Skip to content

 

ক্ষুদ্র ঋণ কি? দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা ও ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার শর্তাবলী

ক্ষুদ্র ঋণ কি, দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা ও ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার শর্তাবলী

(১) ক্ষুদ্র ঋণ কি?

ক্ষুদ্র ঋণ কি: ক্ষুদ্র শিল্প বা কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য যে ঋণ প্রদান করা হয় তাহাই ক্ষুদ্র ঋণ।

ক্ষুদ্র ঋণ কাকে বলে: গ্রামীণ অঞ্চলের বিভিন্ন ছোট ছোট অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন যে ঋণ চাহিদা সচরাচর করে থাকে তাহাও ক্ষুদ্র ঋণ।

ক্ষুদ্র ঋণ বলতে কি বুঝায়: কৃষিকাজ, পশুপালন, মৎস্য চাষ, কুটির শিল্পসহ নানা ধরণের পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য যে ঋণ ব্যবহার করা হয় তাহাই ক্ষুদ্র ঋণ।

  • ক্ষুদ্র ঋণ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস সমূহ অত্যধিক সুদহারের মাধ্যমে মানুষকে মূলত শোষণ করে। প্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ এ ধরণের শোষণ থেকে মুক্ত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধমে আত্ননির্ভরশীল হওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে থাকে।
  • বলা হয়ে থাকে ক্ষদ্র ঋণ কার্যক্রমে সুদ হার কিছুটা বেশি। এর বড় কারণ হলো, মূলধারার ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীগুলো কিছুটা অর্থ সঞ্চয় করে রাখে স্বাস্থ্য বীমা, শিক্ষাঋণ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য। দেশে এখনও সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু হয়নি এবং নানা স্তরে শিক্ষার সুযোগও সবার জন্য নেই।
  • অনেকের মতে, ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প সরকারী সামাজিকবেষ্টনী কর্মসূচী। এগুলো দারিদ্র পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক কার্যক্রম, তবে ক্ষুদ্র ঋণের বিকল্প নয়। বরং মহাজনী ঋণী ক্ষুদ্র ঋণের বিধিবদ্ধ উৎসের বিকল্প হিসেবে ইহার শুণ্যস্থান পূরণ করে থাকে।
  • ক্ষুদ্র ঋণের বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্য থাকে গ্রাহক যাতে কোনভাবেই ঋণ খেলাপি না হয়। অন্যদিকে মহাজনী উৎসের প্রত্যাশা হলো গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাতে না বাড়ে। গরীবরা খেলাপি হলে আগাম শ্রম, আগাম ফসল ইত্যাদি বিক্রির সুবিধা নিয়ে থাকে এসব মহাজনীরা।

(২) দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা

দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা রয়েছে ও ক্ষুদ্র ঋণ দরিদ্রদের টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়-

  • প্রথাগত ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে পৌছাতে সক্ষম হয় না, সেখানে ক্ষুদ্র ঋণ সহজেই পৌছে দরজায় কড়া নাড়ে। এক হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ এ সেবা নিয়ে থাকে।
  • ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো ঋণ দেয়ার পাশাপাশি উৎপাদনশীল খাতসমূহে নানাভাবে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকে। সাধারণ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের এনানেই পার্থক্য।
  • ক্ষুদ্র ঋণ মানুষকে উৎপাদনশীল কার্যক্রমে সংযুক্ত করে। ফলে তৃণমূলের অর্থনীতিতে গতি আনে। এটি গরীব মানূষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরী করলেও, দারিদ্র বিমোচনের একমাত্র চাবিকাঠি নয়। তবে ক্ষুদ্র ঋণের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহারে সক্ষম গ্রহীতাদের অনেকে দারিদ্র চক্র ভেঙ্গে বেরিয়েও আসে।
  • ব্রাকের স্বনামধণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮৮-২০০৭ সময়কালে গ্রামীণ দারিদ্রতা প্রতিবছর এক শতাংশ হারে কমেছে। রক্ষণশীল অনেকের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ঋণের সহযোগিতায় নারীরা বাইরের জগতে পা ফেলতে শুরু করেছে। নারীদের নেয়া ঋণে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অনেক ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের নজিরও সৃষ্টি হয়েছে।
  • স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধিও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের অংশ। এর ফলে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধাভোগী পরিবারে জন্মনিয়ন্ত্রনের হার, ছাত্রছাত্রীদের হার ও শিশুপুষ্টি বেড়েছে। কমেছে শিশু ও মার্তৃ মৃত্যুর হারও।
See also  কৃষি ঋণ কি? কৃষি ঋণ কত প্রকার? কৃষি ঋণ পাওয়ার উপায়

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরটির (এম.আর.এ) ২০১৫ সালে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী দেশে সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থার সংখ্যা ৬৫৯। শাখার ভিত্তিতে এসব সংস্থাকে খুব ছোট, মাঝারী, বড় ও বৃহৎভাবে ভাগ করা যায়। এম.আর.এ ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার ২৭ শতাংশ বেঁধে দিলেও পিকেএসএফ এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ২৫ শতাংশের বেশি সুদ নেয় না। বর্তমান পিকেএসএফ এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্য ২২০। অবশিষ্ঠ ৪৩৯ টি সংস্থা ২৭ শতাংশ হিসেবে সুদ নেয়।

(৩) ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার শর্তাবলী

ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। নিম্নে সেসব শর্তসমূহ উল্লেখ করা হলো-

  1. ক্ষুদ্র ঋণ নিতে আগ্রহীকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হতে হবে।
  2. আগ্রহী ব্যক্তির অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ থাকলে ক্ষুদ্র ঋণ পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না
  3. ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
  4. ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে যে উদ্দেশ্যে ঋণ প্রদান করা হবে সেটি বাস্তবায়নের জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিকতার হতে হবে।
  5. কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িতদেরকে এ ঋণ প্রদানের জন্য বিবেচনা করা হয় না
  6. ঋন গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের শর্তাবলি মেনে চলার মানসিকতা থাকতে হবে।
  7. যে প্রকল্পের জন্য ঋণ নেয়া হবে সেটির গ্রহণ যোগ্যতা থাকতে হবে।
  8. যুব ঋণের জন্য আগ্রহীকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।

বাংলাদেশের কৃষিজীবি মানুষ সাধারণভাবে দরিদ্র হওয়ায় কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সব সময় করতে পারে না। ফলে কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া সম্ভব হয় না। কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণের প্রচলন কৃষি উন্নয়নে সেজন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কৃষকের সামর্থ্যানুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকায় এ ঋণের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Tags:

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page