এ পাঠটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- মাছের খাদ্য সংরক্ষণের সংজ্ঞা জানতে পারবেন; মাছের খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি বসম্পর্কে ধারণা পাবেন; মাছের খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ামকসমূহ সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন; খাদ্য গুদামজাতকরণের সময় লক্ষণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে নচেতন হতে পারবেন।
(১) মাছের খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
মাছের খাদ্য সংরক্ষণের জন্য সুষ্ঠুভাবে গুদামজাতকরণ অত্যাবশ্যক। সম্পূর্ণ বা দানাদার খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাবার গুদামজাতকরণের প্রয়োজন হয়। গুদামজাতকরণের সময় ওজন ও গুণগত মান এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।
মাছকে দেয়া খাবারের মান গুদামজাতকরণের ওপর নির্ভরশীল। গুদামজাত করার সময় খাদ্যের প্রাথমিক গুণগত মানের ওপর গুদামজাত খাদ্য এর দ্রুত বা ধীরে নষ্ট হওয়া নির্ভর করে।
যে ধরনের খাবারই মাছ চাষের পুকুরে ব্যবহার করা হোক না কেন তার গুণগতমান ভালো থাকা আবশ্যক। খাবারের গুণগতমান ভালো না হলে সুস্থ সবল পোনা ও মাছ পাওয়া সম্ভব নয়। মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হয় এবং মাছের মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায়। আবার মাছের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হয় না।
খাদ্যের গুণাগুণ ভালো রাখার জন্য খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কোনো খাদ্যের পুষ্টিমান ও গুণাগুণ ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেওয়াকে খাদ্য সংরক্ষণ বলা হয়।
নিম্নলিখিত নিয়ামকসমূহ গুদামজাতকরণের সময় খাদ্যের গুণগত মান এবং ওজন ক্ষতিগ্রস্থ করে-
- মানুষ কর্তৃক চুরি হওয়া, অগ্নিদগ্ধ হওয়া কিংবা ইঁদুর ও পোকামাকড় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া
- বৃষ্টি, আর্দ্রতা ক্ষতিগস্থ হওয়া।
- ছত্রাক কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া। খাদ্যের আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% এর বেশি হলে খাদ্যে ছত্রাক জন্মাতে পারে।
- এনজাইমের বিক্রিয়া এবং জারণের ফলে পঁচন।
- বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি থাকলে খাদ্যে ছত্রাক বা পোকামাকড় জন্মাতে পারে।
- সূর্যালোকে খোলা অবস্থায় খাদ্য রাখা হলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কিছু কিছু ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়।
- খোলা অবস্থায় রাখা হলে বাতাসের অক্সিজেন খাদ্যের রেনসিডিটি (চর্বির জারণ ক্রিয়া) ঘটাতে পারে যাতে খাদ্যের গুণগতমান ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
- উচ্চ তাপমাত্রা খাদ্যের অপচয় এবং খাদ্য নষ্ট হওয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে। উচ্চ তাপমাত্রা খাদ্যে ছত্রাক এবং পোকা মাকড়ের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(২) মাছের খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি
শুকনো খাদ্য এবং খাদ্য উপাদান সংরক্ষণ পদ্ধতি নিম্নরূপ-
- মাছের খাদ্যকে বায়ুরোধী পলিথিনের বা চটের অথবা কোনো মুখ বন্ধ পাত্রে শুষ্ক ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মাঝে এসব খাদ্য আবার রোদে শুকিয়ে নিতে হয়।
- মাছের খাদ্য শুকনো, পরিষ্কার, নিরাপদ ও পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে।
- পোকা-মাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যের বস্তার নিচে এবং আশে পাশে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
- ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণির উপদ্রবমুক্ত স্থানে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
- গুদাম ঘরে সংরক্ষিত মাছের খাদ্য মেঝেতে না রেখে ১২ থেকে ১৫ সে.মি. উপরে কাঠের পাটাতনে রাখতে হবে।
- খাদ্য তিন মাসের বেশি গুদামে না রেখে এর মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলতে হবে।
- মাছের খাদ্য এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে কোন কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ না থাকে।
ভেজা বা আর্দ্র খাদ্য উপাদান সংরক্ষণ পদ্ধতি নিম্নরূপ-
- চর্বিযুক্ত বা তৈলাক্ত মাছের খাদ্য কালো রঙের বা অস্বচ্ছ পাত্রে নির্ধারিত তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
- খাদ্য তৈরির উপাদান তাজা ছোট মাছ হলে সাথে সাথেই খাওয়াতে হবে অথবা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে হবে।
- খণিজ লবণ ও ভিটামিনসমূহ বাতাস ও আলোকবিহীন পাত্রে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে।
(৩) মাছের খাদ্য গুদামজাতকরণের সময় বিবেচ্য বিষয়সমূহ
মাছের খাদ্য উপকরণ এবং তৈরি খাবার যেন নষ্ট না হয় সেজন্য গুদামজাতকরণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন-
- সম্ভব হলে ভূমি থেকে উঁচুতে কাঠের ওপর স্তুপাকারে সংরক্ষণ করতে হবে।
- ছোট ছোট স্তুপাকারে খাদ্য গুদামজাত করতে হবে।
- খাদ্য উপকরণ ও তৈরি খাদ্য সঠিকভাবে লেবেল বা চিহ্নিত করে রাখতে হবে।
- খাদ্য রাখা ব্যাগের উপর হাটা চড়া করা যাবে না, এতে করে খাদ্য ভেঙ্গে যেতে পারে।
- গুদামের দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ব্যাগ স্তুপীকৃত করা যাবে না।
- গুদামের তাপমাত্রা সম্ভব হলে ২০ সে এর নিচে রাখতে হবে।
- গুদামে ইঁদুর বা অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
প্রিয় খামারি বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা আমরা মাছের খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বেশ তথ্য জানলাম।
মাছের খাদ্য সংরক্ষণের জন্য সুষ্ঠুভাবে খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ গুদামজাতকরণ অত্যাবশ্যক। কোনো খাদ্যের পুষ্টিমান ও গুণাগুণ ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেওয়াকে খাদ্য সংরক্ষণ বলা হয়। মাছের খাদ্য সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]