Skip to content

 

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কি? বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি বা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার

কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কি, বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি বা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার

(১) কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কি?

কৃষির বিভিন্ন স্তর যেমন চাষ, বীজ বপন, রোপণ, সার প্রয়োগ, মধ্যবর্তী সময়ের পরিচর্যা, কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো ও গুদামজাতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামের ব্যবহার প্রক্রিয়াকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বুঝায়।

এক কথায়, পশু বা শ্রমশক্তির পরিবর্তে কৃষি কাজে যন্ত্রশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি কাজকে বেগবান করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিই হলো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ।

(২) কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গুরুত্ব

দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে কৃষি জমি থেকে অধিক ফসল উৎপাদন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিল্পায়ন, গৃহায়ন ও অন্যান্য কারণে ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়া জমি থেকে অধিক ফসল প্রাপ্তির লক্ষ্যে সময়মতো চাষ, কৃষি ফসলের উপকরণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কৃষি কাজের সকল স্তরে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

কৃষি কাজে ব্যবহৃত শক্তি-যা মূলত পশু শক্তি, শ্রম শক্তি ও যান্ত্রিক শক্তি থেকে পাওয়া যায়। এর মধ্যে চাষের কাজে ব্যবহৃত পশুর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। আবার কৃষিক্ষেত্রে শ্রমিকের একটি বড় অংশ শিল্প, পরিবহন ও অন্যান্য খাতে স্থানান্তরিত হচ্ছে বিধায় শ্রমিকের অভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে যান্ত্রিক উৎস থেকে কৃষি শক্তির ঘাটতি পুরণই একমাত্র উপায়।

কৃষি কাজকে ব্যয় সাশ্রয়ী তথা দেশে লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তনে জমিতে সময়মতো চাষ, রোপণ ও কর্তন করার স্বার্থে কর্ষণ যন্ত্র, রোপণ যন্ত্র, শস্য কর্তন যন্ত্র (রিপার, কম্বাইন হারভেস্টার), শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র সহজলভ্য করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

See also  কৃষি এবং আমাদের সংস্কৃতি

(৩) বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি বা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার

দেশে বিদেশে উদ্ভাবিত আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি এ দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। নতুন উদ্ভাবিত এবং আমদানিকৃত প্রধান প্রধান আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সমূহের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

ক) বহুল ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতি

i) পাওয়ার টিলার

চিত্র- পাওয়ার টিলার
চিত্র- পাওয়ার টিলার
  • সর্বাধিক ব্যবহৃত জমি চাষ করার যন্ত্র।
  • সময় কম লাগে।
  • ঘণ্টায় ১-১.৫ বিঘা জমি চাষ করা যায়।

ii) ট্রাক্টর

চিত্র- ট্রাক্টর
চিত্র- ট্রাক্টর
  • ট্রাক্টরের সাহায্যে দ্রুত গতিতে ও স্বল্প শ্রমে জমি ভালোভাবে চাষ করা যায়।
  • পাওয়ার টিলারের তুলনায় চাষ গভীর হয় এবং ব্যয় সাশ্রয়ী।
  • ঘণ্টায় ১ (এক) একর জমি চাষ করা যায়।

iii) মাড়াই যন্ত্র

চিত্র- ওপেন ড্রাম মাড়াই যন্ত্র
চিত্র- ওপেন ড্রাম মাড়াই যন্ত্র
চিত্র- ক্লোজ ড্রাম মাড়াই যন্ত্র
চিত্র- ক্লোজ ড্রাম মাড়াই যন্ত্র
  • এ ধরনের যন্ত্র দিয়ে ধান, গম ও ডাল শস্য মাড়াই করা যায়।
  • ১২ অশ্ব শক্তিসম্পন্ন এ রকম যন্ত্র দ্বারা প্রতি ঘণ্টায় ধান ১০০ কেজি এবং গম ৩৪০ কেজি মাড়াই করা যায়।
  • কম আর্দ্রতা সম্পন্ন ফসল মাড়াইয়ে ব্যবহার করলে যন্ত্রটির মাড়াই ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

খ) নতুন উদ্ভাবিত যন্ত্র

i) রিপার/শস্য কর্তন যন্ত্র

চিত্র- রিপার বা শস্য কর্তন যন্ত্র
চিত্র- রিপার বা শস্য কর্তন যন্ত্র
  • যন্ত্রটি নিয়ে ধান ও গম কাটা যায়।
  • কিছুটা হেলে পড়া ধান বা গমও কাটা যায়।
  • কাটা ধান বা গম ডান পাশে সারিবদ্ধভাবে পড়ে যাতে
  • সহজে আঁটি বাধা যায়।
  • প্রতি ঘণ্টায় জ্বালানি খরচ মাত্র ০.৮ লিটার পেট্রোল।
  • প্রতি ঘণ্টায় ধান ৩৫-৫০ শতাংশ এবং গম ৪৫-৬০ শতাংশ কাটা যায়।

ii) রাইস্ ট্রান্সপ্লান্টার

চিত্র- রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র
চিত্র- রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র

এ যন্ত্র দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে ধানের চারা লাগানো যায়। বীজতলার জন্য আলাদা জমির দরকার নেই। বাড়ির উঠানেও বীজতলা তৈরি করা যায়।

  • বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় চারা রোপণ করা যায়।
  • রোপণ যন্ত্র একটি আধুনিক, সময় ও সাশ্রয়ী।
  • জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় মাত্র ০.৫-০.৬ লিটার অকটেন/ পেট্রোল লাগে।
  • প্রতি ঘণ্টায় ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো যায়।
  • ৫৮×২৭.৮ বর্গ সেন্টিমিটার সাইজের ট্রেতে চারা তৈরি করতে হয়।
See also  কৃষি সমবায় কি? কৃষি সমবায় কাকে বলে? কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি? কৃষি সমবায় কত প্রকার?

iii) কম্বাইন হারভেস্টার

চিত্র- কম্বাইন হারভেস্টার
চিত্র- কম্বাইন হারভেস্টার
  • এ যন্ত্র দিয়ে ধান এবং গম কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তায় ভরা একই সাথে করা যায়।
  • এ যন্ত্র দ্বারা কম খরচ, স্বল্প শ্রম ও সময়ে ধান/গম কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই করা যায়।
  • মাঝারি ধরনের কম্বাইন হারভেস্টারের কার্যক্ষমতা প্রায় এক একর।
  • যন্ত্রটি অল্প পানি ও কর্দমাক্ত জমিতে চলতে পারে।

iv) বীজ বপন যন্ত্ৰ

চিত্র- বীজ বপন যন্ত্র
চিত্র- বীজ বপন যন্ত্র
  • এ যন্ত্র দিয়ে ধান, গম, ভূট্টা, পাট, তৈল বীজ ও ভাল জাতীয় শস্য সারিতে বপন করা যায়।
  • যন্ত্রটি পাওয়ার টিলার চালিত।
  • এ যন্ত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে ও সঠিক গভীরতায় সুষমভাবে বীজ বপন করে।
  • ঘণ্টায় ৩৭-৫০ শতাংশ জমিতে বপন করা যায়।

v) বেড প্লান্টার

চিত্র- বেড প্লান্টার
চিত্র- বেড প্লান্টার
  • এ যন্ত্র দিয়ে গম, ভুট্টা, আলু, মুগ, তিলসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি বীজ বেড নালা তৈরি করে বপন করা যায়।
  • যন্ত্রটি পাওয়ার টিলার চালিত।
  • বেড তৈরি, সার প্রয়োগ ও বীজ বপনের কাজ একই সঙ্গে করা যায়। ঘণ্টায় ২৫-২৭ শতাংশ জমিতে বপন করা যায়।

vi) গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র

চিত্র- গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র
চিত্র- গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র
  • এ যন্ত্র দ্বারা ধানের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে সময় কম লাগে।
  • ঘন্টায় প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা যায়।
  • কায়িক শ্রম কম লাগে।

(৪) টেকসই কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

  • টেকসই কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিবেচ্য বিষয়সমূহ-
  • দক্ষ চালক এবং মেকানিক তৈরি করা।
  • স্থানীয় পর্যায়ে খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য করা।
  • স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্কশপ সুবিধা থাকা।
  • লাগসই কৃষি যন্ত্র প্রস্তুত/আমদানি করা।
  • গ্রামীণ পর্যায়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা।
  • দেশে তৈরি /আমদানিকৃত যন্ত্রের মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা।

(৫) কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড

মাঠ পর্যায়ে কৃষকের নিকট আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা সৃষ্টি ও জনপ্রিয়করণে কৃষি মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রদর্শনী কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন আধুনিক কৃষি যন্ত্র কৃষকদের নিকট পরিচিতিকরণ, ৩০% সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদের মাঝে সরবরাহ, কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য দক্ষ চালক ও মেকানিক তৈরি করাসহ নানামুখী উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

See also  কৃষিপণ্য বিপণন

এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত নব নব কৃষি যন্ত্রপাতি এ দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রেখে আসছে। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারক কৃষি যন্ত্র সহজলভ্য করে দেশের যান্ত্রিকীকরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছেন।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কৃষি কাজে কৃষি শ্রমিকের স্বল্পতা, কৃষি জমি কমে যাওয়ার মতো প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, আকস্মিক বন্যার মতো ঝুঁকি থেকে কৃষিকে রক্ষা করার জন্য অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে শস্য উৎপাদন পরবর্তী অপচয়, উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে কৃষকের প্রচেষ্টা এবং সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে অচিরেই বাংলাদেশে যান্ত্রিকীকরণ টেকসই রূপ লাভ করবে বলে আশা করা যায়।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page