Skip to content

কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতর পালন পদ্ধতি

কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতর পালন পদ্ধতি

কবুতর আমাদের অতিপরিচিত গৃহপালিত পাখি। বাংলাদেশের গ্রামে এমনকি শহর এলাকায়ও অনেককে কবুতরের পালন করতে দেখা যায়। আমরা এই আলোচনাটিতে কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতর পালন পদ্ধতি সুন্দর ও সহজ ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

(১) কবুতরের বৈশিষ্ট্য

কবুতরের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-

⇒ আমরা সাধারণত গৃহপালিত পাখির ডিম ও মাংস উভয়ই খেয়ে থাকি। কিন্তু কবুতরের ডিম খাওয়া হয় না, শুধু মাংস খাওয়া হয়। বিশেষ করে ৩-৪ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা কবুতরের মাংস খাওয়া হয়।

⇒ কবুতরের মাংস খুব নরম।

চিত্র- কবুতর
চিত্র- কবুতর

⇒ পৃথিবীতে অনেক জাতের কুবুতর রয়েছে।

⇒ মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, সিলভার কিং, কারনাট ও হোমার বিশ্ববিখ্যাত।

⇒ চিত্তবিনোদনের জন্য লাহোরি, ফ্যানটেইল, সিরাজি, গিরিবাজ, ময়ূরপঙ্খি ইত্যাদি জাতের কবুতর রয়েছে।

⇒ দেশি কবুতরের মধ্যে জালালি, গোলা, গোলি, ডাউকা, লোটন, মুক্কি ইত্যাদি জাত দেখা যায়।

⇒ বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কবুতরের খামার তেমন দেখা যায় না। এ দেশে অনেকে চিত্তবিনোদন ও শখের বশে কবুতর পালন করে থাকে। এতে চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি কবুতরের বাচ্চা তাদের পারিবারিক মাংসের চাহিদা পুরণ করে।

চিত্র- জালালি কবুতর
চিত্র- জালালি কবুতর
চিত্র- হোয়াইট কিং কবুতর
চিত্র- হোয়াইট কিং কবুতর
চিত্র- হোমার জাতের কবুতর
চিত্র- হোমার জাতের কবুতর
চিত্র- ফ্যানটেইল জতের কবুতর
চিত্র- ফ্যানটেইল জতের কবুতর
চিত্র- লাহোরি জাতের কবুতর
চিত্র- লাহোরি জাতের কবুতর
চিত্র- টাম্বলার জাতের কবুতর
চিত্র- টাম্বলার জাতের কবুতর

⇒ একটি পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়ায় জোড়ায় বসবাস করে।

⇒ কবুতর ৫-৬ মাস বয়সে ২৮ দিন অন্তর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি ডিম পাড়ে।

⇒ ডিম পাড়ার সময় হলে এরা উভয়ই খড়কুটা টেনে বাসায় তোলে। ডিম পাড়ার পর উভয়ই পালাক্রমে ডিমে তা দেয়। কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৮ দিন সময় লাগে।

⇒ কবুতর পালন খুব আনন্দদায়ক। কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কবুতর থেকে বছরে ৭-৮ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়।

⇒ কবুতরের বাচ্চা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাবার উপযোগী হয়।

⇒ কবুতর পালনে খরচ কম। স্বল্প পুঁজিতে কবুতর পালন করা যায়। এদের রোগবালাই কম হয়।

See also  কবুতরের পালন/কবুতর পালন পদ্ধতি: কবুতরের পালনে বাসস্থান, কবুতরের খাদ্যাভ্যাস, কবুতরের খাদ্য তালিকা, কবুতরের বাচ্চার খাবার, কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি এবং কবুতরের রোগের নাম

(২) কবুতর পালন পদ্ধতি

বহুকাল আগে থেকে মানুষ মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতর পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে অনেকে অর্থ-আবদ্ধ ও আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর পালন করছে। আমাদের দেশে সাধারণত মুক্ত অবস্থায় কবুতর পালন করা হয়। আবার অনেককে তারের জাল দিয়ে ঘিরে অথবা বড় আবদ্ধ ঘরে কবুতর পালন করতে দেখা যায়।

কবুতর পালন পদ্ধতিসমূহ হলো-

ক) মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতর পালন

⇒ সকালে কবুতরকে বাসা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। দিনের বেলায় খাদ্যের খোঁজে এরা বিভিন্ন জায়গায় উড়ে বেড়ায়। মাঝেমধ্যে বাড়ি এসে বিশ্রাম নিয়ে আবার চলে যায়। তবে সন্ধ্যার আগেই এরা বাড়ি চলে আসে।

⇒ এ অবস্থায় সাধারণত কবুতরকে কোনো খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। কিন্তু কবুতর সবসময় মাঠ থেকে পরিমাণ মতো খাবার পায় না। তাই মুক্ত পদ্ধতিতে পালন করা কবুতরকে বাড়িতে নিয়মিত কিছু খাবার সরবরাহ করলে ভালো বাচ্চা পাওয়া যায়।

চিত্র- মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতরের বাসা
চিত্র- মুক্ত পদ্ধতিতে কবুতরের বাসা
চিত্র- আবদ্ধ পদ্ধতিতে ঘরে কবুতরের খোপ
চিত্র- আবদ্ধ পদ্ধতিতে ঘরে কবুতরের খোপ

খ) আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর পালন

⇒ আবদ্ধ অবস্থায় বড় ঘরের মধ্যে কবুতর পালন করা হয়।

⇒ এ অবস্থায় কবুতরের ঘরে যেন প্রচুর আলো-বাতাস ঢুকতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

⇒ এখানে ঘরের মধ্যে কবুতরকে বাসা বা খোপ তৈরি করে দেওয়া হয়।

⇒ তাছাড়া ঘরের মধ্যে কবুতরের জন্য খাদ্য ও পানির পাত্রের ব্যবস্থা করতে হয়।

⇒ বৃষ্টির পানি যাতে ঘরে না আসে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

⇒ ঘরের মধ্যে কবুতর যাতে উড়তে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

⇒ তবে যে পদ্ধতিতেই কবুতর পালন করা হোক না কেন, খড়-কুটা টেনে বাসায় তোলা, ডিম পাড়া এবং ডিমে তা দেওয়ার সময় এদের বিরক্ত করা যাবে না।

গ) অর্থ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর পালন

অর্থ-আবদ্ধ অবস্থায় কবুতর পালন করলে বহুতল বাসা তৈরিতে খরচ কম হয়। কবুতরকে হিসাব করে অর্ধেক খাবার বাড়িতে সরবরাহ করতে হয়। অবশিষ্ট খাদ্য এরা মুক্ত অবস্থার মতো নিজেরা সংগ্রহ করে খায়।

See also  কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতরের ছবি

(৩) কবুতরের বাসস্থান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

কবুতরের পালনে এর বাসস্থান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাসমূহ হলো-

⇒ কবুতরের বাসস্থান কবুতর একক বাসা বা খোপের মধ্যে বসবাস করতে পছন্দ করে।

⇒ কবুতরের বাসা মাটি থেকে উঁচুতে স্থাপন করতে হয়। বন্য পশু-পাখি যাতে এদের ক্ষতি করতে না পারে, সে দিকে লক্ষ রেখে বাসা তৈরি করতে হয়।

⇒ কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের বাসা বা খোপ তৈরি করা হয়।

⇒ কবুতর থেকে বেশি বাচ্চা পেতে হলে এক জোড়ার জন্য পাশাপাশি ২টি বাসা তৈরি করতে হবে। কারণ বাচ্চা পালনের সময় আবার ডিম পাড়ার সময় হলে সে বাচ্চার পাশের বাসায় নতুন করে ডিম দেয় এবং তা দিতে শুরু করে।

⇒ কবুতরের ঘর দুই বা ততোধিক তলা বিশিষ্টও হতে পারে। বহুতল বাসা তৈরিতে খরচ কম হয়।

চিত্র- কবুতরের একক খোপ
চিত্র- কবুতরের একক খোপ

⇒ স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়ই পালাক্রমে বাচ্চাকে খাওয়ায়। এরা বাচ্চার মুখের ভিতর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে আদরের সাথে নিজ খাদ্যথলির রসমিশ্রিত নরম খাদ্য বাচ্চার মুখের ভিতর দেয়। এ রসমিশ্রিত নরম খাদ্য অত্যন্ত পুষ্টিকর হওয়ায় তা খেয়ে বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠে। ২৮ দিন পর এদের পাখার পালক গজায় এবং এরা ঠোঁট দিয়ে তুলে খেতে পারে।

চিত্র- খোপে কবুতর ডিমে তা দিচ্ছে
চিত্র- খোপে কবুতর ডিমে তা দিচ্ছে
চিত্র- কবুতর তার বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে
চিত্র- কবুতর তার বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে

⇒ বয়স্ক কবুতরের খাদ্য কবুতর ধান, গম, ভুট্টা, মটর, খেসারি, সরিষা, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেতে পছন্দ করে। মুরগির জন্য তৈরি সুষম খাবারও কবুতরকে খাওয়ানো যায়।

⇒ প্রতিটি কবুতর গড়ে দৈনিক ৫০ গ্রাম খাবার খেয়ে থাকে।

⇒ কবুতরকে ঝিনুকের খোসাচূর্ণ, চুনাপাথর, কাঠকয়লা চূর্ণ, লবণ ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে খেতে দিতে হয়। এতে তাদের খনিজ লবণের অভাব পুরণ হয়।

⇒ কবুতরের খাদ্য ও পানি পারে সরবরাহ করতে হয়। যুক্ত ও অর্থ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে কবুতর নিজেই খাদ্যের সন্ধানে বের হয়ে যায়। এরা বিভিন্ন ফসলের মাঠ হতে খাদ্য খেয়ে থাকে। ঘরে কবুতরকে তৈরি খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

See also  কবুতরের পালন/কবুতর পালন পদ্ধতি: কবুতরের পালনে বাসস্থান, কবুতরের খাদ্যাভ্যাস, কবুতরের খাদ্য তালিকা, কবুতরের বাচ্চার খাবার, কবুতরের বাচ্চা পালন পদ্ধতি এবং কবুতরের রোগের নাম
চিত্র- কবুতর মাঠে খাবার খাচ্ছে
চিত্র- কবুতর মাঠে খাবার খাচ্ছে
চিত্র- কবুতর ঘরে দেওয়া খাবার খাচ্ছে
চিত্র- কবুতর ঘরে দেওয়া খাবার খাচ্ছে

(৪) কবুতরের খাদ্য তালিকা

কবুতরের খাদ্য একটি তালিকা সাণিতে দেখানো হলো-

ক) খাদ্য সরবরাহ:

কবুতরের খাদ্য উপাদানশতকরা হার
১. গম৩০%
২. ভুট্টা২০%
৩. সরিষা দানা১৫%
৪. খেসারি২০%
৫. কলাই১৪.৫%
৬. লবণ০.৫%
মোট =১০০%

খ) পানি সরবরাহ: কবুতরের পানি পান ও গোসল করার জন্য ঘরের মাঝখানে ২-৩টি গামলার ব্যবস্থা করতে হবে। গামলার ৩-৪ ভাগ পানি দিয়ে ভরে রাখতে হবে। এখান থেকেই এরা পানি পান ও গোসল করবে।

প্রিয় পশু প্রেমী ভাই-বোন উপরের আলোচনাতে আমরা সংক্ষিপ্ত আগের কবুতরের বৈশিষ্ট্য ও কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করলাম এরপরের আলোচনায় আমরা কবুরের পালনে বিভিন্ন সমস্যা, কবুতরের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার/চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্য আপনাদের তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করি আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন, আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts