(১) surah quraish bangla poricoy
- সূরা কুরাইশ হলো মক্কি সূরা।
- এর আয়াত সংখ্যা চারটি।
- এটি আল-কুরআনের ১০৬তম সূরা।
- সূরা কুরাইশ পবিত্র কুরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত।
- সূরা কুরাইশ এর পূর্ববর্তী সূরা- সূরা ফীল।
- সূরা কুরাইশ এর পরবর্তী সূরা- সূরা মাউন।
- এ সূরায় মক্কা নগরীর কুরাইশদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্য এর নাম রাখা হয়েছে সূরা কুরাইশ।
(২) surah quraish bangla uccharon o ortho
লি-ঈলাফি কুরাইশ৷। ঈলাফিহিম রিহ্ লাতাশ শীতায়ি ওয়াছ ছইফ। ফালইয়া’বুদূ রাব্বা হাযাল বাইত। আল্লাযী আত্য়ামাহুম মিন্ জু-ইওঁ ওয়া অমানাহুম মিন খউফ।
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
নং | আরবি বাক্য | বাংলা উচ্চারণ | বাংলা অর্থ |
1. | لِإِيلَـٰفِ قُرَيْشٍ | লি-ঈলাফি কুরাইশ৷। | যেহেতু কুরাইশের আসক্তি রয়েছে। |
2. | إِۦلَـٰفِهِمْ رِحْلَةَ ٱلشِّتَآءِ وَٱلصَّيْفِ | ঈলাফিহিম রিহ্ লাতাশ শীতায়ি ওয়াছ ছইফ। | আসক্তি রয়েছে তাদের শীত ও গ্রীষ্মে সফরের। |
3. | فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيِّت | ফালইয়া’বুদূ রাব্বা হাযাল বাইত। | অতএব, তারা এ ঘরের মালিকের ইবাদত করুক। |
4. | الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّنْ جُوعٍ، وَأَمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ | আল্লাযী আত্য়ামাহুম মিন্ জু-ইওঁ ওয়া অমানাহুম মিন খউফ। | যিনি তাদের ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন আর তাদের নিরাপদ করেছেন ভয়-ভীতি থেকে। |
(৩) surah quraish bangla bakkha
এ সূরায় কুরাইশদের নানা নিয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর এসব নিয়ামতের পরিবর্তে তাদের কী করা উচিত এ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
মক্কা নগরীতে কাবা গৃহ অবস্থিত। কাবা হলো আল্লাহর ঘর। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা মক্কার কুরাইশদের নানা সুবিধা প্রদান করেন। তিনি তাদের সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা দান করেন। ক্ষুধা তৃষ্ণায় খাদ্য, পানীয় দান করেন। সুতরাং তাদের কর্তব্য হলো এসব নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। যে ঘরের বদৌলতে তারা এসব লাভ করলো সে ঘরের মালিকের ইবাদত করা। কেননা তিনিই তাদের এসব দান করেছেন।
(৪) surah quraish bangla sikkha
এ সূরার শিক্ষা নিম্নরূপ-
■ আল্লাহ তায়ালা আমাদের খাদ্য-পানীয় ও নিরাপত্তা দান করেন।
■ তিনি সকল নিয়ামতের মালিক।
■ সকলেরই উচিত তাঁর ইবাদত করা।
অতএব, আমরা সবসময় আল্লাহর ইবাদত করব। তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতের জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করব। তাহলে তিনি আমাদের প্রতি নিয়ামত আরও বাড়িয়ে দেবেন।
(৫) surah quraish bangla sane nujul
পবিত্র কাবাগৃহ মক্কা নগরীতে অবস্থিত। এ গৃহের রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবার দায়িত্ব ছিল কুরাইশ সম্প্রদায়ের উপর। এজন্য কুরাইশগণ বহু সুযোগ সুবিধা লাভ করত।
লোকজন তাদের সম্মান করত। তাদের নেতৃত্ব মেনে চলত। তাদের প্রতি কোনোরূপ অন্যায়-অত্যাচার করার সাহস পেত না। এ সুযোগে তারা সিরিয়া, ইয়ামান প্রভৃতি দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য করত। চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারীরা তাদের বাধা দিত না। এমনকি শীত-গ্রীষ্মের প্রতিকূল পরিবেশেও তারা সকলের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে পারত। তাছাড়া হজ উপলক্ষে বিপুল লোকজন মক্কা নগরীতে আসত, এতে কুরাইশগণ বহু অর্থ-সম্পদ লাভ করত।
কুরাইশদের এসব মানসম্মান ও ধন-সম্পদ ছিল মূলত কাবা গৃহের বদৌলতে। সুতরাং তাদের উচিত ছিল এ গৃহের প্রভুকে মেনে চলা। অথচ তারা তা করত না। বরং তারা ছিল মুশরিক।
তারা মূর্তিপূজা করত। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করত না। রিসালাত ও আখিরাতেও তারা বিশ্বাস করত না। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু করলেন তখনো তারা তাঁর বিরোধিতা করতে লাগল। এ জঘন্য ও অনৈতিক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা এ সূরা নাজিল করে তাদের সতর্ক করে দেন।
(৬) surah quraish bangla tafsir
ক) সূরা কুরাইশের প্রথম আয়াতের তাফসির
لا يُلفِ قريش
যেহেতু কুরাইশের [১] চিরাচরিত অভ্যাস আছে [২]।
[১] কুরাইশ একটি গোত্রের নাম। নদীর ইবন কিনানার সন্তানদেরকে কুরাইশ বলা হয়। যারাই নদীর ইবন কিনানাহ এর বংশধর তারাই কুরাইশ নামে অভিহিত। কারও কারও মতে, ফিহর ইবন মালিক ইবন নাদর ইবন কিনানাহ এর বংশধরদেরকে কুরাইশ বলা হয়। তবে প্রথম মতটি বেশী শুদ্ধ। [কুরতুবী]
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা’আলা ইসমাঈলের বংশধর থেকে কিনানাহকে, কিনানাহর বংশধর থেকে কুরাইশকে, কুরাইশ তেকে বনী হাশেমকে, বনী হাশেম থেকে আমাকে পছন্দ করেছেন।” [মুসলিম: ২২৭৬]
কুরাইশকে কুরাইশ নামকরণ করার কারণ কারও কারও মতে, কুরাইশ শব্দটি تقريش থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ কামাই-রোযগার করা। তারা যেহেতু ব্যবসা করে কামাই-রোযগার করে জীবিকা নির্বাহ করত, তাই তাদের এ নাম হয়েছে।
কারও কারও মতে, এর অর্থ জমায়েত করা বা একত্রিত করা। কারণ, তারা বিভিন্ন দিকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল, সর্বপ্রথম কুসাই ইবন কিলাব তাদেরকে হারামের চারপাশে জড়ো করেন, ফলে তাদেরকে কুরাইশ বলা হয়েছে।
কারও কারও মতে, তা এসেছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা থেকে। কারণ, তারা হাজীদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত। কোন কোন মতে, সাগরের এক বড় মাছের নামকরণে তাদের নাম হয়েছে। যে মাছ অন্য মাছের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে। তেমনিভাবে কুরাইশ অন্য সব গোত্রের উপর প্রাধান্য পেয়ে থাকে। [কুরতুবী]
[২] মূল শব্দ হচ্ছে إيلاف। এ শব্দটির দু’টি অর্থ করা হয়ে থাকে। এক. শব্দটি تأليف থেকে এসেছে। তখন অর্থ হবে, মিল-মহব্বত থাকা, একত্রিত থাকা। অর্থাৎ কুরাইশদেরকে একত্রিত রাখা, বিচ্ছেদের পর মিলিত হওয়া এবং তাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক ঠিক রাখা। দুই. শব্দটি এসেছে ‘ইলফ’ শব্দ থেকে। এর অর্থ হয় অভ্যস্ত হওয়া, পরিচিত হওয়া এবং কোন জিনিসের অভ্যাস গড়ে তোলা। [আদওয়াউল বায়ান]
উভয় প্রকার অর্থই এখানে হতে পারে। উপরে অর্থ করা হয়েছে, আসক্তি ও অভ্যস্ত হওয়া। বলা হয়েছে, কুরাইশদের আসক্তির কারণে। কিন্তু আসক্তির কারণে কি হয়েছে? এ কথা উহ্য আছে।
কেউ কেউ বলেন যে, এখানে উহ্য বাক্য হচ্ছে, আমি হস্তীবাহিনীকে এজন্যে ধ্বংস করেছি কিংবা আমি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণের সদৃশ এজন্যে করেছি, যাতে কোরাইশদের শীত ও গ্ৰীষ্মকালীন দুই সফরের পথে কোন বাধাবিপত্তি না থাকে এবং সবার অন্তরে তাদের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। [তাবারী, ফাতহুল কাদীর]
কেউ কেউ বলেছেন যে, এখানে উহ্য বাক্য হচ্ছে اعجبوا অর্থাৎ তোমরা কোরাইশদের ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ কর, তারা কিভাবে শীত ও গ্রীষ্মের সফর নিরাপদে নির্বিবাদে করে, তবুও তারা এ ঘরের রবের ইবাদত করে না! এ মতটি ইমাম তাবারী গ্ৰহন করেছেন। [তাবারী, মুয়াস্সার]
কেউ কেউ বলেন, এর সম্পর্ক পরবর্তী বাক্য فَلْيَعْبُدُوا এর সাথে। অর্থাৎ এই নেয়ামতের কারণে কোরাইশদের কৃতজ্ঞ হওয়া ও আল্লাহ তা’আলার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করা উচিত। [ফাতহুল কাদীর, কাশশাফ]
কারও কারও মতে, আয়াতের উদ্দেশ্য, এমনিতেই তো কুরাইশদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত সীমা-সংখ্যাহীন, কিন্তু অন্য কোন নিয়ামতের ভিত্তিতে না হলেও আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে তারা এই বাণিজ্য সফরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, অন্তত এই একটি নিয়ামতের কারণে তাদের আল্লাহর বন্দেগী করা উচিৎ। কারণ এটা মূলত তাদের প্রতি একটা বিরাট অনুগ্রহ। [কুরতুবী, আদওয়াউল বায়ান]
সারকথা, এই সূরার বক্তব্য এই যে, কোরাইশরা যেহেতু শীতকালে ইয়ামেনের ও গ্ৰীষ্মকালে সিরিয়ার সফরে অভ্যস্ত ছিল এবং এ দুটি সফরের ওপরই তাদের জীবিকা নির্ভরশীল ছিল এবং তারা ঐশ্বর্যশালীরূপে পরিচিত ছিল, তাই আল্লাহ তা’আলা তাদের শত্রু হস্তীবাহিনীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে মানুষের অন্তরে সকলেই তাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। সুতরাং তাদের উচিত এ ঘর ‘কাবার’ রবের ইবাদত করা। [ইবন কাসীর; সা’দী]
এ কথা সুবিদিত যে, মক্কা শহর যে স্থলে অবস্থিত সেখানে কোন চাষাবাদ হয় না, বাগবাগিচাও নেই; যা থেকে ফলমূল পাওয়া যেতে পারে। তাই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সফর ও বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ সংগ্ৰহ করার ওপরই মক্কাবাসীদের জীবিকা নির্ভরশীল ছিল। মূলত: মক্কাবাসীরা খুব দারিদ্র্য ও কষ্টে দিনাতিপাত করত। [জালালাইন]
অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রপিতামহ হাশেম কোরাইশকে ভিনদেশে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উদ্ধৃদ্ধ করেন। [কুরতুবী]
সিরিয়া ছিল ঠাণ্ডা দেশ। তাই গ্ৰীষ্মকালে তারা সিরিয়া সফর করত। পক্ষান্তরে ইয়ামেন গরম দেশ ছিল বিধায় তারা শীতকালে সেখানে বাণিজ্যিক সফর করত এবং মুনাফা অর্জন করত। বায়তুল্লাহর খাদেম হওয়ার কারণে সমগ্র আরবে তারা ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। ফলে পথের বিপদাপদ থেকে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। [ফাতহুল কাদীর]
আলোচ্য সূরাতে আল্লাহ তা’আলা মক্কাবাসীদের প্রতি তাঁর এসব অনুগ্রহ ও নেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করে তাদেরকে ঈমান ও তাওহীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
(তাফসীরে জাকারিয়া)
খ) সূরা কুরাইশের দ্বিতীয় আয়াতের তাফসির
الفِهِمْ رِحْلةَ الشَّتَاءِ وَالصَّيْفِ
অভ্যাস আছে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম সফরের। [1]
[1] إيلاف শব্দের অর্থ হল, স্বাভাবিক ও অভ্যাস হওয়া। অর্থাৎ, কোন কাজে কষ্ট ও বিরাগ অনুভব না হওয়া।
কুরাইশদের জীবন ধারণের একমাত্র মাধ্যম ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। প্রতি বছর তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা দুইবার করে অন্য দেশে সফর করত এবং তারা সেখান থেকে ব্যবসার পণ্য নিয়ে আসত। তারা শীতকালে গরম এলাকা ইয়ামান এবং গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা এলাকা শাম (সিরিয়া) সফর করত। কা’বাগৃহের খাদেম বলে আরববাসীরা তাদের সম্মান করত। এ জন্যই তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা বিনা বাধা ও বিপত্তিতে সফর করত।
এই সূরাতে আল্লাহ তাআলা কুরাইশদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, তোমরা যে গরম ও শীতকালে দুইবার করে সফর কর, তা হল আমার এই অনুগ্রহের ফলে যে, আমি তোমাদেরকে মক্কা নগরীতে নিরাপত্তা দান করেছি এবং আরববাসীদের নিকট তোমাদেরকে সম্মানিত করেছি। যদি তা না হত, তাহলে তোমাদের সফর করা সম্ভব হত না। আর হস্তীবাহিনীকে এ জন্যই ধ্বংস করেছি, যাতে তোমাদের সম্মান-মর্যাদা বজায় থাকে এবং তোমাদের অভ্যাসগত বাণিজ্যিক সফরও অব্যাহত থাকে। যদি আবরাহার উদ্দেশ্য সফল হত, তাহলে তোমাদের মর্যাদা ও নেতৃত্ব সব খর্ব হয়ে যেত। আর সফরের যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত। অতএব তোমাদের উচিত, কেবলমাত্র এই বাইতুল্লার (আল্লাহর ঘরের) প্রভুর উপাসনা করা।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
গ) সূরা কুরাইশের তৃতীয় আয়াতের তাফসির
فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيِّت
অতএব, তারা ইবাদাত করুক এ ঘরের প্রতিপালকের। [১]
[১] ‘এ ঘর’ অর্থ কা’বা শরীফ বলা হয়েছে, এ ঘরের রব-এর ইবাদত কর। এখানে ঘরটিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করার মাধ্যমে ঘরকে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। [সা’দী]
আর এই গৃহই যেহেতু তাদের সব শ্রেষ্ঠত্ব ও কল্যাণের উৎস ছিল, তাই বিশেষভাবে এই গৃহের মৌলিক গুণটি উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে, এটি মহান রবের ঘর। অর্থাৎ এ ঘরের বদৌলতেই কুরাইশরা এই নিয়ামতের অধিকারী হয়েছে। একমাত্র আল্লাহই যার রব। তিনিই আসহাবে ফীলের আক্রমণ থেকে তাদেরকে বাঁচিয়েছেন।
আবরাহার সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছেই তারা আবেদন জানিয়েছিল। তাঁর ঘরের আশ্রয় লাভ করার আগে যখন তারা আরবের চারদিকে ছড়িয়ে ছিল তখন তাদের কোন মর্যাদাই ছিল না। আরবের অন্যান্য গোত্রের ন্যায় তারাও একটি বংশধারার বিক্ষিপ্ত দল ছিল মাত্র।
কিন্তু মক্কায় এই ঘরের চারদিকে একত্র হবার এবং এর সেবকের দায়িত্ব পালন করতে থাকার পর সমগ্র আরবে তারা মর্যাদাশালী হয়ে উঠেছে। সবদিকে তাদের বাণিজ্য কাফেলা নিৰ্ভয়ে যাওয়া আসা করছে। তারা যা কিছুই লাভ করেছে এ ঘরের রবের বদৌলতেই লাভ করেছে। কাজেই তাদের একমাত্র সেই রবেরই ইবাদত করা উচিত। [দেখুন: মুয়াস্সার, কুরতুবী]
(তাফসীরে জাকারিয়া)
ঘ) সূরা কুরাইশের চতুর্থ আয়াতের তাফসির
الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّنْ جُوعٍ، وَأَمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ
যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় খাদ্য দিয়েছেন [১] এবং ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন। [২]
(১) মক্কায় আসার পুর্বে কুরাইশরা যখন আরবের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তখন তারা অনাহারে মরতে বসেছিল। এখানে আসার পর তাদের জন্য রিযিকের দরজাগুলো খুলে যেতে থাকে।
তাদের সপক্ষে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই বলে দোয়া করেছিলেন “হে আল্লাহ! আমি তোমার মর্যাদাশালী ঘরের কাছে একটি পানি ও শস্যহীন উপত্যকায় আমার সন্তানদের একটি অংশের বসতি স্থাপন করিয়েছি, যাতে তারা সালাত কায়েম করতে পারে। কাজেই আপনি লোকদের হৃদয়কে তাদের অনুরাগী করে দিন, তাদের খাবার জন্য ফলমূল দান করুন।” [সূরা ইবরাহীমঃ ৩৭] তার এই দো’আ অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়। [তাবারী, আদওয়াউল বায়ান]
[২] অৰ্থাৎ যে ভীতি থেকে আরব দেশে কেউ নিরাপদ নয়, তা থেকে তারা নিরাপদ রয়েছে। সে যুগে আরবের অবস্থা এমন ছিল যে, সারা দেশে এমন কোন জনপদ ছিল না যেখানে লোকেরা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো। কারণ সবসময় তারা আশংকা করতো, এই বুঝি কোন লুটেরা দল রাতের অন্ধকারে হঠাৎ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তাদের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেলো।
কিন্তু কুরাইশরা মক্কায় সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। তাদের নিজেদের ওপর কোন শত্রুর আক্রমণের ভয় ছিল না। তাদের ছোট বড় সব রকমের কাফেলা দেশের প্রত্যেক এলাকায় যাওয়া আসা করতো। হারাম শরীফের খাদেমদের কাফেলা, একথা জানার পর কেউ তাদের ওপর আক্রমণ করার সাহস করতো না। [কুরতুবী, তাবারী]
এখানে লক্ষণীয় যে, সুখী জীবনের জন্যে যা যা দরকার তা সমস্তই এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা কোরাইশকে এগুলো দান করেছিলেন। (أَطْعَمَهُمْ مِنْ جُوعٍ) বলে পানাহারের যাবতীয় সাজসরঞ্জাম বোঝানো হয়েছে এবং (وَآمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ) বাক্যে দস্যু ও শক্ৰদের থেকে এবং যাবতীয় ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে। [তাবারী, আদওয়াউল বায়ান]
এভাবে তাদের কাছে জিনিসপত্র সহজলভ্য হওয়া ও নিরাপত্তা বিস্তৃত থাকা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়েছে। সুতরাং, শুধু তাঁরই ইবাদত করা দরকার। তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা উচিত। তাঁর জন্য কোন অংশীদার, শির্ক ইত্যাদি সাব্যস্ত করা থেকে দুরে থাকা কর্তব্য।
এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা যারাই একমাত্র তাঁর ইবাদত করেছে শির্ক থেকে দুরে থেকে তাঁর দেয়া নেআমতের শুকরিয়া আদায় করেছে তাদের জন্য নিরাপত্তা ও পানাহার এ দুটি বিষয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে তখনই তা উঠিয়ে নিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন, “আর আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সবদিক থেকে তার প্রচুর জীবনোপকরণ। তারপর সে আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত সে জন্য আল্লাহ সেটাকে আস্বাদ গ্ৰহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।” [সূরা আন-নাহল: ১১২] [ইবন কাসীর]
(তাফসীরে জাকারিয়া)
আলোচিত/উত্তরিত অনুসন্ধানসমূহ: surah quraish bangla poricoy, surah quraish bangla uccharon, surah quraish bangla ortho, surah quraish bangla bakkha, surah quraish bangla sikkha, surah quraish bangla sane nujul, surah quraish tafsir
[সূত্র: এনসিটিবি]