা ফাতিহাতুল কুরআনও বলা হয়। যার অর্থ কিতাব বা কুরআনের সূচনা বা ভূমিকা।
এটি একটি মাক্কী সূরা। মহানবি (সা.) এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্বে এটি নাযিল হয়। এ সূরার আয়াত সংখ্যা সাতটি।
অন্যান্য সূরার ন্যায় আল-ফাতিহা সুরার নাম মাত্র একটি নয় বরং এটির অনেকগুলো নাম রয়েছে। এমনকি অনেকে এ সূরার পঁচিশটি পর্যন্ত নাম উল্লেখ করেছেন।
সূরা আল-ফাতিহা এর নামগুলোর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম হলো-
- উম্মুল কুরআন (কুরআনের মূল): আরবিতে উম্ম অর্থ মা বা মূল। এ সূরাটির ভেতর সমগ্র কুরআনের মূল আলোচনা সংক্ষেপে বিধৃত হয়েছে বিধায় এটিকে উম্মুল কুরআন বলা হয়।
- সূরাতুল হামদ (প্রশংসার সুরা): এ সূরায় মহান আল্লাহর উচ্চ প্রশংসা করা হয়। সেজন্য এ সূরার নাম সুরাতুল
- সুরাতুস সালাত (নামাযের সুরা): প্রত্যেক সালাতে এ সুরা পাঠ করা অপরিহার্য। এটি ব্যতীত সালাত বিশুদ্ধ হয়না। তাই এটিকে সূরাতুস সালাত বলা হয়।
- সুরাতুশ শোকর (কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুন্না): এ সুরার মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ ও দয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তাই এটিকে সূরাতুশ শোকর বলা হয়।
- সুরা দোয়া (দোয়া বা প্রার্থনামূলক সূরা): এ সূরার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা হয়। এজন্য এ সুরার আর এক নাম মুনাজাত।
- আসাসুল কুরআন (কুরআনের ভিত্তি): সমগ্র কুরআনে যে পরিপূর্ণ জীবন বিধান উপস্থাপন করা হয়েছে তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে এ সূরায় বর্ণিত কয়েকটি বাণীর উপর। তাই এটিকে আসাসুল কুরআন বা কুরআনের ভিত্তি বলা হয়।
- সূরাতুন শিকা (রোগমুক্তির সূরা): এ সুরার প্রভাবে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। তাই এ নামকরণ করা হয়।
- জাস-সাউল মাছানী (নিজ্য পাঠ্য সাতটি আয়াত): সূরা আল-ফাতিহাতে সাতটি আয়াত রয়েছে এবং তা নামাযের প্রত্যেক রাকাতে পাঠ করা হয় বলে এর নাম আস-সাবউল মাছানী।
সূরা ফাতিহাকে ভেঙে ভেঙে পড়া যায় না বলে একে অখণ্ড সূরা নামেও ডাকা হয়। সূরা ফাতিহাকে ভেঙে পড়ার বিধান নেই।
(৪) সূরা ফাতিহা এর ব্যাখ্যা
কুরআন মাজিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূরা হচ্ছে আল-ফাতিহা। এ সূরায় সমগ্র কুরআনের সারমর্ম সংক্ষিপ্তভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।
সমস্ত কুরআনে ইমান ও নেক আমলের আলোচনা করা হয়েছে। আর এ সূরায় উষ্ণ মূলনীতি দুটি সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ সূরাটি মূলত আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম। এর প্রথম তিনটি আয়াতে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে। আর শেষ তিন আয়াতে মানুষের পক্ষ হতে আল্লাহর নিকট মুনাজাত, প্রার্থনা ও মনের পরম আকুতি-মিনতি জানানো হয়েছে। আর মধ্যের একটি আয়াতে একত্রিতভাবে আল্লাহর প্রশংসা ও দোয়া উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন,
“সুরাতুল ফাতিহা আমার এবং আমার বান্দাদের মধ্যে দু’ভাগে বিভক্ত। অর্ধেক আমার জন্য আর অর্ধেক আমার বান্দাদের জন্য। আমার বান্দাগণ যা চায় তা তাদেরকে দেওয়া হবে।”
(মুসলিম)
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রিযিকদাতা। তিনি সারা জাহানের মালিক। জগতের সব কিছু তাঁর অনুগ্রহ ও করুণার মুখাপেক্ষী। তাঁর অসংখ্য নেয়ামত আমরা প্রতিনিয়ত ভোগ করি। তাই সর্বদা তাঁর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানুষের অপরিহার্য কর্তব্য। তিনিই সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য। তিনি দুনিয়ার সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালনকারী।
তিনি শুধু ইহকালের মালিক নন পরকালেরও মালিক। পরকালের হিসাব-নিকাশ, জান্নাত ও জাহান্নাম সবকিছুই তাঁর অধীন। শেষ বিচারের কালে তিনিই একমাত্র বিচারক। জ্বিন-ইনসানের কৃতকর্মের পুষ্পানুপুঞ্জ হিসাব নিবেন তিনিই। অতঃপর পুণ্যবানদের তিনি পুরস্কার স্বরুপ দিবেন জান্নাতের অনাবিল সুখ শান্তি আর পাপীদের দিবেন জাহান্নামের মর্মন্তদ শাস্তি। এদিনের নিরঙ্কুশ মালিকানা কেবল তাঁরই। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ তাঁর নিকট সুপারিশও করতে পারবে না। তিনি ইচ্ছা করলে কোন বান্দাকে বিনা হিসেবেও জান্নাত দিতে পারেন। তাই সকল প্রশংসা ও ইবাদাতের শুধু তাঁরই প্রাপ্য। এতে তাঁর সমকক্ষ কেউ নাই।
সুরা ফাতিহার প্রথম তিনটি আয়াতে মহান আল্লাহর অসীম কুদরত ও একচ্ছত্র ক্ষমতার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। মানুষ কেবল আল্লাহরই ইবাদাত করবে এবং শুধু তারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। সকল ব্যাপারে শুধু তারই উপরে ভরসা করবে। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সাহায্যকারী নেই। এসব কথা বলা হয়েছে সূরাটির মধ্যবর্তী আয়াতে।
মানুষ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষের ভাল-মন্দ তাঁরই হাতে। কিসে মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ এবং কিসে অকল্যান তা এক মাত্র আল্লাহই জানেন। সত্য-ন্যায় ও হেদায়াতের পথ কোনটি তা শুধু তিনিই জানেন। তিনিই সত্য ও সঠিক পথের মালিক। মানুষ মহান আল্লাহর নিকটই সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রার্থনা করে। মহান আল্লাহর নিকট কিভাবে প্রার্থনা ও মুনাজাত করতে হয় তা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এ সূরার শেষ তিনটি আয়াতে।।
মানুষের উচিত আল্লাহর নিকট সত্য, সুন্দর ও সরল-সঠিক পথের প্রার্থনা করা, আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ যে পথে চলেছেন, নবি রাসুলগণ ও সত্যবাদীগণ যে পথ অনুসরণ করেছেন সে পথের দিশা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে মুনাজাত করা। অনুরূপভাবে যে পথে চলে মানুষ অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে যেমন ইয়াহুদি, নাসারাদের অনুসৃত পথ, তা থেকে মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।
(৫) সূরা ফাতিহা এর নৈতিক শিক্ষা
সুরা ফাতিহা মহান আল্লাহর সাথে বান্দার নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। বান্দা প্রতিনিয়ত সালাতে এ সূরা পাঠ করে মহান আল্লাহর সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করে।
মহান আল্লাহ সমগ্র বিশ্বের মালিক। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। বিচার দিনের অধিপতি। যাবতীয় প্রশংসা ও ইবাদাত বন্দেগীর একমাত্র প্রাপ্য তিনি। তিনি সকল সৃষ্টির লালন-পালনকারী। তিনিই মানবজাতিকে সত্য-সুন্দর ও সরল-সঠিক পথের দিশা দেন।
মানুষের উচিত একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা এবং তারই কাছে যাবতীয় বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা করা। নবি-রাসুল ও আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ অনুসরণের তাওফিক কামনা করা। আর পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্ত ইয়াহুদি-নাসারাদের পথ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
আলোচিত/উত্তরিত অনুসন্ধানসমূহ: আলহামদুলিল্লাহ সূরা, সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ফাতিহা অর্থ, সুরা ফাতিহা বাংলা অর্থ সহ, সূরা ফাতিহা বাংলা, সূরা ফাতিহার অর্থ, সূরা ফাতিহা ব্যাখ্যা, সুরা ফাতিহা বাংলা অর্থ, সূরা ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ, sura fateha, সূরা ফাতিহা বাংলা অনুবাদ সহ, সূরা ফাতিহার বাংলা অর্থ, সূরা ফাতিহা বাংলা অর্থ, surah fatiha in bangla, sura fatiha, সুরা ফাতিহা।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট ইসলাম’ (inbangla.net/islam) এর সাথেই থাকুন।