Skip to content

উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা (Gavi Palon Bangladesh)

উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা (Gavi Palon Bangladesh)

এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- দুগ্ধ শিল্প কি ও এদেশে বার্ষিক দুধ উৎপদনের পরিমাণ কত তা বলতে পারবেন। উন্নত জাত ও সংকর জাতের গাভী কি, কোথায় পাওয়া যায় এবং কোন জাতের গাভী দিয়ে খামার শুরু করতে হবে, তা অবগত হতে ও সিদ্ধান্ত পারবেন। উন্নত জাতের দুধের গাভীর নাম ও উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা বৈশিষ্ট্য জানতে করতে পারবেন। দুধের গরুর খাবার তালিকা, দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য ও গরুর দানাদার খাবার তৈরির নিয়ম সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। তাছাড়া, গাভীর পরিচর্যা, যত্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। সর্বপরি এই আর্টিকেলটি আপনার উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

(১) উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা কেন প্রয়োজন?

উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা কেন প্রয়োজন

প্রাণীসম্পদ তথা কৃষির বিকাশ ও অগ্রগতির সঙ্গে গাভী পালন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলাদেশে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে, কোন জাতির মেধার বিকাশ মূলত সে জাতি কতটুকু দুধ পান করে তার ওপর নির্ভর করে। আর তাই দেখা যায় বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেই দুগ্ধ শিল্প বা ডেয়রি ইন্ডাস্ট্রি একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু সেই তুলনায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে।

বাংলাদেশে প্রতিবছর দুধের চাহিদা ১২.৫২ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২.২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। অবশ্য বর্তমানে এদেশের অনেকেই দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীর খামার গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন। আর তাই দেশে প্রায় ৪৮,০০০টি খামার গড়ে উঠেছে। তবে এসব খামারের বেশিরভাগ ছোট ও মাঝারি আকারের।

তবে পরিকল্পিতভাবে দুগ্ধ খামার গড়ে খামার ব্যবস্থাপনার খুটিনাটি বিষয়গুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারলে খামারিরা সহজেই গাভী পালন করে দেশকে উন্নতমানের তরল আমিষ সরবরাহের পাশাপাশি দেশের মানুষের মেধা বিকাশ ও নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। আর দেশের কৃষি অর্থনীতিও হবে সম্মৃদ্ধ।

(২) দুধের গরুর খামার গড়তে প্রাথমিক প্রস্তুতি

দুধের গরুর খামার গড়তে প্রাথমিক প্রস্তুতি
  • লাভজনক গাভী অর্থাৎ দুগ্ধ খামার গড়তে হলে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। আর এই প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে খামারের সফলতা বা ব্যার্থতা।
  • দুগ্ধ খামারের সফলতা নির্ভর করে খামারির আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা, উন্নত জাতের গাভী, নিরাপদ বাসস্থান ও সুষম খাদ্য সরবরাহের ওপর।
  • শুরুতেই বিশাল আকারের খামারের কথা চিন্তা না করে ছোট আঙ্গিকে খামার গড়ার পরিকল্পনা করা উচিত। তাই ৫-৬টি গাভী নিয়ে যাত্রা করে ধীরে ধীরে খামার সম্প্রসারণ করাই উত্তম।
  • দু’টি গাভীর পালনের জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন করে দক্ষ লোক নিয়োগ দেয়া উচিত।

(৩) গাভীর খামারের স্থান নির্বাচন

গাভীর খামারের স্থান নির্বাচন
  • গাভীর খামার এমন জায়গায় নির্মাণ করতে হবে যেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও দুধ বিক্রির যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে।
  • খামারের চারপাশে উঁচু দেয়াল, পরিবেশসম্মত আবাসন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং গাভীর বিশ্রাম ও হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে।
  • স্থান নির্বাচন ও বাসস্থান নির্মাণ হয়ে গেলে উন্নত জাতের গাভী নির্বাচন ও ক্রয় করতে হবে। 
See also  গর্ভবতী গাভী চেনার উপায়

(৪) উন্নত জাতের দুধের গাভীর নাম

উন্নত জাতের দুধের গাভীর নাম

উন্নত জাতের গাভীর নাম: ১. হলষ্টেইন ফ্রিজিয়ান ২.জার্সি, ৩. শাহীওয়াল, ৪. সিন্ধি, ৫. ব্রাহমা, ৬. থারপারকার।

দুগ্ধ খামার থেকে ভালো উৎপাদন পেতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন হবে উন্নত জাতের গাভী।

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত জাতের গাভী, যেমন- হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান, জার্সি, আয়ারশায়ার, মিল্কিং শর্টহর্ন ইত্যাদি থেকে যেখানে দৈনিক ৩০-৫০ লিটার দুধ পাওয়া যায়, সেখানে আমাদের দেশের স্থানীয় জাতের গাভী থেকে মাত্র ১-৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়। তবে শীতপ্রধান দেশের উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল গাভীগুলো বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় তেমনভাবে টিকতে পারে না।

তাছাড়া ভারতের সিন্ধি ও শাহীওয়াল ৭-১০ লিটারের বেশি দুধ দেয় না।

আমাদের দেশের স্থানীয় জাত রেড চিটাগাং, পাবনা ও সাদা সিন্ধি অনুল্লেখিত জাতসমূহের থেকে বেশি উৎপাদন দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

কাজেই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশী জাতের গাভীকে হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহিওয়াল, সিন্ধি প্রভৃতি জাতের ষাড়ের বীর্য দিয়ে প্রজনন করালে যে সংকর জাতের সৃষ্টি হয় তা একদিকে যেমন অধিক দুধ উৎপাদনশীল হয়, অন্যদিকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্নও হয়। তবে এ সংকর জাতগুলোর মধ্যে হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ানের সংকরই সবচেয়ে ভালো।

উন্নত ব্যবস্থানায় একটি হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান সংকর জাতের গাভী থেকে ১৫-৩৫ লিটার দুধ পাওয়া সম্ভব। কাজেই লাভজনক গাভী খামার গড়তে হলে হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান সংকর জাতের গাভী দিয়েই শুরু করা উচিত।

(৪) উন্নত জাতের গাভীর প্রাপ্তিস্থান

ঢাকা সদর, সাভার ও কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, পাবনার বাঘাবাড়ি, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর ইত্যাদি এলাকায় উন্নত জাতের গাভী বেশি দেখা যায়।

(৫) উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা বৈশিষ্ট্য

উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা বৈশিষ্ট্য

উন্নত জাতের গাভীর মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকবে। যেমন- 

  • মাথার আকার ছোট ও হালকা, কপাল প্রশস্ত ও চোখ হবে উজ্জ্বল।
  • দৈহিক আকার আকর্ষণীয় ও দেহের গঠন ঢিলেঢালা হবে। দেহের সামনের দিক হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুগঠিত হবে।
  • পাজরের হাড় ষ্পষ্ট ও হাড়ের গঠন সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
  • চামড়া পাতলা, চামড়ার নীচে অযাচিত চর্বি থাকবে না। চাড়ার রঙ উজ্জ্বল, লোম মসৃণ ও চকচকে হবে।
  • ওলান বড়, সুগঠিত ও দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ওলানের বাটগুলো একই আকারের হবে এবং চারটি বাট সমান দূরত্বে থাকবে ও সমান্তরাল হবে।
  • দুগ্ধশিরা মোটা ও স্পষ্ট হবে। তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধশিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।

(৬) গাভীর পরিচর্যা

গাভীর পরিচর্যা

গাভীর পরিচর্যার লক্ষ্য হলো গাভীকে অধিক কর্মক্ষম রাখা। গাভীর সঠিক পরিচর্যা না হলে উন্নত জাতের গাভী পালন করেও গাভীকে সুস্থ-সবল ও উৎপাদনক্ষম রাখা যাবে না। ফলে গাভী থেকে কাঙ্খিত পরিমাণে দুধ পাওয়া যাবে না। এতে খামারি লোকসানে মুখে পড়বেন।

  • কাজেই গাভীকে নিয়মিত গোসল করানো, শিং কাটা, খুর কাটা ইত্যাদির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
  • তাছাড়া গাভীকে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ, যেমন- মশা-মাছি থেকে নিরাপদ রাখতে কবে।

এসব পরিচর্যায় গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ও উৎপাদনে ভালো প্রভাব পড়বে।

(৭) গর্ভবতী গাভীর যত্ন: গাভীর গর্ভকালীন পরিচর্যা ও প্রসব পরবর্তী গাভীর যত্ন

গর্ভবতী গাভীর যত্নঃ গাভীর গর্ভকালীন পরিচর্যা ও প্রসব পরবর্তী গাভীর যত্ন
  • গর্ভকালীন সময়ে গাভীর দিকে বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত কারণ এই সময় গাভীর গর্ভে বাচ্চা বড় হতে থাকে। এসময় গাভীকে প্রচুর পরিমাণে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
  • প্রসবের কয়েক দিন আগে থেকে প্রসবকালীন সময় পর্যন্ত গাভীকে আলাদা জায়গায় রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জায়গাটি সমতল হতে হবে।
  • গর্ভকালীণ সময়ে অবহেলা করলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া গাভী প্রজনন ও গর্ভধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
  • প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলেই গাভীকে শান্ত পরিবেশে রেখে ২-৩ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রসব অগ্রসর না হলে প্রাণী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • প্রসবের পর বাছুরকে অবশ্যই শালদুধ পান করাতে হবে। কারণ এই শালদুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও বাছুরকে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।
  • বাচ্চা প্রসবের পর ফুল পড়ে গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
  • গাভী বাচ্চা প্রসবের পর ৫-৭ দিন পর্যন্ত শালদুধ দেয়। এর পরে স্বাভাবিক দুধ পাওয়া যায়।
  • বাচ্চা প্রসবের ৯০ দিনের মধ্যে গাভী পুনরায় গরম না হলে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
See also  দুধের গরুর খাবার তালিকা ও পরিচর্যা

(৮) দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন

দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন
  • দৈনিক ভোরে একবার ও বিকালে একবার নির্দিষ্ট সময়ে গাভীর দুধ দোহন করতে হবে।
  • দুধ দোহনের আগে গাভীর ওলান ও দোহনকারীর হাত পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে।
  • দোহনকালীন সময় গাভীকে উত্তেজিত করা থেকে বিরত থাকতে হবে ও দ্রুততার সঙ্গে দুধ দোহন সম্পন্ন করতে হবে।

(৯) দুধের গরুর খাবার তালিকা

দুধের গরুর খাবার তালিকা

গাভীর দৈহিক বৃদ্ধি এবং কোষকলার ক্ষয়পূরণ ও বিকাশ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, দুধ উৎপাদন, প্রজননে সক্ষমতা অর্জন, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধিসাধন ইত্যাদির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য পরিবেশনে শর্করা, আমিষ ও স্নেহপদার্থের প্রতুলতার দিকে নজর দিতে হবে। দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা নিচে হলো।

একটি গাভীকে দৈনিক কত কেজি ঘাস খাওয়াতে হয়: গাভীকে দৈনিক প্রয়োজনীয় অনুপাতে খড়, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যের মিশ্রন সরবরাহ করতে হবে।

৩০০ কেজি ওজনের একটি গাভীকে দৈনিক-

  1. উচ্চমান সম্পন্ন কাঁচা (সবুজ) ঘাস: ১০-১৫ কেজি।
  2. খড়: ৩-৪ কেজি।
  3. ১৮%-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্যের মিশ্রন: ২-৩ কেজি সরবরাহ করতে হবে।

গরুর দানাদার খাবার তৈরির নিয়ম:

উপাদান১ নং নমুনা২ নং নমুনা৩ নং নমুনা
গমের ভূষি৩০ কেজি৪০ কেজি২০ কেজি
চালের কুঁড়া১০ কেজি১৫ কেজি২০ কেজি
খেসারী ভূষি২৬ কেজি২০ কেজি২০ কেজি
খৈল২০ কেজি১৬ কেজি২০ কেজি
ভাঙ্গা ছোলা১০ কেজি১০ কেজি১৬ কেজি
ঝিনুকের পাউডার/হডের গুড়া০৩ কেজি০৩ কেজি০৩ কেজি
লবণ (অতিরিক্ত)০১ কেজি০১ কেজি০১ কেজি
DB ভিটামিন১০০ গ্রাম১০০ গ্রাম১০০ গ্রাম

গর্ববতী গাভীকে খাবার দেওয়ার নিয়ম:

  1. ১০০ কেজি ওজনের গাভীকে প্রতিদিন মিশ্রণের ৩ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
  2. গাভী গর্ভবতী হলে ৫ম মাস থেকে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত ১.৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
  3. দুধালো হলে প্রতি ২.৫ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

(১০) স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত জাতের গাভী পালন ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা

স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত জাতের গাভী পালন ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা

গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন বলতে এমন কতগুলো বিধি ব্যবস্থাকে বোঝায় যা মেনে চললে গাভীকে রোগজীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে অধিক দুধ উৎপাদন করা যায়। এগুলো নিম্নরূপ-

  • পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থাসহ দূর্যোগ নিবারণের সুবিধাসম্পন্ন বাসস্থান নির্মাণ করা।
  • খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • পচা-বাসি ও ময়লাযুক্ত খাদ্য ও পানি পরিহার করা।
  • সব সময় তাজা ও বিশুদ্ধ খাবার ও পানি সরবরাহ করা।
  • নিয়মিত কৃমিনাশকের ব্যবহার করা।
  • নিয়মিত সংক্রামক ব্যাধির টিকা প্রদান করা।
  • দ্রুত মলমূত্র নিষ্কাশন করা।
  • প্রজনন ও প্রসবে নির্জীবাণু পদ্ধতি অবলম্বণ করা।
See also  গর্ভবতী গাভীর খাদ্য তালিকা, গর্ভবতী গাভীর যত্ন, গাভীর বাচ্চা প্রসবের লক্ষণ, বাচ্চা প্রসবকালীন সময়ে গাভীর যত্ন এবং গাভীর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয়

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা কেন প্রয়োজন, দুধের গরুর খামার গড়তে প্রাথমিক প্রস্তুতি, গাভীর খামারের স্থান নির্বাচন, উন্নত জাতের দুধের গাভীর নাম, উন্নত জাতের গাভীর প্রাপ্তিস্থান, উন্নত জাতের গাভী চেনার উপায় বা বৈশিষ্ট্য, গাভীর পরিচর্যা, গর্ভবতী গাভীর যত্ন, গাভীর গর্ভকালীন পরিচর্যা, প্রসব পরবর্তী গাভীর যত্ন, দুগ্ধবতী গাভীর যত্ন, দুধের গরুর খাবার তালিকা, স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত জাতের গাভী পালন ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম যা আমাদের উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজে আসবে।

আমরা জানি, গাভীর জন্য কাঁচা ঘাস অত্যাবশ্যকীয়। কাঁচা ঘাসে প্রচুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন থাকে যা সহজে হজম হয়। তাই গাভীকে দৈনিক প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।

গাভী সাধারণত ২৭০-২৯০ দিন নিজ গর্ভে বাছুর বহন করে। এই সময়কে গর্ভকাল বলে। গর্ভাবস্থায় গাভীর যত্ন ও অন্যান্য পরিচর্যার উপরই স্বাভাবিক প্রসব, ভালো বাছুর, দুগ্ধ উৎপাদন ও পরবর্তী কালে স্বাভাবিক গর্ভধারণ নির্ভর করে। কাজেই গাভী পালনের ক্ষেত্রে গর্ভবতী গাভীর যত্ন ও খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গাভীর জীবনধারণ ও উৎপাদনের জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। সুষম খাদ্য না খাওয়ালে গাভী দুর্বল হবে, দুধ কম দিবে ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাবে। পশুর সময়মত গরম হওয়া, গর্ভধারন, বাচ্চা প্রসব তথা পশুর উর্বরতা রক্ষার জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন । তাছাড়া গর্ভবতী পশুর গর্ভস্থ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধির জন্যও খাদ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাঁচা ঘাস গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া, সাধারনতঃ কৃষিজাত পণ্যের উপপণ্য যেমন, চালের কুড়া, গমের ভুষি, খেসারি ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, মুশুর, মুগ, ছোলা, ও মটরের ভুষি, তিলের খৈল, তিষির খৈল, ধানের খড়, ভুট্টার খড় ইত্যাদি গো খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।

দানাদার খাদ্য যেমন- চালের কুড়া, গমের ভুষি, খেসারি ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, মুশুর, মুগ, ছোলা ও মটরের ভুষি, তিলের খৈল, তিষির খৈল ইত্যাদি দানাদার খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। এ সকল খাদ্য উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে সুষম দানাদার খাদ্য তৈরী করা হয়।

সুষম দানাদার খাদ্য খামারীগণ নিজে খামারে তৈরি করতে পারেন। তা ছাড়া খাদ্য কারখানায় উৎপাদিত সুষম দানাদার খাদ্য বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। এ গুলি প্রয়োজনীয় মাত্রায় গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়। বাহিরের ফিডের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে, গাভীর খাদ্য নিজেই তৈরি করে নেওয়া উত্তম।

কাঁচা ঘাস, ধানের খড়, ভুট্টার খড় ইত্যাদি গবাদি পশুর আঁশ জাতীয় খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। আঁশ জাতীয় খাদ্য দুই ভাগে বিভক্ত যেমন- কাঁচা ঘাস ও শুকনো খড় ইত্যাদি।আমাদের দেশে গো-চারন ভূমি নেই বললেই চলে। তাই কাঁচা ঘাসের ভীষন অভাব। সাধারনতঃ ফসলের জমিতে যে সব আগাছা জন্মায় ঐগুলিই ঘাস হিসাবে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়। কিন্তু, এ ঘাস খামারে গাভী পালনের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই, খামারের গাভির জন্য ফসলের জমিতে ঘাস চাষ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে বর্তমানে উন্নত জাতের ঘাসের বীজ পাওয়া যায়। যেমন- নেপিয়ার, পারা, হাইব্রীড সরগম (জাম্বো), জার্মান গ্রাস, আলফা আলাফা, লুসার্ন ইত্যাদি।

নেপিয়ার, জাম্বু ইত্যাদি ঘাস ১ বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ১৮ মেঃ টন পর্যন্ত উৎপাদিত হয়। ১ বিঘা জমির উৎপাদিত ঘাস দিয়ে ৩টি গাভীকে সারা বছর কাঁচা ঘাস খাওয়ানো যায়।

ধানের খড় আমাদের দেশে সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মিটাতে ধানের খড় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ভুট্টার চাষ আমাদের দেশে ব্যপকভাবে হয়ে থাকে। শুকনো ভুট্টার গাছ ও পাতা গবাদি পশুর জন্য একটি উপাদেয় আশ জাতীয় খাদ্য। তাছাড়া ভুট্টার সাইজেন বর্তমানে একটি যুগান্তকারী গো-খাদ্য গিসেবে আভির্ভুত হয়েছে।

আমাদের বাংলাদেশের জনসংখ্য দুধ ও মাংসের চাহিদা বিবচনায় অবশ্যই আমাদের উন্নত গাভী গরুর খামার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ত করা উচিত।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts