Skip to content

কৃষি সমবায় ককে বলে? কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি? কৃষি সমবায় কত প্রকার? কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি কী? এবং অন্যন্য

কৃষি সমবায় ককে বলে, কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য, কৃষি সমবায় কত প্রকার, কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি

বৃহৎ কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে কোন দল বা জনগোষ্ঠী বা সংগঠনের মাধ্যমে সমাধানকে সমবায় বলে। কৃষি ক্ষেত্রে এ ধারণা প্রয়োগ করলে তা কৃষি সমবায়। সফলভাবে কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন এবং মুনাফা অর্জনই কৃষি সমবায় সমিতির উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

এই পাঠ শেষে আপনি- কৃষি সমবায় কাকে বলে, তা বলতে পারবেন। কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি, তা বুঝতে পারবেন। কৃষি সমবায় কত প্রকার, তা জানতে পারবেন। কৃষি সমবায় সমিতির সুবিধাগুলোর ব্যাখ্যা করতে পারবেন। কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি বা শর্ত কী, তা জানতে পারবেন। কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা লাভ পারবেন।

(১) কৃষি সমবায় কাকে বলে?

কৃষি সমবায় কাকে বলে

কৃষি সমবায় কাকে বলে: কৃষি সমবায় হলো একটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যা কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ও অন্যান্য কৃষি সংক্রান্ত কার্যক্রমে সাহায্য করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকদের মধ্যে সামগ্রিক উন্নয়ন, উপকারিতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

কৃষি সমবায় কি বা কোন ধরণের কার্যক্রম: বৃহৎ কোন কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিত ভাবে কোন দল বা জনগোষ্ঠী বা সংগঠনের মাধ্যমে সমাধানকে সমবায় বলে। সমবায়ের এ সরল ধারনা যখন কৃষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এবং বিপননের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে কৃষি সমবায় বলে।

(২) কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি?

কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি

কৃষি সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য কি: কৃষি সমবায়ের মূল উদ্দেশ্য হলো সমবায় পদ্ধতিতে কৃষকরা স্বেচ্ছায় নিজেদের জমি একত্রিত করে যৌথভাবে চাষাবাদ করা, যাতে জমির উর্বরতা ও পরিমাণ অনুসারে কৃষক উৎপাদিত ফসলের অংশ পাবেন। এবং কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকগণ সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, কীটনাশক, উত্তম বীজ প্রভৃতি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনমতো সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে উন্নত চাষাবাদের ব্যবস্থা করা।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি কৃষিকেও স্পর্শ করায় এককালের লাঙ্গল নির্ভর কৃষি আজ প্রযুক্তির আর্শিবাদপুষ্ট এবং একই সাথে পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এ সবের ফলশ্রুতি একদিকে কৃষির উৎপাদন যেমন বহুগুণে বেড়েছে, অপরদিকে ঐ অধিক উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংকট।

যেমন, প্রযুক্তির ছোয়ায় বাম্পার ফলন ফলে বলেই ফসলের দাম পড়ে যায়। ক্ষেত্র বিশেষ উৎপাদন খরচও উঠে আসে না। এ সকল অনাকাঙ্খিত সমস্যা দূরীকরণে কৃষি সমবায় এক উৎকৃষ্ট বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

সমবায় ভিত্তিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র গড়ে তুলে ফসলের দীর্ঘ মেয়াদি গুদামজাতকরণ যেমন সম্ভব তেমনি কাঙ্খিত সময়ে বাজারজাত করে অধিক মুনাফাও অর্জন সম্ভব।

কোন একজন কৃষকের পক্ষে প্রযুক্তিনির্ভর এবং ব্যয়বহুল এ সুবিধা পুরোপুরিভাবে তৈরী বা অর্জন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধুই কঠিন নয় ক্ষেত্র বিশেষ অসম্ভবও বটে। অথচ কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে দল গঠন করে জমি ও অন্যান্য সকল ব্যয়ভার এবং মুনাফার আনুপাতিক বন্টনের নীতিমালা কৃষিক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করতে পারে।

নিম্নে কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্যগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো

উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়তা:

  • মাসিক ও মৌসুমী কৃষি সমন্বয়: সমবায় কৃষকদের জন্য একসাথে চাষের জন্য সুবিধা প্রদান করে এবং উৎপাদন বাড়ায়।
  • সংযুক্ত সম্পদ: একটি সমবায় মাধ্যমে কৃষকরা বড় পরিমাণে সম্পদ সংগ্রহ করতে পারে, যেমন উন্নত বীজ, সার ও যন্ত্রপাতি।

বাজার প্রবেশের সুযোগ:

  • বাজারজাতকরণ: সমবায় কৃষকদের তাদের পণ্য বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে সাহায্য করে, বাজারের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।
  • বাজার শক্তিশালীকরণ: বৃহৎ পরিমাণে পণ্য বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকরা বাজারের শক্তি বাড়ায়।

অর্থনৈতিক সুবিধা:

  • মূল্য কমানো: সমবায়ের মাধ্যমে বৃহৎ পরিমাণে ক্রয় ও বিক্রয় করার মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব হয়।
  • ঋণ সুবিধা: কৃষকরা সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারেন যা তাদের উৎপাদন খরচ বহন করতে সহায়তা করে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা:

  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: সমবায় কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
  • স্বাস্থ্যসেবা: কিছু সমবায় স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সামাজিক সেবা প্রদান করে।
See also  কৃষি খামার কি? কৃষি খামার কাকে বলে? খামার কত প্রকার? কৃষি খামারের প্রকারভেদ এবং খামারের কার্যাবলী, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, পরিকল্পনা

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা:

  • ঝুঁকি কমানো: সমবায়ে সদস্যরা একে অপরের ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি কমানোর সুযোগ পায়।
  • বিমা সুবিধা: কিছু সমবায় কৃষকদের জন্য বীমা সুবিধা প্রদান করে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য বিপদের ক্ষেত্রে সহায়ক।

সমাজ উন্নয়ন:

  • সামাজিক ঐক্য: সমবায় সমাজে ঐক্য ও সহযোগিতা বাড়ায় এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সহায়ক হয়।
  • বিকাশ প্রকল্প: সমবায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প যেমন সেচ ব্যবস্থা, পল্লী উন্নয়ন ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা যায়।

(৩) কৃষি সমবায় কত প্রকার?

কৃষি সমবায় কত প্রকার

সাধারনভাবে প্রধানত, কৃষি সমবায়কে ২ প্রকারে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. উৎপাদক সমবায়: ন্যায্য মূল্যে কাঁচামাল ক্রয় এবং উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রয়ের জন্য ক্ষুদ্র উৎপাদকদের সমন্বয়ে গঠিত সমবায় সমিতিকে উৎপাদক সমবায় সমিতি বলা হয়।
  2. বিপণন সমবায়: একটি ক্ষুদ্র খামারে সুসম পদ্ধতিতে পন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুরত্বে পরিবহনের সময়ে লাভজনক হয় না। সেক্ষেত্রে সকল ক্ষুদ্র খামারের উৎপাদিত পন্য সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিপণনের জন্য প্রেরণ করা যেতে পারে।

বৃহৎ পরিসরে, কৃষি সমবায়কে ৩ প্রকারে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. যান্ত্রিক পুল: একটি ব্যয়বহুল কৃষি যন্ত্র, যা সাধারনত অনিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হয় যেমন শুধুমাত্র ফসল কর্তনের সময়, সেক্ষেত্রে একটি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার তা ক্রয় না করে, বৃহৎপরিসরে ঐ যন্ত্রটির সকল কৃষক সম্মিলিতভাবে তা ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারে।
  2. বিপণন সমবায়: সকল ক্ষুদ্র খামারের উৎপাদিত কৃষি পন্য সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে বিক্রিয় বা বিপণনের জন্য প্রেরণ করাকে বিপণন সমবায় বলে।
  3. ঋণ ইউনিয়ন: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যাংকে ঋণের উচ্চ সুদ, স্বল্প ঋণের অপ্রাপ্যতা কিংবা ঋণ প্রাপ্তিকালে কৃষকের প্রাপ্তি বিলম্বিত করে। এসব ক্রান্তিকাল মোকাবেলায় কৃষকবৃন্দ একটি তবহিল গঠন করতে পারে যা সদস্য কৃষককে বিনা সুদে কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করতে পারবে। এ সকল পদক্ষেপ বিপর্যযকালীন সময়ে অত্যাবশ্যকীয় কৃষি উপকরণ যেমন, বীজ বা কৃষি যন্ত্রপাতি।

উদ্দেশ্য অনুসারে, কৃষি সমবায়কে ৬ প্রকারে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. কৃষি মূলধন সমবায় (সঞ্চয় সমবায়): কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে বা সুবিধাজনক সময়ে নিয়মিত নির্দিষ্ট অংকের টাকা সমিতিতে জমা দিবে। যার যখন কৃষি কাজে প্রয়োজন হবে এখান থেকে ঋণ নিবে।
  2. কৃষি উপকরণ সমবায়: বিভিন্ন রকম কৃষি উপকরণ যেমন- বীজ, রাসায়নিকসার, কীটনাশক, জৈবসার, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সংগ্রহ করে পরে ব্যবহার করা হবে।
  3. সেচ সমবায়: সেচ প্রদানের উদ্দেশ্যে সমিতির সদস্যরা মিলে গভীর বা অগ্রভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচ দিলে খরচ কম পড়ে।
  4. কৃষি উৎপাদন সমবায়: কৃষি উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সমিতির সদস্যরা সকলেই সকলের কাজ করে দিবে। ফসল, শাকসবজি, ফল, ফুল, ব্রয়লার, লেয়ার, গবাদিপশু উৎপাদন সমবায় সমিতি।
  5. কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ সমবায়: ফসল পরিবহণ ও বিক্রির জন্য সদস্যরা একত্র হয়ে ব্যবস্থা নিলে ফড়িয়া ও অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে রেহাই পায়। সমিতির মাধ্যমে করলে খরচও কম পড়ে।
  6. কৃষিপণ্য সংরক্ষণ সমবায়: সমিতির সদস্যরা একত্র হয়ে সংরক্ষণাগার তৈরি করলে সদস্যরা লাভবান হতে পারে।

পেশা ভিত্তি অনুসারে, কৃষি সমবায়কে ৬ প্রকারে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. কৃষক সমবায়: সমিতি সদস্য হবেন কৃষক বা বর্গাচাষী। শ্রমিক সদস্য হতে পারবে না। পুঁজি গঠন ও পরস্পরের কৃষি কাজে সহায়তা করা।
  2. মৎস্যজীবী বা মৎস্যচাষী সমবায়: সমিতি সদস্য হবেন মৎস্যজীবী ও মৎস্য চাষী। জলমহলের মালিকরা সদস্য হবেন।
  3. দুগ্ধ সমবায় সমিতি: দুধ উৎপাদনকারী ও গাভী পালনকারীরা সদস্য হবেন।
  4. পোল্ট্রি সমবায় সমিতি: যারা হাঁস ও মুরগির মাংস, ডিম, বাচ্চা, খাদ্য উৎপাদন করে তারা সদস্য হবে।
  5. ফুল চাষী সমবায় সমিতি: যারা ফুল চাষ করে তারা সমিতির সদস্য হবে।
  6. ফল চাষী সমবায় সমিতি: যারা ফল চাষ করে তারা সমিতির সদস্য হবে।
  7. নার্সারি সমবায় সমিতি: যারা চারা উৎপাদনকারী তারা সমিতির সদস্য হবে।

নিবন্ধন বা সমিতি গঠন অনুসারে, কৃষি সমবায়কে ৩ প্রকারে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি: এর সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জন হলে নিবন্ধন করা যাবে।
  2. কেন্দ্রীয় কৃষি সমবায় সমিতি: ১০টি প্রাথমিক সমবায় সমিতি একত্র হয়ে কেন্দ্রীয় সমিতি গঠন করে নিবন্ধন করতে হয়।
  3. জাতীয় কৃষি সমবায় সমিতি: ১০টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি একত্র হয়ে জাতীয় সমবায় সমিতি গঠন করে নিবন্ধন করা হয়। এর সদস্য হবে ইউনিয়ন, জেলা, বিভাগ ও দেশব্যাপী কর্ম এলাকাবিশিষ্ট প্রাথমিক সমবায় সমিতি, কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি ও জাতীয় সমবায় সমিতি।
See also  কৃষিপণ্য বিপণন

(৪) কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি বা শর্ত কী?

কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি বা শর্ত কী

কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি: কৃষি সমবায়ের মূল ভিত্তি হলো মুনাফার শরিকানা লাভ যা বণ্টন করা হয়—জমির আনুপাতিক হারে ও পুঁজির আনুপাতিক হারে।

কৃষি সমবায়ের মূল শর্ত: কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ, সংগ্রহ উত্তর ফসল পরিচর্যা, গুদামজাতকরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ সকল কাজ সমবায়ের সদস্যরা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য সীমিত সংখ্যক কৃষক একমত হয়ে নিজেদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি কৃষি সমবায় গড়ে তুলতে পারেন ।

কৃষি সমবায়ের মূল লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য: সফলভাবে কোন কৃষি প্রযুক্তির বাস্তবায়ন এবং তা থেকে মুনাফা অর্জনই কৃষি সমবায় সমিতির অভিষ্ট লক্ষ্য। সকল সমবায় যেহেতু ক্ষুদ্র দলের মধ্যে গড়ে উঠে, বিশেষ এলাকানির্ভরতা বা আঞ্চলিকতা-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(৫) কৃষি সমবায় সমিতির সুবিধাগুলোর ব্যাখ্যা

কৃষি সমবায় সমিতির সুবিধাগুলোর ব্যাখ্যা

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কৃষি সমবায়ের গুরুত্ব অসীম। নিম্নে কৃষি সমবায় সমিতির সুবিধাগুলোর ব্যাখ্যা করা হলো-

  1. আধুনিক কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল সকল উপকরণ সংগ্রহ (যেমন, কম্বাইন্ড হারভেষ্টার), কার্যকরভাবে ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।
  2. বহুবিদ ফসল এবং বৈচিত্রময় ফসলের চাষ, নিবির চাষাবাদ, কার্যকরি শষ্য পর্যায় অবলম্বন, আইপিএম পদ্ধতিতে ফসলের ক্ষতিকর রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধ, ফসল কর্তন, সংগ্রহ এবং সংরক্ষনের যান্ত্রিক কৃষির প্রয়োগের জন্য কৃষি সমবায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
  3. উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মানসম্মত পরিবর্তন নিশ্চিতকরণ, সঠিক গুদামজাতকরণ এবং কাঙ্খিত সময়ে বিপণনের ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
  4. সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলধন সংগ্রহ ও পুঁজি গঠন, ক্ষেত্র বিশেষ সরকার বা অন্য উৎস হতে প্রদেয় ভর্তুকি গ্রহনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
  5. সর্বপুরি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারন, বিক্রয় এর মাধ্যমে উচ্চ মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে।

(৬) কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার

কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার

কৃষি উপকরণ কাকে বলে: কৃষি জমি ব্যবহার করে কৃষি পন্যের উৎপাদন, ক্রয়, বাজারজাতকরণ পর্যন্ত যে সকল বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয় তাদেরকে কৃষি উপকরণ বলে। এ সমস্ত কৃষি উপকরণের মধ্যে কৃষি জমি, সেচের জন্য পানি, কৃষির অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ যেমন বীজ, সার, কীটনাশক, জমি চাষের জন্য যান্ত্রিক মালামাল এবং ফসল সংগ্রহের জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ সংগ্রহের জন্য কৃষি সমবায় ব্যবহার উচ্চ মাত্রার সক্ষমতা এনে দিতে পারে।

ক) কৃষি জমি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এই উভয় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায় যে, সর্বনিম্ন এক হেক্টর জমি না হলে একটি লাভজনক কৃষি খামার পরিচালনা করা যায় না। কিন্ত আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক এর চাইতে ক্ষুদ্রতর কৃষি জমির মালিক।

এমন কি যাদের আড়াই একর বা তার কিছু বেশি পরিমান জমি রয়েছে তারাও তাদের কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে দামি যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম নন। যদি কোনোভাবে কিনেও ফেলেন ঐ যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন না। নিজের কাজ শেষে বসিয়ে রাখতে বা ভাড়ায় দিতে হয়।

সমবায়ের মাধ্যমে অনেক জমি একই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়। সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল কৃষি উপকরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

সমবায়ীগন সম্মত হলে কিছু জমিকে জলাধারে রূপান্তরিত করে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়, যা থেকে প্রয়োজনের সময় সেচের পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়। অর্থাৎ তুলনামূলক নিচু জমিও সমবায়ের অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া যায়।

দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে সমবায়ের আওতায় জমির পরিমাণ চার পাঁচশত হেক্টর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে জমির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি জমি ব্যবহারের পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন হবে।

খ) পানি

কৃষি কাজের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি ছাড়া কোনো ধরণের কৃষিকাজই চালানো সম্ভব নয়।

See also  কৃষি পণ্য বিপণন কি? কৃষি পণ্যের বিপণনের উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও সমস্যাবলী এবং কৃষি পণ্যের বিপণনে সমবায়ের ভূমিকা

কয়েক দশক আগে আমাদের বাংলাদেশে কৃষিকাজের জন্য গভীর নলকূপের সুপারিশ করা হতো। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, গভীর নলকূপের অতি ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব নয়। সবচাইতে নিরাপদ পানি হলো জলাধারে সঞ্চিত পানি।

জলাধারে পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করে সারা বছর সেই পানি ব্যবহার সর্বোত্তম। জলাধার করা, সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে সেচ নালা বা পাইপে সমবায়ের আওতাধীন জমিগুলোতে, স্বল্প অপচয়ে, সেচের পানি ব্যবহার করা যায়। ভূ-উপরিস্থ জলাধারে সঞ্চিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তা ছাড়া সেচ ছাড়াও এই জলাধারের পানি অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজে লাগে যা লাভজনক উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ধারনায় প্রাকৃতিক জলাধারগুলি সমবায়ের আওতায় এনে জলউৎস সমবায়ের জমিতে সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়।

জলধারের সঞ্চিত বর্ষাকালের পানি সারা বছর সেচ কার্যে ব্যবহার করায় কৃষির উৎপাদন হার তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধির ফলে স্বনির্ভর কৃষির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

গ) কৃষির ভারী যন্ত্রপাতি

আমরা আগেই বলেছি জমিগুলির পর্যায়ক্রমিক খন্ডকরণের কারণে কৃষির যান্ত্রিককরণ কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ কৃষির উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা আজ সার্বজনীন ভাবে স্বীকৃত।

পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, হারভেষ্টার, স্প্রেয়ার থেকে শুরু করে বহু যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন, পশুপাখি পালন এবং শস্যচাষে সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। এ সকল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কৃষির উৎপাদনে ব্যপক অবদান রাখলেও এর ক্রয়, ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ যথেষ্ট জটিল এবং ব্যয়বহুল। এ সব বিবেচনায় এককভাবে এসকল যন্ত্রপাতি ক্রয় না করে যদি সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায় তাহলে আনুপাতিকহারে ব্যয়ভার যেমন কমবে, তেমনি ফসল নিবিড়তার বিবেচনায় ঐ সকল যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহারও নিশ্চিত হবে।

ঘ) কৃষির অন্যান্য অত্যাবশ্যক উপকরণ সংগ্রহ

কৃষির প্রধান উপকরণ বীজ, সার, ঔষধ, তাছাড়া পশু ও মৎস্য সংগ্রহণ ও সংরক্ষণে সমবায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। কৃষি সমবায়ের কারণে এ সকল অত্যাবশ্যক উপকরণের বর্ধিত চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং এ চাহিদার পরিমাণ সহজেই হিসেব করে সরকারী কৃষি সেবা সংস্থাকে (যেমন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) জানানো যেতে পারে।

জরুরী কৃষি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো সরবরাহযোগ্য উপকরণের মোট চাহিদা সম্পর্কে জেনে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। এতে মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সংগ্রহ যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি সমন্বিত চাহিদার ভিত্তিতে সংগ্রহ করার খরচও অনেকাংশে কম পড়ে।

ঘ) কৃষি ঋণ প্রাপ্তি এবং পরিশোধ

কৃষির চলমান উৎপাদানশীলতা ধরে রাখা এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি ঋণ প্রায়ই বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে। কিন্তু একক কৃষিঋণ প্রাপ্তি এই আধুনিক যুগেও এক জটিলতার নাম।

কৃষিঋণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন শর্তের কারণে প্রায়শই কৃষক ঋণ লাভে অসমর্থ কিংবা নিরুৎসাহিত হয়। কিন্তু একটি কৃষি সমবায় যদি সরকারের নিবন্ধিত হয় এবং এর সদস্যগণের একটি ঋণতহবিল থাকে তাহলে অনেক জটিলতা সহজেই নিরসন করা যায়।

নিবন্ধিত হওয়ার কারণে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানে স্বচ্ছন্দেই করেন এবং সমবায়ের সদস্যরাও আবদকালীন ঋণ তাদের তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ শোধ করতে পারে।


প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা কৃষি সমবায় কাকে বলে, কৃষি সমবায়ের উদ্দেশ্য কি, কৃষি সমবায় কত প্রকার, কৃষি সমবায়ে মূল ভিত্তি বা শর্ত কী, কৃষি সমবায় সমিতির সুবিধাগুলোর ব্যাখ্যা, কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

কৃষি খামারে বৃহৎ কোন কাজ অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে সমাধান করাকে কৃষি সমবায় বলে। কৃষি সমবায়কে যান্ত্রিক পুল, বিপনন সমবায় ও ঋণ ইউনিয়ন, এ তিন বৃহৎ পরিসরে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কৃষির ব্যয়বহুল উপকরণ সংগ্রহে সহজলভ্যতা এবং ঐ সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহারে কৃষি সমবায়ের ভূমিকা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

কৃষির উৎপাদনশীলতা ক্রমবর্ধমান রাখা এবং প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অত্যাবশ্যক উপকরণসমূহ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষি সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমবায়ের মাধ্যমে ব্যায়বহুল আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা যেমন সহজ তেমনিভাবে তার উৎকৃষ্ট কার্যকরি ব্যবহার নিশ্চিত করে।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts