Skip to content

কুল ফল পরিচিতি ও কুল চাষ পদ্ধতি/নিয়ম

কুল ফল পরিচিতি ও কুল চাষ পদ্ধতি বা নিয়ম

(১) কুল ফল পরিচিতি

চিত্র- কুল
চিত্র- কুল

কুল ফলকে ইংরেজিতে Ber বা Jujube বলে। বর্তমানে কুল চাষ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে কুল ফলের বিভিন্ন ধরনের উৎকৃষ্ট জাত উদ্ভাবনের ফলে বাণিজ্যিকভাবে কুলের চাষ বেড়েছে।

কুল ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও খণিজ লবণ আছে। কুলের ফুল পেটের গ্যাস ও রুচি বর্ধকের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কুল ফল ও এর পাতা উভয়েই ক্ষত রোগের জন্য উপকারী।

কুল ফল কাচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া হয়। এছাড়াও আচার, চাটনি তৈরি করা যায়।

বাংলাদেশে বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহে উৎকৃষ্ট জাতের কুল ফলের চাষ হয়ে থাকে।

কুল ফলের সাথে পরিচিত হলাম এবার আমরা কুল চাষ পদ্ধতি/নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিব।

(২) কুল চাষ পদ্ধতি/নিয়ম

ক) কুল ফলের জাত

  • বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো বারি কুল-১, ২, ৩, ৪।
  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত জাতগুলো হল-বাউকুল-১, বাউকুল-২, বাউকুল-৩।
  • এছাড়াও আপেল কুল, নারিকেলী কুল উল্লেখযোগ্য।

খ) কুল চাষের জলবায়ু ও মাটি

  • কুল জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন। কুল আদ্র আবহাওয়ায় চাষ অনুপোযোগী।
  • উঁচু বা মাাঝারি জমি, দোআশ মাটিতে কুলের চাষ ভালো হয়, তবে সব মাটিতেই চাষ করা যায়।

গ) কুল গাছের বংশবিস্তার

চিত্র- টি বাডিং
চিত্র- টি বাডিং
  • বীজ ও কলম উভয় মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা যায়।
  • কুঁড়ি সংযোজন করে যেকোন কুল গাছকে মিষ্টি জাতে বা উন্নত জাতে রূপান্তরিত করা যায়। সেজন্য কুড়ি সংযোজনই সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি।
  • বীজের মাধ্যমে চারা গাছে মাতৃগুণ থাকে না এবং ফল আসতে সময় বেশি লাগে। সাধারণত কুলে রিং বা টি বাডিং করা হয়।

ঘ) কুল চাষে জমি ও গর্ত তৈরি

জমি ৪/৫ বার চাষ দিলে ভালো হয়। ৬-৭ মিটার দুরে দুরে ১মি. x ১মি. x ১মি. গর্ত  তৈরি করতে হবে।

ঙ) কুল চাষে সার প্রয়োগ

কুলের জন্য প্রতি গতের্  ২৫-৩০ কেজি গোবর সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি এবং ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।

চ) কুল গাছের ডাল ছাটাই কারণ

  • প্রত্যেক বছর ফল সংগ্রহের পর ডাল ছাঁটাই করতে হবে। কারণ নতুন ডালে ফুল বেশি হয়।
  • ফল আসার আগে সরু, দুর্বল ও রোগাক্রান্ত ঘন ডাল কেটে পাতলা করে দিতে হবে। এতে করে ফল বেশি ধরে।

ছ) কৃলের পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থা

ফল ছিদ্রকারী পোকা: কুলের জন্য ফলছিদ্রকারী পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। শুককীট ফলে গর্ত করে এর শাস খায় এতে ফল আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না। গাছে ফল ধরার পর সুমিথিয়ন বা ম্যালাথিয়ন ২ মি.লি হারে ১৫দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

ফলের মাছি পোকা: কীড়া ফলের ভিতর ঢুকে শাঁস খেতে থাকে এবং ফল খাওয়ার অনুপোযোগী হয়ে যায়। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ লি. ডায়াজিনন মিশিয়ে ফল পাকার আগে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও ফলের মাকড়, বিছা পোকা ও কোনো কোনো সময় কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।

কুলের পাউডারী মিলডিউ রোগ: এ রোগে গাছের পাতা, ফুল ও কচি ফল আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। পাতা, ফুল ও ফলের উপরে সাদা ধুসুর পাউডার দেখা যায় এবং পাতা নষ্ট হয়। বের্দো মিশ্রণ প্রয়োগ করলে এ রোগ দমন করা যায়।

ফলের পচন: এ রোগের ফলে প্রথমে হালকা বাদামি দাগ পড়ে এবং ফলকে পঁচিয়ে ফেলে। এ রোগের জন্য ডাইথেন এম ৪৫, ২ গ্রাম ঔষধি ১ লি. পানিতে স্প্রে করতে হবে।

জ) কুল ফল সংগ্রহ

  • কলমের গাছে ২-৩ বছরের মধ্যেই ফুল আসে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল আসার পর ৩-৪ মাসেই ফল পরিপক্ক হয়।
  • ফল হালকা হলুদভাব হলে নিচে জাল পেতে ডাল ঝাঁকুনি দিয়ে সংগ্রহ করা যায়।

ঝ) কুলের ফলন

গাছের বয়স ভেদে প্রতি গাছ থেকে ১৫০ কেজি ফল সংগ্রহ করা হয়।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা কুল ফলের পরিচিতি ও কুল চাষ পদ্ধতি/নিয়মসমূহ সম্পর্কে জানতে পারলাম।

কুল বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কুঁড়ি সংযোজন করে যেকোনো কুল গাছকে মিষ্টি জাতে বা উন্নত জাতে রূপান্তরিত করা যায়। কুলের জাতগুলি বারিকুল ১, ২, ৩, ৪ বাউকুল ১, ২, ৩, আপেল কুল ও নারিকেলী কুল উল্লেখযোগ্য। প্রত্যেক বছর ফল সংগ্রহের পর ডাল ছাটাই করতে হবে। ফলে ছিদ্রকারী পোকা, মাছি পোকা হল কুলের ক্ষতিকর পোকা। পাউডারী মিলডিউ রোগ ও ফলের পচন রোগের কারণে কুলের ব্যপক ক্ষতি হয়। গাছের বয়স ভেদে প্রতি গাছ থেকে ১৫০ কেজি ফল সংগ্রহ করা হয়।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts