(১) surah humazah bangla
সূরা হুমাযাহ | بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) |
১ম আয়াত | وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ওয়াইলুলিলকুল্লি হুমাঝাতিল লুমাঝাহ। প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, |
২য় আয়াত | ٱلَّذِى جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُۥ আল্লাযী জামা‘আ মা-লাওঁ‘ওয়া ‘আদ্দাদাহ। যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে |
৩য় আয়াত | يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُۥٓ أَخْلَدَهُۥ ইয়াহছাবুআন্না মা-লাহূআখলাদাহ। সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে! |
৪র্থ আয়াত | كَلَّا لَيُنۢبَذَنَّ فِى ٱلْحُطَمَةِ কাল্লা-লাইউমবাযান্না ফিল হুতামাহ। কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। |
৫ম আয়াত | وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا ٱلْحُطَمَةُ ওয়ামাআদরা-কা মাল হুতামাহ। আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কি? |
৬ষ্ঠ আয়াত | نَارُ ٱللَّهِ ٱلْمُوقَدَةُ না-রুল্লা-হিল মূকাদাহ এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, |
৭ম আয়াত | ٱلَّتِى تَطَّلِعُ عَلَى ٱلْأَفْـِٔدَةِ আল্লাতী তাত্তালি‘উ আলাল আফইদাহ। যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে। |
৮ম আয়াত | إِنَّهَا عَلَيْهِم مُّؤْصَدَةٌ ইন্নাহা-‘আলাইহিম মু’সাদাহ। এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, |
৯ম/শেষ আয়াত | فِى عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍۭ ফী ‘আমাদিম মুমাদ্দাদাহ। লম্বা লম্বা খুঁটিতে। |
(২) সূরা হুমাযাহ বাংলা উচ্চারণ
সূরা হুমাযাহ বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলো-
বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম 1. ওয়াইলুলিলকুল্লি হুমাঝাতিল লুমাঝাহ। 2. আল্লাযী জামা‘আ মা-লাওঁ‘ওয়া ‘আদ্দাদাহ। 3. ইয়াহছাবুআন্না মা-লাহূআখলাদাহ। 4. কাল্লা-লাইউমবাযান্না ফিল হুতামাহ। 5. ওয়ামাআদরা-কা মাল হুতামাহ। 6. না-রুল্লা-হিল মূকাদাহ। 7. আল্লাতী তাত্তালি‘উ আলাল আফইদাহ। 8. ইন্নাহা-‘আলাইহিম মু’সাদাহ। 9. ফী ‘আমাদিম মুমাদ্দাদাহ।
(৩) সূরা হুমাযাহ বাংলা অর্থ
সূরা হুমাযাহ বাংলা অর্থ দেওয়া হলো-
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি) 1. প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, 2. যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে 3. সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে! 4. কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে। 5. আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কি? 6. এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, 7. যা হৃদয় পর্যন্ত পৌছবে। 8. এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে, 9. লম্বা লম্বা খুঁটিতে।
(৪) সূরা হুমাযাহ বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ ছবি
(৫) surah humazah uccharon mp3
(৬) surah humazah bangla uccharonshoho ortho mp4
(৭) সূরা আল হুমাযাহ এর পরিচয়
সূরা আল-হুমাযাহ আল কুরআনের ১০৪তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৯টি। এ সূরাটি পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
‘হুমাযাহ’ শব্দের অর্থ পশ্চাতে নিন্দাকারী। এ সূরার প্রথম আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ ‘হুমাযাহ’ অনুসারে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
এ সূরাটিতে তিনটি জঘন্য। গুনাহ ও তার শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। গুনাহ তিনটি হল গীবত, সামনাসামনি মন্দ বলা ও অর্থলিন্দা।
আমরা এ সূরাটি অর্থসহ মুখস্থ করব এবং এ সূরার শিক্ষা অনুযায়ী আমল করব।
(৮) সূরা হুমাযাহ এর শানে নুযুল
উমাইয়া ইবনে খালফ, ওলীদ ইবনে মুগিরা ও আখনাস ইবনে শুরায়ক মহানবি (সা.) ও মু’মিনদের গিবত করত এবং তাদের অর্থলিপ্সা ছিল প্রবল। তাদের এই অপকর্মের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ। এই সূরা অবতীর্ণ করেন।
(৯) সূরা হুমাযাহ বাংলা তাফসীর/ব্যাখ্যা
সূরা আল-হুমাযাহকে দু’টি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম তিন আয়াত নিয়ে প্রথম অংশ এবং শেষ ছয়টি আয়াত নিয়ে দ্বিতীয় অংশ।
প্রথম অংশে তিনটি জঘনা গুণাহের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে এসব গুণাহের শান্তির কথা বলা হয়েছে।
এ সূরায় বর্ণিত গুনাহ বা পাপ কাজগুলো হলো-
ক) পশ্চাতে বা গোপনে কারো নিন্দা করা
একে গিবতও বলা হয়। এটি অত্যন্ত খারাপ কাজ। আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের অন্য আয়াতে গিবত করা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমান বলে উল্লেখ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“গিবত ব্যভিচারের চাইতেও মারাত্মক।”
(বায়হাকী)
খ) সামনাসামনি কারো নিন্দা করা
এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যার মুখোমুখি নিন্দা করা হয়, তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা হয়। এর কষ্টও বেশি, ফলে শাস্তিও গুরুতর। অনেক সময় এ কারণে সমাজে ঝগড়া, মারামারি ও গন্ডগোল সৃষ্টি হয়।
গ) ধন-সম্পদ জমা করা ও বারবার তা গণনা করা
এর দ্বারা অতিশয় অর্থলিপ্সা বোঝানো হয়েছে। ধন- সম্পদের প্রতি অতি লোভ মানুষকে বিপদগামী করে। সে হালাল-হারাম বিবেচনা না করে যে কোনোভাবে অতিমাত্রায় অর্থ উপার্জন করতে থাকে, এভাবে তার সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও মনের দিক থেকে সে কৃপণ হয়ে পড়ে। গরিব-দুঃখীদের অধিকার আদায় করে না। থাকাত, হজ ইত্যাদি ফরয ইবাদাতও পালন করে না। বরং সে সম্পদ জমা করতে থাকে এবং ধারণা করে যে, এসব ধন-সম্পদ তাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে।
এ সুরার দ্বিতীয় অংশে উল্লিখিত তিনটি জঘন্য কাজের শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
গিবত, সামনাসামনি মন্দ বলা ও অর্থলিপ্সা- তিনটিই খারাপ কাজ। এগুলো কবিরা গুনাহ। এজন্য আখিরাতে মানুষকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।
অর্থ মানুষকে অমর করে রাখবে- এ ধারণাও ঠিক নয়। বরং সকল মানুষকেই মরতে হবে। তারপর হাশরের ময়দানে আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেকের হিসাব নিবেন। যারা দুনিয়াতে এ তিনটি জঘনা কাজ করে আখিরাতে তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের স্থান হবে হুতামাহ নামক জাহান্নামে।
হুতামাহর আগুনে ঐ সকল ব্যক্তির অপ্রত্যশ জ্বলবে। এমনকি তাদের হৃদয় বা অন্তরও ঐ আগুনে পুড়বে। কোন কিছুই আগুনের গ্রাস থেকে রেহাই পাবে না।
দুনিয়ার আগুন মানুষের দেহে লাগলে হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছার আগেই মানুষের মৃত্যু হয়ে যায়। জাহান্নামে মৃত্যু নেই। কাজেই জীবিত অবস্থাতেই হৃদয় পর্যন্ত আগুন পৌঁছাবে এবং হৃদয় দহনের তীব্র যন্ত্রণা জীবিত অবস্থাতেই মানুষ সেখানে অনুভব করবে।
(১০) surah humazah er sikkha
এ সূরা থেকে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষা লাভ করি। যেমন-
- পশ্চাতে বা গোপনে কখনো কারো নিন্দা করব না।
- কখনো সামনাসামনি কারো নিন্দা করব না।
- অর্থের প্রতি লোভ করব না। বরং আল্লাহ তা’আলা যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকব এবং প্রয়োজনমত তা খরচ করব।
- জাহান্নামের শাস্তি অত্যন্ত ভয়ংকর।
আমরা উল্লিখিত গুনাহসমূহ থেকে দূরে থাকব, যাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাই।
[সূত্র: এনসিটিবি]