Skip to content

অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও

এ পাঠ শেষে আপনি- গবাদি প্রাণির অর্থ্যাৎ অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন। ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবেন।

(১) অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

গৃহপালিত প্রাণির দেহ গঠন, কার্যক্ষমতা ও উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যেও প্রয়োজন। সুষম খাদ্যে আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ , শর্করা ও ভিটামিন থাকে। গবাদি প্রাণির খাদ্যে যে কোনো পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।

অপুষ্টিজনিত লক্ষণ:

  1. গবাদি প্রাণি দুর্বল হয়ে যায় এবং গবাদি প্রাণির কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।
  2. দুধ ও মাংস উৎপাদন কমে যায়।

চিকিৎসা ও প্রতিকার:

  1. গবাদি প্রাণিকে নিয়মিত সবুজ কাঁচা ঘাস, লতা-পাতা, অঙ্কুরোদগমিত শস্যদানা খাওয়ালে ভিটামিন ই এর অভাব হয় না।
  2. দানাদার খাদ্যে কৃত্রিম দানাদার ভিটামিন ই সমৃদ্ধ মিশ্রণ মিশিয়ে গাভীকে খাওয়াতে হবে।

(২) ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

গবাদি প্রাণির দেহে সাধারণত-

  1. ভিটামিন ‘এ’
  2. ভিটামিন ‘ডি’
  3. ভিটামিন ‘কে’
  4. ভিটামিন ‘ই’
  5. ভিটামিন ‘বি-১২’

ইত্যাদি ভিটামিনের অভাব দেখা যায়।

নিচে এসব ভিটামিনের অভাবজনিত লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ক) ভিটামিন এ অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগ

সবুজ কাাঁচা ঘস, সবুজ লতা-পাতা এবং হলুদ রং এর শাকসবজিতে প্রচুর কেরোটিন থাকে যা গবাদি প্রাণির দেহে ভিটামিন এ তে রুপান্তিরিত হয়। যে সব গবাদি প্রাণি মাঠে চরে প্রচুর কাঁচা ঘাস লতা পাতা খায় এরা প্রচুর ভিটামিন এ পায়। যেসব গবাদি প্রাণিকে ঘরে বেঁধে শুধু খড়, বিচালি এবং দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয় সেসব গবাদি প্রাণিতে ভিটামিন এ এর অভাব দেখা দেয়।

See also  গরু-ছাগলের রোগ কত প্রকার ও কি কি? শ্রেণীবিভাগ

অভাবজনিত লক্ষণ:

  1. গবাদি প্রাণি রাতে দেখতে পায় না বা অল্প আলোতেও দেখতে পায় না, একে রাতকানা রোগ বলা হয়।
  2. গবাদি প্রাণির মাংসপেশির অসমন্বয়তা দেখা দেয়। ফলে গবাদি প্রাণির হাঁটাচলায় অসুবিধা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মাংসপেশীর খিচুনি দেখা যায়।
  3. লোম খসখসে হয়।
  4. ত্বক মসৃণতা হারায় এবং ত্বকে তুষ সদৃশ আঁশ পড়ে।
  5. আক্রান্ত গবাদি প্রাণির চোখ ফুলে যায়। চোখে সাদা পিঁচুটি জমা হয়।
  6. সময়মতো চিকিৎসা না করালে গবাদি প্রাণি অন্ধ হয়ে যায়।
  7. প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।

প্রতিকার:

  • বাছুরকে জন্মের সাথে সাথে গাভীর প্রথম দুধ বা শালদুধ খাওয়াতে হবে।
  • গবাদি প্রাণিকে প্রচুর সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
  • গবাদি প্রাণির দানাদার খাদ্যে কৃত্রিম ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিশ্রণ মিশিয়ে নিয়মিত গবাদি প্রাণিকে খাওয়াতে হবে।

খ) ভিটামিন ডি অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগ

গবাদি প্রাণির ত্বকে সূর্যরশ্মি পড়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভিটামিন ডি তৈরি হয় যা চামড়ার মাধ্যেমে গবাদি প্রাণির দেহে শোষিত হয়। যে সব গবাদি প্রাণি মাঠেঘাটে চরে বেড়ায় এবং প্রচুর সূর্যরশ্মি পায় তাদের দেহে সাধারণত ভিটামিন ডি এর অভাব হয় না। তবে ঘরে বেঁধে পালা পশুতে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয়। সামুদ্রিক মাছ যেমন হ্যালিবাট , শার্ক, কড জাতীয় মাছের যকৃতে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  1. বাছুরের হাড় এবং দাঁতের স্বাভাবিক গঠন হয় না।
  2. হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণ ঠিকমতো হয় না ফলে বাছুরের হাড় নরম এবং বাঁকা হয়।
  3. বয়স্ক গবাদি প্রাণির হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয় যাকে অসটিওমেলেসিয়া বা অস্থি কোমলতা রোগ বলে।
  4. গবাদি প্রাণির ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় এবং দৈহিক বৃদ্ধি ও ওজন হ্রাস পায়।
  5. গবাদি প্রাণির কাজ করার ক্ষমতা থাকে না।
  6. গবাদি প্রাণির প্রজনন ক্ষমতা ও উর্বরতা কমে যায়।

প্রতিকার:

  • দানাদার খাদ্যের সাথে সামুদ্রিক মাছের যকৃতের তেল মিশিয়ে গবাদি প্রাণিকে খাওয়ালে এই ভিটামিনের অভাব দূর করা যায়।
  • গবাদি প্রাণির দানাদার খাদ্যের সাথে নিয়মিত কৃত্রিম ভিটামিন ডি যুক্ত মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে গবাদি প্রাণির ভিটামিন ডি এর অভাব হয় না।
  • গবাদি প্রাণি যেন পর্যাপ্ত সুর্যালোক পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রতিদিন ৭-১২ ইউনিট ভিটামিন ডি ইনজেকশন আকারে প্রয়োগ করতে হবে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রয়োগ করলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদে শুকানো ঘাস বা হে সরবরাহ করতে হবে।
See also  কৃত্রিম প্রজনন কি? গরুর কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি, গাভীকে বীজ দেওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম

গ) ভিটামিন ‘ই’ অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগ

সাধারণত টাটকা সবুজ ঘাস লতা-পাতা এবং অঙ্কুরোদগমিত শস্যদানা, অঙ্কুরজাত তেলবীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।

অভাবজনিত লক্ষণ:

  1. বাছুরের মাংসপেশীর বৈকল্য দেখা দেয়।
  2. অস্থির মাংসপেশীর সংকোচন অস্বাভাবিক চলাফেরা এবং পেশী গঠনে অসামঞ্জস্য দেখা যায়।
  3. গবাদি প্রাণির প্রজননক্ষমতা কমে যায়, এমনকি গবাদি প্রাণির বন্ধ্যাত্বও হতে পারে।

প্রতিকার:

  1. গবাদি প্রাণিকে নিয়মিত সবুজ কাঁচা ঘাস, লতা-পাতা অঙ্কুরোদগমিত শস্যদানা খাওয়ালে ই ভিটামিনের অভাব হবে না।
  2. গাভীর দানাদার খাদ্যে কৃত্রিম ভিটামিন ই সমৃদ্ধ মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে গাভী এবং গাভীর দুধের মাধ্যমে প্রচুর ভিটামিন ই পাবে।
  3. খাদ্যে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সেলেনিয়াম যোগ করতে হবে।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারলাম।

গবাদি প্রাণির খাদ্যে যে কোন পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে পশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। অপুষ্টিজনিত রোগের কারনে গবাদি প্রাণি দুর্বল হয়ে যায়, কাজ করার ক্ষমতা কমে যায় এবং দুধ ও মাংসের উৎপাদন হ্রাস পায়। এজন্য গবাদি প্রাণির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts