প্রোটোজোয়া (Protozoal) এককোষি জীব। প্রোটোজোয়া গবাদি প্রাণির দেহে বহু রোগ সৃষ্টি করে থাকে। যেমন- বাবেসিয়োসিস বা রেড ওয়াটার ফিভার বা রক্ত প্রস্রাব, ট্রাইকোমোনিয়াসিস বা প্রজনন সংক্রান্ত রোগ, এনাপ্লাজমোসিস, ককসিডিওসিস বা রক্ত আমাশয় ইত্যাদি।
এখানে আমরা প্রোটোজোয়া সৃষ্ট- গরুর/ছাগলের রক্ত প্রসাব রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারব। এছাড়াও গরুর/ছাগলের রক্ত আমাশয় রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে অবগত হব। পাশাপাশি গাভীর গর্ভপাত, অস্থায়ী প্রজননহীনতাসহ অন্যান্য প্রজনন সংকটের জন্য দায়ী গরুর/ছাগলের ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করব।
(১) গরুর/ছাগলের রক্ত প্রসাব বা ‘বাবেসিয়াসিস’ (Babesiosis) রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
বাবেসিয়া নামক প্রোটোজোয়া দ্বারা গবাদি প্রাণিতে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ রেড ওয়াটারফিভার নামেও পরিচিত। আঠালি দ্বারা এ রোগের জীবাণু সংক্রামিত হয়।
প্রচলিত নাম: রক্ত প্রস্রাব।
রোগের লক্ষণ:
- শরীরের তাপমাত্রা এবং নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যায়।
- প্রস্রাবের রং কালচে লাল হয়।
- রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, শ্বাসকষ্ট হয়।
- জাবর কাটা বন্ধ করে, গবাদি প্রাণির হঠাৎ জ্বর হয়।
- সময় মত চিকিৎসা না করালে অধিকাংশ আক্রান্ত গবাদি প্রাণিই মারা যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
- গবাদি প্রাণির বাসস্থান নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- গবাদি প্রাণি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা করতে হবে।
- ‘নিওসিডল ৪০ ডব্লিউ পি ৪-৫ গ্রাম’, ২.৫ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গবাদির গায়ে স্প্রে করতে হবে।
- জরুরীভিত্তিতে সামান্য ‘বরিক পাউডার ও ফিটকারী’ মিশ্রিত পানি গুলে খাওয়ালে রোগের কিছুটা উপশম হয়।
- ‘বেবেসান ইনজেকশন’ দেয়া যেতে পারে।
(২) গরুর/ছাগলের রক্ত আমাশয় বা ‘ককসিডিওসি’ (Coccidiosis) রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
আইমেরিয়া নামক প্রোটোজোয়া দ্বারা রোগ সংঘটিত হয়। সাধারণত বাছুরে এ রোগ বেশি হয়। স্যাঁসস্যাঁতে নিচু জায়গায় রোগজীবাণু বেঁচে থাকে। রোগজীবাণু অন্ত্রনালীতে প্রবেশ করে অন্ত্রনালীর দেয়ালে ক্ষতের সৃষ্টি করে।
রোগের কারণ: প্রোটোজোয়া।
প্রচলিত নাম: রক্ত আমাশয়।
রোগের লক্ষণ:
- দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়।
- পায়খানা রক্ত ও মিউকাস (আম) মেশানো থাকে।
- খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং দুর্বল হয়ে মারা যায়।
- মলত্যাগের সময় গবাদি প্রাণি ঘন ঘন কোথ দেয় ও ব্যথা অনুভব করে।
- গবাদি প্রাণির শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
চিকিৎসা:
- গবাদি প্রাণির বাসস্থান, খাবার ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- গোয়াল ঘর মাঝে মাঝে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- সালফাডিমিডিন বড়ি দৈনিক ৩ বার খাওয়াতে হবে। অথবা, সালফানিলামাইড গ্রুপের যে কোনো ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।
- গবাদি প্রাণি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেতে হবে।
(৩) গরুর/ছাগলের ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis) রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার
ট্রাইকোমোনাস ফিটাস নামক প্রোটোজোয়া দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগ যৌন সংক্রান্ত রোগ, যার ফলে গাভীর গর্ভপাত, অস্থায়ী প্রজননহীনতাসহ অন্যান্য প্রজনন সংকট দেখা দেয়। আক্রান্ত গবাদি প্রাণির মাধ্যমে এক গবাদি প্রাণি হতে অন্য গবাদি প্রাণিতে রোগজীবাণু সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে।
রোগের কারণ: প্রোটোজোয়া।
রোগের লক্ষণ:
- আক্রান্ত গাভীর ১-৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত হয়।
- গাভী এবং ষাঁড়ের যৌনাঙ্গে প্রদাহ হয়।
- ষাঁড়ের লিঙ্গদ্বার ফুলে যায় এবং প্রদাহ হয়।
- যোনিমুখ ও তার চারপাশে ফুলে যায় ও লাল হতে দেখা যায়।
- গাভীর ঋতুচক্রে অনিয়ম দেখা যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার:
- গবাদি প্রাণি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
- কিছুদিন গাভীর যৌন সঙ্গম বন্ধ রাখতে হবে।
- জীবাণুমুক্ত ষাঁড় দিয়ে প্রজনন করাতে হবে।
- কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ রোগ এড়ানো যায়।
- ‘ডাইমেট্রিডাজল ইনজেকশন’ আক্রন্ত গবাদি প্রাণির শিরার মাধ্যমে প্রয়োগ করাত হবে।
- আক্রান্ত ষাঁড়কে খোজা করে কাজে ব্যবহার করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা প্রোটোজোয়া সৃষ্ট গরুর/ছাগলের রক্ত প্রসাব, রক্ত আমাশয় ও ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলাম।
প্রোটোজোয়ার সৃষ্ট রোগসমূহের হাত থেকে গবাদি প্রাণিকে রক্ষার জন্য আমাদের সবসময় সঠিকভাবে আধুনকি রোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিসমূহ মেনে চলা উচিত।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।