Skip to content

 

উন্নত জাতের গাভী পালন

উন্নত জাতের গাভী পালন

পরিকল্পিতভাবে গাভী পালন একটা লাভজনক কার্যক্রম অল্প মাঝারি বেশি সব ধরনের পুঁজি দিয়ে সুষ্ঠুভাবে গাভী পালন করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়।

পালনের জন্য দেশি উন্নত জাতের অথবা সংকর জাতের গাভী নির্বাচন করতে হবে।

উন্নত জাতের গাভী প্রাপ্তীর স্থান হিসেবে মানিকগঞ্জ, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সৈয়দপুর, ঠাকুরগাঁও, চিরিরবন্দর, রংপুর সদর, বগুড়া সদর, রাজশাহী সদর, ঢাকা সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, কুমিল্লা সদর, চট্টগ্রাম সদর, সিলেট সদর, বাঘাবাড়ী ঘাট মিল্কভিটা এলাকা, সাভার এলাকার মুশুরী খোলা, ভার্কৃতা, কেরানীগঞ্জ উপজেলার আটি এলাকা উল্লেখযোগ্য।

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রক্ষিণ সংক্রান্ত সাহায্য ছাড়াও ব্যাংক থেকে ঝণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। যুব উন্নয়ন, কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকেও প্রশিক্ষিত তরুণরা বিনা জামানতে বেশ মোটা অংকের খণ সহায়তা পেতে পারেন। বেকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পেশা। তাই নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হই এবং এরকম ডেইরি ফার্ম করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হই।

  • গাভী পালনের জন্য ঘরটি মোটামুটি খোলামেলা জায়গায় হতে হবে;
  • বাঁশ, ছন, খড়, পাটখড়ি দিয়ে ঘর নির্মাণ;
  • ঘরের মেঝে ঢালু ও ড্রেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে চোনা ও পানি গড়িয়ে বেরিয়ে যেতে পারে;
  • খাদ্য ও পানির পাত্রগুলো প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করা;
  • খাওয়া শেষ হলে পাত্রগুলো ঢেকে রাখতে হবে;
  • গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে;
  • প্রতিদিন নিয়মিত গোয়াল ঘরের গোবর-চোনা পরিষ্কার করে নিষিষ্ট স্থানে বা গর্তে জমা করতে হবে। যাপরবতীতে মূল্যবান সারে পরিণত হয়;
  • গরুর গায়ের আঠালি, ডাসা মাছি, জৌক ও অবাঞ্ছিত পোকামাকড় বেছে ফেলতে হবে;
  • গরুর স্বাস্থ্য নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে;
  • উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্ধালয় থেকে গবাদিপশুকে গোবসন্ত, তরকা, বাদলা, গলাফুলা, ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে;
  • গবাদিপশুর রোগ দেখা দিলে প্রাণিচিকিসক বা নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

(১) প্রাথমিক প্রয়োজন

উন্নত জাতের গাভী পালন (1)

যে কোনো কিছু গড়তে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে যে কোনো কাজের সফলতার ও ব্যর্থতা। ডেইরি ফার্ম গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা ও গরুর নিরাপদ আশ্রয়।

প্রথমেই বিশিাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেয়া ভালো। ৫ থেকে ১০টি গরু নিয়ে যাত্রা করে আস্তে আস্তে ফার্মকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম। ১০টি গরুর জন্য দুইজন দক্ষ লোক নিয়োগ করা গেলে ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে লোকটির গরুর যত্ন নেয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কিনা।

(২) বাছাই প্রক্রিয়া

উন্নত জাতের গাভী পালন (2)
  • নিজ এলাকায় বিশেষ করে মফস্বলে গরুর ফার্ম গড়ে তোলাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন গরুর উন্নত জাত বাছাই।
  • উন্নত জাতের গরু বাছাই না করলে সারা বছর ফার্মে রোগবালাই লেগে থাকবে।
  • ভালো জাতের গরুর পাশাপাশি ফার্মে পর্যাপ্ত ঘাস, খৈল বিচালির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • ফার্ম গড়ে তোলার পরপরই দুধ বিক্রির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে।

(৩) স্থান নির্বাচন

উন্নত জাতের গাভী পালন (3)
  • যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং দুধ বিক্রির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এসব এলাকার আশপাশেই ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলা প্রয়োজন।
  • চারপাশে উচু দেয়াল, পরিবেশসম্মত আবাসন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং গরুর বিশ্রাম ও হাটাচলার জন্য জায়গা থাকতে হবে।
  • গরুর ওষুধের দোকান, কীচা ঘাসের খামার আশপাশে থাকলে ভালো।
  • ডেইরি ফার্মের জন্য সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে গরুর খাবারের প্রতি। পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন খাবার না পেলে সঠিক পরিমাণ দুধ পাওয়া যায় না। ধানের কুঁড়া, গমের ভুসি, ছোলা, খেসারির খোসা, লবণ, খেল, নারিকেলের ছোবড়া, ঘাস-বিচালির পর্যাপ্ত সংগ্রহ রাখতে হবে।
  • অনেক সময় বাসি ও পচা খাবার গরুকে সরবরাহ করা হয়। যা কখনোই ঠিক নয়। এতে করে গরুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • সবসময়ই খেয়াল রাখতে হবে গরুর খাদ্য যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পুষ্টিমান সম্পন্ন হয়। এজন্য পচা বা দীর্ঘদিন রাখা এসব পণ্য গরুকে খাওয়ানো উচিত নয়।
  • গাভীর গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। এ সময় স্থানীয় প্রাণিচিকাসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

(৪) আয়-ব্যয়

উন্নত জাতের গাভী পালন (4)

ডেইরি ফার্ম একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। সাথে সাথে লাভের আশা করা ভুল। বরং ধীরে সুস্থে এগুলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। গড়ে এক একটি গরু কিনতে ৭০-৯০ হাজার টাকা খরচ হবে (২০১৯ খ্রিঃ)। এছাড়া যত বেশি গরুর সংখ্যা বাড়বে খরচের খাতও তত কমবে।

See also  গর্ভবতী গাভী চেনার উপায়

বতমানে শহরের বাভন্ন মিষ্টির দোকান ও কনফেকশনারির লোকজন সরাসরি ফার্মে এসে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। গড়ে এক একটি গরু থেকে মাসে ৪-৫ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করা সম্ভব (২০১৯ খ্রিঃ)। খরচ বাদে এ লাভ একটি পরিবারের জন্য কম নয়।

(৫) পরিচর্যা

উন্নত জাতের গাভী পালন (5)
  • উন্নত জাতের গাভী ডেইরি ফার্মের জন্য সহায়ক। এক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ান গাভীর জাত বেছে নেয়া যেতে পারে। এজন্য পশু খামারি এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়।
  • প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা মশারি, ফ্যান, ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আলোর জন্য লাইটিং এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও নজর দেয়া জরুরি।
  • দৈনিক সুষম খাদ্য (গ্রাম হিসেবে) চালের গুঁড়া ২৫০; গমের ভুসি ২৫০; খৈল ২৫০; ডালের ভুসি ২৫০; চিটাগুড় ২০০; লবণ/খনিজ; মিশ্রণ ভিটামিনসহ ৫০ গ্রাম।
  • এছাড়াও দৈনিক অন্তত ৩ কেজি খড় অথবা ৯-১২ কেজি কীচা ঘাস ও প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে।
  • এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে খড়, কীচাঘাস ও বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানি খাওয়াতে হবে।
  • ছয় মাস বয়সে বাছুরকে সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
  • বাছুরকে কৃমির ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দিতে হবে।
  • স্বাস্তের প্রতি লক্ষ্য রেখে সুষম খাদ্য দিতে হবে।
  • দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় প্রাণিচিকাসা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবেও খামারিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

(৬) গাভীর দুধের উৎপাদন যেভাবে বাড়ানো যায়

উন্নত জাতের গাভী পালন (7)

গাভীর দুধ উাপাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান জাতের ওপর নির্ভর করে। গাভীর দুধ উৎপাদনের পরিমাণ দুধের উপাদান যেমন- মাখন, আমিষ, খনিজ পদার্থ সবই বিভিন্ন জাতের গাভীতে কম-বেশি হতে পারে।

বংশগত ক্ষমতার কারণে দেশীয় জাতের গাভীর দুধের মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু এরা দুধ উাৎপাদন করে কম। সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা জাতের গাভীর দুধে মাখন বা ননীর পরিমাণ অন্য বিদেশিয় জাতের গাভী যেমন- হলস্টেন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ইত্যাদি জাতের গাভী সিন্ধি, শাহিওয়াল, হরিয়ানা প্রভৃতি গাভী থেকে বেশি।

খাদ্য গাভীর দুধ উৎপাদন ও দুধের গুণগতমানের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অধিক পরিমাণ খাদ্য খাওয়ালে বেশি দুধ পাওয়া যায়। তবে খাদ্য অবশ্যই সুষম হতে হবে।

গাভীকে সুষম খাদ্য না খাওয়ালে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় এবং দধের গুণগতমানও কমতে বাধ্য। কারণ খাদ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো ভিন্ন অবস্থায় দুধের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। খাদ্যে দুধের মাখনের উপস্থিতির পরিমাণ কম-বেশি করতে পারে।

যে ধরনের খাদ্যের জন্য গাভীর দুধের মাখনের হার কম হতে পারে। তাহলো-

  1. মাত্রাতিরিক্ত দানাদার খাদ্য খাওয়ালে;
  2. পিলেট জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে;
  3. অতিরিক্ত রসালো খাদ্য খাওয়ালে এবং
  4. মিহিভাবে গুঁড়া করা খড় খাওয়ালে।

গাভীর দুধে মাখনের পরিমাণ কমে গেলে খাদ্য পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে। দুধে খনিজ পদার্থ ও খাদ্যপ্রাণের পরিমাণ গাভীর খাদ্যের মাধ্যমে বাড়ানো যায়।

গাভীকে সুষম খাদ্য না দিলে দুধে সামান্য মাত্রায় আমিষ ও শর্করা জাতীয় উপাদান পাওয়া যায় এবং দুধ উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়।

দুধ দোহন বিশেষ করে দোহন কাল, দোহনের সময়, দুধ দোহন প্রক্রিয়া, বিভিন্ন বাঁটের প্রভাব ইত্যাদি গাভীর দুধের পরিমাণ ও মানকে প্রভাবিত করে। গাভীর দুধ দেয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে ৫০ দিনে বেড়ে সর্বোচ্চ হয়।

ওলানে দুধের চাপের ওপর দুধের পরিমাণ ও উপাদান নির্ভর করে। দুগ্ধদান কালের ৯০ দিন পর থেকে দুধে মাখন ও আমিষের হার আংশিক বাড়ে। একই গাভীকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দোহন করলে দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। তাই সকালের দুধের চেয়ে বিকালের দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই গাভীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২-৩ বার দোহন করা উচিত। এতে দুধ উ্রপাদনের পরিমাণ বাড়তে পারে।

প্রসবকালে গাভীর সুস্বাস্থ্য আশানুরূপ দুধ উাপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গাভী থেকে বেশি দুধ পেতে হলে গর্ভকালে সুষ্ঠু পরিচর্যা ও সুষম খাদ্য দেয়া প্রয়োজন।

প্রসবের দুই মাস আগে গাভীর দুধ দোহন অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে। মোট দুধ উাপাদনের ৪০% ওলানের সামনের অংশের বাঁট এবং ৩০% পেছনের অংশের বাঁট থেকে পাওয়া যায়। গাভীর ওলানের বাঁট অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।

রক্ষণাবেক্ষণ, বাসস্থান, গাভীর দুধ উাৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগতমানের হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী। পারিপার্থিক অবস্থা গাভীর জন্য আরামদায়ক হওয়া উচিত। দোহনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করলে অর্থাৎ দুধ দোহন ত্রুটিপূর্ণ হলে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগতমান কমতে পারে।

See also  দুধের গরুর খাবার তালিকা ও পরিচর্যা

প্রতিকূল আবহাওয়া দুধ উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। শীত মৌসুম দুধাল গাভীর জন্য আরামদায়ক। এ মৌসুমে দুধ উৎপাদনের এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, গরমকাল, বর্ষাকাল, আর্র আবহাওয়ায় গাভীর দুধের উাৎপাদন ও গুণগতমান কমে যায়। গরমের দিকে গাভীকে ঠান্ডা অবস্থায় রাখলে উৎপাদনের কোনো ক্ষতি হয় না। গাভীর প্রজননের সময় দুধ উাৎপাদন কমে যায়।

দীর্ঘ বিরতিতে বাচ্চা প্রসব করলে গাভীর দুধ উাপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। স্বল্প বিরতিতে বাচ্চা প্রসবের কারণে দুধ উৎপাদন কিছুটা হাস পেতে পাবে। তাই গাভীকে বাচ্চা প্রসবের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পাল দিতে হবে। কোনোক্রমেই ৬০ দিনের আগে প্রজনন করানো উচিত নয়।

গাভীর শরীরে ৫০% এবং দুধে প্রায় ৮৭% পানি থাকে। তাই গাভীকে ইচ্ছামতো পানি পান করার ব্যবস্থা করলে দুধ উাৎপাদন বেশি হয় এবং দুধে মাখনের পরিমাণ বেশি থাকে।

(৭) গাভীর বড় ওলানের পরিচর্যা

উন্নত জাতের গাভী পালন (6)

অধিক দুধ উাৎপাদনকারী গাভীর দৈহিক আকার যেমন বড় হয় তেমনি বড় হয় তার ওলানও। এসব গাভী যন্তসহকারে পরিচর্যা করতে হয়।

উঠা-বসার সময় শেডের কনক্রিটের মেঝেতে গাভীর ওলান ঘষা লেগে ওলানে ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর তাতে গোবর বা চোনা লেগে রোগ-জীবাণুর আক্রমণে গাভী অসুস্থ হয়।

ওলানে সমস্যা দেখা দিলে দুধ উাপাদন কমে যায়। ম্যাসটাইটিস রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে কখনও কখনও ওলানের এক বা একাধিক বাঁট কেটে ফেলতে হয়। তখন দুধ উ্রপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে আসে।

ওলানে আঘাতজনিত সমস্যা এড়াতে কনক্রিটের পরিবর্তে বালির মেঝে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত বলে অভিমত দিয়েছে ডেইরি বিজ্ঞানীরা।

এ বালির মেঝে’ তৈরি করতে হবে বিশেষ প্রক্রিয়ায়। প্রায় দেড় মিটার সমপরিমাণ গভীর করে মাটি শেডের মেঝে থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর কমপক্ষে দুইস্তরে বড় বড় টায়ার বসাতে হবে। টায়ারের ওপর বিছিয়ে দিতে হবে পরিষ্কার বালু। বালু অবশ্যই কীকর, ইটের টুকরা, লোহার টুকরা বা অন্যান্য যে কোনো ধারালো বস্তু মুক্ত হতে হবে। রোগের সংক্রমণমুক্ত এলাকা থেকে এ বালু সংগ্রহ করতে হবে।

বালির মেঝে নরম হওয়ায় গাভী উঠে দীড়ানো কিংবা বসার সময় কোনো ধরনের আঘাত পাবে না। ওলানের আঘাতজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে।

এ মেঝের সুবিধাজনক দিক হচ্ছে গাভীর চোনা সহজেই ঝুরঝুরে বালিতে পড়ে শুকিয়ে যাওয়া। তবে বালি যেন ভেজা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য দিনে কমপক্ষে দুইবার গোবর পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

সব বালি সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন উলটপালট করে দিতে হবে। ওপরের বালি নিচে এবং নিচের বালি ওপরে উঠে এলে রোগ-জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারবে না, রোগ বাসা বাঁধার সুযোগ পাবে না। ছয় মাস পরপর শেডের পুরনো বালি ফেলে দিয়ে নতুন বালি দিতে হবে।

এভাবে করলে আমরা কম খরচে লাভজনকভাবে গাভি পালন করা যায়।

(৮) দুধ উৎপাদনকারী ১০টি গাভী পালন আয় ব্যয়ের নমুনা হিসাব

উন্নত জাতের গাভী পালন (8)

দুধ উপাদনকারী ১০টি গাভী পালনের হিসাব করে গাভী পালনের আয়-ব্যয় নির্ণয় করা সম্ভব। গাভী পালনে লাভবান হওয়ার জন্য আয় ব্যয়ের হিসাব রাখা অতি জরুরী। চলুন জেনে নেই দুধ উাৎপাদনকারী ১০টি গাভী পালনের নমুনা হিসাব সম্পর্কে।

ক) খরচের হিসাব (২০১৯ খ্রিঃ)

স্থায়ী খরচ-

  1. গাভীর ঘর নির্মাণ ২০ ফিট × ২০ ফিট (উপরে টিন, চারদিকে দেয়াল) ৮০ হাজার টাকা;
  2. ১০ টি গাভী ক্রয় (বাছুরসহ দুধের গাভী) প্রতিটি ৮৫ হাজার করে, মোট ৮ লক্ষ টাকা;
  3. খানার পাত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ ১০ হাজার টাকা;
  4. পানি সাপ্লাইয়ের সাব মার্সিবল পাম্ব স্থাপন ২৪ হাজার টাকা;
  5. ৮টি ফ্যান, প্রতিটি ২ হাজার টাকা, মোট ১৬ হাজার টাকা;
  6. একটি ভ্যানগাড়ী ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ ১০ হাজার;

সর্বমোট: ১০টি গাভী পালনে মোট এককালিন/স্থায়ী ১০ লক্ষ টাকা।

এখানে স্থায়ী খরচ যেটা একবার লাগবে পরবর্তীতে শুধু মেরামত বাবদ কিছু খরচ লাগবে।

১২ মাসে চলতি খরচ-

  1. প্রতিদিন দানাদার খাদ্য খরচ (১ গাভীর জন্য ২০০ টাকা) ১০ টির জন্য (২০০০ × ৩০) = ৬০ হাজার টাকা প্রতি মাসে;
  2. কাচা ঘাস এবং খড় এছাড়াও অন্যান্য খাবার বাবদ মাসে খরচ (১ টির জন্য ১০০ টাকা হিসেবে) ১০ টির জন্য ১ মাসে খরচ ১০০০ × ৩০ = ৩০ হাজার টাকা;
  3. ওষুধ, ভিটামিন মাসিক ৫ হাজার টাকা;
  4. বিদ্যুত বিল প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা;
  5. লেবার খরচ ২ জন (৬ হাজার টাকা প্রতি মাসে) মোট ১২ হাজার টাকা;
See also  গাভী পালন পদ্ধতি

সর্বমোট: ১০টি গাভী পালনে মোট চলতি খরচ, প্রতি মাসে ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা, আর ১২ মাসে চলতি খরচ আসবে ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা।

খ) গাভীর খামার থেকে আয় (২০২৩ খ্রিঃ)

প্রতিটি গাভী দৈনিক ১০ লিটার দুধ দেবে। প্রতি লিটারের দাম ৫০ টাকা। একটি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাওয়া যাবে ৫০ × ১০ = ৫০০ টাকা। তাহলে ১০ টি গাভীর দুধ থেকে প্রতিদিন ৫০০ × ১০ = ৫ হাজার টাকা আয় হবে। ফলে ৩০ দিনে ১০ টি গাভীর দুধ বিক্রি থেকে ৫০০০ × ৩০ = ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

দুধ বিক্রি থেকে ৮ মাসে আয়, ১ লক্ষ ৫০ হাজার × ৮ = ১২ লক্ষ টাকা।

গাভী প্রায় ৮ মাস ধরে গড়ে ১০ লিটার দুধ দেবে। এরপর দুধের পরিমাণ কমতে থাকবে।

৮ মাস পর দুধ দেয়ার পরিমাণ কমে যাবে। গড়ে ৫ লিটারে নেমে আসবে। তাহলে ১০ টি গাভী থেকে ৫০ লিটার দুধ পাওয়া যাবে। ৫০ টাকা লিটার ধরে হিসাব করলে ৫০ লিটার দুধ থেকে দৈনিক আয় ২৫০০ টাকা।

দুধ বিক্রি থেকে পরবর্তী ২ মাসে আয়, দৈনিক ২ হাজার ৫০০ টাকা × ৬০ = ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

ধরি আরও ২ মাস গাভীর কোন দুধ পাওয়া যাবে না, তাই আয় ধরি ০ টাকা।

তাহলে প্রথম ৮ মাসে দুধ বিক্রি থেকে আয় ১২ লক্ষ টাকা + পরবর্তি ২ মাসে আয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা + ২ মাস গাভীর দুধ পাওয়া যাবে না = ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

সর্বমোট: ১২ মাসে ১০টি গাভী থেকে মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা টাকা।

অতএব, ১২ মাসে মোট চলতি খরচ হয়েছিল, ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। ১২ মাসে মোট দুধ বিক্রি থেকে আয় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা টাকা।

তাই বলা যা, ডেইরী ফার্মে খুব বেশী লাভ হয় না প্রথম দিকে, দুধ উৎপাদনের খরচ এবং দুধ বিক্রিতে যা আয় হয় তা প্রায় সমান। প্রতি বছর বছর উক্ত ১০টি গাভী থেকে বছর যে বাচ্চা পাবেন শুধু সেটাই আপনার ভালো লাভ বয়ে আনবে।

উন্নত জাতের গাভী পালন (9)

বাচ্চা দেবার ১ থেকে ২ মাসের মাঝে গরু হিটে আসলে কৃত্রিম প্রজনন দিতে হবে। কৃত্রিম প্রজনন দেয়ার প্রায় ৮-৯ মাস পর গাভী বাচ্চা দেবে। এরপর প্রতিবার ১২-১৫ লিটার করে দুধ দেবে। এ গাভী ৪ থেকে ৫ বছর পযন্ত পোষা যাবে।

১ বছর পর এক-একটি বাছুর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। ৩ বছর পর বাছুরগুলো আবার গর্ভবতী হবে। তখন এক-একটির দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় দড়াবে। এ কারণে বাছুরগুলো রেখে ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দিতে হবে।

গাভীকে দানাদার খাদ্য, কাচা ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া ও প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ঘর নির্মাণ খরচ লাগবে না, গাভীও কিনতে হবে না। ৮ মাস পর আবার গাভীগুলো দুধ দেবে। আগের বাছুর বড় হবে।

এসময় ঘর নির্মাণ খরচ, গাভী ক্রয় খরচ, টিউবওয়েল নির্মাণ খরচ আর লাগবে না, তবে খাদ্য খরচ বেড়ে যাবে।

আগের ১০টি গাভী, ১০ টি বড় বাছুর, নতুন ১০ টি ছোট বাছুর সব মিলে ৩০ টি গরু হবে। আগের বাছুরের মধ্যে যদি ষাঁড় থাকে তাহলে বিক্রি করে দিতে হবে। ১০ টি বাছুরের মধ্যে যদি ৫ টি ষাঁড় থাকে তাহলে প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলে ২৫ হাজার × ৫ = ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আয় হবে। এর বেশিও আয় হতে পারে।

এছাড়া প্রতি বছর বাছুর বিক্রি থেকে এবং গোবর বিক্রি করেও টাকা অর্জন করা যাবে। গাভীগুলো ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত দুধ দেয়ার পর এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। এ ধরনের একটি গাভী ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।

পরিশেষে বলব, গাভী পালন একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যবসা হিসাব-নিকাশ করে চললে অনেক অর্থ অপার্জন করা সম্ভব।

সঠিক ব্যবপস্থাপনাই মূল বিষয়, ডেডিকেশন ও ডিসিপ্লিন না থাকলে গাভীর খামার টিকবে না। এই ব্যবসায় কেউ হাজার পতি থেকে কোটিপতি থেকে হয়, কেউ কোটিপতি থেকে হাজারপতি হয়।

[সূত্র: শেখ সিফাতুল আলম মেহেদী, সদর রোড, স্বর্ণকুঞ্জ, খুলনা]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page